নির্বাচনের মাত্র এক দিন আগে বরিশালের বাকেরগঞ্জের নিয়ামতি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধ এককাট্টা হলেন ৫ প্রার্থী। তাঁরা আগামী ২৬ ডিসেম্বরের ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ১১টি অভিযোগ তুলে বরিশালের বাকেরগঞ্জের নিয়ামতি ইউপির আওয়ামী লীগের ৪ বিদ্রোহীসহ চরমোনাইর দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচনী এলাকায় হাতে হাত রেখে ভোটে অনিয়ম প্রতিহতের ঘোষণা দেন। উপজেলার চরামদ্দি ও দুর্গাপাশা ইউপিতেও এককাট্টা হচ্ছেন নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।

এ প্রসঙ্গে বাকেরগঞ্জের ৩ ইউপির দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং ও নির্বাচন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেছেন, এ ধরনের অভিযোগ পেয়ে তাঁরা ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নিয়ামতি ৩ জেলা বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালীর সীমান্ত এলাকা হওয়ায় শঙ্কা থাকে বরাবরই।

নিয়ামতি ইউপির নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী এই ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন ঘোড়া প্রতীকে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মাজহারুল ইসলাম মনির মুন্সি, চশমা প্রতীকে বিদ্রোহী মো. কামাল হোসেন তালুকদার, আনারস প্রতীকে বিদ্রোহী মো. সোহরাব হোসেন মৃধা, মোটরসাইকেল প্রতীকের বিদ্রোহী মোহাম্মদ আল আমীন এবং চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের মো. হুমায়ুন কবির।

গতকাল বেলা ১১টায় নিয়ামতির বাংলাবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোড়া প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মাজহারুল ইসলাম মনির মুন্সি অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী মতিউর রহমান বাদশার আত্মীয় সরকারি এক বড় কর্মকর্তা প্রভাব বিস্তার করছেন। তিনি উপজেলা প্রশাসনকে বাদশার পক্ষে কাজ করানোর চেষ্টা করছেন। এসব বিষয় রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। তিনি ভোট সুষ্ঠ হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ১১টি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিটি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা, বহিরাগত ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, প্রচারে প্রার্থীদের সমান সুযোগ দেওয়া, ব্যালট পেপার ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে পৌঁছানো, অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার, প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন এবং ভোটের আগে বহিরাগত মুক্ত করা।

সংবাদ সম্মেলনের পরপরই বাংলাবাজার সড়কে এসে নেতা-কর্মী নিয়ে হাজির হন আওয়ামী লীগের অপর ৩ বিদ্রোহী প্রার্থী ও চরমোনাই পীরের প্রার্থী। এ সময় সড়কে অবস্থান নিয়ে ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থীই হাতে হাত রেখে বিজয় চিহ্ন প্রদর্শন করেন।

সমর্থকদের উদ্দেশ্য চশমা প্রতীকের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. কামাল হোসেন তালুকদার বলেন, তাঁরা সুষ্ঠ ভোট চাইলেও নৌকা প্রার্থীর লোকজন ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। বহিরাগত লোকজন মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। ভোটে জালিয়াতি প্রতিহতে তারা সব প্রার্থীই ঐক্যবদ্ধ। নৌকার প্রার্থী বাদশার আত্মীয় সরকারি বড় কর্মকর্তা হওয়ায় প্রভাব খাটাচ্ছেন এমন অভিযোগও করেন তিনি।

অপর বিদ্রোহী প্রার্থী মো. সোহরাব হোসেন মৃধা বলেন, নিয়ামতিতে ভোট জালিয়াতি করতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া হাতপাখা প্রতীকের মো. হুমায়ুন কবিরও অন্য সব প্রার্থীর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এ সময় প্রার্থীদের শত শত সমর্থকেরা সেখানে মিছিল করে সুষ্ঠু ভোট দাবি করেন।

তবে নিয়ামতি ইউপির নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী মতিউর রহমান বাদশা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকার লোকজনকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। সোহরাব মৃধার এলাকা থেকে দেশীয় অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর আত্মীয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগও উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন এসব প্রোপাগান্ডা।

এদিকে দুর্গাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস প্রতীকে এস এম সিরাজুল ইসলাম (সালাম সিকদার) বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ এখন দৃশ্যমান ভালো। সামনে কী হবে তা দেখার বিষয়। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ভোটের পক্ষে তারা এককাট্টা হচ্ছেন। একই কথা জানিয়েছেন, মোটরসাইকেল প্রতীকের আব্দুল ছালাম খান। হাতপাখার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম খান জানান, তাঁরা ভোট সুষ্ঠ করতে চান।

উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়নের আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সাহাবউদ্দিন খোকন বলেন, দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তিনি মাঠেই আছেন। তাঁর সঙ্গে জনগণও আছেন।

বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাকেরগঞ্জ সার্কেল) সুদীপ্ত সরকার বলেন, নিয়ামতিসহ ৩টি ইউপিতে নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। ভোট দিতে পারবে না এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি। এলাকায় বলে দেওয়া হয়েছে কারও যদি আত্মীয়-স্বজন, বেয়াই, চাচা, মামা আসে তাঁরা যেন ভোটের আগেই চলে যায়। ২৫ জুলাই থেকে ৩ ইউনিয়ন পরিষদেই বহিরাগত থাকতে পারবেন না। নিয়ামতি এমন একটি ইউপি যেটি ৩ জেলার সীমান্ত এলাকা। যে কারণে পার্শ্ববর্তী থানাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যালট পেপার সকালে কেন্দ্রে পৌঁছাবে। যে কারণে অনিয়ম হওয়ার শঙ্কা প্রকাশের অবকাশ নেই। পুলিশের পেট্রোলিংও জোরদার করা হয়েছে।