স্বপ্না রেজা
এটা ইতিহাস যে বাংলাদেশের ২০ ও ২১তম রাষ্ট্রপ্রতি একই ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি সর্বজনপ্রিয় একজন অকপট রাষ্ট্রপতি। অকপটে কথা বলতে তিনি ছিলেন অভ্যস্ত ও পারদর্শী। তাঁর এই অকপটে কথা বলার অভ্যস্ততা সহজ-সরল আচরণের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পেত, যা তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল অবলীলায়। ক্ষমতার শেষ দিনটি পর্যন্ত তাঁর সেই জনপ্রিয়তা অটুট থেকে গেছে। তাঁর এই জনপ্রিয়তা কেবল তাঁর রাজনৈতিক দলের ভেতরেই নয়, বরং দল-মতনির্বিশেষে সাধারণ মানুষ, তরুণসমাজ—সবার কাছেই তিনি শ্রদ্ধার জায়গাটুকু অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সহজ করে কথা বলা একটা বড় গুণ, যা মানুষ সহজে রপ্ত করতে পারে না। বরং এর জন্য তাঁকে অসাধারণ গুণের অধিকারী হতে হয়। সাধারণ হয়ে চলার জন্য যে অসাধারণ গুণের অধিকারী হওয়া, সেটা হয়েছিলেন সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সম্ভবত সে কারণে খুব সহজে আর দশজন থেকে তাঁকে আলাদা করা যায়। তাঁর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। ১০ বছর ৪৮ দিন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত থাকার পর ২৩ এপ্রিল হয়ে গেল বঙ্গভবন থেকে তাঁর রাজসিক বিদায় সংবর্ধনা। বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে কোনো রাষ্ট্রপতির এমন রাজসিক বিদায় সংবর্ধনা এই প্রথম। বঙ্গভবনের ইতিহাসে এ এক বিরল দৃশ্য। এই সৌভাগ্য যেমন সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতির, তেমন সৌভাগ্য বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের ইতিহাসের। সেই সঙ্গে এও না বললে নয় যে, একই দিনে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের শপথ গ্রহণ ও বঙ্গভবনে প্রবেশের দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছে বাংলাদেশের মানুষসহ গোটা বিশ্ব। গণতন্ত্রচর্চার এ এক বিরল দৃশ্য!
আবদুল হামিদের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। ষাটের দশকে তিনি ছিলেন কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগের সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ অনুসারী। ছাত্ররাজনীতি দিয়েই তাঁর পথচলা। তাঁর জীবনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রথমত, তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, দ্বিতীয়ত, আইনজীবী, তৃতীয়ত, একজন সফল স্পিকার এবং চতুর্থত একজন সফল রাষ্ট্রপতি। এক দশক ধরে তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং সেটা সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে। জীবনের কোনো অধ্যায় নিয়ে তেমন বিতর্ক বা সমালোচনা ছিল না বলেই অনেকের বিশ্বাস। রাষ্ট্রের অভিভাবকত্ব তাঁর কাছে মুখ্য ছিল। কথায়, প্রতিক্রিয়ায় তিনি সব সময় সেটাই বজায় রেখেছেন। যখন তিনি স্পিকার হলেন, তখন তাঁকে কখনোই মনে হয়নি তিনি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কেউ কিংবা তিনি দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত।
একই কথা প্রযোজ্য রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও। তিনি চেষ্টা করেছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অভিভাবক হয়ে থাকার। তাঁর আচরণে রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনা কখনো তৈরি হয়নি। তিনি রাষ্ট্রযন্ত্রের অনিয়ম, ভুলভ্রান্তি নিয়ে অকপটে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, সংশোধন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকই তাঁর দায়িত্বে থাকার মর্যাদাটুকু পেয়েছিল।
তরুণদের কাছে তিনি ছিলেন পরম কাঙ্ক্ষিত ও প্রেরণার উত্তম উৎস। তরুণদের মন জয় করা সহজ কথা নয়। বিশেষ করে অরাজনৈতিক ছাত্রসমাজের। সম্ভবত তাঁর সত্য ভাষণই তরুণদের কাছে তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে। কৃত্রিমতা ও অসত্য কথা বলে তিনি কখনো নিজেকে জাহির করেননি, কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি, চেষ্টা তো দূরের কথা। তিনি যা, সেটাই বলে গেছেন অকপটে, তেমনই রয়ে গেছেন আচার-আচরণে। তাঁর এই মহৎ স্বীকারোক্তি বা সত্য ভাষণ, আচরণ তরুণদের সত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছে, বিমোহিত করেছে। তরুণসমাজ প্রাণ খুলে তাঁর এই সত্য ভাষণ উপভোগ করেছে, উচ্ছ্বসিত হয়েছে। তাঁর আরও একটা গুণ—তিনি অহেতুক ইংরেজি ভাষায় কথা বলেননি। উপরন্তু তাঁর কথায় মাটি ও মানুষের গন্ধ পাওয়া গেছে বরাবর। আঞ্চলিকতার উপস্থিতি থেকেছে তাঁর কথায়। শ্রোতা ও বক্তা—কেউ এতে বিব্রত বোধ করেননি। বরং তাঁর কাছে পৌঁছে গেছে শ্রোতারা অবলীলায়। হাওর এলাকার মানুষ তিনি, পানির স্রোতই বুকে ধারণ করার কৌশল জানেন। তিনি এতটাই সাদামাটা যে, তা অবর্ণনীয়।
তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ স্মৃতিচারণা করছি। আমার সৌভাগ্য হয়েছে বেশ কয়েকবার তাঁর সান্নিধ্যে পৌঁছানোর এবং সেটা তাঁর আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নাহিদ পারভীনের সুবাদে। নাহিদ পারভীন আমার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং উন্নয়ন সেক্টরের সহযোদ্ধা। ২২ মার্চ নাহিদের সৌজন্যে আমরা কজন বঙ্গভবনে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করার সুযোগ পেলাম। সুযোগ হলো মহামান্যের বিভিন্ন সময়ে বলা কথা নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত আমার লেখা কলামের অংশবিশেষ তাঁকে দেখাতে। তাঁর বলা প্রায় উদ্ধৃতি আমাকে প্রভাবিত করত কলামের বিষয়বস্তু নির্ধারণে। আমার কলাম সমগ্র ‘রাষ্ট্র ও সমাজ ভাবনা: ১০০ আপসহীন কলাম’ ও উপন্যাস ‘তোমরা বলেছ, এবার আমি বলি’ তাঁর হাতে তুলে দিয়েছি। তিনি বই হাতে নিয়ে আমার অনুরোধে ছবি তুললেন। কীভাবে বই ধরতে হবে ছবি তোলার জন্য, তা-ও দেখিয়ে দিলেন। সেই দিন তাঁর সঙ্গে গল্পের ফাঁকে আবদার করে বসলাম, তাঁকে নিয়ে একটা টিভি অনুষ্ঠান করব এবং সেটা চ্যানেল আইয়ের জন্য। যে কথা ইতিপূর্বে তিনি কাউকে বলেননি, সেই সব কথাই তিনি অনুষ্ঠানে বলবেন। ঘুরেফিরে আবদারটা জোরালো করলাম। হাসতে হাসতে উনি আশ্বস্ত করলেন। তবে সেটা হবে সিঙ্গাপুর থেকে শারীরিক চেকআপ করার পর। ২৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর শেষ কর্মদিবস। অত্যন্ত টাইট শিডিউল তাঁর। তবু হাল ছাড়লাম না। তিনি যখন সিঙ্গাপুরে, তখন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য প্রশ্ন তাঁকে পাঠানো হলো নাহিদের মাধ্যমে। তারপরও সংশয় ছিল।
সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার পর তাঁর সময় পাওয়া গেল। বিস্মিত হলাম, শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি কথা রেখেছেন এবং এ-সংক্রান্ত সরকারি আনুষ্ঠানিকতার কোনো ধরনের বড় বা বেগতিক ঝক্কিঝামেলা হয়নি! আমার মতো একজন অতি সাধারণ মানুষের ইচ্ছেটাকে গুরুত্ব দেওয়ার যে মহানুভবতা ও উদারতা তিনি দেখিয়েছেন, তা যেন রীতিমতো এক ইতিহাস এবং বিস্ময় তো বটেই। একজন রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে ইতিপূর্বে এমন কোনো অনুষ্ঠান তৈরি ও প্রচার হয়েছে বলে মনে পড়ে না।
১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠানটির রেকর্ডিং হলো। চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ভাই তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। পরিচালনায় ছিলেন শাইখ সিরাজ। আমি চ্যানেল আইয়ের মুখ্য সমন্বয়কারী এবং নাহিদ বঙ্গভবনের মুখ্য সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। আরও একটা বড় প্রাপ্তি যোগ হলো এর সঙ্গে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁর সদ্য রচিত ‘আমার জীবননীতি, আমার রাজনীতি’ বইটিতে দুটি কথা লিখে আমাকে উপহার দিলেন। তিনি যখন বইটিতে কিছু লিখছিলেন, তখন আমি তাঁর সামনে উপস্থিত ছিলাম না। আমার ইচ্ছে ছিল তাঁর কাছ থেকে বইটি চেয়ে নেব। কিন্তু চাওয়ার আগেই মহামান্য আমাকে তা দিলেন। পরম সৌভাগ্য আমার!
পৃথিবীতে সাগরের অস্তিত্ব আছে বলেই বোধ হয় মানুষকে বেশি তৃষ্ণার্ত হতে হয় না। একজন সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সাগরের মতো বিশাল। তাঁর এই বিশালতা বিন্দু জল থেকে শুরু। হাওর থেকে বঙ্গভবন কিংবা শিকড় থেকে শিখরে—এই গল্প তাঁর বিশালতারই স্বাক্ষর। গল্পের ফাঁকে জানতে চেয়েছিলাম অবসরজীবন কীভাবে কাটবে। বললেন, ‘লেখালেখি করে। সমস্যা হলো, কী করে এত লেখা লিখি!’ বললাম, ‘স্যার, আমাকে ডাক দিয়েন। আমি আপনার কথা লিখে দেব।’ উনি বিনয়ের হাসি হাসলেন। বললেন, ‘আমার বইটা কিন্তু পড়বেন।’
স্যার, অবশ্যই আপনার বই পড়ব। আমি পড়ব, আমার উত্তরসূরি পড়বে।
তারও উত্তরসূরি পড়বে। আপনাকে পড়তেই যে হয়!
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
এটা ইতিহাস যে বাংলাদেশের ২০ ও ২১তম রাষ্ট্রপ্রতি একই ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি সর্বজনপ্রিয় একজন অকপট রাষ্ট্রপতি। অকপটে কথা বলতে তিনি ছিলেন অভ্যস্ত ও পারদর্শী। তাঁর এই অকপটে কথা বলার অভ্যস্ততা সহজ-সরল আচরণের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পেত, যা তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল অবলীলায়। ক্ষমতার শেষ দিনটি পর্যন্ত তাঁর সেই জনপ্রিয়তা অটুট থেকে গেছে। তাঁর এই জনপ্রিয়তা কেবল তাঁর রাজনৈতিক দলের ভেতরেই নয়, বরং দল-মতনির্বিশেষে সাধারণ মানুষ, তরুণসমাজ—সবার কাছেই তিনি শ্রদ্ধার জায়গাটুকু অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সহজ করে কথা বলা একটা বড় গুণ, যা মানুষ সহজে রপ্ত করতে পারে না। বরং এর জন্য তাঁকে অসাধারণ গুণের অধিকারী হতে হয়। সাধারণ হয়ে চলার জন্য যে অসাধারণ গুণের অধিকারী হওয়া, সেটা হয়েছিলেন সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সম্ভবত সে কারণে খুব সহজে আর দশজন থেকে তাঁকে আলাদা করা যায়। তাঁর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। ১০ বছর ৪৮ দিন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত থাকার পর ২৩ এপ্রিল হয়ে গেল বঙ্গভবন থেকে তাঁর রাজসিক বিদায় সংবর্ধনা। বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে কোনো রাষ্ট্রপতির এমন রাজসিক বিদায় সংবর্ধনা এই প্রথম। বঙ্গভবনের ইতিহাসে এ এক বিরল দৃশ্য। এই সৌভাগ্য যেমন সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতির, তেমন সৌভাগ্য বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের ইতিহাসের। সেই সঙ্গে এও না বললে নয় যে, একই দিনে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের শপথ গ্রহণ ও বঙ্গভবনে প্রবেশের দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছে বাংলাদেশের মানুষসহ গোটা বিশ্ব। গণতন্ত্রচর্চার এ এক বিরল দৃশ্য!
আবদুল হামিদের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। ষাটের দশকে তিনি ছিলেন কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগের সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ অনুসারী। ছাত্ররাজনীতি দিয়েই তাঁর পথচলা। তাঁর জীবনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রথমত, তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, দ্বিতীয়ত, আইনজীবী, তৃতীয়ত, একজন সফল স্পিকার এবং চতুর্থত একজন সফল রাষ্ট্রপতি। এক দশক ধরে তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং সেটা সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে। জীবনের কোনো অধ্যায় নিয়ে তেমন বিতর্ক বা সমালোচনা ছিল না বলেই অনেকের বিশ্বাস। রাষ্ট্রের অভিভাবকত্ব তাঁর কাছে মুখ্য ছিল। কথায়, প্রতিক্রিয়ায় তিনি সব সময় সেটাই বজায় রেখেছেন। যখন তিনি স্পিকার হলেন, তখন তাঁকে কখনোই মনে হয়নি তিনি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কেউ কিংবা তিনি দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত।
একই কথা প্রযোজ্য রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও। তিনি চেষ্টা করেছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অভিভাবক হয়ে থাকার। তাঁর আচরণে রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনা কখনো তৈরি হয়নি। তিনি রাষ্ট্রযন্ত্রের অনিয়ম, ভুলভ্রান্তি নিয়ে অকপটে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, সংশোধন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকই তাঁর দায়িত্বে থাকার মর্যাদাটুকু পেয়েছিল।
তরুণদের কাছে তিনি ছিলেন পরম কাঙ্ক্ষিত ও প্রেরণার উত্তম উৎস। তরুণদের মন জয় করা সহজ কথা নয়। বিশেষ করে অরাজনৈতিক ছাত্রসমাজের। সম্ভবত তাঁর সত্য ভাষণই তরুণদের কাছে তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে। কৃত্রিমতা ও অসত্য কথা বলে তিনি কখনো নিজেকে জাহির করেননি, কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি, চেষ্টা তো দূরের কথা। তিনি যা, সেটাই বলে গেছেন অকপটে, তেমনই রয়ে গেছেন আচার-আচরণে। তাঁর এই মহৎ স্বীকারোক্তি বা সত্য ভাষণ, আচরণ তরুণদের সত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছে, বিমোহিত করেছে। তরুণসমাজ প্রাণ খুলে তাঁর এই সত্য ভাষণ উপভোগ করেছে, উচ্ছ্বসিত হয়েছে। তাঁর আরও একটা গুণ—তিনি অহেতুক ইংরেজি ভাষায় কথা বলেননি। উপরন্তু তাঁর কথায় মাটি ও মানুষের গন্ধ পাওয়া গেছে বরাবর। আঞ্চলিকতার উপস্থিতি থেকেছে তাঁর কথায়। শ্রোতা ও বক্তা—কেউ এতে বিব্রত বোধ করেননি। বরং তাঁর কাছে পৌঁছে গেছে শ্রোতারা অবলীলায়। হাওর এলাকার মানুষ তিনি, পানির স্রোতই বুকে ধারণ করার কৌশল জানেন। তিনি এতটাই সাদামাটা যে, তা অবর্ণনীয়।
তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ স্মৃতিচারণা করছি। আমার সৌভাগ্য হয়েছে বেশ কয়েকবার তাঁর সান্নিধ্যে পৌঁছানোর এবং সেটা তাঁর আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নাহিদ পারভীনের সুবাদে। নাহিদ পারভীন আমার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং উন্নয়ন সেক্টরের সহযোদ্ধা। ২২ মার্চ নাহিদের সৌজন্যে আমরা কজন বঙ্গভবনে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করার সুযোগ পেলাম। সুযোগ হলো মহামান্যের বিভিন্ন সময়ে বলা কথা নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত আমার লেখা কলামের অংশবিশেষ তাঁকে দেখাতে। তাঁর বলা প্রায় উদ্ধৃতি আমাকে প্রভাবিত করত কলামের বিষয়বস্তু নির্ধারণে। আমার কলাম সমগ্র ‘রাষ্ট্র ও সমাজ ভাবনা: ১০০ আপসহীন কলাম’ ও উপন্যাস ‘তোমরা বলেছ, এবার আমি বলি’ তাঁর হাতে তুলে দিয়েছি। তিনি বই হাতে নিয়ে আমার অনুরোধে ছবি তুললেন। কীভাবে বই ধরতে হবে ছবি তোলার জন্য, তা-ও দেখিয়ে দিলেন। সেই দিন তাঁর সঙ্গে গল্পের ফাঁকে আবদার করে বসলাম, তাঁকে নিয়ে একটা টিভি অনুষ্ঠান করব এবং সেটা চ্যানেল আইয়ের জন্য। যে কথা ইতিপূর্বে তিনি কাউকে বলেননি, সেই সব কথাই তিনি অনুষ্ঠানে বলবেন। ঘুরেফিরে আবদারটা জোরালো করলাম। হাসতে হাসতে উনি আশ্বস্ত করলেন। তবে সেটা হবে সিঙ্গাপুর থেকে শারীরিক চেকআপ করার পর। ২৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর শেষ কর্মদিবস। অত্যন্ত টাইট শিডিউল তাঁর। তবু হাল ছাড়লাম না। তিনি যখন সিঙ্গাপুরে, তখন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য প্রশ্ন তাঁকে পাঠানো হলো নাহিদের মাধ্যমে। তারপরও সংশয় ছিল।
সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার পর তাঁর সময় পাওয়া গেল। বিস্মিত হলাম, শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি কথা রেখেছেন এবং এ-সংক্রান্ত সরকারি আনুষ্ঠানিকতার কোনো ধরনের বড় বা বেগতিক ঝক্কিঝামেলা হয়নি! আমার মতো একজন অতি সাধারণ মানুষের ইচ্ছেটাকে গুরুত্ব দেওয়ার যে মহানুভবতা ও উদারতা তিনি দেখিয়েছেন, তা যেন রীতিমতো এক ইতিহাস এবং বিস্ময় তো বটেই। একজন রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে ইতিপূর্বে এমন কোনো অনুষ্ঠান তৈরি ও প্রচার হয়েছে বলে মনে পড়ে না।
১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠানটির রেকর্ডিং হলো। চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ভাই তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। পরিচালনায় ছিলেন শাইখ সিরাজ। আমি চ্যানেল আইয়ের মুখ্য সমন্বয়কারী এবং নাহিদ বঙ্গভবনের মুখ্য সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। আরও একটা বড় প্রাপ্তি যোগ হলো এর সঙ্গে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁর সদ্য রচিত ‘আমার জীবননীতি, আমার রাজনীতি’ বইটিতে দুটি কথা লিখে আমাকে উপহার দিলেন। তিনি যখন বইটিতে কিছু লিখছিলেন, তখন আমি তাঁর সামনে উপস্থিত ছিলাম না। আমার ইচ্ছে ছিল তাঁর কাছ থেকে বইটি চেয়ে নেব। কিন্তু চাওয়ার আগেই মহামান্য আমাকে তা দিলেন। পরম সৌভাগ্য আমার!
পৃথিবীতে সাগরের অস্তিত্ব আছে বলেই বোধ হয় মানুষকে বেশি তৃষ্ণার্ত হতে হয় না। একজন সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সাগরের মতো বিশাল। তাঁর এই বিশালতা বিন্দু জল থেকে শুরু। হাওর থেকে বঙ্গভবন কিংবা শিকড় থেকে শিখরে—এই গল্প তাঁর বিশালতারই স্বাক্ষর। গল্পের ফাঁকে জানতে চেয়েছিলাম অবসরজীবন কীভাবে কাটবে। বললেন, ‘লেখালেখি করে। সমস্যা হলো, কী করে এত লেখা লিখি!’ বললাম, ‘স্যার, আমাকে ডাক দিয়েন। আমি আপনার কথা লিখে দেব।’ উনি বিনয়ের হাসি হাসলেন। বললেন, ‘আমার বইটা কিন্তু পড়বেন।’
স্যার, অবশ্যই আপনার বই পড়ব। আমি পড়ব, আমার উত্তরসূরি পড়বে।
তারও উত্তরসূরি পড়বে। আপনাকে পড়তেই যে হয়!
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে