মোনায়েম সরকার
ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) বাংলাদেশে যে একটি জনমত জরিপ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন রয়েছে দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের। এ বছরের মার্চ-এপ্রিলে তারা দেশের ৬৪ জেলার ৫ হাজার ভোটারের সঙ্গে কথা বলে এ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সম্প্রতি। জরিপের নিয়ম মেনেই তারা এ কাজ সম্পন্ন করেছে বলে ধরে নেওয়া যায়। গ্রাম ও শহরের নারী-পুরুষ আর বিভিন্ন বয়সী মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেশ পরিচালনা, রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম, উন্নয়ন, নির্বাচন ও দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি চিত্র তারা তুলে ধরতে চেয়েছে। এতে একটা মিশ্র চিত্র উঠে এসেছে বলেই আমার মনে হলো। দেশের সব ক্ষেত্রে মানুষের মত যে একই ধারার নয়, সেটাও এই জরিপ থেকে কিছুটা বোঝা যায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর মানুষের আস্থার দিকটি। একই সংস্থা আগে যে জরিপ পরিচালনা করে, তাতেও দেখা গিয়েছিল, দেশের মানুষের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি। এবারের জরিপে সেটা আরও বেড়েছে। আর এটা আমাকে মোটেও অবাক করেনি।
মূলত বয়সের কারণে রাজনৈতিকভাবে আমি এখন আর অত সক্রিয় নই। খুব বেশি মানুষের সঙ্গে মেশারও সুযোগ এখন আর নেই। তা সত্ত্বেও বিভিন্নভাবে যেটুকু জানা ও বোঝার সুযোগ রয়েছে, তাতে নানা অপপ্রচারের মধ্যেও আমার কাছে স্পষ্টভাবে মনে হয় যে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কমার কোনো কারণ নেই। তাঁর নেতৃত্বে দেশ যে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে চলেছে, তা এ দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন করে জাতিকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগই পেলেন না। দেশি-বিদেশি চক্রান্তে তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকারী ও তাদের সমর্থক সরকারগুলো দেশকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারায়ও নিয়ে যায়। এর কুফল আমাদের বহন করতে হয় দীর্ঘদিন।
অন্যায়ভাবে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ক্ষমতায় ফিরে আসে আওয়ামী লীগ। দেশকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রয়াস নেওয়া হয়। কিন্তু একটি বিপথগামী দেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারায় নিয়ে আসতে যে কিছুটা সময় লাগে; সরকারের ধারাবাহিকতারও প্রয়োজন হয়, সেটা তখন তিনি পাননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পরই আসে সেই সুযোগ।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সুযোগ পায় জাতির পিতার অনিষ্পন্ন কাজ ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। তাঁর নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করার উদ্যোগও নেন তিনি, যা একসময় অকল্পনীয় ছিল। এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান। দেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে নিয়ে যাওয়ার যে মহাপরিকল্পনা তিনি নেন, সে ক্ষেত্রেও তিনি হয়ে উঠেছেন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। এ জন্য শুধু দেশেই তাঁর প্রতি সমর্থন বাড়েনি, বিদেশেও বেড়েছে শেখ হাসিনার প্রতি আগ্রহ। ব্যক্তি শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বের প্রতি আগ্রহ। এ কারণে অনেক সময়ই বলা হয়ে থাকে, দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর বিকল্প নেই। তাঁর নেতৃত্বাধীন দল ও সরকারে অন্য যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকের কাজে মানুষের অসন্তোষ থাকতে পারে, কিন্তু শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে বিষয়টি পুরোপুরি ভিন্ন। সে জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার জরিপেও বিষয়টি উঠে এল।
কী কী কারণে শেখ হাসিনার প্রতি দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে, সেটা অনুসন্ধান করতে গিয়ে জরিপকারীরা দেখেছেন, রাস্তাঘাট, সেতুসহ অবকাঠামো নির্মাণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করছে মানুষ। জরিপটি সম্পন্ন হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিলে। এখন আগস্ট মাস চলছে। এর মধ্যে কি শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কমেছে? তা আমার মনে হয় না। কেননা, যে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা নেতৃত্বের বড় দিক, সেটা এই সময়ে আরও ভালোভাবে স্পষ্ট হয়েছে।
আমরা জানি, আগামী নির্বাচন ঘিরে দেশে-বিদেশে কিছু নেতিবাচক তৎপরতা এই সময়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যে দেশের সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জরিপে শেখ হাসিনার প্রতি দেশের মানুষের ব্যাপক সমর্থন প্রকাশ পেয়েছে, সেই দেশের নেতৃত্বেই একটি মহল বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আপত্তিকর ভূমিকায় নেমেছে। এটা স্পষ্টতই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো চাপের কাছেই নতি স্বীকার করতে রাজি নন। দেশের স্বার্থ রক্ষায় তিনিও পিতার মতো সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত বলে বারবার জানাচ্ছেন। এতে তাঁর প্রতি দেশের মানুষের সহানুভূতি ও সমর্থন যে আরও বাড়বে, তাতে অন্তত আমার কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও এই মুহূর্তে একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিভিন্ন বহিস্থ কারণই মূলত দায়ী। দেশের দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের যে এ ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা নেই, তা-ও বলা যাবে না। তাঁরা দেশের ব্যাংক খাতকে এরই মধ্যে একটা সংকটে ফেলে দিয়েছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির জন্যও তাঁরা অনেকখানি দায়ী। তবে পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক, শেখ হাসিনা আছেন জাতির কান্ডারি হিসেবে। তাঁর প্রতি সমর্থন অটুট রয়েছে মানুষের। এটা তাঁর জন্যও একটি শক্তি।
সাধারণত দেখা যায়, বছরের পর বছর, মেয়াদের পর মেয়াদ দেশ পরিচালনা করলে সরকার তো জনপ্রিয়তা হারায়ই; সরকারপ্রধানও অজনপ্রিয় হয়ে পড়েন। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এটা আমরা দেখেছি। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলেন শেখ হাসিনা। তিনি তাঁর নেতৃত্বগুণ ও কাজের জন্য বিদেশেও আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছেন। তাঁর সততা, পরিশ্রম, নতুন নতুন ধারণা বাস্তবায়নের প্রতি আগ্রহ এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় দৃঢ়তা শেখ হাসিনাকে এ জায়গায় নিয়ে এসেছে।
এ কথাও ঠিক, শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি যতটা উজ্জ্বল, তাঁর সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁদের কাজে জনসাধারণের সেই মাত্রায় সমর্থন রয়েছে—এটা বলা যাবে না। তাঁদের অনেকের কাজে যে মানুষের অসন্তোষ রয়েছে, সেটা বুঝতেও কষ্ট হয় না। আইআরআইয়ের জরিপে আরও যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তাতে বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের অসন্তোষও কারও নজর এড়াবে না। যেমন, মানুষ দুর্নীতি নিয়ে চিন্তিত। বেকারত্ব ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অনেকে অসন্তুষ্ট। সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষের হতাশাও কম নয়। এ অবস্থায় বিরোধী দলের প্রতি সমর্থন কিছুটা বেড়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
আমার সব সময়ই মনে হয়, শেখ হাসিনার সহকর্মীরা সবাই যদি তাঁর সঙ্গে যথাযথভাবে সমন্বয় করে কাজ করতেন, একই মনোভাব নিয়ে পথ চলতেন, তাহলে জরিপে উঠে আসা এসব নেতিবাচক দিকও সহনীয় পর্যায়ে থাকত। আগামী নির্বাচনের বিষয়ে মতামতের যে চিত্র জরিপে প্রকাশ পেয়েছে, সেটাও কিছুটা মিশ্র বলা যায়। তবে বিরোধী দলের আন্দোলন ও তাদের দাবির প্রতি যে ‘ব্যাপক সমর্থনের’ কথা অনেকে বলতে চান, জরিপে সেটা উঠে আসেনি। আমাদের দেশের মানুষ এসব প্রশ্নে সব সময়ই বিভক্ত। একটি সরকার টানা তিন মেয়াদ দেশ চালালে সব কাজ সব সময় ইতিবাচকভাবে করতে পারে না, এটাও স্বাভাবিক।
আর বিরোধী দলকে তো সমালোচনা ছাড়া কিছু করতে হয় না। অতীতে তাদের যেসব ভয়াবহ অপকর্ম ছিল, সেগুলোও মানুষ ভুলে যেতে থাকে। কারণ, তাদের কাছে বর্তমান প্রবলভাবে উপস্থিত এবং তারা চিন্তা করে ভবিষ্যৎ নিয়ে। তবে এই জায়গায়ও রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুরুত্ব। তিনি বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে চান। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দেশকে তিনি নিয়ে যাবেন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনাও তাঁর রয়েছে। সে জন্য তিনি প্রয়োজনে দল, সরকার, প্রশাসনসহ সবকিছুকে ঢেলে সাজাবেন। এ জন্যই তিনি চান ‘ক্ষমতা’। এটাকে অনেকে ভুল বুঝে অন্য কিছু বলে ব্যাখ্যা করেন, তা নয়। শেখ হাসিনা তাঁর পিতার মতোই দৃঢ়ভাবে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। এ দেশে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনিই ছিলেন অগ্রভাগে। দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের বেদনাও তিনিই সবচেয়ে গভীরভাবে অনুভব করেন। দেশের অর্থনীতি পরিচালনার দিকেও রয়েছে তাঁর দৃষ্টি।
একটি ক্ষুধামুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তাঁর সহকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা যে বিকল্পহীন, এটা এ দেশের মানুষও মনে করে। কেননা, তারা অকৃতজ্ঞ নয়। তারা ভালোবাসার প্রতিদান দিতে জানে। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই অনুষ্ঠিত হবে এবং এতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বই জয়যুক্ত হবে নতুন করে।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) বাংলাদেশে যে একটি জনমত জরিপ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন রয়েছে দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের। এ বছরের মার্চ-এপ্রিলে তারা দেশের ৬৪ জেলার ৫ হাজার ভোটারের সঙ্গে কথা বলে এ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সম্প্রতি। জরিপের নিয়ম মেনেই তারা এ কাজ সম্পন্ন করেছে বলে ধরে নেওয়া যায়। গ্রাম ও শহরের নারী-পুরুষ আর বিভিন্ন বয়সী মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেশ পরিচালনা, রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম, উন্নয়ন, নির্বাচন ও দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি চিত্র তারা তুলে ধরতে চেয়েছে। এতে একটা মিশ্র চিত্র উঠে এসেছে বলেই আমার মনে হলো। দেশের সব ক্ষেত্রে মানুষের মত যে একই ধারার নয়, সেটাও এই জরিপ থেকে কিছুটা বোঝা যায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর মানুষের আস্থার দিকটি। একই সংস্থা আগে যে জরিপ পরিচালনা করে, তাতেও দেখা গিয়েছিল, দেশের মানুষের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি। এবারের জরিপে সেটা আরও বেড়েছে। আর এটা আমাকে মোটেও অবাক করেনি।
মূলত বয়সের কারণে রাজনৈতিকভাবে আমি এখন আর অত সক্রিয় নই। খুব বেশি মানুষের সঙ্গে মেশারও সুযোগ এখন আর নেই। তা সত্ত্বেও বিভিন্নভাবে যেটুকু জানা ও বোঝার সুযোগ রয়েছে, তাতে নানা অপপ্রচারের মধ্যেও আমার কাছে স্পষ্টভাবে মনে হয় যে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কমার কোনো কারণ নেই। তাঁর নেতৃত্বে দেশ যে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে চলেছে, তা এ দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন করে জাতিকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগই পেলেন না। দেশি-বিদেশি চক্রান্তে তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকারী ও তাদের সমর্থক সরকারগুলো দেশকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারায়ও নিয়ে যায়। এর কুফল আমাদের বহন করতে হয় দীর্ঘদিন।
