সাইফুল মাসুম, ঢাকা
‘আগে ধান-পাটসুদ্দে (সহ) তাবৎ আবাদ বেছন (বীজ) আবাদত থাকে ঘরত তুলে থুতেম। এখন তো ঘরের তোলা বেছন দিয়া কিছুই করা হয় না। তাবৎ বেছন বাজারত থাকে কিনে আনা নাগে।’ বলছিলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে উপজেলার কাজলা গ্রামের প্রবীণ কৃষক আমজাদ আলী। তিনি এ বছর ধান, ভুট্টা ও সবজি চাষ করেছেন প্রায় আট বিঘা জমিতে। আগে চাষাবাদের জন্য নিজের জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করলেও এখন বীজ কিনতে হয় বাজার থেকে।
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সেন্টার বাজারের কৃষক সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আগে দেশি বীজ ব্যবহার করতাম। এখন বেশি ফসলের জন্য হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করি।’ এ বছর সালেহউদ্দিন দুই বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের টমেটো, লাউ, কুমড়া, পেঁপে ও বেগুন চাষ করেছেন। তবে নিজের জমিতে উৎপাদিত বীজ থেকে দেশি জাতের মরিচ, লাউ, বেগুন উৎপাদনও করেছেন।
বীজ সংগ্রহের ক্ষেত্রে দেশের অধিকাংশ কৃষকেরই এমন অবস্থা। গত দুই দশকে দেশে বীজ সরবরাহের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে বাজার থেকে বেশি দামে বীজ কিনতে হচ্ছে কৃষককে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগের তথ্যমতে, ২০২১-২২ সালে দেশে বীজের চাহিদা ছিল ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩৬ টন। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সরবরাহ করেছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৩ টন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সরবরাহ করেছে ৪১ হাজার ১৬৭ টন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সরবরাহ করে ৪০০ টন, বেসরকারি খাত থেকে এসেছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৯৫৬ টন। মোট সরবরাহ করা বীজের পরিমাণ ৪ লাখ ৫ হাজার ৯৮৬ টন। বাকি বীজ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত (কৃষকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা) থেকে এসেছে। অর্থাৎ দেশে সরবরাহ করা মোট বীজের ৫৩ শতাংশই আসে বেসরকারি খাত তথা বড় কোম্পানিগুলো থেকে। এর মধ্যে ধানবীজের ৪৪ শতাংশ, হাইব্রিড ধানের ৯৭ শতাংশ, ভুট্টার ৯৯ শতাংশ, সবজির ৮৬ শতাংশ, আলুবীজের ৭৪ শতাংশ, পাটবীজের ৮৩ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে আসে।
হাইব্রিড বীজেই বাড়ছে নির্ভরশীলতা
বিএডিসি মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ শুরু করে গত শতকের ষাটের দশকে। স্বাধীনতার পর কিছু ব্যবসায়ী ক্ষুদ্র পরিসরে ঢাকার কাপ্তানবাজার ও সিদ্দিকবাজারে বীজ ব্যবসা শুরু করেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে বীজ ব্যবসায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে হাইব্রিড জাতের বীজ এনে বাজারজাত শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে সরকার হাইব্রিড ধানবীজ অবমুক্ত করার মধ্য দিয়ে বেসরকারি খাতের জন্য নতুন দ্বার উন্মুক্ত করে। ২০০৯ সালেও দেশে বীজের মোট চাহিদার ২০ শতাংশ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করত। এখন তা বেড়ে ৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে সবজি, ভুট্টা, ধান, পাটবীজ ইত্যাদি ফসলের ক্ষেত্রে সরবরাহ হয় মোট চাহিদার ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ। কৃষকদেরও দিন দিন নির্ভরতা বাড়ছে কেনা বীজের ওপর। কমছে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বীজ সংরক্ষণের প্রবণতা। হাইব্রিড জাতের ফসল উৎপাদনে জমিতে বেড়েছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। সিদ্দিকবাজারের বীজ ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমরা দেশি ও হাইব্রিড দুই ধরনের বীজ বিক্রি করি। কিন্তু কৃষকের আগ্রহ হাইব্রিডে বেশি।’
বিএডিসির সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) মো. মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভালো বীজে ভালো ফসল হয়। বিএডিসি ১৯৬১ সালে কৃষকের মাঝে ১৩ দশমিক ৮ টন বীজ সরবরাহের মাধ্যমে বীজ কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে বীজ সরবরাহ করছে ১ লাখ ৬৫ হাজার টন। তিনি বলেন, ‘কৃষকেরা বীজের জন্য নির্ভরশীল হলেও ফলন যেহেতু বেশি হয়, তাই আমাদের হাইব্রিড বীজের দিকেই যেতে হবে।’
বীজ ভালো হলেও উৎপাদন ভালো হয়
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বীজ গবেষক ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস বলেন, বীজ ভালো হলে ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি হয়। হাইব্রিড বীজেও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি ফসল হয়। কিন্তু দেশীয় বীজের তুলনায় হাইব্রিড বীজের দাম ৬ থেকে ৮ গুণ বেশি। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো লাভের জন্য হাইব্রিড বীজ কিনতে কৃষকদের উৎসাহ দেয়। ভালো বীজ সংরক্ষণে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিলে বেশি উৎপাদন সম্ভব। হাইব্রিড ফসল থেকে বীজ সংগ্রহ করা যায় না, ফলে বীজের জন্য কোম্পানির দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে কৃষককে। কৃষকদের সঙ্গে বীজের দূরত্ব বাড়ছে। একসময় বীজ ব্যবসায়ীদের কাছে কৃষকেরা আরও জিম্মি হয়ে পড়বেন।
বীজের বাজার যাদের নিয়ন্ত্রণে
দেশে বীজের বাজার ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে দেশি ১০ কোম্পানি। এগুলোর মধ্যে আছে এসিআই সিড, সুপ্রিম সিড, লালতীর সিড, ব্র্যাক, আফতাব সিড, ইউনাইটেড সিড, এআর মালিক সিড কোম্পানি, ইস্পাহানি। এ ছাড়া বড় বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে আছে সিনজেনটা ও বায়ার ক্রপ সায়েন্স।
এসিআই সিড দেশে প্রায় ১৩০ ধরনের বীজ বাজারজাত করে। এই বীজের ৭৫ শতাংশ দেশেই উৎপাদন করা হয়। বাকি ২৫ শতাংশ আমদানি করা হয়। এসিআই সিডের পরিচালক সুধীর চন্দ্র নাথ বলেন, ‘কৃষকের বীজের সঙ্গে আমাদের বীজের অনেক পার্থক্য। কারণ কৃষকের কাছে বীজ সংরক্ষণের ভালো ব্যবস্থাপনা নেই। তা ছাড়া প্রজন্মের পর প্রজন্ম একই বীজ ব্যবহার করলে উৎপাদনক্ষমতা কমে যায়।’
সাবেক কৃষিসচিব ও বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা আনোয়ার ফারুক বলেন, মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারের কারণে ফসলের উৎপাদন অনেক বেড়েছে।আগে বিঘাপ্রতি ধান হতো ৮ থেকে ১০ মণ। এখন হয় ২৫ থেকে ৩০ মণ। সবজি উৎপাদন অনেক বেড়েছে। মৌসুমি সবজিও ১২ মাস বাজারে পাওয়া যায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত বাংলাদেশ সিড কংগ্রেসে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘এখনো কিছু কোম্পানির বীজ নিয়ে প্রতারণা করার প্রবণতা রয়েছে। বীজের মানের বিষয়ে তাদের কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।’ বিএডিসির এক কর্মকর্তা জানান, তাঁরা মাঝেমধ্যে খবর পান কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিএডিসির বীজ নিয়ে আলাদা প্যাকেট করে বাড়তি দামে বিক্রি করে। আবার ভেজাল বীজ বিএডিসির প্যাকেট ব্যবহার করে বাজারজাত করে।
বীজের মালিকানা কৃষকের হাতে থাকা দরকার
খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বীজের মালিকানা কৃষকের হাতে থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষিত কৃষক দেলোয়ার জাহান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা দেলোয়ার মানিকগঞ্জের ঘিওরে পরিবেশবান্ধব উপায়ে কৃষিকাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘কোম্পানিগুলো যদি বীজ দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে খাদ্যঘাটতি দেখা দেবে।কৃষকের হাতে বীজ থাকলে যেকোনো সময় মাঠে নামতে পারবে, ফসল উৎপাদন করতে পারবে। কী চাষ করবে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক দেশীয় বীজ সংরক্ষণ ও কৃষক পর্যায়ে বিতরণের কাজ করে। সংস্থার পরিচালক এ বি এম তৌহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বীজের অধিকার থেকে কৃষককে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিকল্প চেষ্টা না করা হলে বীজ পুরোপুরি করপোরেটের দখলে চলে যাবে।’
‘আগে ধান-পাটসুদ্দে (সহ) তাবৎ আবাদ বেছন (বীজ) আবাদত থাকে ঘরত তুলে থুতেম। এখন তো ঘরের তোলা বেছন দিয়া কিছুই করা হয় না। তাবৎ বেছন বাজারত থাকে কিনে আনা নাগে।’ বলছিলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে উপজেলার কাজলা গ্রামের প্রবীণ কৃষক আমজাদ আলী। তিনি এ বছর ধান, ভুট্টা ও সবজি চাষ করেছেন প্রায় আট বিঘা জমিতে। আগে চাষাবাদের জন্য নিজের জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করলেও এখন বীজ কিনতে হয় বাজার থেকে।
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সেন্টার বাজারের কৃষক সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আগে দেশি বীজ ব্যবহার করতাম। এখন বেশি ফসলের জন্য হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করি।’ এ বছর সালেহউদ্দিন দুই বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের টমেটো, লাউ, কুমড়া, পেঁপে ও বেগুন চাষ করেছেন। তবে নিজের জমিতে উৎপাদিত বীজ থেকে দেশি জাতের মরিচ, লাউ, বেগুন উৎপাদনও করেছেন।
বীজ সংগ্রহের ক্ষেত্রে দেশের অধিকাংশ কৃষকেরই এমন অবস্থা। গত দুই দশকে দেশে বীজ সরবরাহের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে বাজার থেকে বেশি দামে বীজ কিনতে হচ্ছে কৃষককে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগের তথ্যমতে, ২০২১-২২ সালে দেশে বীজের চাহিদা ছিল ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩৬ টন। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সরবরাহ করেছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৩ টন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সরবরাহ করেছে ৪১ হাজার ১৬৭ টন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সরবরাহ করে ৪০০ টন, বেসরকারি খাত থেকে এসেছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৯৫৬ টন। মোট সরবরাহ করা বীজের পরিমাণ ৪ লাখ ৫ হাজার ৯৮৬ টন। বাকি বীজ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত (কৃষকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা) থেকে এসেছে। অর্থাৎ দেশে সরবরাহ করা মোট বীজের ৫৩ শতাংশই আসে বেসরকারি খাত তথা বড় কোম্পানিগুলো থেকে। এর মধ্যে ধানবীজের ৪৪ শতাংশ, হাইব্রিড ধানের ৯৭ শতাংশ, ভুট্টার ৯৯ শতাংশ, সবজির ৮৬ শতাংশ, আলুবীজের ৭৪ শতাংশ, পাটবীজের ৮৩ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে আসে।
হাইব্রিড বীজেই বাড়ছে নির্ভরশীলতা
বিএডিসি মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ শুরু করে গত শতকের ষাটের দশকে। স্বাধীনতার পর কিছু ব্যবসায়ী ক্ষুদ্র পরিসরে ঢাকার কাপ্তানবাজার ও সিদ্দিকবাজারে বীজ ব্যবসা শুরু করেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে বীজ ব্যবসায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে হাইব্রিড জাতের বীজ এনে বাজারজাত শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে সরকার হাইব্রিড ধানবীজ অবমুক্ত করার মধ্য দিয়ে বেসরকারি খাতের জন্য নতুন দ্বার উন্মুক্ত করে। ২০০৯ সালেও দেশে বীজের মোট চাহিদার ২০ শতাংশ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করত। এখন তা বেড়ে ৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে সবজি, ভুট্টা, ধান, পাটবীজ ইত্যাদি ফসলের ক্ষেত্রে সরবরাহ হয় মোট চাহিদার ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ। কৃষকদেরও দিন দিন নির্ভরতা বাড়ছে কেনা বীজের ওপর। কমছে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বীজ সংরক্ষণের প্রবণতা। হাইব্রিড জাতের ফসল উৎপাদনে জমিতে বেড়েছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। সিদ্দিকবাজারের বীজ ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমরা দেশি ও হাইব্রিড দুই ধরনের বীজ বিক্রি করি। কিন্তু কৃষকের আগ্রহ হাইব্রিডে বেশি।’
বিএডিসির সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) মো. মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভালো বীজে ভালো ফসল হয়। বিএডিসি ১৯৬১ সালে কৃষকের মাঝে ১৩ দশমিক ৮ টন বীজ সরবরাহের মাধ্যমে বীজ কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে বীজ সরবরাহ করছে ১ লাখ ৬৫ হাজার টন। তিনি বলেন, ‘কৃষকেরা বীজের জন্য নির্ভরশীল হলেও ফলন যেহেতু বেশি হয়, তাই আমাদের হাইব্রিড বীজের দিকেই যেতে হবে।’
বীজ ভালো হলেও উৎপাদন ভালো হয়
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বীজ গবেষক ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস বলেন, বীজ ভালো হলে ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি হয়। হাইব্রিড বীজেও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি ফসল হয়। কিন্তু দেশীয় বীজের তুলনায় হাইব্রিড বীজের দাম ৬ থেকে ৮ গুণ বেশি। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো লাভের জন্য হাইব্রিড বীজ কিনতে কৃষকদের উৎসাহ দেয়। ভালো বীজ সংরক্ষণে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিলে বেশি উৎপাদন সম্ভব। হাইব্রিড ফসল থেকে বীজ সংগ্রহ করা যায় না, ফলে বীজের জন্য কোম্পানির দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে কৃষককে। কৃষকদের সঙ্গে বীজের দূরত্ব বাড়ছে। একসময় বীজ ব্যবসায়ীদের কাছে কৃষকেরা আরও জিম্মি হয়ে পড়বেন।
বীজের বাজার যাদের নিয়ন্ত্রণে
দেশে বীজের বাজার ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে দেশি ১০ কোম্পানি। এগুলোর মধ্যে আছে এসিআই সিড, সুপ্রিম সিড, লালতীর সিড, ব্র্যাক, আফতাব সিড, ইউনাইটেড সিড, এআর মালিক সিড কোম্পানি, ইস্পাহানি। এ ছাড়া বড় বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে আছে সিনজেনটা ও বায়ার ক্রপ সায়েন্স।
এসিআই সিড দেশে প্রায় ১৩০ ধরনের বীজ বাজারজাত করে। এই বীজের ৭৫ শতাংশ দেশেই উৎপাদন করা হয়। বাকি ২৫ শতাংশ আমদানি করা হয়। এসিআই সিডের পরিচালক সুধীর চন্দ্র নাথ বলেন, ‘কৃষকের বীজের সঙ্গে আমাদের বীজের অনেক পার্থক্য। কারণ কৃষকের কাছে বীজ সংরক্ষণের ভালো ব্যবস্থাপনা নেই। তা ছাড়া প্রজন্মের পর প্রজন্ম একই বীজ ব্যবহার করলে উৎপাদনক্ষমতা কমে যায়।’
সাবেক কৃষিসচিব ও বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা আনোয়ার ফারুক বলেন, মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারের কারণে ফসলের উৎপাদন অনেক বেড়েছে।আগে বিঘাপ্রতি ধান হতো ৮ থেকে ১০ মণ। এখন হয় ২৫ থেকে ৩০ মণ। সবজি উৎপাদন অনেক বেড়েছে। মৌসুমি সবজিও ১২ মাস বাজারে পাওয়া যায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত বাংলাদেশ সিড কংগ্রেসে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘এখনো কিছু কোম্পানির বীজ নিয়ে প্রতারণা করার প্রবণতা রয়েছে। বীজের মানের বিষয়ে তাদের কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।’ বিএডিসির এক কর্মকর্তা জানান, তাঁরা মাঝেমধ্যে খবর পান কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিএডিসির বীজ নিয়ে আলাদা প্যাকেট করে বাড়তি দামে বিক্রি করে। আবার ভেজাল বীজ বিএডিসির প্যাকেট ব্যবহার করে বাজারজাত করে।
বীজের মালিকানা কৃষকের হাতে থাকা দরকার
খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বীজের মালিকানা কৃষকের হাতে থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষিত কৃষক দেলোয়ার জাহান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা দেলোয়ার মানিকগঞ্জের ঘিওরে পরিবেশবান্ধব উপায়ে কৃষিকাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘কোম্পানিগুলো যদি বীজ দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে খাদ্যঘাটতি দেখা দেবে।কৃষকের হাতে বীজ থাকলে যেকোনো সময় মাঠে নামতে পারবে, ফসল উৎপাদন করতে পারবে। কী চাষ করবে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক দেশীয় বীজ সংরক্ষণ ও কৃষক পর্যায়ে বিতরণের কাজ করে। সংস্থার পরিচালক এ বি এম তৌহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বীজের অধিকার থেকে কৃষককে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিকল্প চেষ্টা না করা হলে বীজ পুরোপুরি করপোরেটের দখলে চলে যাবে।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে