গ্যাস-সংকটে ভুগছে দেশের প্রতিটি খাত। গৃহস্থালিতে বেশির ভাগ সময় গ্যাস থাকছে না। শিল্পমালিকদের অভিযোগ, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। এবার সিএনজি ফিলিং স্টেশনেও দেখা দিয়েছে গ্যাসের সংকট। চাপ না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গ্যাস নিতে পারছেন না সিএনজিচালিত গাড়ির চালকেরা।
গতকাল সোমবার বেলা ১টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাউদার্ন সিএনজি স্টেশনে গিয়ে চোখে পড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের দীর্ঘ সারি।
গ্যাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা এসব গাড়ির লাইন মূল সড়ক পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেঁষে যাওয়া নাখালপাড়ার রাস্তায় গিয়ে ঠেকেছে।
সাউদার্ন সিএনজি স্টেশনে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তাফার সঙ্গে। তিনি জানান, দু-তিন দিন ধরে গ্যাসের চাপ অনেক কমে গেছে। চাপ না থাকার কারণে যানবাহনে সিএনজি দিতে বেশি সময় লাগছে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার কারণেও গ্যাস সরবরাহে দেরি হচ্ছে। এতে চালকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।
পেট্রোবাংলার তথ্য বলছে, সারা দেশে সিএনজি ফিলিং স্টেশন আছে ৬০৩টি। আর সিএনজিতে রূপান্তরিত গাড়ি চলে সারা দেশে ৮ হাজার ৬১২টি। প্রতি মাসে সিএনজি গ্যাস সরবরাহ করা হয় ২ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন কিউবিক ফুট, যা দেশের মোট গ্যাস ব্যবহারের ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।
গ্যাসের অপর্যাপ্ত চাপ ও লোডশেডিংয়ের কারণে সিএনজি ফিলিং স্টেশনের যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর।
ফারহান নূর আজকের পত্রিকাকে বলেন, সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ফিলিং স্টেশন এমনিতে বন্ধ থাকে। গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে চাপ উঠতে বিকেল গড়িয়ে যায়। যেখানে চাপ থাকার কথা ১০-১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে গ্যাস চাপের ইউনিট) সেখানে পাওয়া যায় ২-৩ পিএসআই। অন্যান্য সময়ে চাপ ৫-৭ পিএসআইয়ে ওঠানামা করে। অনেক সময় গ্যাসের চাপ ঠিক রাখতে প্রেশার দিলে প্রায় সময় যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাসের চাপ কম থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশে গ্যাস-সংকট আছে। সেই বিবেচনায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনে চাপ কম থাকা স্বাভাবিক।
পেট্রোবাংলা সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে কি না, জানতে চাইলে জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘আমরা একই সরবরাহ লাইন দিয়ে শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, গৃহস্থালি ও ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ করি। বর্তমান ব্যবস্থাপনায় এককভাবে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকার ধীরে ধীরে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। যানবাহনে সিএনজির পরিবর্তে অটো গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে চাইছে। জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে গ্যাসের সংকট আছে। এই সংকট নিরসনে সরকার বেশি দামে এলএনজি আমদানি করছে। সামনের দিনগুলোয় গৃহস্থালি ও সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিল্পকারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। শিল্পকারখানার জন্য আলাদা সরবরাহ লাইন করার চিন্তা আছে।
সরকারের এই ভাবনার প্রতিফলন দেখা যায় পাঁচ বছরে (২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬ পর্যন্ত) গ্যাসের সম্ভাব্য চাহিদা নিয়ে পেট্রোবাংলার করা প্রতিবেদনে। বিদ্যুৎকেন্দ্র, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট, শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বাড়লেও সিএনজি ফিলিং স্টেশনে এই পাঁচ বছর গ্যাসের চাহিদা প্রতিদিন ১২৪ মিলিয়ন কিউবিক ফুট থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। অন্যদিকে গৃহস্থালিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্যাসের সরবরাহ প্রতিদিন ৩৬৭ মিলিয়ন কিউবিক ফুট থাকলেও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সেটার চাহিদা ধরা হয়েছে ৩৪১ মিলিয়ন কিউবিক ফুট।