অন্যায়ভাবে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ক্ষমতায় ফিরে আসে আওয়ামী লীগ। দেশকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রয়াস নেওয়া হয়। কিন্তু একটি বিপথগামী দেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারায় নিয়ে আসতে যে কিছুটা সময় লাগে; সরকারের ধারাবাহিকতারও প্রয়োজন হয়, সেটা তখন তিনি পাননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পরই আসে সেই সুযোগ।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সুযোগ পায় জাতির পিতার অনিষ্পন্ন কাজ ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। তাঁর নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করার উদ্যোগও নেন তিনি, যা একসময় অকল্পনীয় ছিল। এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান। দেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে নিয়ে যাওয়ার যে মহাপরিকল্পনা তিনি নেন, সে ক্ষেত্রেও তিনি হয়ে উঠেছেন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। এ জন্য শুধু দেশেই তাঁর প্রতি সমর্থন বাড়েনি, বিদেশেও বেড়েছে শেখ হাসিনার প্রতি আগ্রহ। ব্যক্তি শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বের প্রতি আগ্রহ। এ কারণে অনেক সময়ই বলা হয়ে থাকে, দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর বিকল্প নেই। তাঁর নেতৃত্বাধীন দল ও সরকারে অন্য যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকের কাজে মানুষের অসন্তোষ থাকতে পারে, কিন্তু শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে বিষয়টি পুরোপুরি ভিন্ন। সে জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার জরিপেও বিষয়টি উঠে এল।
কী কী কারণে শেখ হাসিনার প্রতি দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে, সেটা অনুসন্ধান করতে গিয়ে জরিপকারীরা দেখেছেন, রাস্তাঘাট, সেতুসহ অবকাঠামো নির্মাণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করছে মানুষ। জরিপটি সম্পন্ন হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিলে। এখন আগস্ট মাস চলছে। এর মধ্যে কি শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কমেছে? তা আমার মনে হয় না। কেননা, যে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা নেতৃত্বের বড় দিক, সেটা এই সময়ে আরও ভালোভাবে স্পষ্ট হয়েছে।
আমরা জানি, আগামী নির্বাচন ঘিরে দেশে-বিদেশে কিছু নেতিবাচক তৎপরতা এই সময়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যে দেশের সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জরিপে শেখ হাসিনার প্রতি দেশের মানুষের ব্যাপক সমর্থন প্রকাশ পেয়েছে, সেই দেশের নেতৃত্বেই একটি মহল বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আপত্তিকর ভূমিকায় নেমেছে। এটা স্পষ্টতই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো চাপের কাছেই নতি স্বীকার করতে রাজি নন। দেশের স্বার্থ রক্ষায় তিনিও পিতার মতো সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত বলে বারবার জানাচ্ছেন। এতে তাঁর প্রতি দেশের মানুষের সহানুভূতি ও সমর্থন যে আরও বাড়বে, তাতে অন্তত আমার কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও এই মুহূর্তে একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিভিন্ন বহিস্থ কারণই মূলত দায়ী। দেশের দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের যে এ ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা নেই, তা-ও বলা যাবে না। তাঁরা দেশের ব্যাংক খাতকে এরই মধ্যে একটা সংকটে ফেলে দিয়েছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির জন্যও তাঁরা অনেকখানি দায়ী। তবে পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক, শেখ হাসিনা আছেন জাতির কান্ডারি হিসেবে। তাঁর প্রতি সমর্থন অটুট রয়েছে মানুষের। এটা তাঁর জন্যও একটি শক্তি।
সাধারণত দেখা যায়, বছরের পর বছর, মেয়াদের পর মেয়াদ দেশ পরিচালনা করলে সরকার তো জনপ্রিয়তা হারায়ই; সরকারপ্রধানও অজনপ্রিয় হয়ে পড়েন। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এটা আমরা দেখেছি। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলেন শেখ হাসিনা। তিনি তাঁর নেতৃত্বগুণ ও কাজের জন্য বিদেশেও আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছেন। তাঁর সততা, পরিশ্রম, নতুন নতুন ধারণা বাস্তবায়নের প্রতি আগ্রহ এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় দৃঢ়তা শেখ হাসিনাকে এ জায়গায় নিয়ে এসেছে।
এ কথাও ঠিক, শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি যতটা উজ্জ্বল, তাঁর সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁদের কাজে জনসাধারণের সেই মাত্রায় সমর্থন রয়েছে—এটা বলা যাবে না। তাঁদের অনেকের কাজে যে মানুষের অসন্তোষ রয়েছে, সেটা বুঝতেও কষ্ট হয় না। আইআরআইয়ের জরিপে আরও যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তাতে বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের অসন্তোষও কারও নজর এড়াবে না। যেমন, মানুষ দুর্নীতি নিয়ে চিন্তিত। বেকারত্ব ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অনেকে অসন্তুষ্ট। সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষের হতাশাও কম নয়। এ অবস্থায় বিরোধী দলের প্রতি সমর্থন কিছুটা বেড়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
আমার সব সময়ই মনে হয়, শেখ হাসিনার সহকর্মীরা সবাই যদি তাঁর সঙ্গে যথাযথভাবে সমন্বয় করে কাজ করতেন, একই মনোভাব নিয়ে পথ চলতেন, তাহলে জরিপে উঠে আসা এসব নেতিবাচক দিকও সহনীয় পর্যায়ে থাকত। আগামী নির্বাচনের বিষয়ে মতামতের যে চিত্র জরিপে প্রকাশ পেয়েছে, সেটাও কিছুটা মিশ্র বলা যায়। তবে বিরোধী দলের আন্দোলন ও তাদের দাবির প্রতি যে ‘ব্যাপক সমর্থনের’ কথা অনেকে বলতে চান, জরিপে সেটা উঠে আসেনি। আমাদের দেশের মানুষ এসব প্রশ্নে সব সময়ই বিভক্ত। একটি সরকার টানা তিন মেয়াদ দেশ চালালে সব কাজ সব সময় ইতিবাচকভাবে করতে পারে না, এটাও স্বাভাবিক।
আর বিরোধী দলকে তো সমালোচনা ছাড়া কিছু করতে হয় না। অতীতে তাদের যেসব ভয়াবহ অপকর্ম ছিল, সেগুলোও মানুষ ভুলে যেতে থাকে। কারণ, তাদের কাছে বর্তমান প্রবলভাবে উপস্থিত এবং তারা চিন্তা করে ভবিষ্যৎ নিয়ে। তবে এই জায়গায়ও রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুরুত্ব। তিনি বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে চান। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দেশকে তিনি নিয়ে যাবেন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনাও তাঁর রয়েছে। সে জন্য তিনি প্রয়োজনে দল, সরকার, প্রশাসনসহ সবকিছুকে ঢেলে সাজাবেন। এ জন্যই তিনি চান ‘ক্ষমতা’। এটাকে অনেকে ভুল বুঝে অন্য কিছু বলে ব্যাখ্যা করেন, তা নয়। শেখ হাসিনা তাঁর পিতার মতোই দৃঢ়ভাবে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। এ দেশে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনিই ছিলেন অগ্রভাগে। দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের বেদনাও তিনিই সবচেয়ে গভীরভাবে অনুভব করেন। দেশের অর্থনীতি পরিচালনার দিকেও রয়েছে তাঁর দৃষ্টি।
একটি ক্ষুধামুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তাঁর সহকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা যে বিকল্পহীন, এটা এ দেশের মানুষও মনে করে। কেননা, তারা অকৃতজ্ঞ নয়। তারা ভালোবাসার প্রতিদান দিতে জানে। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই অনুষ্ঠিত হবে এবং এতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বই জয়যুক্ত হবে নতুন করে।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে