প্রজনন সময় নিশ্চিত করতে চলছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন বরগুনার তালতলী উপজেলার ৮ হাজার ৭২১ এবং বেতাগী উপজেলার ৩ হাজার ১০০ জেলে। অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে তাঁদের। তাই নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিকেই সরকারের বরাদ্দ চাল চান জেলেরা।

জেলেরা জানান, প্রতিবারই নিষেধাজ্ঞার সময় তাঁদের চাল হাতে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। এতে ধারদেনা করে চলতে হয়। দেনায় দায়ে তাঁদের বারবার সংকটে পড়তে হয়। তাই এবার যেন তাঁদের বরাদ্দের চাল দ্রুত দেওয়া হয়। বিগত বছরগুলোতে নানা জটিলতায় ঠিক সময়ে চাল পাননি।

তালতলী ও বেতাগী উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার পুনর্বাসনের জন্য ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে। তালতলীতে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৮ হাজার ৭২১ এবং বেতাগীতে ৩ হাজার ১০০ জন। সবাই চাল পাবেন।

গতকাল শনিবার দুপুরে দুই উপজেলার বিভিন্ন জেলেপল্লি ঘুরে দেখা গেছে, ঘাটে নোঙর করা রয়েছে নৌকা-ট্রলার। জেলেদের মধ্যে কেউ জাল বুনছেন, কেউবা ঘাটে অলস সময় পার করছেন। কেউ আবার নৌকা-ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত, কেউ বাড়ি ফিরে গেছেন। ঘাটে নেই হাঁকডাক-কোলাহল।

জেলেরা জানান, অন্য কোনো কাজ জানেন না তাঁরা। এ জন্য নিষেধাজ্ঞার সময় বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার তাঁদের।

তালতলী উপজেলার মরানিদ্রা এলাকার জেলে মজনু বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারে ছয় সদস্যের সংসার আমার একার চালাতে হয়। নদীতে মাছ ধরেই কোনোমতে চলে সংসার। এখন নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ। তাই পেটে ভাত দিতে দ্রুত সরকারি চাল দরকার।’

বেতাগী উপজেলার আলিয়াবাদ গ্রামের জেলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রতিবছরই সরকার থেকে ২০ কেজি করে চাল পাই। এ বছর এখনো পাইনি। সরকারের কাছে দাবি, যাঁরা প্রকৃত জেলে তাঁদের যেন চাল দেওয়া হয়। বলাইবুনিয়া গ্রামের জেলে সুলতান মৃধা বলেন, ‘২২ দিনের মাছ ধরা বন্ধ দিছে ভালো কথা। আমরা নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরতে নদীতে  না গেলে পরিবার পরিজন নিয়ে খাব কী? সরকার প্রতিবছর জেলেদের ২০ কেজি করে চাল দেয়।  ১০ বছর ধরে নদীতে মাছ ধরি, আজ পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাই নাই।’

এদিকে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে উপজেলা প্রশাসন, মৎস্যজীবী, হাটবাজার কমিটিসহ বিভিন্ন স্থানে সভা করেছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ। পাশাপাশি মাইকিংসহ প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম জানান, জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল দুই-এক দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

বেতাগী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা  আব্দুল গফফার বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা যেন নদীতে না নামেন তার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’