গোলাম কুদ্দুছ
পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। আর সে কারণেই ভারতের যেকোনো জাতীয় নির্বাচন বিশ্ববাসীর আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে। বর্তমান বিশ্বে দেশে দেশে গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন এবং বহু ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বহু দেশে বর্ণ ও জাতিবিদ্বেষ এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের প্রভাব বিস্তার, কারচুপি এবং নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় ফল পরিবর্তনের অভিযোগ খোদ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ঠিক সেই সময়ে বহু জাতি, বহু বর্ণ, বহু ধর্মের মানুষের আবাস ভারতের নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। ভারতের সংবিধানে সব ধর্ম-বর্ণ-জাতির ঐক্য ও সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের আলোকে ভারতে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে কি না, প্রবল আগ্রহ নিয়ে বিশ্ববাসী তা অবলোকন করেছে।
সাত পর্বে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচন ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়ে ৪ জুন ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে। লোকসভার মোট আসন ৫৪৩। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসন। এবারের নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে পেয়েছে ২৪০টি আসন এবং তাদের নির্বাচনী জোট এনডিএ পেয়েছে ২৯৩ আসন। অপরদিকে বিরোধী কংগ্রেস পেয়েছে ১০১ এবং তাদের ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩২টি আসন। নির্বাচনের আগে বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এককভাবে সরকার গঠন এবং তাদের জোট ৪০০ আসনের বেশি পাবে বলে ব্যাপক প্রচার চালান নরেন্দ্র মোদি।
অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন এবং দেশব্যাপী রামলীলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে একচেটিয়া হিন্দু ভোট আদায়ের যে স্বপ্ন বিজেপি দেখেছিল, তা মূলত ভেস্তে গেছে। কৃষক আন্দোলন দমন, বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ কয়েকটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া, রাহুল গান্ধী ও কেজরিওয়ালকে কারাগারে প্রেরণ এবং সর্বত্র সাম্প্রদায়িক উসকানি ও বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টা ভারতের অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিভিন্ন জনগোষ্ঠী সমর্থন করেনি। অপরদিকে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল—যাকে গুরুত্ব দেয়নি বিজেপি। ভারতের সংবিধান অখণ্ডতা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বহু জাতি-গোষ্ঠী, ভাষা-সংস্কৃতির মেলবন্ধনের ভারতবর্ষ রক্ষাই ছিল বিরোধীদের প্রচারের অন্যতম দিক, যা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করেছিল। খোদ অযোধ্যার আসনে বিজেপির হেরে যাওয়া এবং তাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তর প্রদেশের ফলাফল বিপর্যয় ভারতের সংবিধান এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি জনসমর্থনের বহিঃপ্রকাশ বলা যেতে পারে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কংগ্রেস তাদের হারানো জমি আবার ফিরে পেতে শুরু করেছে এবং জাতীয় নেতা হিসেবে রাহুল গান্ধীর গ্রহণযোগ্যতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
এবার আসা যাক পশ্চিমবঙ্গের দিকে। বাংলা ভাষাভাষী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের যেকোনো নির্বাচনের দিকে আগ্রহের দৃষ্টি থাকে বাংলাদেশের মানুষের। পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের ফলাফল কি আগ্রহী বা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে মিলেছে? যদি না মিলে থাকে, তবে এ রকম হলো কেন? ফলাফলে দেখা গেল, তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২৯টি আসন, বিজেপি ১২ এবং বাম সমর্থিত কংগ্রেস ১টি আসন। বামের খাতা এবারও শূন্য। আমার ভাবনায় ফলাফল খুব বেশি পাল্টায়নি। আমি আমার বন্ধুদের (ভারতীয় এবং বাংলাদেশি) বলেছিলাম, তৃণমূল কংগ্রেস বেশি আসন পাবে, বিজেপির কমবে এবং বাম-কংগ্রেসের ভোট বাড়বে। ফলাফলটা এ রকম হতে পারে—তৃণমূল কংগ্রেস ২৫ থেকে ২৭, বিজেপি ১২ থেকে ১৫ এবং বাম কংগ্রেস ১ থেকে ৫। বিজেপির আসন কমে যাওয়ার কারণ বলেছিলাম, সাংগঠনিক দুর্বলতা, মোদির জনপ্রিয়তায় ঘাটতি, কট্টর হিন্দুত্ববাদিতার নেতিবাচক প্রভাব এবং বাম কংগ্রেসের ব্যাপক প্রচার ও উত্থান।
বামফ্রন্টের প্রধান শক্তি সিপিএম লোকসভা নির্বাচনে ২৩, শরিক দল ও কংগ্রেস ১৯টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মো. সেলিম এবং ড. সুজন চক্রবর্তী ছাড়া সব আসনেই তারা তরুণ নেতৃত্বকে মনোনয়ন দিয়েছিল। শিক্ষিত, সাহসী এবং অদম্য মনোবলের অধিকারী এই তরুণ নেতৃত্বের প্রায় সবাই তাঁদের আপসহীন লড়াকু মনোভাবের জন্য পশ্চিমবঙ্গ এমনকি দেশব্যাপীও পরিচিতি লাভ করেছেন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে বামফ্রন্টের বিপর্যয়ের পরও এই তরুণ তুর্কিরা মাটি কামড়ে লড়াই করে চলেছেন। বামফ্রন্টের হারানো জমি ফিরে পেতে তাঁরা মরিয়া। পশ্চিমবঙ্গের তরুণ-যুবকদের এক বড় অংশই তাঁদের সমর্থক। করোনার সময় নিজেদের জীবন বিপন্ন করে ‘রেড ব্রিগেড’ গঠন, শ্রমজীবী হোটেল চালু করে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতি, নির্যাতন, বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, সাম্প্রদায়িকতা এবং শিক্ষার দাবিতে রাজ্যব্যাপী ব্যাপক প্রচার অভিযান চালায় বামফ্রন্টের যুব ও ছাত্র মোর্চা। ব্রিগেডে বিশাল সমাবেশ, সব কটি আসনের প্রচারে ব্যাপক জনসমাগম ও বৈচিত্র্য এবং যুক্তিপূর্ণ সহজ-সরল বক্তৃতা সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং সহানুভূতি লাভে সক্ষম হয়েছে। এই যে ব্যাপক প্রচার, বিশাল সমাবেশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড়—এর প্রভাব ভোটের বাক্সে পড়ল না কেন?
আমার বিবেচনায় এর মূল কারণ ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতি এবং জোটভিত্তিক বিভাজন। মানুষ বিভক্ত হয়েছে জোটকে ঘিরে। আপনি যদি নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সরকার চান, তবে এনডিএ জোটকে ভোট দিন। আর যদি বিজেপি-বিরোধী সরকার চান, তবে ইন্ডিয়া জোটকে ভোট দিন। ঘটনাটা ঘটল এখানেই। পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়া জোট বিভক্ত। একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস, অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস জোট সাপে-নেউলে সম্পর্ক। সাংগঠনিক শক্তি এবং জনসমর্থনের বিবেচনায় বেশ এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্য সরকারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, দলীয়করণের গাদা গাদা অভিযোগ থাকার পরও সাধারণ ভোটাররা বিজেপি সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে ইন্ডিয়া জোটের শরিক দল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে বেছে নিয়েছেন। বাম-কংগ্রেসের প্রতি নৈতিক সমর্থন থাকলেও তাদের সাংগঠনিক শক্তির ওপর সাধারণ ভোটাররা পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেননি। আর সে কারণেই তৃণমূল কংগ্রেসের এই জয়জয়কার।
আমার অভিমত হলো, কেন্দ্রে এবং রাজ্যে বিজেপির প্রত্যাশা বিপর্যয়ের ফলে আগামী দিনগুলোতে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্রমাগত জনসমর্থন হারাবে এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাবে। তৃণমূল কংগ্রেস আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় সর্বত্র দলীয়করণ এবং দুর্নীতি বৃদ্ধি পেতে পারে। বিরোধী দল, বিশেষ করে বামফ্রন্টের ওপর দমনপীড়ন বাড়বে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি দল এবং সরকারের চাবি নিজের হাতে রাখতে পারেন, তবে সংকট আয়ত্তের বাইরে না-ও যেতে পারে। বামফ্রন্টের তরুণ যুবারা শূন্যকে শক্তি হিসেবে নিয়ে অনেক দূর এগিয়েছে। আমার বিশ্বাস, তারা যদি বিদ্যমান সাহস, সততা ও দৃঢ়তা নিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সব অপকর্ম এবং জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লাগাতার সংগ্রাম এবং জনসম্পৃক্ততা বজায় রাখতে পারে, তবে ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে তারাই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসবে। মনে রাখতে হবে, মানুষের নৈতিক সমর্থন ভোট বাক্সে নেওয়ার দায়িত্ব বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের। তৃণমূলকে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হলে শুধু প্রকল্প হাতে নিলেই হবে না, দুর্নীতি নির্মূল, সুশাসন নিশ্চিতকরণ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মূল্য দিতে হবে। ঔদ্ধত্য, অহমিকা গণতন্ত্রের সঙ্গে যায় না। পরিশেষে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা সত্ত্বেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং ৯৬ কোটি ভোটারের এই নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা এবং সৌন্দর্যকেই তুলে ধরেছে।
গোলাম কুদ্দুছ, লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। আর সে কারণেই ভারতের যেকোনো জাতীয় নির্বাচন বিশ্ববাসীর আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে। বর্তমান বিশ্বে দেশে দেশে গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন এবং বহু ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বহু দেশে বর্ণ ও জাতিবিদ্বেষ এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের প্রভাব বিস্তার, কারচুপি এবং নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় ফল পরিবর্তনের অভিযোগ খোদ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ঠিক সেই সময়ে বহু জাতি, বহু বর্ণ, বহু ধর্মের মানুষের আবাস ভারতের নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। ভারতের সংবিধানে সব ধর্ম-বর্ণ-জাতির ঐক্য ও সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের আলোকে ভারতে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে কি না, প্রবল আগ্রহ নিয়ে বিশ্ববাসী তা অবলোকন করেছে।
সাত পর্বে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচন ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়ে ৪ জুন ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে। লোকসভার মোট আসন ৫৪৩। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসন। এবারের নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে পেয়েছে ২৪০টি আসন এবং তাদের নির্বাচনী জোট এনডিএ পেয়েছে ২৯৩ আসন। অপরদিকে বিরোধী কংগ্রেস পেয়েছে ১০১ এবং তাদের ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩২টি আসন। নির্বাচনের আগে বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এককভাবে সরকার গঠন এবং তাদের জোট ৪০০ আসনের বেশি পাবে বলে ব্যাপক প্রচার চালান নরেন্দ্র মোদি।
অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন এবং দেশব্যাপী রামলীলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে একচেটিয়া হিন্দু ভোট আদায়ের যে স্বপ্ন বিজেপি দেখেছিল, তা মূলত ভেস্তে গেছে। কৃষক আন্দোলন দমন, বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ কয়েকটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া, রাহুল গান্ধী ও কেজরিওয়ালকে কারাগারে প্রেরণ এবং সর্বত্র সাম্প্রদায়িক উসকানি ও বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টা ভারতের অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিভিন্ন জনগোষ্ঠী সমর্থন করেনি। অপরদিকে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল—যাকে গুরুত্ব দেয়নি বিজেপি। ভারতের সংবিধান অখণ্ডতা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বহু জাতি-গোষ্ঠী, ভাষা-সংস্কৃতির মেলবন্ধনের ভারতবর্ষ রক্ষাই ছিল বিরোধীদের প্রচারের অন্যতম দিক, যা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করেছিল। খোদ অযোধ্যার আসনে বিজেপির হেরে যাওয়া এবং তাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তর প্রদেশের ফলাফল বিপর্যয় ভারতের সংবিধান এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি জনসমর্থনের বহিঃপ্রকাশ বলা যেতে পারে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কংগ্রেস তাদের হারানো জমি আবার ফিরে পেতে শুরু করেছে এবং জাতীয় নেতা হিসেবে রাহুল গান্ধীর গ্রহণযোগ্যতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
এবার আসা যাক পশ্চিমবঙ্গের দিকে। বাংলা ভাষাভাষী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের যেকোনো নির্বাচনের দিকে আগ্রহের দৃষ্টি থাকে বাংলাদেশের মানুষের। পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের ফলাফল কি আগ্রহী বা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে মিলেছে? যদি না মিলে থাকে, তবে এ রকম হলো কেন? ফলাফলে দেখা গেল, তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২৯টি আসন, বিজেপি ১২ এবং বাম সমর্থিত কংগ্রেস ১টি আসন। বামের খাতা এবারও শূন্য। আমার ভাবনায় ফলাফল খুব বেশি পাল্টায়নি। আমি আমার বন্ধুদের (ভারতীয় এবং বাংলাদেশি) বলেছিলাম, তৃণমূল কংগ্রেস বেশি আসন পাবে, বিজেপির কমবে এবং বাম-কংগ্রেসের ভোট বাড়বে। ফলাফলটা এ রকম হতে পারে—তৃণমূল কংগ্রেস ২৫ থেকে ২৭, বিজেপি ১২ থেকে ১৫ এবং বাম কংগ্রেস ১ থেকে ৫। বিজেপির আসন কমে যাওয়ার কারণ বলেছিলাম, সাংগঠনিক দুর্বলতা, মোদির জনপ্রিয়তায় ঘাটতি, কট্টর হিন্দুত্ববাদিতার নেতিবাচক প্রভাব এবং বাম কংগ্রেসের ব্যাপক প্রচার ও উত্থান।
বামফ্রন্টের প্রধান শক্তি সিপিএম লোকসভা নির্বাচনে ২৩, শরিক দল ও কংগ্রেস ১৯টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মো. সেলিম এবং ড. সুজন চক্রবর্তী ছাড়া সব আসনেই তারা তরুণ নেতৃত্বকে মনোনয়ন দিয়েছিল। শিক্ষিত, সাহসী এবং অদম্য মনোবলের অধিকারী এই তরুণ নেতৃত্বের প্রায় সবাই তাঁদের আপসহীন লড়াকু মনোভাবের জন্য পশ্চিমবঙ্গ এমনকি দেশব্যাপীও পরিচিতি লাভ করেছেন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে বামফ্রন্টের বিপর্যয়ের পরও এই তরুণ তুর্কিরা মাটি কামড়ে লড়াই করে চলেছেন। বামফ্রন্টের হারানো জমি ফিরে পেতে তাঁরা মরিয়া। পশ্চিমবঙ্গের তরুণ-যুবকদের এক বড় অংশই তাঁদের সমর্থক। করোনার সময় নিজেদের জীবন বিপন্ন করে ‘রেড ব্রিগেড’ গঠন, শ্রমজীবী হোটেল চালু করে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতি, নির্যাতন, বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, সাম্প্রদায়িকতা এবং শিক্ষার দাবিতে রাজ্যব্যাপী ব্যাপক প্রচার অভিযান চালায় বামফ্রন্টের যুব ও ছাত্র মোর্চা। ব্রিগেডে বিশাল সমাবেশ, সব কটি আসনের প্রচারে ব্যাপক জনসমাগম ও বৈচিত্র্য এবং যুক্তিপূর্ণ সহজ-সরল বক্তৃতা সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং সহানুভূতি লাভে সক্ষম হয়েছে। এই যে ব্যাপক প্রচার, বিশাল সমাবেশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড়—এর প্রভাব ভোটের বাক্সে পড়ল না কেন?
আমার বিবেচনায় এর মূল কারণ ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতি এবং জোটভিত্তিক বিভাজন। মানুষ বিভক্ত হয়েছে জোটকে ঘিরে। আপনি যদি নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সরকার চান, তবে এনডিএ জোটকে ভোট দিন। আর যদি বিজেপি-বিরোধী সরকার চান, তবে ইন্ডিয়া জোটকে ভোট দিন। ঘটনাটা ঘটল এখানেই। পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়া জোট বিভক্ত। একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস, অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস জোট সাপে-নেউলে সম্পর্ক। সাংগঠনিক শক্তি এবং জনসমর্থনের বিবেচনায় বেশ এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্য সরকারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, দলীয়করণের গাদা গাদা অভিযোগ থাকার পরও সাধারণ ভোটাররা বিজেপি সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে ইন্ডিয়া জোটের শরিক দল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে বেছে নিয়েছেন। বাম-কংগ্রেসের প্রতি নৈতিক সমর্থন থাকলেও তাদের সাংগঠনিক শক্তির ওপর সাধারণ ভোটাররা পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেননি। আর সে কারণেই তৃণমূল কংগ্রেসের এই জয়জয়কার।
আমার অভিমত হলো, কেন্দ্রে এবং রাজ্যে বিজেপির প্রত্যাশা বিপর্যয়ের ফলে আগামী দিনগুলোতে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্রমাগত জনসমর্থন হারাবে এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাবে। তৃণমূল কংগ্রেস আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় সর্বত্র দলীয়করণ এবং দুর্নীতি বৃদ্ধি পেতে পারে। বিরোধী দল, বিশেষ করে বামফ্রন্টের ওপর দমনপীড়ন বাড়বে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি দল এবং সরকারের চাবি নিজের হাতে রাখতে পারেন, তবে সংকট আয়ত্তের বাইরে না-ও যেতে পারে। বামফ্রন্টের তরুণ যুবারা শূন্যকে শক্তি হিসেবে নিয়ে অনেক দূর এগিয়েছে। আমার বিশ্বাস, তারা যদি বিদ্যমান সাহস, সততা ও দৃঢ়তা নিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সব অপকর্ম এবং জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লাগাতার সংগ্রাম এবং জনসম্পৃক্ততা বজায় রাখতে পারে, তবে ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে তারাই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসবে। মনে রাখতে হবে, মানুষের নৈতিক সমর্থন ভোট বাক্সে নেওয়ার দায়িত্ব বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের। তৃণমূলকে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হলে শুধু প্রকল্প হাতে নিলেই হবে না, দুর্নীতি নির্মূল, সুশাসন নিশ্চিতকরণ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মূল্য দিতে হবে। ঔদ্ধত্য, অহমিকা গণতন্ত্রের সঙ্গে যায় না। পরিশেষে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা সত্ত্বেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং ৯৬ কোটি ভোটারের এই নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা এবং সৌন্দর্যকেই তুলে ধরেছে।
গোলাম কুদ্দুছ, লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে