রিমন রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে
‘ককটেল তো এখানে পটকা। এই জিনিসটা নিয়ে জানতে আপনাকে এত দূর থেকে কেন আসতে হলো বুঝলাম না।’ গত বুধবার দুপুরে নিজের দপ্তরে অনেক মানুষের সামনে এই প্রতিবেদককে কথাটি বললেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আলমগীর জাহান।
ওসির পাশে তখন বসে ছিলেন ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম চর বাগডাঙ্গা থেকে আসা মো. হাবিব। হাসতে হাসতে ওসির কথায় সায় দিয়ে বললেন, ‘বিয়েবাড়িতে পটকা ফুটিয়ে মানুষ আনন্দ করে না? ওই রকম। এখানে ককটেল ফুটিয়ে আনন্দ করে, এটি দিয়েই মানুষকে ভয় দেখায়।’
সীমান্তের এই জেলায় ককটেল যে আসলেই ‘পটকা’ তা বোঝা গেল একটু খোঁজখবর নিতেই। শহরের লোকজন জানালেন, দুই দশক আগে থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে ককটেলের ব্যবহার শুরু। পদ্মার ওপারের চরের গ্রামগুলোতে আগে খই ফোটার মতো ককটেল ফুটত। পরে এর ব্যবহার শুরু হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। কয়েক বছর আগেও শিবগঞ্জের মর্দানা ও রানীহাটির মানুষের ঘুম ভাঙত ককটেল ফোটার শব্দে। এখন ককটেল ফুটছে শহরেও।
এসব ককটেল তৈরি হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই। আর এই ককটেল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে। এ ছাড়া জমি দখলে নেওয়ার সময় ভাড়াটে বাহিনী প্রভাবশালীর পক্ষে ককটেল হামলা করে। প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতেও বাড়ি কিংবা অফিসের সামনে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
৪ নভেম্বর হামলার শিকার হন শিবগঞ্জ লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক শিলু ও তাঁর ছেলে ইমন। রাত পৌনে ১০টার দিকে ভাঙা ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আশরাফুল জানান, তিনজন মুখোশধারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। কুপিয়ে জখম করা হয় তাঁদের। পরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
গত ২২ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ
পৌরসভার জিয়ানগর এলাকায় হঠাৎই ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। বাড়িটি পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহিদের। বিস্ফোরণে শহিদ ও তাঁর সৎমা ফাহমিনা বেগম গুরুতর আহত হন। দুই দিন পর ফাহমিনা মারা যান। বিস্ফোরণের পরই পুলিশ মামলা করে। এতে শহিদ ও তাঁর মাকে আসামি করা হয়। সদর থানা-পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শহিদের বাড়িতে ককটেল তৈরির সময় ওই বিস্ফোরণ ঘটে। শহিদের নামে আগেও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়েছিল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহিদ ককটেলের কারিগর। নতুনদের প্রশিক্ষণও দেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে এখন চারটি গ্রুপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। এর মধ্যে জেম গ্রুপের সদস্য শহিদ। একাধিক বিস্ফোরক মামলার আসামি খাইরুল আলম জেম শিবগঞ্জের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। জেম কাউন্সিলর থাকাকালে তাঁর বাহিনী এবং সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সালামের বাহিনীর বোমাবাজির প্রতিযোগিতা হতো। ২০২০ সালেও মর্দানায় ককটেলের আঘাতে সালাম গ্রুপের সাইফুদ্দিন ওরফে সাফু নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। কিছুদিন পর সালাম মারা যান। ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হন সালামের ভাতিজা আযম আলী।
এরপর মর্দানায় আর সুবিধা করতে পারেননি জেম। তিনি চলে আসেন শহরে। জেমের সঙ্গী হন নিয়ামুল, শহিদ, বিহারি সোহেল, বিরু, মেসবাউল, আশরাফ, বোমা ইসমাইল, ওয়াসিম, বোমা আলা, হাসান ও গোলাপ। এই গ্রুপটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। শহরে এখন ওদুদের ‘ক্ষমতা’ কমেছে। দাপট বেড়েছে হঠাৎ আওয়ামী লীগের নেতা হওয়া পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমানের। ওদুদ ও মোখলেসুরের রাজনৈতিক বিরোধ।
আরও তিন বাহিনী
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো চার গ্রুপের সদস্যরাই ককটেলের ব্যবহার করে। গ্রুপের সবাই ককটেল বানাতেও পারে। এদের বলা হয় ‘কারিগর’। আর গ্রুপের যেসব সদস্য ককটেল ফাটানোর কাজটি করে, তাদের বলা হয় ‘ফাইটার’। ফাইটার সবচেয়ে বেশি হাসিবুল গ্রুপে। এ গ্রুপে আছে বোমা আশিক, বোমা আকবর, নিশান, তারেক, ছোট জুয়েল, ছোট আব্দুল্লাহ, মাইছা মাসুম, কাইল্যা জুয়েল, মনিরুল, ওয়াসি, হাসিন, হোসেন, আপন, ছোট ওসমান, চিকা ওসমান, আবির, আরাফাত, অন্তর, মোশাররফ, সাজু খলিল, হযরত, রতন, সামিরুল ও ভাংড়ি এসরাফিল।
আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন বাক্কার। এ গ্রুপে সোহাগ, নাগর, নিতাইসহ আছেন ২০-২৫ জন। সবচেয়ে ‘বিপজ্জনক’ গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করেন পৌর কৃষক লীগের সভাপতি মেসবাহুল হক টুটুল। এ গ্রুপে আছেন বেলাল, মিজান, বাক্কার, তারেক, রানা, সাজু, কোয়েল, রোকন, ইব্রাহিম, ড্রাইভার মিলন। এই গ্রুপটি স্থানীয় লোকজনের কাছে ‘চাটুয়া গ্রুপ’ নামে পরিচিত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাসখানেক আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের শেখ হাসিনা সেতুর উত্তর পাশে এক পক্ষের হয়ে বিবদমান জমি দখলে যায় টুটুল বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিপক্ষের সেলিম নামের এক ব্যক্তিকে মারধরও করে তারা। এ নিয়ে টুটুল গ্রুপের তারেককে প্রধান আসামি করা মামলা হয়। পরে পুলিশ ওই এলাকায় গিয়ে আটটি ককটেল উদ্ধার করে।
শহরে ককটেলবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর কৃষক লীগের সভাপতি মেসবাহুল হক টুটুল বলেন, ‘সব মিথ্যা কথা। কোনো দিন আমি একটা হাঁসুয়াও হাতে নেইনি।’ বিস্ফোরক আইনে তাঁর নামে মামলা কেন, জানতে চাইলে টুটুল বলেন, ‘রাজনীতিতে নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কয়েকটা মামলা হয়েছে।’
গত ২৮ অক্টোবর এই কৃষক লীগের নেতা টুটুলের নাম উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্থানীয় দৈনিক চাঁপাই চিত্র পত্রিকার সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন। এর আগে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁর পত্রিকায় পৌর মেয়র মোখলেসুর ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ জামানকে নিয়ে দুটি খবর প্রকাশিত হয়। এ কারণে পত্রিকার সম্পাদককে হুমকি দেওয়া হয়। জিডিতে বলা হয়, ২৭ অক্টোবর রাতে টুটুল পত্রিকা অফিসে গিয়ে সম্পাদককে না পেয়ে ফোন করে হুমকি দেন। জিডি করার পরদিন মধ্যরাতেই চাঁপাই চিত্র অফিসের ছাদে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
পৃষ্ঠপোষকতায় মেয়র
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান বোমাবাজদের তিনটি গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর আশকারা পেয়ে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে নেমেছে। ৭ নভেম্বর এ নিয়ে মেয়রসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন বালুগ্রাম নতুনপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মুনিরুল ইসলাম। অভিযোগে তিনি বলেছেন, ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমিতে তিনি একটি দোকানঘর নির্মাণ করছেন। এ জন্য মেয়রের হুকুমে অন্য আসামিরা তাঁর কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা চান। চাঁদা দিতে না চাইলে আসামিরা গত ২২ অক্টোবর তাঁকে মারধর করেন। মুনিরুল জানান, চাঁদা না দিয়ে দোকান করলে আসামিরা তা বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
১৪ নভেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচন। ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল জলিল। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি আবদুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘আমি প্রার্থী হয়েছি বলে মেয়রের লোকজন হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। খুব অনিরাপদ মনে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমানের ছত্রচ্ছায়ায় সন্ত্রাসী বাহিনী শহরে জমি দখলসহ নানা অপরাধ করছে। তাঁর সহযোগী টুটুল সব অপরাধের সঙ্গেই সম্পৃক্ত।’
ককটেল বাহিনীকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়র মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমি তো ভাই এটা আপনার মুখ থেকেই প্রথম শুনলাম।’
গানপাউডার ব্যবসা যাদের হাতে
আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রঘুনাথপুর, ফতেপুর, নারায়ণপুর, চার বাগডাঙ্গা, ইসলামপুর, উজিরপুর, জহিরপুর ট্যাক ও বোগলাউড়ি ঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ককটেলের প্রধান উপাদান গানপাউডার আসছে। কিছু গানপাউডার সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পাথরের ট্রাকে করেও ভারত থেকে চলে আসছে বলে অভিযোগ আছে। বেশির ভাগ গানপাউডার আসে ভারতের মুর্শিদাবাদের মহলদারপাড়া থেকে। ৬ থেকে ৭ হাজার রুপিতে এক কেজি গানপাউডার পাওয়া যায়। সীমান্ত এলাকার কারবারিরা ভারত থেকে এসব সংগ্রহ করেন। পরে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন এপারের কাটু, বাক্কার, সোহাগ, সালাম, নুহু, ফয়েজ, আজিম, এডু, ওদুদ, মোহরিলসহ আরও অনেকে। এরা ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা কেজি দরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে গানপাউডার বিক্রি করে থাকে।
আজকের পত্রিকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন ককটেল কারিগরের সঙ্গেও কথা বলেছে। নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, এক কেজি গানপাউডারে ছয়টি ককটেল বানালে তা শক্তিশালী হয়। এখন ১০টি পর্যন্ত বানানো হচ্ছে। প্রতি পিস ককটেল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রিও করা হচ্ছে। নির্বাচন সামনে বলে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সংরক্ষণ করছেন। ককটেল বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে খুবই কম। ঘটলে তা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।
গ্রামে গ্রামেও বোমাবাজি
শহরের বাইরেও সদর ও শিবগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার কিংবা মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে বোমা ফোটে। এর মধ্যে রানীহাটি এলাকায় সালাম ও আশরাফুল গ্রুপের মধ্যে মাঝে মাঝেই ককটেলবাজির ঘটনা ঘটে। কালিনগর ও সুন্দরপুরে বিরোধে জড়ায় সালাম মেম্বার ও হান্নান মেম্বারের লোকজন। ইসলামপুরে জসিম ও আক্তারুজ্জামানের লোকজনও কম যায় না। রামচন্দ্রপুর ও মহারাজপুরেও রহমতের লোকজনের সঙ্গে সাবেক এমপি আবদুল ওদুদের লোকজনের বিরোধ লেগে থাকে। চর বাগডাঙ্গায় আলম ও বাবু মাস্টার গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। জঞ্জালপাড়ায় মাদক ব্যবসার বিরোধে দুই গ্রুপ মাঝে মাঝেই বোমাবাজিতে জড়াত। গত বছরের আগস্টে ককটেলের আঘাতে জিয়ারুল ইসলাম নামের একজন মারা গেলে এলাকাটি এখন একটু শান্ত।
সংঘর্ষের হিসাব নেই
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ককটেল নিয়ে কেমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে তার হিসাব পুলিশের কাছে নেই। শিবগঞ্জ ও সদর থানায় ঘুরেও এ তথ্য পাওয়া যায়নি। শুধু সংঘর্ষে কেউ মারা গেলে কিংবা বিস্ফোরক উদ্ধারের পর মামলা হলে সেই তথ্যটিই থানায় আছে। চলতি বছরের ১১ মাসে শিবগঞ্জ থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে সাতটি। আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৮ জন। ককটেল উদ্ধার ৩৮টি, গান পাউডার উদ্ধার ২০০ গ্রাম। সদর থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে দুটি। উদ্ধার হয়নি ককটেল কিংবা গানপাউডার।
র্যাব-৫ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্প চলতি বছরে দুটি অভিযানে ৬০টি ককটেল উদ্ধার করেছে। তবে কোনো গানপাউডার উদ্ধার হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি আদালতে বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার চলে। আদালতগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন মোট ২৪৩টি মামলা চলমান আছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যা বলছে
র্যাব-৫-এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তৌকির বলেন, ‘এসব অভিযান চালাতে হলে বিশেষজ্ঞ দল লাগে। এটা আমাদের নেই। তাই ঘন ঘন অভিযান করা যায় না। মাঝে মাঝে রাজশাহী থেকে টিম নিয়ে আসি। এই আজ যেমন (গত বৃহস্পতিবার) ঢাকা থেকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এসে উদ্ধার করা ককটেল নিষ্ক্রিয় করছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ওসি এ কে এম আলমগীর জাহান বলেন, ‘ককটেলবাজি এখানকার চিরাচরিত নিয়ম। সীমান্ত এলাকায় এটা একটা ট্র্যাডিশন। সীমান্ত থেকে পাউডার কিনে কিছু ছেলে এগুলো বানায়। কিছু পলিটিক্যাল ছেলেপুলে আছে। জমি নিয়ে কিছু গ্রুপ আছে, এরা আবার ভাড়ায় কাজ করে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) এ এইচ এম আবদুর রকিব ঢাকায় অবস্থান করছেন। কথা বলার জন্য কয়েক দফা ফোন করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এখন দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতোয়ার রহমান। অফিসে গেলে আতোয়ার রহমান বলেছেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে শুধু এসপিই কথা বলতে পারেন।’
‘ককটেল তো এখানে পটকা। এই জিনিসটা নিয়ে জানতে আপনাকে এত দূর থেকে কেন আসতে হলো বুঝলাম না।’ গত বুধবার দুপুরে নিজের দপ্তরে অনেক মানুষের সামনে এই প্রতিবেদককে কথাটি বললেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আলমগীর জাহান।
ওসির পাশে তখন বসে ছিলেন ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম চর বাগডাঙ্গা থেকে আসা মো. হাবিব। হাসতে হাসতে ওসির কথায় সায় দিয়ে বললেন, ‘বিয়েবাড়িতে পটকা ফুটিয়ে মানুষ আনন্দ করে না? ওই রকম। এখানে ককটেল ফুটিয়ে আনন্দ করে, এটি দিয়েই মানুষকে ভয় দেখায়।’
সীমান্তের এই জেলায় ককটেল যে আসলেই ‘পটকা’ তা বোঝা গেল একটু খোঁজখবর নিতেই। শহরের লোকজন জানালেন, দুই দশক আগে থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে ককটেলের ব্যবহার শুরু। পদ্মার ওপারের চরের গ্রামগুলোতে আগে খই ফোটার মতো ককটেল ফুটত। পরে এর ব্যবহার শুরু হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। কয়েক বছর আগেও শিবগঞ্জের মর্দানা ও রানীহাটির মানুষের ঘুম ভাঙত ককটেল ফোটার শব্দে। এখন ককটেল ফুটছে শহরেও।
এসব ককটেল তৈরি হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই। আর এই ককটেল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে। এ ছাড়া জমি দখলে নেওয়ার সময় ভাড়াটে বাহিনী প্রভাবশালীর পক্ষে ককটেল হামলা করে। প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতেও বাড়ি কিংবা অফিসের সামনে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
৪ নভেম্বর হামলার শিকার হন শিবগঞ্জ লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক শিলু ও তাঁর ছেলে ইমন। রাত পৌনে ১০টার দিকে ভাঙা ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আশরাফুল জানান, তিনজন মুখোশধারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। কুপিয়ে জখম করা হয় তাঁদের। পরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
গত ২২ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ
পৌরসভার জিয়ানগর এলাকায় হঠাৎই ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। বাড়িটি পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহিদের। বিস্ফোরণে শহিদ ও তাঁর সৎমা ফাহমিনা বেগম গুরুতর আহত হন। দুই দিন পর ফাহমিনা মারা যান। বিস্ফোরণের পরই পুলিশ মামলা করে। এতে শহিদ ও তাঁর মাকে আসামি করা হয়। সদর থানা-পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শহিদের বাড়িতে ককটেল তৈরির সময় ওই বিস্ফোরণ ঘটে। শহিদের নামে আগেও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়েছিল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহিদ ককটেলের কারিগর। নতুনদের প্রশিক্ষণও দেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে এখন চারটি গ্রুপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। এর মধ্যে জেম গ্রুপের সদস্য শহিদ। একাধিক বিস্ফোরক মামলার আসামি খাইরুল আলম জেম শিবগঞ্জের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। জেম কাউন্সিলর থাকাকালে তাঁর বাহিনী এবং সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সালামের বাহিনীর বোমাবাজির প্রতিযোগিতা হতো। ২০২০ সালেও মর্দানায় ককটেলের আঘাতে সালাম গ্রুপের সাইফুদ্দিন ওরফে সাফু নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। কিছুদিন পর সালাম মারা যান। ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হন সালামের ভাতিজা আযম আলী।
এরপর মর্দানায় আর সুবিধা করতে পারেননি জেম। তিনি চলে আসেন শহরে। জেমের সঙ্গী হন নিয়ামুল, শহিদ, বিহারি সোহেল, বিরু, মেসবাউল, আশরাফ, বোমা ইসমাইল, ওয়াসিম, বোমা আলা, হাসান ও গোলাপ। এই গ্রুপটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। শহরে এখন ওদুদের ‘ক্ষমতা’ কমেছে। দাপট বেড়েছে হঠাৎ আওয়ামী লীগের নেতা হওয়া পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমানের। ওদুদ ও মোখলেসুরের রাজনৈতিক বিরোধ।
আরও তিন বাহিনী
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো চার গ্রুপের সদস্যরাই ককটেলের ব্যবহার করে। গ্রুপের সবাই ককটেল বানাতেও পারে। এদের বলা হয় ‘কারিগর’। আর গ্রুপের যেসব সদস্য ককটেল ফাটানোর কাজটি করে, তাদের বলা হয় ‘ফাইটার’। ফাইটার সবচেয়ে বেশি হাসিবুল গ্রুপে। এ গ্রুপে আছে বোমা আশিক, বোমা আকবর, নিশান, তারেক, ছোট জুয়েল, ছোট আব্দুল্লাহ, মাইছা মাসুম, কাইল্যা জুয়েল, মনিরুল, ওয়াসি, হাসিন, হোসেন, আপন, ছোট ওসমান, চিকা ওসমান, আবির, আরাফাত, অন্তর, মোশাররফ, সাজু খলিল, হযরত, রতন, সামিরুল ও ভাংড়ি এসরাফিল।
আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন বাক্কার। এ গ্রুপে সোহাগ, নাগর, নিতাইসহ আছেন ২০-২৫ জন। সবচেয়ে ‘বিপজ্জনক’ গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করেন পৌর কৃষক লীগের সভাপতি মেসবাহুল হক টুটুল। এ গ্রুপে আছেন বেলাল, মিজান, বাক্কার, তারেক, রানা, সাজু, কোয়েল, রোকন, ইব্রাহিম, ড্রাইভার মিলন। এই গ্রুপটি স্থানীয় লোকজনের কাছে ‘চাটুয়া গ্রুপ’ নামে পরিচিত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাসখানেক আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের শেখ হাসিনা সেতুর উত্তর পাশে এক পক্ষের হয়ে বিবদমান জমি দখলে যায় টুটুল বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিপক্ষের সেলিম নামের এক ব্যক্তিকে মারধরও করে তারা। এ নিয়ে টুটুল গ্রুপের তারেককে প্রধান আসামি করা মামলা হয়। পরে পুলিশ ওই এলাকায় গিয়ে আটটি ককটেল উদ্ধার করে।
শহরে ককটেলবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর কৃষক লীগের সভাপতি মেসবাহুল হক টুটুল বলেন, ‘সব মিথ্যা কথা। কোনো দিন আমি একটা হাঁসুয়াও হাতে নেইনি।’ বিস্ফোরক আইনে তাঁর নামে মামলা কেন, জানতে চাইলে টুটুল বলেন, ‘রাজনীতিতে নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কয়েকটা মামলা হয়েছে।’
গত ২৮ অক্টোবর এই কৃষক লীগের নেতা টুটুলের নাম উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্থানীয় দৈনিক চাঁপাই চিত্র পত্রিকার সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন। এর আগে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁর পত্রিকায় পৌর মেয়র মোখলেসুর ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ জামানকে নিয়ে দুটি খবর প্রকাশিত হয়। এ কারণে পত্রিকার সম্পাদককে হুমকি দেওয়া হয়। জিডিতে বলা হয়, ২৭ অক্টোবর রাতে টুটুল পত্রিকা অফিসে গিয়ে সম্পাদককে না পেয়ে ফোন করে হুমকি দেন। জিডি করার পরদিন মধ্যরাতেই চাঁপাই চিত্র অফিসের ছাদে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
পৃষ্ঠপোষকতায় মেয়র
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান বোমাবাজদের তিনটি গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর আশকারা পেয়ে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে নেমেছে। ৭ নভেম্বর এ নিয়ে মেয়রসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন বালুগ্রাম নতুনপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মুনিরুল ইসলাম। অভিযোগে তিনি বলেছেন, ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমিতে তিনি একটি দোকানঘর নির্মাণ করছেন। এ জন্য মেয়রের হুকুমে অন্য আসামিরা তাঁর কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা চান। চাঁদা দিতে না চাইলে আসামিরা গত ২২ অক্টোবর তাঁকে মারধর করেন। মুনিরুল জানান, চাঁদা না দিয়ে দোকান করলে আসামিরা তা বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
১৪ নভেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচন। ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল জলিল। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি আবদুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘আমি প্রার্থী হয়েছি বলে মেয়রের লোকজন হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। খুব অনিরাপদ মনে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমানের ছত্রচ্ছায়ায় সন্ত্রাসী বাহিনী শহরে জমি দখলসহ নানা অপরাধ করছে। তাঁর সহযোগী টুটুল সব অপরাধের সঙ্গেই সম্পৃক্ত।’
ককটেল বাহিনীকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়র মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমি তো ভাই এটা আপনার মুখ থেকেই প্রথম শুনলাম।’
গানপাউডার ব্যবসা যাদের হাতে
আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রঘুনাথপুর, ফতেপুর, নারায়ণপুর, চার বাগডাঙ্গা, ইসলামপুর, উজিরপুর, জহিরপুর ট্যাক ও বোগলাউড়ি ঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ককটেলের প্রধান উপাদান গানপাউডার আসছে। কিছু গানপাউডার সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পাথরের ট্রাকে করেও ভারত থেকে চলে আসছে বলে অভিযোগ আছে। বেশির ভাগ গানপাউডার আসে ভারতের মুর্শিদাবাদের মহলদারপাড়া থেকে। ৬ থেকে ৭ হাজার রুপিতে এক কেজি গানপাউডার পাওয়া যায়। সীমান্ত এলাকার কারবারিরা ভারত থেকে এসব সংগ্রহ করেন। পরে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন এপারের কাটু, বাক্কার, সোহাগ, সালাম, নুহু, ফয়েজ, আজিম, এডু, ওদুদ, মোহরিলসহ আরও অনেকে। এরা ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা কেজি দরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে গানপাউডার বিক্রি করে থাকে।
আজকের পত্রিকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন ককটেল কারিগরের সঙ্গেও কথা বলেছে। নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, এক কেজি গানপাউডারে ছয়টি ককটেল বানালে তা শক্তিশালী হয়। এখন ১০টি পর্যন্ত বানানো হচ্ছে। প্রতি পিস ককটেল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রিও করা হচ্ছে। নির্বাচন সামনে বলে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সংরক্ষণ করছেন। ককটেল বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে খুবই কম। ঘটলে তা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।
গ্রামে গ্রামেও বোমাবাজি
শহরের বাইরেও সদর ও শিবগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার কিংবা মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে বোমা ফোটে। এর মধ্যে রানীহাটি এলাকায় সালাম ও আশরাফুল গ্রুপের মধ্যে মাঝে মাঝেই ককটেলবাজির ঘটনা ঘটে। কালিনগর ও সুন্দরপুরে বিরোধে জড়ায় সালাম মেম্বার ও হান্নান মেম্বারের লোকজন। ইসলামপুরে জসিম ও আক্তারুজ্জামানের লোকজনও কম যায় না। রামচন্দ্রপুর ও মহারাজপুরেও রহমতের লোকজনের সঙ্গে সাবেক এমপি আবদুল ওদুদের লোকজনের বিরোধ লেগে থাকে। চর বাগডাঙ্গায় আলম ও বাবু মাস্টার গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। জঞ্জালপাড়ায় মাদক ব্যবসার বিরোধে দুই গ্রুপ মাঝে মাঝেই বোমাবাজিতে জড়াত। গত বছরের আগস্টে ককটেলের আঘাতে জিয়ারুল ইসলাম নামের একজন মারা গেলে এলাকাটি এখন একটু শান্ত।
সংঘর্ষের হিসাব নেই
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ককটেল নিয়ে কেমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে তার হিসাব পুলিশের কাছে নেই। শিবগঞ্জ ও সদর থানায় ঘুরেও এ তথ্য পাওয়া যায়নি। শুধু সংঘর্ষে কেউ মারা গেলে কিংবা বিস্ফোরক উদ্ধারের পর মামলা হলে সেই তথ্যটিই থানায় আছে। চলতি বছরের ১১ মাসে শিবগঞ্জ থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে সাতটি। আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৮ জন। ককটেল উদ্ধার ৩৮টি, গান পাউডার উদ্ধার ২০০ গ্রাম। সদর থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে দুটি। উদ্ধার হয়নি ককটেল কিংবা গানপাউডার।
র্যাব-৫ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্প চলতি বছরে দুটি অভিযানে ৬০টি ককটেল উদ্ধার করেছে। তবে কোনো গানপাউডার উদ্ধার হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি আদালতে বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার চলে। আদালতগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন মোট ২৪৩টি মামলা চলমান আছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যা বলছে
র্যাব-৫-এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তৌকির বলেন, ‘এসব অভিযান চালাতে হলে বিশেষজ্ঞ দল লাগে। এটা আমাদের নেই। তাই ঘন ঘন অভিযান করা যায় না। মাঝে মাঝে রাজশাহী থেকে টিম নিয়ে আসি। এই আজ যেমন (গত বৃহস্পতিবার) ঢাকা থেকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এসে উদ্ধার করা ককটেল নিষ্ক্রিয় করছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ওসি এ কে এম আলমগীর জাহান বলেন, ‘ককটেলবাজি এখানকার চিরাচরিত নিয়ম। সীমান্ত এলাকায় এটা একটা ট্র্যাডিশন। সীমান্ত থেকে পাউডার কিনে কিছু ছেলে এগুলো বানায়। কিছু পলিটিক্যাল ছেলেপুলে আছে। জমি নিয়ে কিছু গ্রুপ আছে, এরা আবার ভাড়ায় কাজ করে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) এ এইচ এম আবদুর রকিব ঢাকায় অবস্থান করছেন। কথা বলার জন্য কয়েক দফা ফোন করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এখন দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতোয়ার রহমান। অফিসে গেলে আতোয়ার রহমান বলেছেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে শুধু এসপিই কথা বলতে পারেন।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে