জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
নদী-তীরবর্তী জনপদ থেকেই উত্থিত হয়েছে ভাষা। বহু আগে যেকোনো জনপদের রাজনৈতিক, সামাজিক আর বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর অবস্থান ছিল প্রধান নদনদীর সংযোগস্থলে। অথবা যেসব জায়গা থেকে সমুদ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা সহজ ছিল, সেসব জায়গায়ই গড়ে উঠেছিল গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। সে কথাও বলব খানিক পরে।
একুশের কাছে যেতে হলে এই পথটা পাড়ি দেওয়া দরকার। বায়ান্নর আত্মদানের ঘটনা শুধু পাকিস্তান আন্দোলন ও ভাষার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ থাকার ব্যাপার নয়। বাঙালি সত্তা বিকশিত হওয়ার পথটি চিহ্নিত করার প্রয়োজন সবার আগে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ছোট্ট একটি আলোচনা এই পথটি চিনতে সাহায্য করবে। ব্রিটিশ ভারত ভেঙে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি রাষ্ট্র গড়ে ওঠার পরই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে বাংলা আর উর্দু নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় বলে কেউ ভাবলে তা হবে ভুল। আটচল্লিশ সালে এসে কেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ শুধু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে সাফাই গাইলেন, কেন রেসকোর্সের সভায় এবং কার্জন হলের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহর বক্তব্যে ফুঁসে উঠল বাংলার জনগণ, সেটা বুঝতে হলেও দূর-ইতিহাসের কাছে যেতে হবে। এই জ্বলে ওঠা বা জেগে ওঠার পেছনে আছে দীর্ঘ ঐতিহাসিক পথ। যদিও আমরা ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ কিংবা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিকে চিহ্নিত করতে পারি, কিন্তু ইতিহাসের বহমান এই কালপর্বটি এত বিস্তৃত যে নির্দিষ্ট সময় চিহ্নিত করা কঠিন।
ইতিহাসের পথে হাঁটতে গিয়ে লক্ষ্য করব, প্রাচীন পূর্ব ভারতে একভাষিক রাষ্ট্রসত্তা বা একভাষিক জাতিসত্তা ছিল না। একটি নিরবচ্ছিন্ন ভৌগোলিক এলাকাও ছিল না। ছিল খণ্ড খণ্ড জনপদ। সেসব জনপদে বাস করত অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, তিব্বতি-চীনা ভাষাভাষী বহু কোম ও নরগোষ্ঠীর মানুষ। ইন্দো-আর্যভাষী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাত ও সংমিশ্রণের মাধ্যমে এই জনগোষ্ঠী একটি রূপ পাচ্ছিল। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ঋদ্ধ করে তুলছিল এই দুই গোষ্ঠীকেই। যে সময়ের কথা বলছি, সে সময় বাংলা বা বাঙ্গালা নামে কোনো অঞ্চল ছিল না। অনুমান করা যায়, সেকালের বঙ্গ গড়ে উঠেছিল বর্তমানকালের ঢাকা ও ফরিদপুর অঞ্চল নিয়ে। সম্ভবত তার সঙ্গে যুক্ত ছিল খুলনা আর বরিশাল অঞ্চল। খ্রিষ্টীয় আট শতক পর্যন্ত বঙ্গের রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল সামান্যই।
ব্যারি এম মরিসনের ‘রিজিওন অ্যান্ড সাব-রিজিওন ইন প্রি-মুসলিম বেঙ্গল’ ও ‘পলিটিক্যাল সেন্টার্স অ্যান্ড কালচারাল রিজিওনস ইন বাংলা’ নামের বই দুটির বরাত দিয়ে মমতাজুর রহমান তরফদার জানিয়েছেন, প্রাক-মুসলিম যুগে বাংলায় মোট চারটি রাজনৈতিক বিভাগ ছিল। ছিল বরেন্দ্র ভূমি, যা গঙ্গার উত্তর দিকের অঞ্চল, যমুনার পূর্বের ও মহানন্দার পশ্চিমের ভূখণ্ড নিয়ে সৃষ্ট। ভাগিরথী-হুগলী নদীর দুই তীর ধরে এবং বর্তমানকালের চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুর নিয়ে গড়ে উঠেছিল আরেকটি প্রশাসনিক অঞ্চল। সুরমা ও মেঘনার পূর্বে শ্রীহট্ট-কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম নিয়ে ছিল সমতট। ঢাকা ও ফরিদপুর নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল বঙ্গ।
এখন যাঁরা বাংলা বলে থাকেন বিভিন্ন অঞ্চলে, প্রাক-মুসলিম যুগে সে রকম কোনো একভাষিক রাষ্ট্র বা জাতি ছিল না। তাঁদের মধ্যে ছিল না কোনো আঞ্চলিক সংহতি। সেটা কিন্তু গড়ে উঠেছে ক্রমে ক্রমে, মোগল ও ব্রিটিশ শাসনামলে। এই কথাটা মনে রাখলে একুশের কাছাকাছি হওয়ার একটা পথ খুঁজে পাব। বুঝতে পারব, বাঙালি হিন্দু এবং বাঙালি মুসলমানের সাংস্কৃতিক সংকটটা কোথা থেকে শুরু।
একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারব, পনের থেকে আঠার শতকের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গে যে কয়জন কবি-সাহিত্যিককে পাই, তাঁদের মধ্যে সংযোগ ছিল বলে মনে হয় না। তাঁদের মনে ছিল দ্বন্দ্ব, কোন ভাষায় সৃষ্টি করবেন সাহিত্য? শিক্ষিত মুসলমান বেছে নিয়েছিল আরবি ও ফারসিকে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষের ভাষা বাংলা। তাহলে বাংলা ভাষায় কি ধর্মীয় ও ঔপাখ্যানিক রচনা লেখা উচিত? এই দ্বিধার আগুনে জ্বলে-পুড়ে মরেছে বাঙালি মুসলমান। পাঠক, লক্ষ্য করুন, সে সময় পর্যন্ত কিন্তু উর্দু নামে কোনো ভাষার সঙ্গে কারও সাক্ষাৎ হয়নি।
নদী-তীরবর্তী জনপদ থেকেই উত্থিত হয়েছে ভাষা। বহু আগে যেকোনো জনপদের রাজনৈতিক, সামাজিক আর বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর অবস্থান ছিল প্রধান নদনদীর সংযোগস্থলে। অথবা যেসব জায়গা থেকে সমুদ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা সহজ ছিল, সেসব জায়গায়ই গড়ে উঠেছিল গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। সে কথাও বলব খানিক পরে।
একুশের কাছে যেতে হলে এই পথটা পাড়ি দেওয়া দরকার। বায়ান্নর আত্মদানের ঘটনা শুধু পাকিস্তান আন্দোলন ও ভাষার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ থাকার ব্যাপার নয়। বাঙালি সত্তা বিকশিত হওয়ার পথটি চিহ্নিত করার প্রয়োজন সবার আগে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ছোট্ট একটি আলোচনা এই পথটি চিনতে সাহায্য করবে। ব্রিটিশ ভারত ভেঙে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি রাষ্ট্র গড়ে ওঠার পরই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে বাংলা আর উর্দু নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় বলে কেউ ভাবলে তা হবে ভুল। আটচল্লিশ সালে এসে কেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ শুধু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে সাফাই গাইলেন, কেন রেসকোর্সের সভায় এবং কার্জন হলের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহর বক্তব্যে ফুঁসে উঠল বাংলার জনগণ, সেটা বুঝতে হলেও দূর-ইতিহাসের কাছে যেতে হবে। এই জ্বলে ওঠা বা জেগে ওঠার পেছনে আছে দীর্ঘ ঐতিহাসিক পথ। যদিও আমরা ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ কিংবা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিকে চিহ্নিত করতে পারি, কিন্তু ইতিহাসের বহমান এই কালপর্বটি এত বিস্তৃত যে নির্দিষ্ট সময় চিহ্নিত করা কঠিন।
ইতিহাসের পথে হাঁটতে গিয়ে লক্ষ্য করব, প্রাচীন পূর্ব ভারতে একভাষিক রাষ্ট্রসত্তা বা একভাষিক জাতিসত্তা ছিল না। একটি নিরবচ্ছিন্ন ভৌগোলিক এলাকাও ছিল না। ছিল খণ্ড খণ্ড জনপদ। সেসব জনপদে বাস করত অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, তিব্বতি-চীনা ভাষাভাষী বহু কোম ও নরগোষ্ঠীর মানুষ। ইন্দো-আর্যভাষী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাত ও সংমিশ্রণের মাধ্যমে এই জনগোষ্ঠী একটি রূপ পাচ্ছিল। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ঋদ্ধ করে তুলছিল এই দুই গোষ্ঠীকেই। যে সময়ের কথা বলছি, সে সময় বাংলা বা বাঙ্গালা নামে কোনো অঞ্চল ছিল না। অনুমান করা যায়, সেকালের বঙ্গ গড়ে উঠেছিল বর্তমানকালের ঢাকা ও ফরিদপুর অঞ্চল নিয়ে। সম্ভবত তার সঙ্গে যুক্ত ছিল খুলনা আর বরিশাল অঞ্চল। খ্রিষ্টীয় আট শতক পর্যন্ত বঙ্গের রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল সামান্যই।
ব্যারি এম মরিসনের ‘রিজিওন অ্যান্ড সাব-রিজিওন ইন প্রি-মুসলিম বেঙ্গল’ ও ‘পলিটিক্যাল সেন্টার্স অ্যান্ড কালচারাল রিজিওনস ইন বাংলা’ নামের বই দুটির বরাত দিয়ে মমতাজুর রহমান তরফদার জানিয়েছেন, প্রাক-মুসলিম যুগে বাংলায় মোট চারটি রাজনৈতিক বিভাগ ছিল। ছিল বরেন্দ্র ভূমি, যা গঙ্গার উত্তর দিকের অঞ্চল, যমুনার পূর্বের ও মহানন্দার পশ্চিমের ভূখণ্ড নিয়ে সৃষ্ট। ভাগিরথী-হুগলী নদীর দুই তীর ধরে এবং বর্তমানকালের চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুর নিয়ে গড়ে উঠেছিল আরেকটি প্রশাসনিক অঞ্চল। সুরমা ও মেঘনার পূর্বে শ্রীহট্ট-কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম নিয়ে ছিল সমতট। ঢাকা ও ফরিদপুর নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল বঙ্গ।
এখন যাঁরা বাংলা বলে থাকেন বিভিন্ন অঞ্চলে, প্রাক-মুসলিম যুগে সে রকম কোনো একভাষিক রাষ্ট্র বা জাতি ছিল না। তাঁদের মধ্যে ছিল না কোনো আঞ্চলিক সংহতি। সেটা কিন্তু গড়ে উঠেছে ক্রমে ক্রমে, মোগল ও ব্রিটিশ শাসনামলে। এই কথাটা মনে রাখলে একুশের কাছাকাছি হওয়ার একটা পথ খুঁজে পাব। বুঝতে পারব, বাঙালি হিন্দু এবং বাঙালি মুসলমানের সাংস্কৃতিক সংকটটা কোথা থেকে শুরু।
একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারব, পনের থেকে আঠার শতকের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গে যে কয়জন কবি-সাহিত্যিককে পাই, তাঁদের মধ্যে সংযোগ ছিল বলে মনে হয় না। তাঁদের মনে ছিল দ্বন্দ্ব, কোন ভাষায় সৃষ্টি করবেন সাহিত্য? শিক্ষিত মুসলমান বেছে নিয়েছিল আরবি ও ফারসিকে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষের ভাষা বাংলা। তাহলে বাংলা ভাষায় কি ধর্মীয় ও ঔপাখ্যানিক রচনা লেখা উচিত? এই দ্বিধার আগুনে জ্বলে-পুড়ে মরেছে বাঙালি মুসলমান। পাঠক, লক্ষ্য করুন, সে সময় পর্যন্ত কিন্তু উর্দু নামে কোনো ভাষার সঙ্গে কারও সাক্ষাৎ হয়নি।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে