আসিফ
বর্তমানে আশপাশে তাকালে দেখা যায়, দেশীয় রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা জন নানা রকম মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ বলছেন, রাজনৈতিক পরিবেশ আক্রমণাত্মক ও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সামাজিক আচরণও জটিল থেকে জটিলতর হয়ে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যাচ্ছে, আমরা সামাজিকভাবে শুধু অস্থির হয়ে পড়েছি না, ব্যক্তিক পরিস্থিতি এতটাই টালমাটাল হয়ে পড়ছে, যেকোনো মুহূর্তে আমরা মারাত্মক কিছু ঘটিয়ে ফেলার অবস্থায় চলে যাচ্ছি। যেটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ফ্রাঙ্ক ড্রেকের সেই গাণিতিক সমীকরণের কথা, যে সমীকরণে সভ্যতা ও সমাজগুলো কীভাবে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে ফেলতে পারে তারই হিসাব বলা হয়েছিল। সেই সমীকরণে আরও বলা হয়, বিশ্বজগতে প্রতি এক শ সভ্যতার মধ্যে একটাই টিকে থাকে।
পরিবেশদূষণ, জলবায়ু বিপর্যয়, মারণাস্ত্র বানানো ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যাভ্যাসে জাঙ্ক ফুডের অভ্যাস কয়েক প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। ফলে এখন ক্যানসার, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, প্রতিবন্ধিতার কাছে আমরা হেরে গেছি। মাইক্রোওভেন আর আগুনের চুলায় রান্নায় উপাদানগুলো কী পার্থক্য, তা আদিম মানুষদের নানা অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি আর বিজ্ঞানও এ পার্থক্য আমাদের জানিয়েছে অনেক দিন আগেই। কিন্তু লাভ-ক্ষতির হিসাব করিনি আমরা। এখনো কি করছি?
এসব তো গেল। আবার আমরা বলছি, যুদ্ধ ভালো না। মানুষ মরে যায়, প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতি হয়, মানসিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই ইত্যাদি ইত্যাদি। পরিহাস হচ্ছে, পৃথিবীর শক্তিশালী ক্ষমতাধর অর্থনীতির দেশগুলোর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা হচ্ছে অস্ত্র। যুদ্ধ লাগলেই অস্ত্রের ব্যবসা ভালো হয়। যদি অর্থনীতির উন্নয়ন হয় তাহলে যুদ্ধাবস্থা তৈরি করাই তো লাভজনক। কেন তা বন্ধ হবে? তাতে হাজার কেন, লাখ শিশু মারা গেলেও কিছু আসে-যায় না। আরব দেশগুলো তো ইসরায়েলের কাছ থেকে অস্ত্র কিনছেই; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মানুষের যত অসুবিধে হোক, ইউরোপ আর আমেরিকার অস্ত্রের ব্যবসা তো বাড়ছেই।
শুধু কি বর্তমানেই এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, না, আগেও কম-বেশি এ রকম অবস্থা ছিল? সত্যি কথা বলতে, এগুলো ছিল, কিন্তু এতটা প্রকট হয়ে ধরা দেয়নি। আর ক্রমেই তা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান বলছে, এগুলো সংঘটিত হওয়ার জন্য মানুষের মধ্যেই এর উপাদান ছিল। সময় এবং পরিবেশ তাকে নানারূপে সক্রিয় ও বেগবান করে তুলছে। পরিহাস হচ্ছে, যে সামাজিক বিকাশের সংগ্রাম, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আমাদের এই প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের দিকে এগিয়ে দিয়েছে, তাকে আমরা অনুধাবন করার চেষ্টা করিনি। আর আত্মস্থ না করায় মানসিক বিকাশও ঘটেনি। তাই বিবর্তনের বাঁকা পথে পাওয়া আমাদের খারাপ দিকগুলো এই প্রাযুক্তিক উৎকর্ষকে ব্যবহার করেছে, যা আমাদের বর্বর পৃথিবীর দিকে নিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে।
হাজার বছর ধরে মানুষ হেঁটেছে যাযাবরের মতো। কখনো তৃণভূমির অঞ্চলে, কখনো খোলা প্রান্তর, সমুদ্রের ধারে, পাহাড়ি গিরিখাতে, কখনো গভীর জঙ্গলে। পাগলের মতো ঘুরে বেড়িয়েছিল, শুধু খাবারের সন্ধানে, টিকে থাকার জন্য। আকাশের নক্ষত্র আর জ্যোতিষ্ককে অবলম্বন করেই খুঁজেছিল পথের দিশা। ক্যাম্পফায়ারের মতো নিভু-নিভু আগুন আর চন্দ্রহীন রাতে তারা নক্ষত্রকে পর্যবেক্ষণ করে বেড়াত। সব সময় উদ্ভাবনের প্রবণতাই তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। অবশেষে কৃষি উদ্ভাবন তাদের স্থিরতা দেয়। একসময় ঘর আর পথের খোঁজে এই মানুষেরা ক্রমেই যোগ্য হয়ে ওঠে। মানব অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় অংশ ওই সময়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছিল। সেই কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আমরা এই মানব প্রজাতি এমন একটা অবস্থায় এলাম, যেখানে টিকে থাকার ক্ষেত্রে কিছুটা সুস্থিরতার আশা করার কথা।
তবে দুর্ভাগ্য, সেই জীবনযাপনকে আমরা মনে রাখিনি এবং যাপিত জীবনের শিক্ষায়ও যুক্ত করিনি। পরিবেশ-পরিস্থিতি কীভাবে সময়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তা নিয়ে ভাবিনি। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ধারণা ও অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে আমরা চলার চেষ্টা করেছি। সেগুলোকে চিরায়ত সত্য হিসেবে নিয়ে এগোতে গিয়ে বিপথগামী হয়েছি। আমাদের দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি থেকেও তা স্পষ্ট হয়। অথচ ইতিহাস থেকে জানি, প্রতি শতকে আমরা কী পরিমাণ পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছি। আশ্চর্য! সেই পরিবর্তনের মুখোমুখি দাঁড়ানোর প্রস্তুতি কখনোই নিইনি, কতগুলো অন্ধবিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরা ছাড়া। শুধু পেগান বা সেমিটিক ধর্মগুলোই নয়, রাজনৈতিক মতাদর্শকেও অন্ধ ধর্মবিশ্বাসে পরিণত করার চেষ্টা করেছি আর অন্য ধর্মের সমালোচনা করে চলেছি।
আমরা আড়াই হাজার বছরের বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ থেকে জানি, থেলিস, পিথাগোরাস হয়ে ইরাটোস্থেনিস পর্যন্ত পৃথিবীকে গোল ভাবার ইতিহাস; নিকোলাই কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও গ্যালিলি, জোহানস কেপলার হয়ে আইজ্যাক নিউটন তাঁদের ধারণা দিয়ে আমাদের শিখিয়ে গেছেন, কেন শুধু পৃথিবীই গোল নয়, গ্রহগুলোও গোল।
প্রকৃতিবিদ ক্যারোলাস লিনিয়াস তাঁর ট্যাক্সোনোমি বা নামকরণবিদ্যা দিয়ে দেখিয়েছেন, পৃথিবীর সব প্রাণী পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। মানুষও তার অংশ। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত ধারণা থেকেই আমরা জেনেছি, জীবনের উদ্ভব ও বিকাশের বৈচিত্র্যময়তার মূল বিষয়গুলো। আর সেগুলোর একটি হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং দ্বিতীয়টি বংশগতির বিজ্ঞান বা জেনেটিকস; এদের মিথস্ক্রিয়ায় বৈচিত্র্যময়তা কীভাবে পৃথিবীব্যাপী প্রাণকে ছড়িয়ে দিয়েছিল, শতকোটি বছরের পৃথিবীর ইতিহাসের পর্যালোচনা করলেও তা আমরা বুঝতে পারি।
পৃথিবীর কত অলিগলি পার হয়ে, বিকাশের কত চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে বৈচিত্র্যময়তার একটা অংশ হিসেবে আমাদের আবির্ভাব। এর মূল কথা হচ্ছে, থেমে যাওয়ার উপায় নেই, পরিবর্তনশীলতাই মুখ্য আর এই পরিবর্তনশীলতাকে সঠিক পথে রাখতে হলে ছড়িয়ে পড়তে হবে। তাই বিকেন্দ্রীকরণকে স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। বিকেন্দ্রীকরণের একটা যথার্থ উপায় হলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা সৌরশক্তির ব্যাপক ব্যবহার—সোলার ইকোনমির প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা; যেখানে মেগা প্রজেক্টের প্রয়োজন নেই। ক্ষুদ্র প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের স্বল্প পুঁজি দিয়ে অংশগ্রহণ করা সম্ভব। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর সময় ব্যয় করে ফেলছি।
গ্রহান্তরে ছড়িয়ে পড়া হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্প্রসারণের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, টিকে থাকার একটা উপায়। এর অন্যথা হয়েছে বলেই পৃথিবীব্যাপী প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, পোকামাকড়ের মতো মানুষেরও।
তবে এখানে প্রাযুক্তিক বিপর্যয়টা আরও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। সে জন্য টমাস ম্যালথাসের জনসংখ্যার মৌলিক তত্ত্ব আরও ব্যাপকভাবে অনুধাবন করা যেতে পারে। ষাটের দশক থেকে সিপি স্নো, জেকব ব্রনোফ্স্কি, কার্ল সেগান এবং পরে ফ্রিম্যান ডাইসন, মার্টিন রিজ, জামাল নজরুল ইসলাম এ কথাগুলোই বলেছিলেন। আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, চোখের সামনে আসা এক মানব বিপর্যয়ের কাল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তাহলে আমরা কি আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কথা ভাবব না?
লেখক: বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত
বর্তমানে আশপাশে তাকালে দেখা যায়, দেশীয় রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা জন নানা রকম মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ বলছেন, রাজনৈতিক পরিবেশ আক্রমণাত্মক ও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সামাজিক আচরণও জটিল থেকে জটিলতর হয়ে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যাচ্ছে, আমরা সামাজিকভাবে শুধু অস্থির হয়ে পড়েছি না, ব্যক্তিক পরিস্থিতি এতটাই টালমাটাল হয়ে পড়ছে, যেকোনো মুহূর্তে আমরা মারাত্মক কিছু ঘটিয়ে ফেলার অবস্থায় চলে যাচ্ছি। যেটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ফ্রাঙ্ক ড্রেকের সেই গাণিতিক সমীকরণের কথা, যে সমীকরণে সভ্যতা ও সমাজগুলো কীভাবে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে ফেলতে পারে তারই হিসাব বলা হয়েছিল। সেই সমীকরণে আরও বলা হয়, বিশ্বজগতে প্রতি এক শ সভ্যতার মধ্যে একটাই টিকে থাকে।
পরিবেশদূষণ, জলবায়ু বিপর্যয়, মারণাস্ত্র বানানো ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যাভ্যাসে জাঙ্ক ফুডের অভ্যাস কয়েক প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। ফলে এখন ক্যানসার, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, প্রতিবন্ধিতার কাছে আমরা হেরে গেছি। মাইক্রোওভেন আর আগুনের চুলায় রান্নায় উপাদানগুলো কী পার্থক্য, তা আদিম মানুষদের নানা অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি আর বিজ্ঞানও এ পার্থক্য আমাদের জানিয়েছে অনেক দিন আগেই। কিন্তু লাভ-ক্ষতির হিসাব করিনি আমরা। এখনো কি করছি?
এসব তো গেল। আবার আমরা বলছি, যুদ্ধ ভালো না। মানুষ মরে যায়, প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতি হয়, মানসিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই ইত্যাদি ইত্যাদি। পরিহাস হচ্ছে, পৃথিবীর শক্তিশালী ক্ষমতাধর অর্থনীতির দেশগুলোর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা হচ্ছে অস্ত্র। যুদ্ধ লাগলেই অস্ত্রের ব্যবসা ভালো হয়। যদি অর্থনীতির উন্নয়ন হয় তাহলে যুদ্ধাবস্থা তৈরি করাই তো লাভজনক। কেন তা বন্ধ হবে? তাতে হাজার কেন, লাখ শিশু মারা গেলেও কিছু আসে-যায় না। আরব দেশগুলো তো ইসরায়েলের কাছ থেকে অস্ত্র কিনছেই; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মানুষের যত অসুবিধে হোক, ইউরোপ আর আমেরিকার অস্ত্রের ব্যবসা তো বাড়ছেই।
শুধু কি বর্তমানেই এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, না, আগেও কম-বেশি এ রকম অবস্থা ছিল? সত্যি কথা বলতে, এগুলো ছিল, কিন্তু এতটা প্রকট হয়ে ধরা দেয়নি। আর ক্রমেই তা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান বলছে, এগুলো সংঘটিত হওয়ার জন্য মানুষের মধ্যেই এর উপাদান ছিল। সময় এবং পরিবেশ তাকে নানারূপে সক্রিয় ও বেগবান করে তুলছে। পরিহাস হচ্ছে, যে সামাজিক বিকাশের সংগ্রাম, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আমাদের এই প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের দিকে এগিয়ে দিয়েছে, তাকে আমরা অনুধাবন করার চেষ্টা করিনি। আর আত্মস্থ না করায় মানসিক বিকাশও ঘটেনি। তাই বিবর্তনের বাঁকা পথে পাওয়া আমাদের খারাপ দিকগুলো এই প্রাযুক্তিক উৎকর্ষকে ব্যবহার করেছে, যা আমাদের বর্বর পৃথিবীর দিকে নিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে।
হাজার বছর ধরে মানুষ হেঁটেছে যাযাবরের মতো। কখনো তৃণভূমির অঞ্চলে, কখনো খোলা প্রান্তর, সমুদ্রের ধারে, পাহাড়ি গিরিখাতে, কখনো গভীর জঙ্গলে। পাগলের মতো ঘুরে বেড়িয়েছিল, শুধু খাবারের সন্ধানে, টিকে থাকার জন্য। আকাশের নক্ষত্র আর জ্যোতিষ্ককে অবলম্বন করেই খুঁজেছিল পথের দিশা। ক্যাম্পফায়ারের মতো নিভু-নিভু আগুন আর চন্দ্রহীন রাতে তারা নক্ষত্রকে পর্যবেক্ষণ করে বেড়াত। সব সময় উদ্ভাবনের প্রবণতাই তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। অবশেষে কৃষি উদ্ভাবন তাদের স্থিরতা দেয়। একসময় ঘর আর পথের খোঁজে এই মানুষেরা ক্রমেই যোগ্য হয়ে ওঠে। মানব অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় অংশ ওই সময়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছিল। সেই কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আমরা এই মানব প্রজাতি এমন একটা অবস্থায় এলাম, যেখানে টিকে থাকার ক্ষেত্রে কিছুটা সুস্থিরতার আশা করার কথা।
তবে দুর্ভাগ্য, সেই জীবনযাপনকে আমরা মনে রাখিনি এবং যাপিত জীবনের শিক্ষায়ও যুক্ত করিনি। পরিবেশ-পরিস্থিতি কীভাবে সময়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তা নিয়ে ভাবিনি। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ধারণা ও অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে আমরা চলার চেষ্টা করেছি। সেগুলোকে চিরায়ত সত্য হিসেবে নিয়ে এগোতে গিয়ে বিপথগামী হয়েছি। আমাদের দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি থেকেও তা স্পষ্ট হয়। অথচ ইতিহাস থেকে জানি, প্রতি শতকে আমরা কী পরিমাণ পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছি। আশ্চর্য! সেই পরিবর্তনের মুখোমুখি দাঁড়ানোর প্রস্তুতি কখনোই নিইনি, কতগুলো অন্ধবিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরা ছাড়া। শুধু পেগান বা সেমিটিক ধর্মগুলোই নয়, রাজনৈতিক মতাদর্শকেও অন্ধ ধর্মবিশ্বাসে পরিণত করার চেষ্টা করেছি আর অন্য ধর্মের সমালোচনা করে চলেছি।
আমরা আড়াই হাজার বছরের বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ থেকে জানি, থেলিস, পিথাগোরাস হয়ে ইরাটোস্থেনিস পর্যন্ত পৃথিবীকে গোল ভাবার ইতিহাস; নিকোলাই কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও গ্যালিলি, জোহানস কেপলার হয়ে আইজ্যাক নিউটন তাঁদের ধারণা দিয়ে আমাদের শিখিয়ে গেছেন, কেন শুধু পৃথিবীই গোল নয়, গ্রহগুলোও গোল।
প্রকৃতিবিদ ক্যারোলাস লিনিয়াস তাঁর ট্যাক্সোনোমি বা নামকরণবিদ্যা দিয়ে দেখিয়েছেন, পৃথিবীর সব প্রাণী পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। মানুষও তার অংশ। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত ধারণা থেকেই আমরা জেনেছি, জীবনের উদ্ভব ও বিকাশের বৈচিত্র্যময়তার মূল বিষয়গুলো। আর সেগুলোর একটি হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং দ্বিতীয়টি বংশগতির বিজ্ঞান বা জেনেটিকস; এদের মিথস্ক্রিয়ায় বৈচিত্র্যময়তা কীভাবে পৃথিবীব্যাপী প্রাণকে ছড়িয়ে দিয়েছিল, শতকোটি বছরের পৃথিবীর ইতিহাসের পর্যালোচনা করলেও তা আমরা বুঝতে পারি।
পৃথিবীর কত অলিগলি পার হয়ে, বিকাশের কত চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে বৈচিত্র্যময়তার একটা অংশ হিসেবে আমাদের আবির্ভাব। এর মূল কথা হচ্ছে, থেমে যাওয়ার উপায় নেই, পরিবর্তনশীলতাই মুখ্য আর এই পরিবর্তনশীলতাকে সঠিক পথে রাখতে হলে ছড়িয়ে পড়তে হবে। তাই বিকেন্দ্রীকরণকে স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। বিকেন্দ্রীকরণের একটা যথার্থ উপায় হলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা সৌরশক্তির ব্যাপক ব্যবহার—সোলার ইকোনমির প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা; যেখানে মেগা প্রজেক্টের প্রয়োজন নেই। ক্ষুদ্র প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের স্বল্প পুঁজি দিয়ে অংশগ্রহণ করা সম্ভব। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর সময় ব্যয় করে ফেলছি।
গ্রহান্তরে ছড়িয়ে পড়া হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্প্রসারণের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, টিকে থাকার একটা উপায়। এর অন্যথা হয়েছে বলেই পৃথিবীব্যাপী প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, পোকামাকড়ের মতো মানুষেরও।
তবে এখানে প্রাযুক্তিক বিপর্যয়টা আরও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। সে জন্য টমাস ম্যালথাসের জনসংখ্যার মৌলিক তত্ত্ব আরও ব্যাপকভাবে অনুধাবন করা যেতে পারে। ষাটের দশক থেকে সিপি স্নো, জেকব ব্রনোফ্স্কি, কার্ল সেগান এবং পরে ফ্রিম্যান ডাইসন, মার্টিন রিজ, জামাল নজরুল ইসলাম এ কথাগুলোই বলেছিলেন। আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, চোখের সামনে আসা এক মানব বিপর্যয়ের কাল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তাহলে আমরা কি আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কথা ভাবব না?
লেখক: বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে