রুশা চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী
যত সহজে কোনো কিছু ত্যাগ করব বলি আমরা, ততটা সহজে কি করা যায়? মন তখন কী বলে, প্রাণই বা কিসের বাণী শুনতে চায়? তিল তিল করে বহু যত্নে যে স্থাপত্য একদিন মানুষ বানিয়েছিল, তা এক মুহূর্তের বিভ্রমে লন্ডভন্ড হয়ে যেতে পারে। হয়তো এটাই জীবন।
কিছুই বিজ্ঞানের সূত্রের মতো অবশ্যম্ভাবী সত্য নয়। ‘জন্ম’ যত সহজে মেনে নেয়, ‘জন্মান্তর’ তেমন সহজে মানে না মানুষ। সবটা যদি সহজ হতো তবে জীবনের কত দুরূহ সমস্যার সমাধান সে করে দিতে পারত।
চোখের কোলে জল নিয়ে যে নারী বসে ছিল, তার ঠোঁটে এক সূক্ষ্ম অভিমান! কেউ জানতে পারেনি, জীবনের দীর্ঘযাত্রাপথ যার অপেক্ষায় আঁচল পেতে ছিল, তার আগমন বার্তায় তার ঘরে শঙ্খধ্বনি নয়, কেমন কঠিন সত্য উচ্চারিত হয়েছিল—
‘বয়স আমার অন্তত পঁয়ত্রিশ
পনের বছরে পা দিয়েছ তুমি সবে
তবু গুঢ় ক্ষতে চোয়ায় স্মৃতির বিষ
তাকালে তোমার তরুণ মুখাবয়বে।’
সুধীন্দ্রনাথ এভাবে হাইনরিখ হাইনকে ধরেছিলেন তাঁর কলমে। অভিমানে মানুষটা যখন বিড়বিড় করে এই কথাগুলোই আবার বলে, ‘ইয়েট দ্য পয়জন অব মেমোরি উজেস ফ্রম দ্য সিক্রেট উন্ড...’—কবিতাটা যেন তার আসল চেহারা পায়! কী গভীর গোপন সব কথা দিয়ে আপাত সাদামাটা কিন্তু দারুণ কঠিন কিছু কথা সাজিয়ে ঢেকে রাখা। ‘গুঢ় ক্ষত’, বাংলায় যে রোমান্টিকতা নিয়ে পড়ে ফেলি, ইংরেজির ‘সিক্রেট উন্ড’ কেমন বাস্তবের কঠিন মাটিতে নামিয়ে আনে! আসলে ‘দুঃখ’ হোক, কী ‘সুখ’—ভালো করে বুঝতে হলে তাদের মাটিতে নামিয়ে আনতে হয়। দূরের আকাশ আর তার বুকের তারাদের মতো আরকি। দূর থেকে দেখলে যেমন তাদের খানাখন্দ চোখ এড়িয়ে যায়, আমরা রোমান্টিক হই—অনেকটা তেমনি।
এ পৃথিবীতে যখন প্রজা বাড়ানো দরকার ছিল, তখন থেকেই মেয়েদের রক্তে ঢোকানো হয়েছিল মন্ত্র, ‘মাতৃত্ব তার চরম সার্থকতা’। ধীরে ধীরে সমাজের সে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল, তবু ‘নারীত্ব’ আর ‘মাতৃত্ব’—এই দুইয়ের মাঝের সমীকরণের সূক্ষ্ম রেখা আর তা নিয়ে বাদানুবাদ বাদ দেওয়া গেল না। অনেক নারী তাই একসময় তাদের মাতৃত্ব বাদ দিতে ব্যস্ত হয়, চায় নিজের স্বাধীনতা। কোনো ব্যাকুল নারী হয়তো সে সময় একান্ত নিজের সন্তান চায়, তার আপন ইচ্ছায়, কোনো নিয়মের বেড়াজালে নয়।
কিন্তু এরই ফাঁকে কথা বলে উঠল সেই সীমারেখা, যা সেই প্রস্তর যুগেই মানুষ তৈরি করেছিল, মানুষ-সমাজের চিরকালের মুদ্রাদোষ। অবাক চোখে নারী পাশে পায় কাকে? সমাজ, সংসার, নিয়ম, ভালোবাসা? চোখের কোণে জল বা আগুন নিয়ে নারী ভাবে কিসে তার মুক্তি। এই সমাজ, সংসার, ভালোবাসা—কত নামেই না তাকে প্রতি পদে মহিমান্বিত করেছে। যত সে মহান, ততই তার বন্ধন। প্রতিটি ভালোবাসার স্পর্শ, প্রতিটি একলা পদক্ষেপ তার পায়ের শিকলের শব্দে সাজানো। সমাজ সংসার অভ্যাসের বাতাবরণ ক্লান্তিকর অভ্যাসে তাকে সন্তানবতী হতে দেবে কিন্তু হৃদয় দিয়ে নয়। অনাদিকাল থেকে নিজের জীবনের যে সার্থকতার বাণী সে ধারণ করে আছে, তার সবই আসলে তাকে বেঁধে রাখারই মন্ত্র। শুধু হৃদয়ের কোনো স্থান তার জীবনে নেই।
যেদিন তার ভালোবাসা তাকে ভুলে গেল, সব সান্ত্বনা কোথায় মিলিয়ে গেল! বেঁচে থাকল শুধু হাহাকার, এক পদাবলির হাহাকার! ক্লান্ত স্বরে সে শুধু বলেছিল, ‘শূন্য মন্দির মোর!’ যাকে বেছে নিয়েছিল জীবনের সঙ্গী করে, তার অবহেলায় নিয়ত নিজের আত্মবিশ্বাস, অহংকার চূর্ণ হতে দেখেছিল সে। কার জন্য প্রতীক্ষা নারীর, সে কার চির-প্রথমা? নাকি তারও ছিল কোনো প্রথম চাওয়া? যে বহু শতাব্দী পরে তার দ্বারে নতমুখ, ‘তোমার মন্দির ভরব বলে এতকাল পরে এলাম, ইতিহাস আর পুরাণের মাঝখানে ভয়ের শীতল নদী পার হয়ে!’ বিষাদের নীল পদ্ম হাতে পুরান নদীর পাড়ে দাঁড়ায় নারী, তার সীমাহীন গভীরতায় থই পায় না সে পুরুষ। কী অতলস্পর্শ নিবেদন! এর গভীরতা মাপার বা বোঝার সাধ্য কই পুরুষের? ঢেউয়ের পরে ঢেউ ভাসিয়ে নেয় তার অহংয়ের ভেলাগুলো।
ভাঙা হাল, ছেঁড়া পাল হাতে কাণ্ডারি তখন নারী। সমস্ত প্রাচুর্যময় উপকরণ নিয়েও প্রথম পুরুষ এ যাত্রার কান্ডারি হতে পারে না। সকল অপারগতা বিলীন তখন নারীর গভীরে। সারা রাত নৌকা বেয়ে বিশুদ্ধ সকালে আকাশের কাছে হাত পাতে নারী, ‘আমার যে ঐশ্বর্যভার এ আমি তবে কাকে দিব? নাকি চিরকাল উদ্বৃত্ত থেকে যাওয়াই আমার নিয়তি?’
হঠাৎ হাওয়ায় মন্দ্র স্বরে ডাক দিয়ে ঠিক হাওয়ার মতো কে যেন তাকে ছোঁয়। বহুদিনের চেনা এক অনুভব তার চারপাশে, শরীরে কাঁটার মতো ফুটে আছে এক ব্যথা। আলোর গভীরতায় সুপ্তোত্থিত হয় সে, বুঝতে পারে এই সে চেয়েছিল। ঠিক এমন। পেয়েছে সে, এবার থেকে এ তার রক্তে রক্তে বইবে, গাইবে, তাকেও গাওয়াবে। জীবন...সমস্ত আকুলতা, নিবেদন নিঃশেষ করে নিয়েও আবার হাজারগুণে তাদের ফিরিয়েও দেবে। এই তবে নারীজীবনের বয়ে চলা, যা তাকে পৃথিবীর কাছে উন্মুক্ত করে।
যত সহজে কোনো কিছু ত্যাগ করব বলি আমরা, ততটা সহজে কি করা যায়? মন তখন কী বলে, প্রাণই বা কিসের বাণী শুনতে চায়? তিল তিল করে বহু যত্নে যে স্থাপত্য একদিন মানুষ বানিয়েছিল, তা এক মুহূর্তের বিভ্রমে লন্ডভন্ড হয়ে যেতে পারে। হয়তো এটাই জীবন।
কিছুই বিজ্ঞানের সূত্রের মতো অবশ্যম্ভাবী সত্য নয়। ‘জন্ম’ যত সহজে মেনে নেয়, ‘জন্মান্তর’ তেমন সহজে মানে না মানুষ। সবটা যদি সহজ হতো তবে জীবনের কত দুরূহ সমস্যার সমাধান সে করে দিতে পারত।
চোখের কোলে জল নিয়ে যে নারী বসে ছিল, তার ঠোঁটে এক সূক্ষ্ম অভিমান! কেউ জানতে পারেনি, জীবনের দীর্ঘযাত্রাপথ যার অপেক্ষায় আঁচল পেতে ছিল, তার আগমন বার্তায় তার ঘরে শঙ্খধ্বনি নয়, কেমন কঠিন সত্য উচ্চারিত হয়েছিল—
‘বয়স আমার অন্তত পঁয়ত্রিশ
পনের বছরে পা দিয়েছ তুমি সবে
তবু গুঢ় ক্ষতে চোয়ায় স্মৃতির বিষ
তাকালে তোমার তরুণ মুখাবয়বে।’
সুধীন্দ্রনাথ এভাবে হাইনরিখ হাইনকে ধরেছিলেন তাঁর কলমে। অভিমানে মানুষটা যখন বিড়বিড় করে এই কথাগুলোই আবার বলে, ‘ইয়েট দ্য পয়জন অব মেমোরি উজেস ফ্রম দ্য সিক্রেট উন্ড...’—কবিতাটা যেন তার আসল চেহারা পায়! কী গভীর গোপন সব কথা দিয়ে আপাত সাদামাটা কিন্তু দারুণ কঠিন কিছু কথা সাজিয়ে ঢেকে রাখা। ‘গুঢ় ক্ষত’, বাংলায় যে রোমান্টিকতা নিয়ে পড়ে ফেলি, ইংরেজির ‘সিক্রেট উন্ড’ কেমন বাস্তবের কঠিন মাটিতে নামিয়ে আনে! আসলে ‘দুঃখ’ হোক, কী ‘সুখ’—ভালো করে বুঝতে হলে তাদের মাটিতে নামিয়ে আনতে হয়। দূরের আকাশ আর তার বুকের তারাদের মতো আরকি। দূর থেকে দেখলে যেমন তাদের খানাখন্দ চোখ এড়িয়ে যায়, আমরা রোমান্টিক হই—অনেকটা তেমনি।
এ পৃথিবীতে যখন প্রজা বাড়ানো দরকার ছিল, তখন থেকেই মেয়েদের রক্তে ঢোকানো হয়েছিল মন্ত্র, ‘মাতৃত্ব তার চরম সার্থকতা’। ধীরে ধীরে সমাজের সে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল, তবু ‘নারীত্ব’ আর ‘মাতৃত্ব’—এই দুইয়ের মাঝের সমীকরণের সূক্ষ্ম রেখা আর তা নিয়ে বাদানুবাদ বাদ দেওয়া গেল না। অনেক নারী তাই একসময় তাদের মাতৃত্ব বাদ দিতে ব্যস্ত হয়, চায় নিজের স্বাধীনতা। কোনো ব্যাকুল নারী হয়তো সে সময় একান্ত নিজের সন্তান চায়, তার আপন ইচ্ছায়, কোনো নিয়মের বেড়াজালে নয়।
কিন্তু এরই ফাঁকে কথা বলে উঠল সেই সীমারেখা, যা সেই প্রস্তর যুগেই মানুষ তৈরি করেছিল, মানুষ-সমাজের চিরকালের মুদ্রাদোষ। অবাক চোখে নারী পাশে পায় কাকে? সমাজ, সংসার, নিয়ম, ভালোবাসা? চোখের কোণে জল বা আগুন নিয়ে নারী ভাবে কিসে তার মুক্তি। এই সমাজ, সংসার, ভালোবাসা—কত নামেই না তাকে প্রতি পদে মহিমান্বিত করেছে। যত সে মহান, ততই তার বন্ধন। প্রতিটি ভালোবাসার স্পর্শ, প্রতিটি একলা পদক্ষেপ তার পায়ের শিকলের শব্দে সাজানো। সমাজ সংসার অভ্যাসের বাতাবরণ ক্লান্তিকর অভ্যাসে তাকে সন্তানবতী হতে দেবে কিন্তু হৃদয় দিয়ে নয়। অনাদিকাল থেকে নিজের জীবনের যে সার্থকতার বাণী সে ধারণ করে আছে, তার সবই আসলে তাকে বেঁধে রাখারই মন্ত্র। শুধু হৃদয়ের কোনো স্থান তার জীবনে নেই।
যেদিন তার ভালোবাসা তাকে ভুলে গেল, সব সান্ত্বনা কোথায় মিলিয়ে গেল! বেঁচে থাকল শুধু হাহাকার, এক পদাবলির হাহাকার! ক্লান্ত স্বরে সে শুধু বলেছিল, ‘শূন্য মন্দির মোর!’ যাকে বেছে নিয়েছিল জীবনের সঙ্গী করে, তার অবহেলায় নিয়ত নিজের আত্মবিশ্বাস, অহংকার চূর্ণ হতে দেখেছিল সে। কার জন্য প্রতীক্ষা নারীর, সে কার চির-প্রথমা? নাকি তারও ছিল কোনো প্রথম চাওয়া? যে বহু শতাব্দী পরে তার দ্বারে নতমুখ, ‘তোমার মন্দির ভরব বলে এতকাল পরে এলাম, ইতিহাস আর পুরাণের মাঝখানে ভয়ের শীতল নদী পার হয়ে!’ বিষাদের নীল পদ্ম হাতে পুরান নদীর পাড়ে দাঁড়ায় নারী, তার সীমাহীন গভীরতায় থই পায় না সে পুরুষ। কী অতলস্পর্শ নিবেদন! এর গভীরতা মাপার বা বোঝার সাধ্য কই পুরুষের? ঢেউয়ের পরে ঢেউ ভাসিয়ে নেয় তার অহংয়ের ভেলাগুলো।
ভাঙা হাল, ছেঁড়া পাল হাতে কাণ্ডারি তখন নারী। সমস্ত প্রাচুর্যময় উপকরণ নিয়েও প্রথম পুরুষ এ যাত্রার কান্ডারি হতে পারে না। সকল অপারগতা বিলীন তখন নারীর গভীরে। সারা রাত নৌকা বেয়ে বিশুদ্ধ সকালে আকাশের কাছে হাত পাতে নারী, ‘আমার যে ঐশ্বর্যভার এ আমি তবে কাকে দিব? নাকি চিরকাল উদ্বৃত্ত থেকে যাওয়াই আমার নিয়তি?’
হঠাৎ হাওয়ায় মন্দ্র স্বরে ডাক দিয়ে ঠিক হাওয়ার মতো কে যেন তাকে ছোঁয়। বহুদিনের চেনা এক অনুভব তার চারপাশে, শরীরে কাঁটার মতো ফুটে আছে এক ব্যথা। আলোর গভীরতায় সুপ্তোত্থিত হয় সে, বুঝতে পারে এই সে চেয়েছিল। ঠিক এমন। পেয়েছে সে, এবার থেকে এ তার রক্তে রক্তে বইবে, গাইবে, তাকেও গাওয়াবে। জীবন...সমস্ত আকুলতা, নিবেদন নিঃশেষ করে নিয়েও আবার হাজারগুণে তাদের ফিরিয়েও দেবে। এই তবে নারীজীবনের বয়ে চলা, যা তাকে পৃথিবীর কাছে উন্মুক্ত করে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে