ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র
বাংলাদেশে প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে দেখা যায় পাহাড়ধসের ঘটনা। পাহাড়ধসের কারণে বিলীন হয় অসংখ্য ঘরবাড়ি। ভারী বর্ষণ শুরু হলেই পাহাড়ধসের আতঙ্ক দেখা যায়। শুধু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয় না, অসংখ্য প্রাণহানিও ঘটে। এসবের পরও মানুষ একটু মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য এখানে ঘরবাড়ি বানায়। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেটে পাহাড় কাটার খবর বেশি পাওয়া যায়। পাহাড় কাটা হয় মূলত মাটি লুট করার জন্য। এ ছাড়া সমতল ভূমি তৈরি করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়। পাহাড় কেটে প্লটও তৈরি করা হয়েছে।
নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক ভবন। একটি তথ্যমতে, গত ২০ বছরে চট্টগ্রামে ২ হাজার একরের বেশি পাহাড় কাটা হয়েছে। রাঙামাটি শহরের ৩২ স্পটে পাহাড়ের ঢালে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়িঘর। কক্সবাজারের মোট বনভূমির ৭৩ হাজার ৩৫৮ হেক্টর বনভূমি লাখ লাখ মানুষের দখলে। এদের অধিকাংশ মানুষ ঝুঁকিতে বসবাস করছে।
পাহাড় ধসে চার দশকে মারা গেছে ছয় শতাধিক মানুষ। ২০০৭ সালে হাটহাজারী, পাহাড়তলী, বায়েজিদ বোস্তামি, খুলসিতে ১২৭ জন মাটিচাপায় মারা যায়। ২০১০ সালে হিমছড়ির বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে মারা যায় ৬২ জন। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রামুতে মারা যায় ৩০ জন। বিগত এক যুগে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পাহাড় ধসে ৩০০-এর বেশি মানুষ মারা গেছে। চট্টগ্রাম মহানগর এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ২০০৮ সালে পাহাড় ধসে ১৩ জন মারা যায়। ২০০৯ সালে মারা যায় ৫ জন, ২০১১-২০১৩ সালে ১৯ জন, ২০১২ সালে ২৯ জন, ২০১৫ সালে ৫ জন মারা যায় কক্সবাজারে।
এনভায়রনমেন্ট পিপল নামের একটি সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী কক্সবাজার জেলায় প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট-বড় ৫১টি সরকারি পাহাড় কাটা হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি বানানো হয়েছে ৬৬ হাজারের বেশি। এসব বাড়ির কোনোটি এক থেকে তিনতলা। এসবের সংখ্যা হবে ২ হাজার। আধা পাকা টিনের বাড়ি রয়েছে প্রায় ৮ হাজার। বাকি ঘরগুলো কোনোটি বাঁশের বেড়া দিয়ে বানানো, কোনোটি টিন আবার কিছু বাড়িঘর ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে গড়া। সংস্থাটির মতে, অবৈধভাবে তৈরি এসব বাড়ির ৯০ শতাংশ জমিই বন বিভাগের। এসব বাড়ির মধ্যে ৬ হাজার ৮০০ বাড়ি অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িতে প্রায় ২৬ হাজার মানুষ বসবাস করে। পাহাড় কাটা, পাহাড়ের গায়ে বসতি নির্মাণ, দালানকোঠা নির্মাণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধি ১৯৯৫-এর ১৫ ধারা মতে, এসব আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
পাহাড় কাটার ফলে মাটির অণুজীব ধ্বংস হয়ে যায়। পাহাড়ের ওপর যে উদ্ভিদ প্রজাতি, তার অধিকাংশ হারিয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য। পাহাড় কাটার ফলে শুধু পাহাড়ধসই হয় না, এর ফলে বন্যা, জলাবদ্ধতা, পরিবেশদূষণ, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, ভূমি ক্ষয়ের ঘটনা ঘটে।
পাহাড় ধসে মানুষের মৃত্যুর মিছিল থামাতে হলে পাহাড়গুলো দখলমুক্ত করতে হবে। ন্যাড়া পাহাড়ের ওপর গাছ লাগাতে হবে। কোনোভাবেই যেন কেউ সেসব জায়গায় বসতি গড়তে না পারে সে জন্য স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাস্তুহারা মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আগে করতে হবে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাহাড় ও টিলা কাটার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা। একই সঙ্গে পাহাড়ের তালিকা প্রস্তুত করে পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নিতে বলেছেন। স্থানীয় প্রশাসন এটি করতে সক্ষম হলে প্রতিবছর মানুষের আর পাহাড় ধসের কারণে মৃত্যুর মুখে পড়তে হবে না। পাহাড়ের জীববৈচিত্র্যও ধীরে ধীরে প্রস্ফুটিত হবে।
লেখক: ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র
শিক্ষক ও গবেষক
বাংলাদেশে প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে দেখা যায় পাহাড়ধসের ঘটনা। পাহাড়ধসের কারণে বিলীন হয় অসংখ্য ঘরবাড়ি। ভারী বর্ষণ শুরু হলেই পাহাড়ধসের আতঙ্ক দেখা যায়। শুধু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয় না, অসংখ্য প্রাণহানিও ঘটে। এসবের পরও মানুষ একটু মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য এখানে ঘরবাড়ি বানায়। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেটে পাহাড় কাটার খবর বেশি পাওয়া যায়। পাহাড় কাটা হয় মূলত মাটি লুট করার জন্য। এ ছাড়া সমতল ভূমি তৈরি করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়। পাহাড় কেটে প্লটও তৈরি করা হয়েছে।
নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক ভবন। একটি তথ্যমতে, গত ২০ বছরে চট্টগ্রামে ২ হাজার একরের বেশি পাহাড় কাটা হয়েছে। রাঙামাটি শহরের ৩২ স্পটে পাহাড়ের ঢালে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়িঘর। কক্সবাজারের মোট বনভূমির ৭৩ হাজার ৩৫৮ হেক্টর বনভূমি লাখ লাখ মানুষের দখলে। এদের অধিকাংশ মানুষ ঝুঁকিতে বসবাস করছে।
পাহাড় ধসে চার দশকে মারা গেছে ছয় শতাধিক মানুষ। ২০০৭ সালে হাটহাজারী, পাহাড়তলী, বায়েজিদ বোস্তামি, খুলসিতে ১২৭ জন মাটিচাপায় মারা যায়। ২০১০ সালে হিমছড়ির বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে মারা যায় ৬২ জন। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রামুতে মারা যায় ৩০ জন। বিগত এক যুগে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পাহাড় ধসে ৩০০-এর বেশি মানুষ মারা গেছে। চট্টগ্রাম মহানগর এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ২০০৮ সালে পাহাড় ধসে ১৩ জন মারা যায়। ২০০৯ সালে মারা যায় ৫ জন, ২০১১-২০১৩ সালে ১৯ জন, ২০১২ সালে ২৯ জন, ২০১৫ সালে ৫ জন মারা যায় কক্সবাজারে।
এনভায়রনমেন্ট পিপল নামের একটি সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী কক্সবাজার জেলায় প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট-বড় ৫১টি সরকারি পাহাড় কাটা হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি বানানো হয়েছে ৬৬ হাজারের বেশি। এসব বাড়ির কোনোটি এক থেকে তিনতলা। এসবের সংখ্যা হবে ২ হাজার। আধা পাকা টিনের বাড়ি রয়েছে প্রায় ৮ হাজার। বাকি ঘরগুলো কোনোটি বাঁশের বেড়া দিয়ে বানানো, কোনোটি টিন আবার কিছু বাড়িঘর ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে গড়া। সংস্থাটির মতে, অবৈধভাবে তৈরি এসব বাড়ির ৯০ শতাংশ জমিই বন বিভাগের। এসব বাড়ির মধ্যে ৬ হাজার ৮০০ বাড়ি অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িতে প্রায় ২৬ হাজার মানুষ বসবাস করে। পাহাড় কাটা, পাহাড়ের গায়ে বসতি নির্মাণ, দালানকোঠা নির্মাণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধি ১৯৯৫-এর ১৫ ধারা মতে, এসব আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
পাহাড় কাটার ফলে মাটির অণুজীব ধ্বংস হয়ে যায়। পাহাড়ের ওপর যে উদ্ভিদ প্রজাতি, তার অধিকাংশ হারিয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য। পাহাড় কাটার ফলে শুধু পাহাড়ধসই হয় না, এর ফলে বন্যা, জলাবদ্ধতা, পরিবেশদূষণ, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, ভূমি ক্ষয়ের ঘটনা ঘটে।
পাহাড় ধসে মানুষের মৃত্যুর মিছিল থামাতে হলে পাহাড়গুলো দখলমুক্ত করতে হবে। ন্যাড়া পাহাড়ের ওপর গাছ লাগাতে হবে। কোনোভাবেই যেন কেউ সেসব জায়গায় বসতি গড়তে না পারে সে জন্য স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাস্তুহারা মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আগে করতে হবে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাহাড় ও টিলা কাটার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা। একই সঙ্গে পাহাড়ের তালিকা প্রস্তুত করে পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নিতে বলেছেন। স্থানীয় প্রশাসন এটি করতে সক্ষম হলে প্রতিবছর মানুষের আর পাহাড় ধসের কারণে মৃত্যুর মুখে পড়তে হবে না। পাহাড়ের জীববৈচিত্র্যও ধীরে ধীরে প্রস্ফুটিত হবে।
লেখক: ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র
শিক্ষক ও গবেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে