নীলফামারীর সৈয়দপুরে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাসলাইনের কাজ। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে গ্যাস বিতরণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে এ অঞ্চলে আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের পাশাপাশি গড়ে উঠবে নতুন কলকারখানা। প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার আরিফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, করোনা মহামারির কারণে কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হলেও দ্রুততার সঙ্গে চলছে। আশা করছি, যথাসময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এই পাইপলাইন চালু হলে সৈয়দপুর-রংপুর অঞ্চলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, শিল্পায়ন তথা ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবে।

এর আগে অবহেলিত উত্তরাঞ্চলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও শিল্পকারখানা প্রসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের এক জনসভায় গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুর পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৩০ ইঞ্চির গ্যাসের সঞ্চালন লাইন বসানো শুরু হয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটিতে যৌথভাবে অর্থায়ন করছে সরকার ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড। পাইপলাইনের শেষ প্রান্ত সৈয়দপুর শহরের বাইপাস সড়কসংলগ্ন জায়গায় স্থাপন করা হচ্ছে সেন্ট্রাল গ্যাস সাপ্লাই (সিজিএস) স্টেশন। সৈয়দপুর অংশের ৬ কিলোমিটার পাইপলাইন ও সাপ্লাই স্টেশন নির্মাণের জন্য ৪৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ একর পাইপলাইনের এবং ৩ একর সাপ্লাই স্টেশন স্থাপনের জমি রয়েছে। পাইপলাইন বসানোর জন্য ২৪ ফুট প্রশস্তের জায়গায় মাটির ৮ ফুট গভীর পাইপ বসানো হচ্ছে। পাইপলাইনের রুট ম্যাপ অনুযায়ী অধিগ্রহণ জমিতে সঞ্চালন লাইনপাইপ, ইন্ডাকশন বেন্ডসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বিছানো হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পাইপ জোড়া লাগানোসহ ভূমি উন্নয়নের কাজ করছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের চিকলী এলাকায় ধানখেতের পাশে বসানো হচ্ছে সঞ্চালন পাইপ। এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ভারী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। খেতের উঁচু-নিচু জমি সমতল করে ভূমি উন্নয়ন করা হচ্ছে। পাইপ জোড়া লাগাতে চলছে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ। প্রকল্পের এলাকাজুড়ে চলছে শ্রমিক-প্রকৌশলীদের বিশাল কর্মযজ্ঞ।

স্থানীয় শিল্পপতি সিদ্দিকুল আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে গ্যাসের সুবিধা না থাকায় অনেকে শিল্পকারখানা স্থাপন করতে পারছে না। তবে পাইপলাইনে গ্যাস আসার কাজ এগিয়ে যাওয়ায় আমরা নতুন শিল্প স্থাপনের স্বপ্ন দেখছি। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি ও শিল্পোদ্যোক্তা রাজ কুমার পোদ্দার বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রাণের দাবি ছিল উত্তরাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দাবি পূরণ করেছেন।

এত দিন উত্তরাঞ্চলে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শিল্পকারখানার বিস্তার থমকে আছে। আবার সচল অনেক কারখানা রুগ্‌ণ দশায় পরিণত হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ হলে শিল্পকারখানা যেমন বাঁচবে, তেমনি গড়ে উঠবে নতুন কলকারখানা। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং মানুষের বেকারত্ব দূর হবে। তবে সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ দেন এ ব্যবসায়ী।