মামুনুর রশীদ
সংস্কারের কথা মনে হলেই ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের কিছু সামাজিক সংস্কারের কথা মনে পড়ে। এর মধ্যে আছে বিধবাবিবাহ প্রচলন, বাল্যবিবাহ এবং সতীদাহ প্রথা রদসহ অনেক কুসংস্কার। সেই সঙ্গে হয় নারীশিক্ষার প্রচলন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফল হলেও লড়াইটা করতে হয়েছে অনেক দিন অবধি। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হলেও সেসব রাজনীতিকদের মধ্যে ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রব্যবস্থার একটা সুস্পষ্ট ছায়া ছিল। বহু ভারতবাসীর ইংল্যান্ড গমন ও আইন বিষয়ে অধ্যয়নের পর তাঁরা ওই দেশের পার্লামেন্টটাকেই আদর্শ মনে করলেন। রাজা-রানির পরিবর্তে একজন রাষ্ট্রপতির কথা ভাবলেন তাঁরা।
ভারত খণ্ডিত হওয়ার পর সেখানে রয়ে গেলেন একজন গভর্নর জেনারেল, যিনি ইংল্যান্ডের। আর পাকিস্তানে গভর্নর জেনারেল হলেন যিনি পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত উর্দুভাষী—ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। জন্মসূত্রে তিনি গুজরাটি মুসলিম। ভারতের গভর্নর জেনারেলটি বিদায় হওয়ার পর সেখানে দ্রুতই রাষ্ট্রপতির বিষয়টি এসে যায়। সংবিধান প্রণীত হয় এবং পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থা চালু হয়, যার প্রধান উদ্দেশ্য গণতন্ত্র। পাকিস্তানে গভর্নর জেনারেলই রয়ে গেলেন বেশ কিছুদিন। সেনাবাহিনী একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে নেয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের পথ দুর্গম হয়ে যায়। সংবিধান রচনার বিষয়টি চলে যায় সুদূরে।
সংসদীয় ব্যবস্থার প্রতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের কোনো আগ্রহই ছিল না। পূর্ব বাংলার প্রতি কোনো ধরনের রাজনৈতিক আগ্রহ প্রকাশ না করে শোষণটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। ন্যূনতম রাজনৈতিক সহনশীলতা না থাকায় কোনো সংস্কৃতি গড়ে উঠল না। যদিও পূর্ব বাংলা এবং বঞ্চিত পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিকদের মধ্যে একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল বহু আগে থেকে। তাই এ দেশে সামরিক আইন চালু করে মানুষকে বুটের তলায় নেওয়া হলো। কিন্তু পূর্ব বাংলা এবং সীমান্ত প্রদেশের নেতৃত্বের মধ্যে একটা গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থাকায় রাজনৈতিক আন্দোলনটা চলতে থাকল। একপর্যায়ে আন্দোলনটা একটা সশস্ত্র যুদ্ধের আকার গ্রহণ করল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আকাঙ্ক্ষিত সেই পথে চলতে গিয়ে বেশ কয়েকটা হোঁচট খাওয়ার পর সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানি কায়দায় ক্ষমতা দখল করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা একেবারেই ধ্বংস করে দেয়।
সেই থেকে জাতিতে বিভাজন আসে, সেই বিভাজন মাঝে মাঝে জোড়া লাগলেও ওই সংস্কৃতিটা আর ফিরে আসে না। এর মধ্যে পেশিশক্তি, অবাধ অর্থের লেনদেন মিলিয়ে যা দাঁড়ায় তা হলো, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিটা একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। পরমতসহিষ্ণুতা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা একেবারেই হারিয়ে যেতে থাকে। প্রতিহিংসা একটা বড় জায়গা করে নেয়। রাষ্ট্রব্যবস্থায় একজন রাষ্ট্রপতি আসেন বটে, কিন্তু তাঁর মধ্যে নিরপেক্ষতা এবং দলের ঊর্ধ্বে ওঠার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। রাষ্ট্রপতিকে কখনোই নাগরিকদের কল্যাণে নিজের ক্ষমতার ব্যবহার করতে দেখা যায় না; বরং দলের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করাটাই মুখ্য বলে বিবেচনা করেন তিনি। বারবার এ জন্য প্রায়ই উচ্চারণ করে থাকি, রাষ্ট্রটা কিছুতেই মানবিক হলো না।
রাষ্ট্রের যারা কর্মচারী, তারাও একই পথ অনুসরণ করে থাকে। এমনকি বিচার বিভাগও প্রশ্নাতীত থাকে না। ফলে সবাই শাসক দলের অনুগত হয়েই নিজেদের কাজ করে থাকে। ক্ষমতার পালাবদলে ব্যাপক রদবদলের পর দেখা যায় রাষ্ট্রের শাসনের বদলে দলীয় শাসন কায়েম হয়ে যায়। এই দুর্ভাগ্য মাথায় নিয়েই আমরা তেপ্পান্ন বছর ধরে চলছি।একসময় সামরিক শাসনের কালে একজন সচিব বলেছিলেন, ‘আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, কোনো দলের নই।’ কিন্তু সেই সচিবকেও পরবর্তীকালে দেখেছি তিনি মন্ত্রী হয়েছেন এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দলের অনুশাসনের মধ্যে বেঁধে ফেলেছেন। তাই রাষ্ট্রের সংস্কারের মুখ্য কথাই হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে ঠিক করা এবং রাষ্ট্রকে মানবিক করে তোলা।
পৃথিবীর অনেক দেশেরই নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা আছে, যা ইংল্যান্ডের মতো নয়। কিন্তু যেখানে ব্রিটিশরা গেছে, সেখানেই নিজেদের শাসনব্যবস্থাটাই রেখে গেছে। আজকের দিনে যখন রাষ্ট্র সংস্কারের কথা ওঠে, তখন ওপরের দুটি কথাই মনে আসে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি, মানবিক রাষ্ট্র যার মধ্যে অসাম্যের বিষয়টি, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ধর্মনিরপেক্ষতার কথা সংস্কারকেরা অবশ্যই ভাববেন—রাষ্ট্র কীভাবে চলবে, নির্বাচিত প্রতিনিধি, আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচারব্যবস্থা—এসবই থাকবে। বাহাত্তরের সংবিধানটি পুনরায় পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
প্রশ্ন উঠছে সংস্কৃতি সংস্কার নিয়ে। মাঝে মাঝে এ প্রশ্ন নিয়ে বিপুল বিতর্ক হচ্ছে। বহু আগে বদরুদ্দীন উমর বলেছিলেন, একটা বড় বিষয় লক্ষণীয় যে আমরা সব সময়ই একটা দ্বিধায় ভুগে থাকি, তা হলো—আমরা বাঙালি না মুসলমান? এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হলেও বাঙালিত্ব তাদের শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত। সুদীর্ঘদিন মুসলিম শাসনের কালেও বাঙালিত্বকে কেউ অস্বীকার করেনি। অসাম্প্রদায়িকতার বাণী তারা ভুলে যায়নি। বাংলা সনের সূচনাও করেছিলেন সম্রাট আকবর। তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য, সেনাপতির অবস্থান খুবই অসাম্প্রদায়িক। সেই ধারা আওরঙ্গজেব পর্যন্ত চলেছে। অখণ্ড ভারতের চিন্তাবিদ, চিত্রকর, সংগীতজ্ঞ—সবার মধ্যেই এই ধারণা বহমান। ব্রিটিশরা এলেও লালন শাহ, হাসন রাজা, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, পঞ্চগীতিকবি, ভাস্কর, নাট্যকারসহ সব শিল্পীই অসাম্প্রদায়িকতার বাণী প্রচার করেছেন। চৈতন্যদেব থেকে শুরু করে আলাওল—সবাই একই পথের পথিক।
আর সংস্কৃতি বিষয়টা কোনো তাৎক্ষণিক বিষয় না। একজন চিন্তক বা শিল্পীদের উত্থান কোনো স্বল্প দিনের বিষয় না। আমাদের ভাষার ওপর যখন আক্রমণ আসে, তখন সমগ্র বাঙালি কেমন করে এক হয়ে লড়াই করতে চায়! আজকের দিনের রাষ্ট্র সংস্কৃতিও একটা অবকাঠামো গড়ে তোলে, যার মধ্যে শিল্পকলা একাডেমি, চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট, চারুকলা; নাটকের জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ করে ফেলে। আবার বেসরকারি পর্যায়েও অনেক শিক্ষকের সৃষ্টি করে। শাসক দল এই অবকাঠামোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয় না। একধরনের গোপন ইঙ্গিতও তার মধ্যে থাকে, যেটি একেবারেই দলীয়। স্বাধীন শিল্পচর্চার পথ সেখানে রুদ্ধ হয়।
একদা উচ্চাঙ্গের শিল্পচর্চার জন্য সামন্তদের একটা পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। উপমহাদেশের অনেক বড় বড় শিল্পীর তখন জন্ম হয়েছিল। আধুনিক রাষ্ট্রগুলো শিল্পীদের স্বাধীন সত্তা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবিকার বিষয়টিও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ইউরোপ, আমেরিকা এবং প্রাচ্য দেশের জাপান, কোরিয়াও সেই পথ অবলম্বন করে। অনুদান দিয়ে শাসক দলের অনুগত করার কোনো চেষ্টা তারা করে না। শিল্পচর্চার জন্য অনুদান কোনো করুণার বিষয় নয়। এটা শিল্পীদের অধিকার। এটিকে তারা আইনসিদ্ধ করেও তুলেছে। নাটক, চলচ্চিত্র নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ একটি বিষয়। এখানে রাষ্ট্রকে অনুদান এবং পৃষ্ঠপোষকতা দিতেই হবে। এটাই হবে সংস্কারের প্রধান বিষয়।
সংস্কৃতিতে প্রধান উপাদান হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাব্যবস্থাকে যেভাবে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে একেবারেই অর্থহীন করে তোলা হচ্ছে, সেখানে শিল্পের শিক্ষাই একটা বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। জীবনাচরণে এবং সত্যিকারের মানুষ হওয়ার জন্য শিল্পের ভূমিকা অসীম। যদি সত্যি আমরা সংস্কারের কথা ভাবি, তাহলে শিল্পকে জীবনের বড় অনুষঙ্গ হিসেবেই দেখতে হবে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
সংস্কারের কথা মনে হলেই ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের কিছু সামাজিক সংস্কারের কথা মনে পড়ে। এর মধ্যে আছে বিধবাবিবাহ প্রচলন, বাল্যবিবাহ এবং সতীদাহ প্রথা রদসহ অনেক কুসংস্কার। সেই সঙ্গে হয় নারীশিক্ষার প্রচলন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফল হলেও লড়াইটা করতে হয়েছে অনেক দিন অবধি। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হলেও সেসব রাজনীতিকদের মধ্যে ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রব্যবস্থার একটা সুস্পষ্ট ছায়া ছিল। বহু ভারতবাসীর ইংল্যান্ড গমন ও আইন বিষয়ে অধ্যয়নের পর তাঁরা ওই দেশের পার্লামেন্টটাকেই আদর্শ মনে করলেন। রাজা-রানির পরিবর্তে একজন রাষ্ট্রপতির কথা ভাবলেন তাঁরা।
ভারত খণ্ডিত হওয়ার পর সেখানে রয়ে গেলেন একজন গভর্নর জেনারেল, যিনি ইংল্যান্ডের। আর পাকিস্তানে গভর্নর জেনারেল হলেন যিনি পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত উর্দুভাষী—ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। জন্মসূত্রে তিনি গুজরাটি মুসলিম। ভারতের গভর্নর জেনারেলটি বিদায় হওয়ার পর সেখানে দ্রুতই রাষ্ট্রপতির বিষয়টি এসে যায়। সংবিধান প্রণীত হয় এবং পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থা চালু হয়, যার প্রধান উদ্দেশ্য গণতন্ত্র। পাকিস্তানে গভর্নর জেনারেলই রয়ে গেলেন বেশ কিছুদিন। সেনাবাহিনী একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে নেয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের পথ দুর্গম হয়ে যায়। সংবিধান রচনার বিষয়টি চলে যায় সুদূরে।
সংসদীয় ব্যবস্থার প্রতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের কোনো আগ্রহই ছিল না। পূর্ব বাংলার প্রতি কোনো ধরনের রাজনৈতিক আগ্রহ প্রকাশ না করে শোষণটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। ন্যূনতম রাজনৈতিক সহনশীলতা না থাকায় কোনো সংস্কৃতি গড়ে উঠল না। যদিও পূর্ব বাংলা এবং বঞ্চিত পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিকদের মধ্যে একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল বহু আগে থেকে। তাই এ দেশে সামরিক আইন চালু করে মানুষকে বুটের তলায় নেওয়া হলো। কিন্তু পূর্ব বাংলা এবং সীমান্ত প্রদেশের নেতৃত্বের মধ্যে একটা গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থাকায় রাজনৈতিক আন্দোলনটা চলতে থাকল। একপর্যায়ে আন্দোলনটা একটা সশস্ত্র যুদ্ধের আকার গ্রহণ করল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আকাঙ্ক্ষিত সেই পথে চলতে গিয়ে বেশ কয়েকটা হোঁচট খাওয়ার পর সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানি কায়দায় ক্ষমতা দখল করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা একেবারেই ধ্বংস করে দেয়।
সেই থেকে জাতিতে বিভাজন আসে, সেই বিভাজন মাঝে মাঝে জোড়া লাগলেও ওই সংস্কৃতিটা আর ফিরে আসে না। এর মধ্যে পেশিশক্তি, অবাধ অর্থের লেনদেন মিলিয়ে যা দাঁড়ায় তা হলো, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিটা একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। পরমতসহিষ্ণুতা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা একেবারেই হারিয়ে যেতে থাকে। প্রতিহিংসা একটা বড় জায়গা করে নেয়। রাষ্ট্রব্যবস্থায় একজন রাষ্ট্রপতি আসেন বটে, কিন্তু তাঁর মধ্যে নিরপেক্ষতা এবং দলের ঊর্ধ্বে ওঠার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। রাষ্ট্রপতিকে কখনোই নাগরিকদের কল্যাণে নিজের ক্ষমতার ব্যবহার করতে দেখা যায় না; বরং দলের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করাটাই মুখ্য বলে বিবেচনা করেন তিনি। বারবার এ জন্য প্রায়ই উচ্চারণ করে থাকি, রাষ্ট্রটা কিছুতেই মানবিক হলো না।
রাষ্ট্রের যারা কর্মচারী, তারাও একই পথ অনুসরণ করে থাকে। এমনকি বিচার বিভাগও প্রশ্নাতীত থাকে না। ফলে সবাই শাসক দলের অনুগত হয়েই নিজেদের কাজ করে থাকে। ক্ষমতার পালাবদলে ব্যাপক রদবদলের পর দেখা যায় রাষ্ট্রের শাসনের বদলে দলীয় শাসন কায়েম হয়ে যায়। এই দুর্ভাগ্য মাথায় নিয়েই আমরা তেপ্পান্ন বছর ধরে চলছি।একসময় সামরিক শাসনের কালে একজন সচিব বলেছিলেন, ‘আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, কোনো দলের নই।’ কিন্তু সেই সচিবকেও পরবর্তীকালে দেখেছি তিনি মন্ত্রী হয়েছেন এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দলের অনুশাসনের মধ্যে বেঁধে ফেলেছেন। তাই রাষ্ট্রের সংস্কারের মুখ্য কথাই হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে ঠিক করা এবং রাষ্ট্রকে মানবিক করে তোলা।
পৃথিবীর অনেক দেশেরই নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা আছে, যা ইংল্যান্ডের মতো নয়। কিন্তু যেখানে ব্রিটিশরা গেছে, সেখানেই নিজেদের শাসনব্যবস্থাটাই রেখে গেছে। আজকের দিনে যখন রাষ্ট্র সংস্কারের কথা ওঠে, তখন ওপরের দুটি কথাই মনে আসে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি, মানবিক রাষ্ট্র যার মধ্যে অসাম্যের বিষয়টি, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ধর্মনিরপেক্ষতার কথা সংস্কারকেরা অবশ্যই ভাববেন—রাষ্ট্র কীভাবে চলবে, নির্বাচিত প্রতিনিধি, আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচারব্যবস্থা—এসবই থাকবে। বাহাত্তরের সংবিধানটি পুনরায় পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
প্রশ্ন উঠছে সংস্কৃতি সংস্কার নিয়ে। মাঝে মাঝে এ প্রশ্ন নিয়ে বিপুল বিতর্ক হচ্ছে। বহু আগে বদরুদ্দীন উমর বলেছিলেন, একটা বড় বিষয় লক্ষণীয় যে আমরা সব সময়ই একটা দ্বিধায় ভুগে থাকি, তা হলো—আমরা বাঙালি না মুসলমান? এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হলেও বাঙালিত্ব তাদের শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত। সুদীর্ঘদিন মুসলিম শাসনের কালেও বাঙালিত্বকে কেউ অস্বীকার করেনি। অসাম্প্রদায়িকতার বাণী তারা ভুলে যায়নি। বাংলা সনের সূচনাও করেছিলেন সম্রাট আকবর। তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য, সেনাপতির অবস্থান খুবই অসাম্প্রদায়িক। সেই ধারা আওরঙ্গজেব পর্যন্ত চলেছে। অখণ্ড ভারতের চিন্তাবিদ, চিত্রকর, সংগীতজ্ঞ—সবার মধ্যেই এই ধারণা বহমান। ব্রিটিশরা এলেও লালন শাহ, হাসন রাজা, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, পঞ্চগীতিকবি, ভাস্কর, নাট্যকারসহ সব শিল্পীই অসাম্প্রদায়িকতার বাণী প্রচার করেছেন। চৈতন্যদেব থেকে শুরু করে আলাওল—সবাই একই পথের পথিক।
আর সংস্কৃতি বিষয়টা কোনো তাৎক্ষণিক বিষয় না। একজন চিন্তক বা শিল্পীদের উত্থান কোনো স্বল্প দিনের বিষয় না। আমাদের ভাষার ওপর যখন আক্রমণ আসে, তখন সমগ্র বাঙালি কেমন করে এক হয়ে লড়াই করতে চায়! আজকের দিনের রাষ্ট্র সংস্কৃতিও একটা অবকাঠামো গড়ে তোলে, যার মধ্যে শিল্পকলা একাডেমি, চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট, চারুকলা; নাটকের জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ করে ফেলে। আবার বেসরকারি পর্যায়েও অনেক শিক্ষকের সৃষ্টি করে। শাসক দল এই অবকাঠামোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয় না। একধরনের গোপন ইঙ্গিতও তার মধ্যে থাকে, যেটি একেবারেই দলীয়। স্বাধীন শিল্পচর্চার পথ সেখানে রুদ্ধ হয়।
একদা উচ্চাঙ্গের শিল্পচর্চার জন্য সামন্তদের একটা পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। উপমহাদেশের অনেক বড় বড় শিল্পীর তখন জন্ম হয়েছিল। আধুনিক রাষ্ট্রগুলো শিল্পীদের স্বাধীন সত্তা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবিকার বিষয়টিও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ইউরোপ, আমেরিকা এবং প্রাচ্য দেশের জাপান, কোরিয়াও সেই পথ অবলম্বন করে। অনুদান দিয়ে শাসক দলের অনুগত করার কোনো চেষ্টা তারা করে না। শিল্পচর্চার জন্য অনুদান কোনো করুণার বিষয় নয়। এটা শিল্পীদের অধিকার। এটিকে তারা আইনসিদ্ধ করেও তুলেছে। নাটক, চলচ্চিত্র নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ একটি বিষয়। এখানে রাষ্ট্রকে অনুদান এবং পৃষ্ঠপোষকতা দিতেই হবে। এটাই হবে সংস্কারের প্রধান বিষয়।
সংস্কৃতিতে প্রধান উপাদান হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাব্যবস্থাকে যেভাবে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে একেবারেই অর্থহীন করে তোলা হচ্ছে, সেখানে শিল্পের শিক্ষাই একটা বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। জীবনাচরণে এবং সত্যিকারের মানুষ হওয়ার জন্য শিল্পের ভূমিকা অসীম। যদি সত্যি আমরা সংস্কারের কথা ভাবি, তাহলে শিল্পকে জীবনের বড় অনুষঙ্গ হিসেবেই দেখতে হবে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে