বিভুরঞ্জন সরকার
দেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় দুর্নীতি। মানুষের মুখে মুখে সরকারের আমলা, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, সরকারদলীয় নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের কারও কারও বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ কান পাতলেই শোনা যায়। দুর্নীতির অভিযোগগুলো এত দিন সরকারবিরোধীদের অপপ্রচার বলে চালানো হলেও এখন বিষয়টি সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেকের কাছেও অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। আগুনে ঘি ঢালার মতো কয়েকটি ঘটনার পর এখন এটা মুখরোচক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতির নানা অভিযোগ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে নিয়মিত খবর প্রকাশিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশে একদিকে যেমন দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন হয়েছে, তেমনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে। অবশ্য কয়েক বছর ধরেই এটা বলা হচ্ছে যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিলেও দুর্নীতি না কমে বাড়ছে কেন?
এ অবস্থাতেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সে যে-ই হোক, দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গত ২৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের এমন অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর ১ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রতি সরকার কোনো সহানুভূতি দেখাবে না এবং দেখানো হচ্ছেও না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, ‘দুর্নীতি তো সবাই করে না। যারা দুর্নীতি করছে, তারা সরকারের নজরে এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরে সরকার কাউকে ছেড়ে দিয়েছে—এমন নজির নেই। প্রশাসনের হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তা দুর্নীতি করে, আর বাকি সবাই বিব্রত হয়।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় একজন কর্মকর্তার পুরো কার্যক্রম তদারকি করা যায়। সরকার সেভাবেই কাজ করছে। ১৫ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সামনে আরও পরিবর্তন আসবে। রূপকল্প ২০৪১-এর মূল লক্ষ্য হলো—দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ জন্য সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে। নির্বাচনী ইশতেহারেও স্বচ্ছ ও জবাবদিহির কথা বলা হয়েছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা বলা হলেও সাধারণ মানুষ কি এসব কথায় খুব আস্থা রাখতে পারছে? মানুষ বহু বছর ধরেই শুনে আসছে, ‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’, ‘আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ ইত্যাদি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়েছে বলে কেউ মনে করে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের। কিন্তু দুদককে নখদন্তহীন বাঘ বলা হয়। দুদক কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি দুদকের কর্মকর্তাদের সাহস ও সততা নিয়েও প্রশ্ন এবং সংশয় কম নেই। এরপরও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান সম্প্রতি বলেছেন, মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির দেরাজ খুলে বসেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব অবশ্য এমনটা মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে নানাভাবে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিংস আছে। কেবল দুর্নীতি না, এর বাইরেরও অনেক বিষয়ের বিচার আমরা সেখানে করি। শৃঙ্খলাজনিত থাকে, নৈতিক স্খলনের বিষয় থাকে। দুর্নীতি তার একটি অংশ। আমার কাছে এ তথ্য নেই যে কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ রকম আমার নজরে এলে আমি আবার তদন্তের ব্যবস্থা করব। এর মধ্যে কিছু বিষয় হয়তোবা গণমাধ্যমে আসছে। তবে গণমাধ্যমের বাইরেও অনেক বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে এবং তদন্ত অনুযায়ী শাস্তিও হচ্ছে।’
তবে আমাদের দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিচারের প্রক্রিয়াটাই জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব নিজেই বলেছেন, ‘দুর্নীতির বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান আছে। আলাদা এজেন্সি আছে। প্রত্যেকেই কাজ করছে। তাদের কাছে প্রমাণযোগ্য তথ্য এলে সিরিয়াসলি সেটা নিয়ে নামে। কাজের চাপ, লোকবলের অভাব ও রিসোর্সের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হয় যে কোন কাজটা আমি আগে করব। কারণ, দশটা অভিযোগ থাকলে আমাদের আগে নির্ধারণ করতে হয়, কোন কাজটা আমি আগে করব। দশটি কাজই তো আমরা একসঙ্গে করতে পারছি না।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে তদন্তে যখন দুর্নীতি হিসেবে সাব্যস্ত হয়, আমাকে তখন একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া মানতে হচ্ছে। আমি তো তাকে জেলে পাঠাই না। তাকে বরখাস্ত কিংবা চাকরিতে রেখে তার বিরুদ্ধে ডিপি (বিভাগীয় মামলা) চালু করি। ডিপি চালু আছে। প্রশ্ন ওঠে, সে এখনো চাকরি করছে? এটার জবাব আমি কীভাবে দেব? আমার বিধানই এমন। তাকে চাকরিতে রেখেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেছেন, কাগজে-কলমে সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগ আছে। কিন্তু কার্যকর না হওয়ায় দুর্নীতি আগের চেয়ে বেড়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হলে সরকারের উচিত সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করা। তদন্তের ভিত্তিতে জবাবদিহির আওতায় আনা।
অর্থাৎ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আন্তরিক হলে আইন ও প্রক্রিয়ায় সংশোধন আনতে হবে। কেউ কেউ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিশেষ আইনে দ্রুত বিচারের পরামর্শও দিচ্ছেন। তবে বাংলাদেশে সব বিষয়েই বলার লোক বেশি, করার লোক কম। এখানে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ব্যক্তিও বক্তৃতা দেওয়ার সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্ত ভিত না পাওয়ায় এখানে অন্য সব ব্যবস্থাও নড়বড়ে। দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ, অসাধু ব্যবসায়ী ও সুযোগসন্ধানী সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি বিষচক্র গড়ে উঠেছে। সবকিছুই এই চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এই যে সম্প্রতি দুর্নীতি নিয়ে এত কেচ্ছাকাহিনি, তারও নেপথ্যে ওই চক্রের কোনো ভূমিকা আছে কি না, কে বলতে পারে!
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা চার দফায় দাপটের সঙ্গেই সরকার চালাচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিও কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করার মতো অবস্থানে নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক বড় দুর্বলতা হচ্ছে দেশে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে না পারা। এই দুর্বলতা কাটাতে ‘উন্নয়নের গণতন্ত্রের’ স্লোগান দিয়েছে আওয়ামী লীগ বা সরকার। দাতাদের সহায়তা ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে মানুষের সমর্থন ধরে রাখার চেষ্টা তাদের রয়েছে। কিন্তু সেই ‘উন্নয়নের যাত্রা’তেও তারা ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে নিজেদের কিছু নেতা-কর্মীর কর্মকাণ্ডের জন্য।
আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর কিছু নেতা ‘দানবের মতো চেহারা’ নিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন, তা মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ তৈরি করেছে এবং আওয়ামী লীগের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থায় চলে গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ক্যাসিনো-কাণ্ডের কথাও উল্লেখ করা যায়। অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনা করা এবং টেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে ঢাকায় যুবলীগের দুজন নেতাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুজন নেতাকে সরিয়ে দেওয়ার পর যুবলীগের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। কিন্তু তারপর কী হয়েছে শেষ পর্যন্ত? যে লাউ, সেই কদু। আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা যারা দুর্নীতি এবং বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে জড়িত, দলটি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেও শেষে হাকিম ও হুকুম—দুটোই নড়ে। ফলে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা বা মন্ত্রীরা দুর্নীতি বা সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে বলে নিজেরাই সেই সব অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। চোরাকারবারি সংসদ সদস্য হয় কীভাবে?
দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার তর্জন-গর্জন অনেকের কাছে নাটকীয় কৌতুক বলেই মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীরা ছাড়াও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিতরাও যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলেন, তখন ‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’ বলাটা তামাশার মতোই শোনায়। দুর্নীতিবাজদের প্রতি কোনো সহানুভূতি না দেখানোর বিষয়টি কত দূর পর্যন্ত যেতে পারে, সেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপরই নির্ভর করছে।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় দুর্নীতি। মানুষের মুখে মুখে সরকারের আমলা, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, সরকারদলীয় নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের কারও কারও বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ কান পাতলেই শোনা যায়। দুর্নীতির অভিযোগগুলো এত দিন সরকারবিরোধীদের অপপ্রচার বলে চালানো হলেও এখন বিষয়টি সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেকের কাছেও অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। আগুনে ঘি ঢালার মতো কয়েকটি ঘটনার পর এখন এটা মুখরোচক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতির নানা অভিযোগ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে নিয়মিত খবর প্রকাশিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশে একদিকে যেমন দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন হয়েছে, তেমনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে। অবশ্য কয়েক বছর ধরেই এটা বলা হচ্ছে যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিলেও দুর্নীতি না কমে বাড়ছে কেন?
এ অবস্থাতেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সে যে-ই হোক, দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গত ২৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের এমন অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর ১ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রতি সরকার কোনো সহানুভূতি দেখাবে না এবং দেখানো হচ্ছেও না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, ‘দুর্নীতি তো সবাই করে না। যারা দুর্নীতি করছে, তারা সরকারের নজরে এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরে সরকার কাউকে ছেড়ে দিয়েছে—এমন নজির নেই। প্রশাসনের হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তা দুর্নীতি করে, আর বাকি সবাই বিব্রত হয়।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় একজন কর্মকর্তার পুরো কার্যক্রম তদারকি করা যায়। সরকার সেভাবেই কাজ করছে। ১৫ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সামনে আরও পরিবর্তন আসবে। রূপকল্প ২০৪১-এর মূল লক্ষ্য হলো—দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ জন্য সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে। নির্বাচনী ইশতেহারেও স্বচ্ছ ও জবাবদিহির কথা বলা হয়েছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা বলা হলেও সাধারণ মানুষ কি এসব কথায় খুব আস্থা রাখতে পারছে? মানুষ বহু বছর ধরেই শুনে আসছে, ‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’, ‘আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ ইত্যাদি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়েছে বলে কেউ মনে করে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের। কিন্তু দুদককে নখদন্তহীন বাঘ বলা হয়। দুদক কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি দুদকের কর্মকর্তাদের সাহস ও সততা নিয়েও প্রশ্ন এবং সংশয় কম নেই। এরপরও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান সম্প্রতি বলেছেন, মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির দেরাজ খুলে বসেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব অবশ্য এমনটা মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে নানাভাবে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিংস আছে। কেবল দুর্নীতি না, এর বাইরেরও অনেক বিষয়ের বিচার আমরা সেখানে করি। শৃঙ্খলাজনিত থাকে, নৈতিক স্খলনের বিষয় থাকে। দুর্নীতি তার একটি অংশ। আমার কাছে এ তথ্য নেই যে কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ রকম আমার নজরে এলে আমি আবার তদন্তের ব্যবস্থা করব। এর মধ্যে কিছু বিষয় হয়তোবা গণমাধ্যমে আসছে। তবে গণমাধ্যমের বাইরেও অনেক বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে এবং তদন্ত অনুযায়ী শাস্তিও হচ্ছে।’
তবে আমাদের দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিচারের প্রক্রিয়াটাই জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব নিজেই বলেছেন, ‘দুর্নীতির বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান আছে। আলাদা এজেন্সি আছে। প্রত্যেকেই কাজ করছে। তাদের কাছে প্রমাণযোগ্য তথ্য এলে সিরিয়াসলি সেটা নিয়ে নামে। কাজের চাপ, লোকবলের অভাব ও রিসোর্সের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হয় যে কোন কাজটা আমি আগে করব। কারণ, দশটা অভিযোগ থাকলে আমাদের আগে নির্ধারণ করতে হয়, কোন কাজটা আমি আগে করব। দশটি কাজই তো আমরা একসঙ্গে করতে পারছি না।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে তদন্তে যখন দুর্নীতি হিসেবে সাব্যস্ত হয়, আমাকে তখন একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া মানতে হচ্ছে। আমি তো তাকে জেলে পাঠাই না। তাকে বরখাস্ত কিংবা চাকরিতে রেখে তার বিরুদ্ধে ডিপি (বিভাগীয় মামলা) চালু করি। ডিপি চালু আছে। প্রশ্ন ওঠে, সে এখনো চাকরি করছে? এটার জবাব আমি কীভাবে দেব? আমার বিধানই এমন। তাকে চাকরিতে রেখেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেছেন, কাগজে-কলমে সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগ আছে। কিন্তু কার্যকর না হওয়ায় দুর্নীতি আগের চেয়ে বেড়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হলে সরকারের উচিত সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করা। তদন্তের ভিত্তিতে জবাবদিহির আওতায় আনা।
অর্থাৎ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আন্তরিক হলে আইন ও প্রক্রিয়ায় সংশোধন আনতে হবে। কেউ কেউ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিশেষ আইনে দ্রুত বিচারের পরামর্শও দিচ্ছেন। তবে বাংলাদেশে সব বিষয়েই বলার লোক বেশি, করার লোক কম। এখানে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ব্যক্তিও বক্তৃতা দেওয়ার সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্ত ভিত না পাওয়ায় এখানে অন্য সব ব্যবস্থাও নড়বড়ে। দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ, অসাধু ব্যবসায়ী ও সুযোগসন্ধানী সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি বিষচক্র গড়ে উঠেছে। সবকিছুই এই চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এই যে সম্প্রতি দুর্নীতি নিয়ে এত কেচ্ছাকাহিনি, তারও নেপথ্যে ওই চক্রের কোনো ভূমিকা আছে কি না, কে বলতে পারে!
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা চার দফায় দাপটের সঙ্গেই সরকার চালাচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিও কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করার মতো অবস্থানে নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক বড় দুর্বলতা হচ্ছে দেশে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে না পারা। এই দুর্বলতা কাটাতে ‘উন্নয়নের গণতন্ত্রের’ স্লোগান দিয়েছে আওয়ামী লীগ বা সরকার। দাতাদের সহায়তা ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে মানুষের সমর্থন ধরে রাখার চেষ্টা তাদের রয়েছে। কিন্তু সেই ‘উন্নয়নের যাত্রা’তেও তারা ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে নিজেদের কিছু নেতা-কর্মীর কর্মকাণ্ডের জন্য।
আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর কিছু নেতা ‘দানবের মতো চেহারা’ নিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন, তা মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ তৈরি করেছে এবং আওয়ামী লীগের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থায় চলে গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ক্যাসিনো-কাণ্ডের কথাও উল্লেখ করা যায়। অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনা করা এবং টেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে ঢাকায় যুবলীগের দুজন নেতাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুজন নেতাকে সরিয়ে দেওয়ার পর যুবলীগের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। কিন্তু তারপর কী হয়েছে শেষ পর্যন্ত? যে লাউ, সেই কদু। আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা যারা দুর্নীতি এবং বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে জড়িত, দলটি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেও শেষে হাকিম ও হুকুম—দুটোই নড়ে। ফলে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা বা মন্ত্রীরা দুর্নীতি বা সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে বলে নিজেরাই সেই সব অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। চোরাকারবারি সংসদ সদস্য হয় কীভাবে?
দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার তর্জন-গর্জন অনেকের কাছে নাটকীয় কৌতুক বলেই মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীরা ছাড়াও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিতরাও যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলেন, তখন ‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’ বলাটা তামাশার মতোই শোনায়। দুর্নীতিবাজদের প্রতি কোনো সহানুভূতি না দেখানোর বিষয়টি কত দূর পর্যন্ত যেতে পারে, সেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপরই নির্ভর করছে।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে