আবু তাহের খান
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন’ শীর্ষক অধিবেশনে বক্তারা বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিজেই এখন নিয়ন্ত্রণে। ফলে ব্যাংকিং খাতকে নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য ওই সংস্থাটি শুধু যে হারিয়েছে তা-ই নয়, এ খাতে নিয়ন্ত্রণহীন বাঁধনহারা পরিবেশ টিকিয়ে রেখে ধূর্ত মালিক ও অসৎ গ্রাহককে বেসামাল লুটপাটে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিতেও ভূমিকা রাখছে। আর সেই ভূমিকার আওতায় খেলাপি ঋণের তথ্য লুকানো থেকে শুরু করে কিছুদিন পর পর এসআরও (Statutory Regulatory Order) জারি করে লুটেরাদের পক্ষে নানা ছাড় ও প্রণোদনা ঘোষণা ছাড়াও অনেক কিছুই রয়েছে। ধারণা করা যায়, নির্বাচনের বছর বিধায় এ ধরনের এসআরওভিত্তিক ছাড় ও প্রণোদনা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়তেই থাকবে এবং সেই ধারায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর গোষ্ঠীগত সংকীর্ণ স্বার্থের এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরও প্রসারিত হবে।
উল্লিখিত অধিবেশনে এ আলোচনাও এসেছে, ‘ভাই-মামাতো ভাই’দের পরিচালক বানিয়ে ব্যাংক পরিচালনা করাটাই ব্যাংকগুলোর আজকের এ দুরবস্থার অন্যতম কারণ। আর যে ব্যাংকে এ ধরনের পরিচালকের সংখ্যা যত বেশি, সেখানে দুর্নীতি, অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির মাত্রাও তত বেশি। এ প্রসঙ্গে অবলীলায় উঠে এসেছে বেসিক, পদ্মা, ইসলামী ও সোনালী ব্যাংকের কথা, যেগুলোর নানা কেলেঙ্কারির কথা এখনো মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু কী আশ্চর্য প্রহসন, কেলেঙ্কারির নায়কদের ব্যাপারে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা তন্দ্রাচ্ছন্ন নীরবতায় নিমগ্ন। আসলে যা কেলেঙ্কারিকে আড়াল করার কৌশল মাত্র। নইলে বলুন তো, কোন কারণে বেসিক ব্যাংকের কেলেঙ্কারির নায়ক তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু সব ধরনের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে? কোন কারণে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কোনো কারণ বা যুক্তি খুঁজে পায় না কিংবা কোন কারণে ব্যাংক তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা করে না?
দেশে এখন ঘোষিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা (ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত সময়ের হিসাব), যা এর পূর্ববর্তী প্রান্তিকের তুলনায় ১৪ হাজার কোটি টাকা কম। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ কি এতটুকু কমেছে? মোটেও না। তাহলে খেলাপি ঋণ কমে যাওয়ার এ দৃষ্টিনন্দন তথ্য জনসমক্ষে এল কেমন করে? বিষয়টি আসলে চতুর কৌশলের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। পুনঃ তফসিলকৃত খেলাপি ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এ পরিমাণ কমে গেছে। কী আশ্চর্য চালাকি ও ফাঁকিবাজি! এখন কথা হচ্ছে, ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির ঘটে যাওয়া প্রতারণা ও চালাকির ঘটনার কথা প্রায়ই শোনা গেলেও রাষ্ট্র কেন তার জনগণের সঙ্গে চালাকি বা প্রতারণা করবে? কিন্তু খেলাপি ঋণের তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তো আসলে তা-ই করছে; অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু নিয়ন্ত্রণই হারায়নি, অনিয়ন্ত্রিত অনাচারকে জোরদার করে তুলতেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, খেলাপি ঋণ নিয়ে তথ্য গোপন করা বা ঋণখেলাপিদের এরূপ অন্যায় কর্মে প্রশ্রয় ও সমর্থন জোগানো আর কত দিন চলবে কিংবা শিগগিরই কি তা বন্ধ হবে? এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ের ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও তাঁদের সাম্প্রতিক কার্যকলাপের দিকে তাকালে মনে হয় না তা কমবে। তারপরও এ মর্মে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করব যে ব্যাংকের ওই খেলাপি ঋণ তো আসলে আমানতকারীদের জমানো বা রক্ষিত অর্থেরই অংশ, যা এভাবে কুক্ষিগত বা ভোগ করার কোনো অধিকারই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নেই। তাহলেও যে এর উদ্যোক্তারা এরূপটি করে যাচ্ছেন, সেটি কি নীতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য? বাংলাদেশ ব্যাংক স্বায়ত্তশাসন হারিয়েছে বুঝলাম। কিন্তু সেখানে কর্মরত নীতিনির্ধারকেরা কি তাঁদের ন্যূনতম আত্মমর্যাদা ও দায়বোধের শেষ বিন্দুটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন? তার চেয়েও বড় কথা, দেশের ব্যাংকিং খাত এভাবে চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত তা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে কি না? যদি করে, তাহলে তার দায় কে বহন করবে?
ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে যে লুট পরিস্থিতি চলছে, তা থেকে এ খাতকে ন্যূনতম পরিসরে হলেও রক্ষা করতে না পারলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে তা কোন অবস্থার দিকে নিয়ে যায়, সেটি একটি চরম উদ্বেগের বিষয় বৈকি! এ অবস্থায় রাষ্ট্র যদি তার আর্থিক খাতের নীতিকাঠামোকে ন্যূনতম পরিসরে হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুগামী করে ঢেলে সাজাতে না পারে, তাহলে তা দেশে এমন এক অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যা মোকাবিলার সামর্থ্য হয়তো কারোরই থাকবে না। তাই দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে ব্যাংকিং খাতে আর কোনো হীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত হবে বলে মনে করি।
সামনেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। সেই বাজেটের প্রাথমিক রূপরেখা ও চিন্তাভাবনা নিশ্চয় ইতিমধ্যে খানিকটা দাঁড়িয়ে গেছে। সেখানে কী আছে বা থাকছে, আমরা তা এখনো জানি না। তবে সেটি যদি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো আবারও বিত্ত তোষণেরই হাতিয়ার হয়ে ওঠে এবং সেখানে ব্যাংকিং খাত যদি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম সহায়ক শক্তি না হয়ে মালিক ও অসৎ গ্রাহকের হীনস্বার্থ রক্ষার পুরোনো কৌশলে পরিণত হয়, তাহলে জন-আকাঙ্ক্ষাকে বলি দিয়ে জনদুর্ভোগ সেখানে অনিবার্য।
সাম্প্রতিক সময়ে আইএমএফ থেকে ঋণ গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত শর্তের আওতাধীন বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে গিয়ে সরকার হয়তো এই মুহূর্তে ব্যাংকিং খাতে কিছু একটা করে ফেলা থেকে খানিকটা সংযত আছে। কিন্তু সরকার যদি নিছক চাপে পড়ে অন্যায় কর্ম থেকে বিরত থাকার চলতি ধারার কৌশল অনুসরণ থেকে সরে এসে এটিকে নিজেদের স্থায়ী নীতি হিসেবে গ্রহণ করতে উদ্যোগী না হয়, তাহলে আইএমএফের শর্তের মেয়াদ বা চাপের পরিধি শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো নৈরাজ্য আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করবে বৈকি! ফলে এটিকে শুধু চাপ মোকাবিলার সাময়িক কৌশল হিসেবে গ্রহণ করলে হবে না—গ্রহণ করতে হবে রাষ্ট্রের স্থায়ী ও চলমান নীতিকৌশল হিসেবে। কিন্তু সরকার কি সেটি করতে সম্মত হবে, অন্তত এই ভোটের বছরে?
সব মিলিয়ে তাই লেখার শিরোনামের সূত্র ধরে বলা, ব্যাংকিং খাতে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে হলে সর্বাগ্রে এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। আর সে নিয়ন্ত্রণমুক্ত সংস্থার (যদি হয়) শীর্ষ নির্বাহীর পদে নিয়োগ দিতে হবে এমন সব ব্যক্তিকে, যাঁরা নিজেদের বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি না ভেবে একজন পেশাজীবী হিসেবে গণ্য করবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য এ দেশে সে রকম দক্ষ পেশাজীবী লোকের অভাব আছে বলে মনে হয় না। আর সে রকম পেশাজীবীরা নিয়ন্ত্রণমুক্ত অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংককে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পেলে তাঁরাই তখন ‘ভাই-মামাতো ভাই’দের সরিয়ে উপযুক্ত লোকদের বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পথ খুলে দিতে পারবেন। দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে সে রকম একটি ব্যাংকিং খাতই আমরা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
আবু তাহের খান, সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন’ শীর্ষক অধিবেশনে বক্তারা বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিজেই এখন নিয়ন্ত্রণে। ফলে ব্যাংকিং খাতকে নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য ওই সংস্থাটি শুধু যে হারিয়েছে তা-ই নয়, এ খাতে নিয়ন্ত্রণহীন বাঁধনহারা পরিবেশ টিকিয়ে রেখে ধূর্ত মালিক ও অসৎ গ্রাহককে বেসামাল লুটপাটে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিতেও ভূমিকা রাখছে। আর সেই ভূমিকার আওতায় খেলাপি ঋণের তথ্য লুকানো থেকে শুরু করে কিছুদিন পর পর এসআরও (Statutory Regulatory Order) জারি করে লুটেরাদের পক্ষে নানা ছাড় ও প্রণোদনা ঘোষণা ছাড়াও অনেক কিছুই রয়েছে। ধারণা করা যায়, নির্বাচনের বছর বিধায় এ ধরনের এসআরওভিত্তিক ছাড় ও প্রণোদনা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়তেই থাকবে এবং সেই ধারায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর গোষ্ঠীগত সংকীর্ণ স্বার্থের এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরও প্রসারিত হবে।
উল্লিখিত অধিবেশনে এ আলোচনাও এসেছে, ‘ভাই-মামাতো ভাই’দের পরিচালক বানিয়ে ব্যাংক পরিচালনা করাটাই ব্যাংকগুলোর আজকের এ দুরবস্থার অন্যতম কারণ। আর যে ব্যাংকে এ ধরনের পরিচালকের সংখ্যা যত বেশি, সেখানে দুর্নীতি, অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির মাত্রাও তত বেশি। এ প্রসঙ্গে অবলীলায় উঠে এসেছে বেসিক, পদ্মা, ইসলামী ও সোনালী ব্যাংকের কথা, যেগুলোর নানা কেলেঙ্কারির কথা এখনো মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু কী আশ্চর্য প্রহসন, কেলেঙ্কারির নায়কদের ব্যাপারে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা তন্দ্রাচ্ছন্ন নীরবতায় নিমগ্ন। আসলে যা কেলেঙ্কারিকে আড়াল করার কৌশল মাত্র। নইলে বলুন তো, কোন কারণে বেসিক ব্যাংকের কেলেঙ্কারির নায়ক তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু সব ধরনের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে? কোন কারণে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কোনো কারণ বা যুক্তি খুঁজে পায় না কিংবা কোন কারণে ব্যাংক তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা করে না?
দেশে এখন ঘোষিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা (ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত সময়ের হিসাব), যা এর পূর্ববর্তী প্রান্তিকের তুলনায় ১৪ হাজার কোটি টাকা কম। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ কি এতটুকু কমেছে? মোটেও না। তাহলে খেলাপি ঋণ কমে যাওয়ার এ দৃষ্টিনন্দন তথ্য জনসমক্ষে এল কেমন করে? বিষয়টি আসলে চতুর কৌশলের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। পুনঃ তফসিলকৃত খেলাপি ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এ পরিমাণ কমে গেছে। কী আশ্চর্য চালাকি ও ফাঁকিবাজি! এখন কথা হচ্ছে, ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির ঘটে যাওয়া প্রতারণা ও চালাকির ঘটনার কথা প্রায়ই শোনা গেলেও রাষ্ট্র কেন তার জনগণের সঙ্গে চালাকি বা প্রতারণা করবে? কিন্তু খেলাপি ঋণের তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তো আসলে তা-ই করছে; অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু নিয়ন্ত্রণই হারায়নি, অনিয়ন্ত্রিত অনাচারকে জোরদার করে তুলতেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, খেলাপি ঋণ নিয়ে তথ্য গোপন করা বা ঋণখেলাপিদের এরূপ অন্যায় কর্মে প্রশ্রয় ও সমর্থন জোগানো আর কত দিন চলবে কিংবা শিগগিরই কি তা বন্ধ হবে? এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ের ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও তাঁদের সাম্প্রতিক কার্যকলাপের দিকে তাকালে মনে হয় না তা কমবে। তারপরও এ মর্মে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করব যে ব্যাংকের ওই খেলাপি ঋণ তো আসলে আমানতকারীদের জমানো বা রক্ষিত অর্থেরই অংশ, যা এভাবে কুক্ষিগত বা ভোগ করার কোনো অধিকারই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নেই। তাহলেও যে এর উদ্যোক্তারা এরূপটি করে যাচ্ছেন, সেটি কি নীতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য? বাংলাদেশ ব্যাংক স্বায়ত্তশাসন হারিয়েছে বুঝলাম। কিন্তু সেখানে কর্মরত নীতিনির্ধারকেরা কি তাঁদের ন্যূনতম আত্মমর্যাদা ও দায়বোধের শেষ বিন্দুটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন? তার চেয়েও বড় কথা, দেশের ব্যাংকিং খাত এভাবে চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত তা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে কি না? যদি করে, তাহলে তার দায় কে বহন করবে?
ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে যে লুট পরিস্থিতি চলছে, তা থেকে এ খাতকে ন্যূনতম পরিসরে হলেও রক্ষা করতে না পারলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে তা কোন অবস্থার দিকে নিয়ে যায়, সেটি একটি চরম উদ্বেগের বিষয় বৈকি! এ অবস্থায় রাষ্ট্র যদি তার আর্থিক খাতের নীতিকাঠামোকে ন্যূনতম পরিসরে হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুগামী করে ঢেলে সাজাতে না পারে, তাহলে তা দেশে এমন এক অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যা মোকাবিলার সামর্থ্য হয়তো কারোরই থাকবে না। তাই দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে ব্যাংকিং খাতে আর কোনো হীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত হবে বলে মনে করি।
সামনেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। সেই বাজেটের প্রাথমিক রূপরেখা ও চিন্তাভাবনা নিশ্চয় ইতিমধ্যে খানিকটা দাঁড়িয়ে গেছে। সেখানে কী আছে বা থাকছে, আমরা তা এখনো জানি না। তবে সেটি যদি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো আবারও বিত্ত তোষণেরই হাতিয়ার হয়ে ওঠে এবং সেখানে ব্যাংকিং খাত যদি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম সহায়ক শক্তি না হয়ে মালিক ও অসৎ গ্রাহকের হীনস্বার্থ রক্ষার পুরোনো কৌশলে পরিণত হয়, তাহলে জন-আকাঙ্ক্ষাকে বলি দিয়ে জনদুর্ভোগ সেখানে অনিবার্য।
সাম্প্রতিক সময়ে আইএমএফ থেকে ঋণ গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত শর্তের আওতাধীন বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে গিয়ে সরকার হয়তো এই মুহূর্তে ব্যাংকিং খাতে কিছু একটা করে ফেলা থেকে খানিকটা সংযত আছে। কিন্তু সরকার যদি নিছক চাপে পড়ে অন্যায় কর্ম থেকে বিরত থাকার চলতি ধারার কৌশল অনুসরণ থেকে সরে এসে এটিকে নিজেদের স্থায়ী নীতি হিসেবে গ্রহণ করতে উদ্যোগী না হয়, তাহলে আইএমএফের শর্তের মেয়াদ বা চাপের পরিধি শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো নৈরাজ্য আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করবে বৈকি! ফলে এটিকে শুধু চাপ মোকাবিলার সাময়িক কৌশল হিসেবে গ্রহণ করলে হবে না—গ্রহণ করতে হবে রাষ্ট্রের স্থায়ী ও চলমান নীতিকৌশল হিসেবে। কিন্তু সরকার কি সেটি করতে সম্মত হবে, অন্তত এই ভোটের বছরে?
সব মিলিয়ে তাই লেখার শিরোনামের সূত্র ধরে বলা, ব্যাংকিং খাতে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে হলে সর্বাগ্রে এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। আর সে নিয়ন্ত্রণমুক্ত সংস্থার (যদি হয়) শীর্ষ নির্বাহীর পদে নিয়োগ দিতে হবে এমন সব ব্যক্তিকে, যাঁরা নিজেদের বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি না ভেবে একজন পেশাজীবী হিসেবে গণ্য করবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য এ দেশে সে রকম দক্ষ পেশাজীবী লোকের অভাব আছে বলে মনে হয় না। আর সে রকম পেশাজীবীরা নিয়ন্ত্রণমুক্ত অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংককে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পেলে তাঁরাই তখন ‘ভাই-মামাতো ভাই’দের সরিয়ে উপযুক্ত লোকদের বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পথ খুলে দিতে পারবেন। দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে সে রকম একটি ব্যাংকিং খাতই আমরা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
আবু তাহের খান, সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে