ফারুক মেহেদী, ঢাকা
অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে। ডলারের সংকটে ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। রিজার্ভ বাড়াতে শর্ত মেনে আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি ব্যয় মেটাতে ব্যাংক থেকেও বাড়ছে ধার-দেনা। আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য আনতে সরকার যখন কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলছে, তখনই জানা গেল গত পাঁচ মাসে বিশেষ আদেশ ও প্রজ্ঞাপনে মাত্র ১৩ খাতে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর তৈরি প্রতিবেদন থেকে শুল্কছাড়ের এসব বিষয় জানা যায়।
আর এ বিপুল অঙ্কের ছাড়ের মধ্যে শুধু ভোজ্যতেলেই ছাড় দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। হাজার হাজার কোটি টাকার ছাড়ের তালিকায় মোবাইল ফোন শিল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পোলট্রি ও টেক্সটাইল খাত, শিল্পের যন্ত্রপাতি ও ত্রাণের জিনিসপত্র। দীর্ঘ মেয়াদে এসব খাতের কোনো কোনোটির ইতিবাচক প্রভাব থাকলেও অনেক ছাড়ের সুফল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। এর সঙ্গে রয়েছে বিপুল অঙ্কের মুদ্রা পাচারের অভিযোগও।
এ ব্যাপারে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করছাড় সরকারের একটি সৎ উদ্দেশ্য। তবে এর অপব্যবহার হয়। আমি মনে করি, কাউকেই করছাড় দেওয়া উচিত না। বরং কর দেবে, পণ্য আনবে। এরপর সরকার চাইলে একটি বিধিমালা করে, তাতে যদি ভোক্তা সুফল পায় বলে প্রমাণিত হয়, তখন ওই খাতে প্রণোদনা দেবে। তাতে বৈদেশিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আসবে। মুদ্রা পাচার কমবে। করছাড় দিলে কোনো হিসাবই থাকে না। বরং এর আড়ালে মুদ্রা পাচার হয়। তা ছাড়া, বিশেষ বিবেচনায় বিশেষ খাত ছাড় পেলে একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা হয়। বৈষম্য তৈরি হয়। তাতে উন্নয়নের সৎ উদ্দেশ্যটা নষ্ট হয়।’
বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিদেশি সংস্থার পূর্বাভাস আর দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক পর্যালোচনা করে জানা যায়, দেশের অর্থনীতি একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। সরকারের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। তাই খরচ সামাল দিতে এরই মধ্যে সরকার শুধু ব্যাংক খাত থেকেই ২২ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা ধার করেছে। বিদেশি উৎস, সঞ্চয়পত্র থেকে তো নিচ্ছেই। মোটা দাগে নিয়মিত ব্যয় মেটাতে সরকার বিভিন্ন উৎসে ধার বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে একই সময়ে নিজস্ব উৎস থেকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় করে রাষ্ট্রীয় তহবিল বাড়ানোর জায়গাটি শক্তিশালী করা যায়নি। বরং রাজস্ব আয়ের ঘাটতি ক্রমেই বড় হচ্ছে। অর্থবছরের পাঁচ মাসে রাজস্ব আয়ে যখন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি, ঠিক একই সময়ে শুধু শুল্কছাড়ই দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, সরকার যে টাকা ছাড় দিয়েছে, প্রায় একই সময়ে সমপরিমাণ টাকা সরকার ব্যাংক থেকেই ধার করেছে।
এনবিআরের তৈরি চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আয়সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে ১৩টি খাতে দেওয়া বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ছাড়ের মধ্যে ভোজ্যতেল খাতই পেয়েছে ৪ হাজার ১৭২ কোটি ৯২ লাখ। সাধারণত ভোক্তা এ শুল্কছাড়ের সুফল পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা কতটা ভোক্তার ভাগে গিয়েছে, এ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কছাড়ের সুফল কখনোই ভোক্তারা পান না। বরং ব্যবসায়ীরাই এর সুবিধাভোগী।
বেসরকারি খাতের শিল্পের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৯০৪ কোটি টাকা। সাধারণত ধরে নেওয়া হয় যে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি হলে দেশে বিনিয়োগ বাড়ে, কর্মসংস্থান হয়। বাস্তবে, গত পাঁচ মাসে বিদ্যুৎ-জ্বালানির সংকটে বিনিয়োগ পরিস্থিতির খুব উন্নতি হয়েছে–এ নিয়ে আলোচনা নেই।
উল্টো অভিযোগ আছে, শূন্য শুল্কে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির আড়ালে মুদ্রা পাচারের। দেশে শিল্পায়নের বিবেচনায় এবং শুল্ক আয়ের সুযোগ কম থাকায় অনেক সময় কাস্টমস শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে অনেকটা নমনীয় থাকে। এই সুযোগে মুদ্রা পাচারকারী চক্র দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে থাকে। এ রকম অসংখ্য ঘটনা বিভিন্ন সময়ে ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে ভুয়া নথিপত্র ব্যবহার করে, জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে যন্ত্রপাতি আমদানি না করেও বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার করার ঘটনাও ধরেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মাত্র পাঁচ মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আর কাঁচামাল আমদানিতে মোট ৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকার শুল্কছাড়ের আড়ালে মুদ্রা পাচারের ঘটনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, কয়েক বছর আগে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে পোলট্রিশিল্পের কাঁচামাল আমদানির আড়ালে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা পাচারের ঘটনাসহ এ রকম বহু ঘটনা ধরা পড়ে শুল্ক গোয়েন্দার কাছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, আমদানি ঘোষণা মিথ্যা হলে ক্ষতি শুধু রাজস্বের নয়, এর পেছনে বিপুল অঙ্কের ডলারও খরচ হয়। কারণ সংকটের সময়েও আমদানি দায় ডলারেই শোধ করতে হয়েছে।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোন শিল্পে গত পাঁচ মাসে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২১২ কোটি টাকা। আশা করা হয়েছিল, দেশে মোবাইল ফোন তৈরি হলে এর সুফল ভোক্তারা পাবেন। দেশের মানুষ কম দামে মোবাইল ফোন কিনতে পারবে। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশীয় পর্যায়ে তৈরি মোবাইল ফোনের দাম খুব একটা কমেনি। পাঁচ মাসে কোম্পানিগুলো ১ হাজার ২১২ কোটি টাকার ছাড় পেলেও এর সমপরিমাণ সুফল ভোক্তারা পেয়েছেন কি না–এনবিআরের শুল্ক বিভাগ তা জানাতে পারেনি।
এ ছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য বিদেশ থেকে অনুদানের অনেক পণ্য আসে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থাও অনুদানের পণ্য পায়। এর জন্য গত পাঁচ মাসে সরকারের শুল্কছাড় হয়েছে ১৬২ কোটি টাকা। পোলট্রিশিল্পের পণ্য ও কাঁচামাল আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৩৯৭ কোটি টাকা। বিশেষ পরিপত্র জারি করে টেক্সটাইল শিল্পে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৩২৬ কোটি টাকা। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের অনুকূলে বিভিন্ন শিল্পের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে ৪৬৯ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণে জড়িত সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির অনুকূলে ছাড় দেওয়া হয়েছে ২৪৮ কোটি টাকা। এনবিআরের দেওয়া অ্যাডভান্স ট্যাক্সে ছাড় রয়েছে এমন পণ্যের আওতায় রয়েছে ৩ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকার ছাড়। অগ্রিম আয়কর রয়েছে এমন পণ্যে দেওয়া হয়েছে ৪৪৫ কোটি টাকার ছাড়। এসবের বাইরেও এনবিআরের বিশেষ ছাড়ের আওতায় দেওয়া হয়েছে আরও ৩ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার শুল্ক-সুবিধা।
এসব বিষয়ে এনবিআরের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সাধারণত দেশের উন্নয়ন, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো এবং সর্বোপরি, দীর্ঘ মেয়াদে যাতে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়, সে জন্য এনবিআর বিভিন্ন সময়ে রাজস্ব ছাড় দেয়। এটি সরকারের সদিচ্ছারই প্রকাশ।
এনবিআরের সাবেক সদস্য ও শুল্ক বিশেষজ্ঞ আবদুল মান্নান পাটোয়ারী শুল্কছাড়ে অনিয়মের বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে শুল্কছাড় দেশ ও মানুষের স্বার্থে। তবে এর আড়ালে অনিয়ম হতে পারে। এ জন্য এনবিআরের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট একটি টিম রয়েছে, তারা আমদানিকারকদের প্রোফাইল পর্যালোচনা করে, যেসব আমদানিতে অনিয়ম হতে পারে, তা আটক করতে পারে।’
শুল্ক খাতের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিশেষ বিশেষ শুল্কছাড়ের আড়ালে মুদ্রা পাচার, ক্ষতিকর পণ্য আমদানিসহ নানা অনিয়মের ঘটনাও কম নয়। একটি অসাধু চক্র শূন্য শুল্কের পণ্যকে লক্ষ্য করে পণ্য আমদানি করে থাকে। তারা জানে যে শুল্ক না থাকায় এসব পণ্যে তেমন নজরদারি থাকে না। ওই সুযোগে অনেক সময় বিনা বাধায় পণ্যগুলো ছাড় পেয়ে যায়। তাতে একদিকে, সরকার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়, দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয় আর ক্ষতিকর পণ্য প্রবেশের ফলে তা দেশের নিরাপত্তাসহ নানা দিকে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে। ডলারের সংকটে ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। রিজার্ভ বাড়াতে শর্ত মেনে আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি ব্যয় মেটাতে ব্যাংক থেকেও বাড়ছে ধার-দেনা। আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য আনতে সরকার যখন কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলছে, তখনই জানা গেল গত পাঁচ মাসে বিশেষ আদেশ ও প্রজ্ঞাপনে মাত্র ১৩ খাতে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর তৈরি প্রতিবেদন থেকে শুল্কছাড়ের এসব বিষয় জানা যায়।
আর এ বিপুল অঙ্কের ছাড়ের মধ্যে শুধু ভোজ্যতেলেই ছাড় দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। হাজার হাজার কোটি টাকার ছাড়ের তালিকায় মোবাইল ফোন শিল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পোলট্রি ও টেক্সটাইল খাত, শিল্পের যন্ত্রপাতি ও ত্রাণের জিনিসপত্র। দীর্ঘ মেয়াদে এসব খাতের কোনো কোনোটির ইতিবাচক প্রভাব থাকলেও অনেক ছাড়ের সুফল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। এর সঙ্গে রয়েছে বিপুল অঙ্কের মুদ্রা পাচারের অভিযোগও।
এ ব্যাপারে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করছাড় সরকারের একটি সৎ উদ্দেশ্য। তবে এর অপব্যবহার হয়। আমি মনে করি, কাউকেই করছাড় দেওয়া উচিত না। বরং কর দেবে, পণ্য আনবে। এরপর সরকার চাইলে একটি বিধিমালা করে, তাতে যদি ভোক্তা সুফল পায় বলে প্রমাণিত হয়, তখন ওই খাতে প্রণোদনা দেবে। তাতে বৈদেশিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আসবে। মুদ্রা পাচার কমবে। করছাড় দিলে কোনো হিসাবই থাকে না। বরং এর আড়ালে মুদ্রা পাচার হয়। তা ছাড়া, বিশেষ বিবেচনায় বিশেষ খাত ছাড় পেলে একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা হয়। বৈষম্য তৈরি হয়। তাতে উন্নয়নের সৎ উদ্দেশ্যটা নষ্ট হয়।’
বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিদেশি সংস্থার পূর্বাভাস আর দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক পর্যালোচনা করে জানা যায়, দেশের অর্থনীতি একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। সরকারের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। তাই খরচ সামাল দিতে এরই মধ্যে সরকার শুধু ব্যাংক খাত থেকেই ২২ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা ধার করেছে। বিদেশি উৎস, সঞ্চয়পত্র থেকে তো নিচ্ছেই। মোটা দাগে নিয়মিত ব্যয় মেটাতে সরকার বিভিন্ন উৎসে ধার বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে একই সময়ে নিজস্ব উৎস থেকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় করে রাষ্ট্রীয় তহবিল বাড়ানোর জায়গাটি শক্তিশালী করা যায়নি। বরং রাজস্ব আয়ের ঘাটতি ক্রমেই বড় হচ্ছে। অর্থবছরের পাঁচ মাসে রাজস্ব আয়ে যখন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি, ঠিক একই সময়ে শুধু শুল্কছাড়ই দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, সরকার যে টাকা ছাড় দিয়েছে, প্রায় একই সময়ে সমপরিমাণ টাকা সরকার ব্যাংক থেকেই ধার করেছে।
এনবিআরের তৈরি চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আয়সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে ১৩টি খাতে দেওয়া বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ছাড়ের মধ্যে ভোজ্যতেল খাতই পেয়েছে ৪ হাজার ১৭২ কোটি ৯২ লাখ। সাধারণত ভোক্তা এ শুল্কছাড়ের সুফল পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা কতটা ভোক্তার ভাগে গিয়েছে, এ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কছাড়ের সুফল কখনোই ভোক্তারা পান না। বরং ব্যবসায়ীরাই এর সুবিধাভোগী।
বেসরকারি খাতের শিল্পের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৯০৪ কোটি টাকা। সাধারণত ধরে নেওয়া হয় যে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি হলে দেশে বিনিয়োগ বাড়ে, কর্মসংস্থান হয়। বাস্তবে, গত পাঁচ মাসে বিদ্যুৎ-জ্বালানির সংকটে বিনিয়োগ পরিস্থিতির খুব উন্নতি হয়েছে–এ নিয়ে আলোচনা নেই।
উল্টো অভিযোগ আছে, শূন্য শুল্কে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির আড়ালে মুদ্রা পাচারের। দেশে শিল্পায়নের বিবেচনায় এবং শুল্ক আয়ের সুযোগ কম থাকায় অনেক সময় কাস্টমস শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে অনেকটা নমনীয় থাকে। এই সুযোগে মুদ্রা পাচারকারী চক্র দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে থাকে। এ রকম অসংখ্য ঘটনা বিভিন্ন সময়ে ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে ভুয়া নথিপত্র ব্যবহার করে, জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে যন্ত্রপাতি আমদানি না করেও বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার করার ঘটনাও ধরেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মাত্র পাঁচ মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আর কাঁচামাল আমদানিতে মোট ৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকার শুল্কছাড়ের আড়ালে মুদ্রা পাচারের ঘটনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, কয়েক বছর আগে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে পোলট্রিশিল্পের কাঁচামাল আমদানির আড়ালে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা পাচারের ঘটনাসহ এ রকম বহু ঘটনা ধরা পড়ে শুল্ক গোয়েন্দার কাছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, আমদানি ঘোষণা মিথ্যা হলে ক্ষতি শুধু রাজস্বের নয়, এর পেছনে বিপুল অঙ্কের ডলারও খরচ হয়। কারণ সংকটের সময়েও আমদানি দায় ডলারেই শোধ করতে হয়েছে।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোন শিল্পে গত পাঁচ মাসে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২১২ কোটি টাকা। আশা করা হয়েছিল, দেশে মোবাইল ফোন তৈরি হলে এর সুফল ভোক্তারা পাবেন। দেশের মানুষ কম দামে মোবাইল ফোন কিনতে পারবে। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশীয় পর্যায়ে তৈরি মোবাইল ফোনের দাম খুব একটা কমেনি। পাঁচ মাসে কোম্পানিগুলো ১ হাজার ২১২ কোটি টাকার ছাড় পেলেও এর সমপরিমাণ সুফল ভোক্তারা পেয়েছেন কি না–এনবিআরের শুল্ক বিভাগ তা জানাতে পারেনি।
এ ছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য বিদেশ থেকে অনুদানের অনেক পণ্য আসে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থাও অনুদানের পণ্য পায়। এর জন্য গত পাঁচ মাসে সরকারের শুল্কছাড় হয়েছে ১৬২ কোটি টাকা। পোলট্রিশিল্পের পণ্য ও কাঁচামাল আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৩৯৭ কোটি টাকা। বিশেষ পরিপত্র জারি করে টেক্সটাইল শিল্পে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৩২৬ কোটি টাকা। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের অনুকূলে বিভিন্ন শিল্পের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে ৪৬৯ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণে জড়িত সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির অনুকূলে ছাড় দেওয়া হয়েছে ২৪৮ কোটি টাকা। এনবিআরের দেওয়া অ্যাডভান্স ট্যাক্সে ছাড় রয়েছে এমন পণ্যের আওতায় রয়েছে ৩ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকার ছাড়। অগ্রিম আয়কর রয়েছে এমন পণ্যে দেওয়া হয়েছে ৪৪৫ কোটি টাকার ছাড়। এসবের বাইরেও এনবিআরের বিশেষ ছাড়ের আওতায় দেওয়া হয়েছে আরও ৩ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার শুল্ক-সুবিধা।
এসব বিষয়ে এনবিআরের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সাধারণত দেশের উন্নয়ন, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো এবং সর্বোপরি, দীর্ঘ মেয়াদে যাতে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়, সে জন্য এনবিআর বিভিন্ন সময়ে রাজস্ব ছাড় দেয়। এটি সরকারের সদিচ্ছারই প্রকাশ।
এনবিআরের সাবেক সদস্য ও শুল্ক বিশেষজ্ঞ আবদুল মান্নান পাটোয়ারী শুল্কছাড়ে অনিয়মের বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে শুল্কছাড় দেশ ও মানুষের স্বার্থে। তবে এর আড়ালে অনিয়ম হতে পারে। এ জন্য এনবিআরের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট একটি টিম রয়েছে, তারা আমদানিকারকদের প্রোফাইল পর্যালোচনা করে, যেসব আমদানিতে অনিয়ম হতে পারে, তা আটক করতে পারে।’
শুল্ক খাতের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিশেষ বিশেষ শুল্কছাড়ের আড়ালে মুদ্রা পাচার, ক্ষতিকর পণ্য আমদানিসহ নানা অনিয়মের ঘটনাও কম নয়। একটি অসাধু চক্র শূন্য শুল্কের পণ্যকে লক্ষ্য করে পণ্য আমদানি করে থাকে। তারা জানে যে শুল্ক না থাকায় এসব পণ্যে তেমন নজরদারি থাকে না। ওই সুযোগে অনেক সময় বিনা বাধায় পণ্যগুলো ছাড় পেয়ে যায়। তাতে একদিকে, সরকার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়, দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয় আর ক্ষতিকর পণ্য প্রবেশের ফলে তা দেশের নিরাপত্তাসহ নানা দিকে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে