তরুণ চক্রবর্তী
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে গর্জে উঠেছিল আসামের বরাক উপত্যকাও। ১৯৬১ সালে আসামের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী বিমল প্রসাদ চালিহার ফতোয়া ছিল—আসামে শুধু চলবে অসমিয়া। বাংলা বাদ। মাতৃভাষায় বাঙালির অধিকার কেড়ে নেওয়ার সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন বরাকের বাঙালিরা। নিরস্ত্র অহিংস সত্যাগ্রহীদের বিরুদ্ধে ১৯৬১ সালের উনিশে মে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই হত্যালীলায় মেতে ওঠে রাষ্ট্রশক্তি। রফিক, সালাম, বরকত, শফিউর, জব্বারদের মতোই শাসকের গুলিতে সেদিন প্রাণ হারান কানাইলাল, চণ্ডীচরণ, হিতেশ, সত্যেন্দ্রকুমাররা। ১১ শহীদের রক্তে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার। কিন্তু সেই অধিকারও আজ খর্বিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বারবার রক্ত দিয়ে বাঙালিকে রক্ষা করতে হচ্ছে তাঁর অর্জিত অধিকার।
রক্ত দিয়েই বাঙালি জাতিকে বারবার সমস্ত অধিকার ছিনিয়ে আনতে হয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেই শুধু নয়, বারবার বাঙালির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে শাসকের গোলাবারুদ। ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে বারবার বাঙালির মানচিত্র। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের কথা আমরা সবাই জানি। অমর একুশের মতো এই বঙ্গভঙ্গও বহুল চর্চিত। কিন্তু ১৮৭৪ সালেও বাংলা ভাগ হয়েছিল। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্যের ভাষায় ‘নিঃশব্দ বঙ্গভঙ্গ’। আসাম রাজ্য থেকে খাজনা আদায় কম বলে অবিভক্ত কাছাড় ও গোয়ালপাড়া জেলাকে বাংলা থেকে কেটে যুক্ত করা হয়েছিল আসামের সঙ্গে। বারবার মানচিত্র ভাগের শিকার বাঙালি জাতি। বাঙালির মননকেও ভাগ করার চেষ্টা এখনো অব্যাহত।
তপোধীরবাবুর মতে, বাঙালির কোনো ধর্ম হয় না। বাঙালি মানে বাঙালিই। বাঙালিয়ানাই তার জাতিসত্তা। কিন্তু সেই বাঙালিকেই তার ইতিহাস ও চেতনা বিকৃত করে হিন্দু ও মুসলিম বাঙালিতে ভাগ করার চেষ্টা চলছে। সেই ফাঁদে পা-ও দিচ্ছে অনেকে। ভুলে যাচ্ছি, একুশ আর উনিশের কোনো পার্থক্য নেই। দুই জায়গাতেই রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের উত্তরসূরিরাই প্রাণ দিয়েছেন। তবু বাঙালির হৃদয়কে ছিন্নভিন্ন করার খেলা চলছে। বাঙালির রক্তেই লাল হয়ে উঠছে অবিভক্ত বঙ্গভূমি। ভুলে যাচ্ছি, কাঁটাতারের বেড়া বা ধর্মের কুব্যাখ্যা দিয়ে বাঙালির জাতিসত্তা কে বিভাজিত করার চেষ্টাকে রুখে দিতে ফের একত্রিত হওয়ার সময় হয়েছে।
বাঙালির অর্জিত প্রতিটি সাফল্যেই কিন্তু বাঙালি সংঘবদ্ধ হয়ে লড়াই করে ফসল ঘরে তুলেছে। কোনো একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আলাদা করে দেখলে শহীদদের অমর্যাদা করা হবে। আসামের বরাক উপত্যকায় একষট্টির ভাষা আন্দোলনে জাতি-ধর্মনির্বিশেষ বাঙালি জাতি গর্জে উঠেছিল। তাদের সেই মহান সংগ্রামে নারীরাও পুলিশের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করতে পিছপা হননি। শাসকের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন কানাইলাল নিয়োগী, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, হিতেশ বিশ্বাস, সত্যেন্দ্রকুমার দেব, কুমুদরঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তরণী দেবনাথ, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, বীরেন্দ্র সূত্রধর, সুকোমল পুরকায়স্থ এবং কমলা ভট্টাচার্য। সেদিনের শহীদদের মধ্যে কমলাই একমাত্র নারী। এর পরও কিন্তু আসামে বাঙালির আত্মবলিদান থামেনি। ১৯৭২ সালের ১৭ আগস্ট শহীদ হন বরাকের বিজন চক্রবর্তী এবং ১৯৮৬ সালের ২১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বাংলা ভাষার দাবির আন্দোলনে শহীদ হন বরাকের জগন্ময় দেব ও দিব্যেন্দু দাস।
আর বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসির জাঁতাকলে বাঙালির মৃত্যুর মিছিল চলছেই। আসামের নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির কো-চেয়ারম্যান সাধন পুরকায়স্থের অভিযোগ—আসাম থেকে বাঙালি জাতিকে নিকেশ করার ষড়যন্ত্র চলছে। অথচ নিজেদের অতীত ভুলে বাঙালির ঐক্য আজ অস্তমিত।
তবে একুশ বা উনিশ নিয়ে বাঙালির উন্মাদনায় কোনো খামতি নেই। বরং বাজার অর্থনীতির হাত ধরে বাঙালি উৎসবে মেতে ওঠার দুটি বাড়তি দিন পেয়েছে। তাই প্রচারের আলোয় থাকতে আয়োজন চলছে হরেক অনুষ্ঠানের। থাকছে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের আনুষ্ঠানিকতাও। কিন্তু সত্যিই কি আমরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল? আদৌ কি সংঘবদ্ধ হয়ে আমরা আসন্ন বিপদ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার প্রয়াসে ব্রতী হতে পারছি? অতীত থেকে আদৌ কি কোনো শিক্ষা আমরা পেয়েছি? যদি পেয়ে থাকিও, তার বহিঃপ্রকাশ কোথায়?
শিলচরের শহীদ দিবসের আগে এই প্রশ্নগুলোই বড় করে মাথায় কিলবিল করছে। বাংলার সংস্কৃতি যদি হারিয়ে যায়, বাংলার ভাষা যদি হারিয়ে যায়, বাংলার চেতনা যদি হারিয়ে যায়, বাংলার পরম্পরা যদি হারিয়ে যায়, বাংলার ইতিহাস যদি হারিয়ে যায়, তবে বাঙালির থাকবেটা কী? আজ বাঙালি জাতির কাছে এটাই বড় প্রশ্ন নয় কি?
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, আজকের পত্রিকা
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে গর্জে উঠেছিল আসামের বরাক উপত্যকাও। ১৯৬১ সালে আসামের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী বিমল প্রসাদ চালিহার ফতোয়া ছিল—আসামে শুধু চলবে অসমিয়া। বাংলা বাদ। মাতৃভাষায় বাঙালির অধিকার কেড়ে নেওয়ার সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন বরাকের বাঙালিরা। নিরস্ত্র অহিংস সত্যাগ্রহীদের বিরুদ্ধে ১৯৬১ সালের উনিশে মে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই হত্যালীলায় মেতে ওঠে রাষ্ট্রশক্তি। রফিক, সালাম, বরকত, শফিউর, জব্বারদের মতোই শাসকের গুলিতে সেদিন প্রাণ হারান কানাইলাল, চণ্ডীচরণ, হিতেশ, সত্যেন্দ্রকুমাররা। ১১ শহীদের রক্তে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার। কিন্তু সেই অধিকারও আজ খর্বিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বারবার রক্ত দিয়ে বাঙালিকে রক্ষা করতে হচ্ছে তাঁর অর্জিত অধিকার।
রক্ত দিয়েই বাঙালি জাতিকে বারবার সমস্ত অধিকার ছিনিয়ে আনতে হয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেই শুধু নয়, বারবার বাঙালির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে শাসকের গোলাবারুদ। ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে বারবার বাঙালির মানচিত্র। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের কথা আমরা সবাই জানি। অমর একুশের মতো এই বঙ্গভঙ্গও বহুল চর্চিত। কিন্তু ১৮৭৪ সালেও বাংলা ভাগ হয়েছিল। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্যের ভাষায় ‘নিঃশব্দ বঙ্গভঙ্গ’। আসাম রাজ্য থেকে খাজনা আদায় কম বলে অবিভক্ত কাছাড় ও গোয়ালপাড়া জেলাকে বাংলা থেকে কেটে যুক্ত করা হয়েছিল আসামের সঙ্গে। বারবার মানচিত্র ভাগের শিকার বাঙালি জাতি। বাঙালির মননকেও ভাগ করার চেষ্টা এখনো অব্যাহত।
তপোধীরবাবুর মতে, বাঙালির কোনো ধর্ম হয় না। বাঙালি মানে বাঙালিই। বাঙালিয়ানাই তার জাতিসত্তা। কিন্তু সেই বাঙালিকেই তার ইতিহাস ও চেতনা বিকৃত করে হিন্দু ও মুসলিম বাঙালিতে ভাগ করার চেষ্টা চলছে। সেই ফাঁদে পা-ও দিচ্ছে অনেকে। ভুলে যাচ্ছি, একুশ আর উনিশের কোনো পার্থক্য নেই। দুই জায়গাতেই রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের উত্তরসূরিরাই প্রাণ দিয়েছেন। তবু বাঙালির হৃদয়কে ছিন্নভিন্ন করার খেলা চলছে। বাঙালির রক্তেই লাল হয়ে উঠছে অবিভক্ত বঙ্গভূমি। ভুলে যাচ্ছি, কাঁটাতারের বেড়া বা ধর্মের কুব্যাখ্যা দিয়ে বাঙালির জাতিসত্তা কে বিভাজিত করার চেষ্টাকে রুখে দিতে ফের একত্রিত হওয়ার সময় হয়েছে।
বাঙালির অর্জিত প্রতিটি সাফল্যেই কিন্তু বাঙালি সংঘবদ্ধ হয়ে লড়াই করে ফসল ঘরে তুলেছে। কোনো একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আলাদা করে দেখলে শহীদদের অমর্যাদা করা হবে। আসামের বরাক উপত্যকায় একষট্টির ভাষা আন্দোলনে জাতি-ধর্মনির্বিশেষ বাঙালি জাতি গর্জে উঠেছিল। তাদের সেই মহান সংগ্রামে নারীরাও পুলিশের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করতে পিছপা হননি। শাসকের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন কানাইলাল নিয়োগী, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, হিতেশ বিশ্বাস, সত্যেন্দ্রকুমার দেব, কুমুদরঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তরণী দেবনাথ, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, বীরেন্দ্র সূত্রধর, সুকোমল পুরকায়স্থ এবং কমলা ভট্টাচার্য। সেদিনের শহীদদের মধ্যে কমলাই একমাত্র নারী। এর পরও কিন্তু আসামে বাঙালির আত্মবলিদান থামেনি। ১৯৭২ সালের ১৭ আগস্ট শহীদ হন বরাকের বিজন চক্রবর্তী এবং ১৯৮৬ সালের ২১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বাংলা ভাষার দাবির আন্দোলনে শহীদ হন বরাকের জগন্ময় দেব ও দিব্যেন্দু দাস।
আর বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসির জাঁতাকলে বাঙালির মৃত্যুর মিছিল চলছেই। আসামের নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির কো-চেয়ারম্যান সাধন পুরকায়স্থের অভিযোগ—আসাম থেকে বাঙালি জাতিকে নিকেশ করার ষড়যন্ত্র চলছে। অথচ নিজেদের অতীত ভুলে বাঙালির ঐক্য আজ অস্তমিত।
তবে একুশ বা উনিশ নিয়ে বাঙালির উন্মাদনায় কোনো খামতি নেই। বরং বাজার অর্থনীতির হাত ধরে বাঙালি উৎসবে মেতে ওঠার দুটি বাড়তি দিন পেয়েছে। তাই প্রচারের আলোয় থাকতে আয়োজন চলছে হরেক অনুষ্ঠানের। থাকছে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের আনুষ্ঠানিকতাও। কিন্তু সত্যিই কি আমরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল? আদৌ কি সংঘবদ্ধ হয়ে আমরা আসন্ন বিপদ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার প্রয়াসে ব্রতী হতে পারছি? অতীত থেকে আদৌ কি কোনো শিক্ষা আমরা পেয়েছি? যদি পেয়ে থাকিও, তার বহিঃপ্রকাশ কোথায়?
শিলচরের শহীদ দিবসের আগে এই প্রশ্নগুলোই বড় করে মাথায় কিলবিল করছে। বাংলার সংস্কৃতি যদি হারিয়ে যায়, বাংলার ভাষা যদি হারিয়ে যায়, বাংলার চেতনা যদি হারিয়ে যায়, বাংলার পরম্পরা যদি হারিয়ে যায়, বাংলার ইতিহাস যদি হারিয়ে যায়, তবে বাঙালির থাকবেটা কী? আজ বাঙালি জাতির কাছে এটাই বড় প্রশ্ন নয় কি?
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে