ফারুক মেহেদী
করোনাকালের অর্থনীতি, এর প্রভাব এবং পুনরুদ্ধার নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
হোসেন জিল্লুর রহমান: আমি মনে করি তিনটি জায়গায় জোরালো প্রভাব পড়েছে। একটি হলো, আমাদের দারিদ্র্য বিমোচন অনেকটা কঠিন হয়ে গেছে। একটি হচ্ছে, নতুন দরিদ্র। একটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে। করোনার আগের বছরে যে হারে দারিদ্র্য কমছিল, সাম্প্রতিক সময়ে তা কমার গতিটা কম। আর প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কিন্তু সেভাবে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, কোভিডের অভিঘাত শুধু বাংলাদেশে নয়; গোটা বিশ্বেই এর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ অনেকাংশেই বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাপ্লাই চেইন, ভ্যালু চেইন–বিশ্ব অর্থনীতি যেভাবে ওলট-পালটের মধ্যে যাচ্ছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরেও পড়বে। তার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি রয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশ বিশ্বপরিবর্তনের বিষয়গুলোর সঙ্গে কীভাবে আগাবে, সেটাও একটা চ্যালেঞ্জ। এটা এমন নয় যে আমরা পারব না।
করোনার আরেকটি ঢেউয়ের আলামত দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যেও পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতিটা কেমন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: প্রস্তুতির যে বিষয়টা, সেটা হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে চলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৌশলগত চ্যালেঞ্জ অনেক বেড়ে গেছে। যার ফলে আমাদের দক্ষতা ও প্রস্তুতির জায়গাটিও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়েছে। কোভিডের তৃতীয় অভিঘাত নিয়ে খুব আলোচনা নেই। এটা মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে আরও বড় ধরনের অভিঘাত তৈরি করবে। একটা হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচনসংক্রান্ত অভিঘাত, একটা বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে খাপখাওয়ানোর অভিঘাত আর আরেকটি হলো মানবসম্পদ। একটা চ্যালেঞ্জ আগে থেকেই ছিল যে মানের জায়গাটা আমরা ঠিক করতে পারছি কি না। যখন আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের দশকের কথা বলছি, তখন দেখা যাচ্ছে ক্লাস ওয়ান থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কোভিডের কারণে একটা বড় ধরনের শিখনঘাটতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই শিখনঘাটতির ফলে মানবসম্পদে একটা সংকট তৈরি হয়েছে। এটা কোভিডের তৃতীয় অভিঘাত।
করোনাকালে এসএমই খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। এর পুনরুদ্ধার কি হচ্ছে?
হোসেন জিল্লুর রহমান: আমার একটা উপলব্ধি হয়েছে, নীতি-কৌশলের ক্ষেত্রে সরকার রেসপন্স করেছে। অনেক কিছু করেছে। কিন্তু কাদের জন্য করেছে, সেই প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। টার্গেট গ্রুপের জায়গায় দেখলাম বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপ। মানে ম্যাক্রো অ্যাক্টরদের দিকে নজর থাকলেও মাইক্রো অ্যাক্টরদের দিকে তা ছিল না। এসএমই খাত বঞ্চিত হয়েছে। জনগণ, মাইক্রো অ্যাক্টর, এসএমই, কৃষক–তারা নিজ দায়িত্বে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সুতরাং জনগণকে নিজ দায়িত্বে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলি, জনগণ টিকে থাকবে। এখন জনগণের দায়িত্ব কি শুধু টিকে থাকা? মানুষ যখন খেতে না পারে, সে কি কারও জন্য বসে থাকবে? আমরা দেখছি শিক্ষক শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে সবজি বিক্রি করছেন। এসব চিত্র আমাদের মধ্যম আয়ের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ। মধ্যম আয়ের দেশে যেতে দক্ষ শ্রমশক্তি দরকার। অথচ কোভিডকালে এ দক্ষতায় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
তাহলে বিষয়টির জন্য কী ধরনের সমাধান কৌশল দরকার বলে আপনি মনে করেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: আমি বলব যে এখন ওয়েকআপ কলের প্রয়োজন আছে। জনগণের প্রতি সরকারের সহায়তার হাত শুধু সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে সীমিত রাখলে হবে না। সেটা হতে হবে সরাসরি অর্থনৈতিক প্রণোদনার মাধ্যমে। সরকারের চেষ্টা আছে। দুশ্চিন্তা হলো–সবই করা হচ্ছে, কিন্তু সেটা ১০ বা ২০ শতাংশ দক্ষতায়। মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পের কমতি নেই। কিন্তু সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। এখনো এডিপি বাস্তবায়নের হার আগের মতো। এখনো এফডিআই আসছে না, এমনকি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। সুতরাং এসব মিলিয়ে আমি বলব, তিনটি বড় অভিঘাত মোকাবিলা করতে হলে আমরা কী নীতিকৌশল নিচ্ছি, কোন জায়গায় কী করব, তার পরিষ্কার পরিকল্পনা নিতে হবে। অবশ্যই উদ্ভাবনী চিন্তার প্রয়োজন আছে।
আপনি বলছেন পুনরুদ্ধারের নজরটা বড়দের দিকে। ছোটরা পাচ্ছে না কেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: আমার মনে হচ্ছে, শুধু ম্যাক্রো অ্যাক্টর ও ম্যাক্রো পরিসংখ্যানের দিকে নজর দেওয়ার একটা মানসিকতা গড়ে উঠেছে সরকারের মধ্যে। এর সঙ্গে মধ্যম ও ক্ষুদ্র অ্যাক্টরদের দিকেও নজর দিতে হবে। জাপান, জার্মানিসহ উন্নত দেশের ব্যাকবোন কিন্তু মধ্যম পর্যায়ের খাত। ওই সব দেশে বড় বড় গ্রুপ আছে। কিন্তু তাদের মেরুদণ্ড হলো মধ্যম পর্যায়ের উদ্যোক্তা শ্রেণি। এই মধ্যম অর্থনীতিটা হচ্ছে আগামী দশকের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। গড়ে তোলার চেষ্টা আছে। তবে সেখানেও দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতি আছে। আমাদের নজর এখনো ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়ার’ মধ্যে সীমিত।
এটা কেন মনে হলো আপনার? কী কারণে এমনটি হচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: এখানে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বা বেসরকারি খাতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। পোশাক, ওষুধসহ অন্যান্য শিল্প দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো–এই যে মধ্যম অর্থনীতির চাহিদাগুলো, এসএমইর চাহিদাগুলো, এসবের কী হবে? এগুলো বলা তো শুধু গবেষকদের কাজ না। সার্বিকভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পলিটিক্যাল ভয়েস বা রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর হারিয়ে গেছে। আমি যদি এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থাগুলোকে দেখি; এটা বুঝতে কষ্ট হয় যে তাঁরা কি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, নাকি নিছক কোনো ব্যক্তিগোষ্ঠীর, নাকি সরকারেরই কোনো এক্সটেনশন–এই জায়গাগুলো পরিষ্কার নয়। মানে পলিটিক্যাল ভয়েস নেই। পলিটিক্যাল ভয়েস মানেই ক্ষমতার ভাগাভাগি নয়; পলিটিক্যাল ভয়েস হলো–সমাজের যে বিভিন্ন সেক্টর আছে, তাদের দাবিদাওয়াগুলো সুষ্ঠুভাবে তুলে ধরা। সবাই তো ক্ষমতা চায় না। ব্যবসায়ীদেরও তো ভয়েস প্রয়োজন। কোথায় ঘাটতি, কেন ঘাটতি, কেন এখানে আরও শক্তিশালী সহায়তা দেওয়া যাবে না, অন্যান্য যে প্রস্তুতির ঘাটতি, সেখানে কেন সমাধান করা যাবে না? এই যে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের কথা বলি কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেটাও একধরনের আমলাতান্ত্রিক বিষয় হয়ে গেছে। পলিটিক্যাল ভয়েস অন্যান্য দেশের অন্যতম একটা ফ্যাক্টর। উন্নত বিশ্বের ব্যবসায়ীরা তাঁদের সমস্যাগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে যুক্তিসংগত দেনদরবার করেন। এ জায়গায় আমাদের চিত্রটা কেমন–এটা ভাবনার বিষয়। আমাদের ব্যবসায়ীদের পলিটিক্যাল ভয়েস অনুপস্থিত। শিক্ষক সম্প্রদায়ের পলিটিক্যাল ভয়েস অনুপস্থিত। ডাক্তার সম্প্রদায়ের পলিটিক্যাল ভয়েস অনুপস্থিত। অন্য ধরনের পলিটিক্যাল ভয়েস আছে। সেটা কিন্তু সত্যিকারের পলিটিক্যাল ভয়েস নয়। এটাকে গোষ্ঠী ভয়েস বলা যায়। নিজস্ব দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলার যে ভয়েস, সেটাই বাংলাদেশে অনুপস্থিত। এটা বাংলাদেশের জন্য খারাপ প্রবণতা হয়েছে। এটা আমাদের অগ্রযাত্রাকে আরও কঠিন করে দেবে।
দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এটা অর্থনীতির আসল চিত্র কি না?
হোসেন জিল্লুর রহমান: উন্নয়ন সূচক নিয়ে আজকাল বেশ আলোচনা চলছে। এখানে পরিসংখ্যানের মানের বিষয়টি যৌক্তিকভাবে দেখার বিষয়। লজিক্যালি জিডিপি যদি এতটুকু বাড়ে তাহলে রাজস্বও তো এতটুকু বাড়ার কথা। যদি তা না হয়, তাহলে ব্যাখ্যাটা কী? ব্যাখ্যা দুটো হতে পারে। একটি হলো রাজস্ব আয় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর না হলে জিডিপি এত বাড়েনি। সুতরাং আমরা দেখছি এ ধরনের অসংগতিগুলো বাড়ছে। যেমন বেসরকারি বিনিয়োগ; এটা তো একধরনের স্থবিরতার মধ্যে আছে। তা কোনোভাবেই ২২-২৩ শতাংশের ওপরে উঠছে না। আর মানবসম্পদের বিষয়ে যেটা দেখছি সেটা হলো, আমরা বলছি যে ফ্রি বই দিচ্ছি। ১১ বছর পড়াশোনা হচ্ছে স্কুলে, বাস্তবে তা আসলে ৫-৬ বছর। তো আমাদের কি লার্নিং অ্যাচিভমেন্ট দেখা উচিত, নাকি এনরোলমেন্ট দেখা উচিত? সূচক ধরে ধরে আসলে আমাদের আলোচনাটা এ জায়গায় নিয়ে আসা উচিত। পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে একটা প্রশ্ন সামনে চলে আসছে।
করোনাকালে বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রম কেমন ছিল? এখন কেমন চলছে?
হোসেন জিল্লুর রহমান: কোভিডকালে লকডাউনসহ নানান কারণে বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ধাক্কা খেয়েছে। প্রভাবটা ক্ষুদ্রদের ওপর বেশি পড়েছে; বিশেষ করে এনজিওদের ক্ষুদ্রঋণের ওপর বেশি প্রভাব পড়েছে। আমি যেহেতু ব্র্যাকের সঙ্গে আছি, আমি দেখছি এখানে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিটা রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করেছে। এখানে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিটা হচ্ছে অত্যন্ত মানবিক। পিছিয়ে পড়া মানুষের দিকে সহায়তার হাত বাড়ানো। এই দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিটা খুবই কাজে দিয়েছে। এটা যদি নিছক করপোরেট বিবেচনা হতো, তাহলে অ্যাকাউন্টসটাবড় করে দেখা হতো, মানবিক দিকটা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে ব্র্যাক ও অন্যান্য এনজিও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিটা নিয়েছে যে গ্রাহককে গুরুত্ব দিতে হবে। তারপরও আমরা দেখছি, এখানে পুনরুদ্ধারটা বেশ ভালো হয়েছে। যেমন ব্র্যাক ডেইরি, কোভিডকালে এত সংকটেও একবারের জন্যও খামারিদের কাছ থেকে দুধ নেওয়া বন্ধ হয়নি। বিক্রি করা হয়তো কঠিন ছিল। কিন্তু সংগ্রহের কাজটা বন্ধ হয়নি।
করোনাকালের অর্থনীতি, এর প্রভাব এবং পুনরুদ্ধার নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
হোসেন জিল্লুর রহমান: আমি মনে করি তিনটি জায়গায় জোরালো প্রভাব পড়েছে। একটি হলো, আমাদের দারিদ্র্য বিমোচন অনেকটা কঠিন হয়ে গেছে। একটি হচ্ছে, নতুন দরিদ্র। একটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে। করোনার আগের বছরে যে হারে দারিদ্র্য কমছিল, সাম্প্রতিক সময়ে তা কমার গতিটা কম। আর প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কিন্তু সেভাবে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, কোভিডের অভিঘাত শুধু বাংলাদেশে নয়; গোটা বিশ্বেই এর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ অনেকাংশেই বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাপ্লাই চেইন, ভ্যালু চেইন–বিশ্ব অর্থনীতি যেভাবে ওলট-পালটের মধ্যে যাচ্ছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরেও পড়বে। তার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি রয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশ বিশ্বপরিবর্তনের বিষয়গুলোর সঙ্গে কীভাবে আগাবে, সেটাও একটা চ্যালেঞ্জ। এটা এমন নয় যে আমরা পারব না।
করোনার আরেকটি ঢেউয়ের আলামত দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যেও পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতিটা কেমন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: প্রস্তুতির যে বিষয়টা, সেটা হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে চলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৌশলগত চ্যালেঞ্জ অনেক বেড়ে গেছে। যার ফলে আমাদের দক্ষতা ও প্রস্তুতির জায়গাটিও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়েছে। কোভিডের তৃতীয় অভিঘাত নিয়ে খুব আলোচনা নেই। এটা মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে আরও বড় ধরনের অভিঘাত তৈরি করবে। একটা হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচনসংক্রান্ত অভিঘাত, একটা বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে খাপখাওয়ানোর অভিঘাত আর আরেকটি হলো মানবসম্পদ। একটা চ্যালেঞ্জ আগে থেকেই ছিল যে মানের জায়গাটা আমরা ঠিক করতে পারছি কি না। যখন আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের দশকের কথা বলছি, তখন দেখা যাচ্ছে ক্লাস ওয়ান থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কোভিডের কারণে একটা বড় ধরনের শিখনঘাটতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই শিখনঘাটতির ফলে মানবসম্পদে একটা সংকট তৈরি হয়েছে। এটা কোভিডের তৃতীয় অভিঘাত।
করোনাকালে এসএমই খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। এর পুনরুদ্ধার কি হচ্ছে?
হোসেন জিল্লুর রহমান: আমার একটা উপলব্ধি হয়েছে, নীতি-কৌশলের ক্ষেত্রে সরকার রেসপন্স করেছে। অনেক কিছু করেছে। কিন্তু কাদের জন্য করেছে, সেই প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। টার্গেট গ্রুপের জায়গায় দেখলাম বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপ। মানে ম্যাক্রো অ্যাক্টরদের দিকে নজর থাকলেও মাইক্রো অ্যাক্টরদের দিকে তা ছিল না। এসএমই খাত বঞ্চিত হয়েছে। জনগণ, মাইক্রো অ্যাক্টর, এসএমই, কৃষক–তারা নিজ দায়িত্বে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সুতরাং জনগণকে নিজ দায়িত্বে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলি, জনগণ টিকে থাকবে। এখন জনগণের দায়িত্ব কি শুধু টিকে থাকা? মানুষ যখন খেতে না পারে, সে কি কারও জন্য বসে থাকবে? আমরা দেখছি শিক্ষক শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে সবজি বিক্রি করছেন। এসব চিত্র আমাদের মধ্যম আয়ের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ। মধ্যম আয়ের দেশে যেতে দক্ষ শ্রমশক্তি দরকার। অথচ কোভিডকালে এ দক্ষতায় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
তাহলে বিষয়টির জন্য কী ধরনের সমাধান কৌশল দরকার বলে আপনি মনে করেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: আমি বলব যে এখন ওয়েকআপ কলের প্রয়োজন আছে। জনগণের প্রতি সরকারের সহায়তার হাত শুধু সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে সীমিত রাখলে হবে না। সেটা হতে হবে সরাসরি অর্থনৈতিক প্রণোদনার মাধ্যমে। সরকারের চেষ্টা আছে। দুশ্চিন্তা হলো–সবই করা হচ্ছে, কিন্তু সেটা ১০ বা ২০ শতাংশ দক্ষতায়। মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পের কমতি নেই। কিন্তু সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। এখনো এডিপি বাস্তবায়নের হার আগের মতো। এখনো এফডিআই আসছে না, এমনকি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। সুতরাং এসব মিলিয়ে আমি বলব, তিনটি বড় অভিঘাত মোকাবিলা করতে হলে আমরা কী নীতিকৌশল নিচ্ছি, কোন জায়গায় কী করব, তার পরিষ্কার পরিকল্পনা নিতে হবে। অবশ্যই উদ্ভাবনী চিন্তার প্রয়োজন আছে।
আপনি বলছেন পুনরুদ্ধারের নজরটা বড়দের দিকে। ছোটরা পাচ্ছে না কেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: আমার মনে হচ্ছে, শুধু ম্যাক্রো অ্যাক্টর ও ম্যাক্রো পরিসংখ্যানের দিকে নজর দেওয়ার একটা মানসিকতা গড়ে উঠেছে সরকারের মধ্যে। এর সঙ্গে মধ্যম ও ক্ষুদ্র অ্যাক্টরদের দিকেও নজর দিতে হবে। জাপান, জার্মানিসহ উন্নত দেশের ব্যাকবোন কিন্তু মধ্যম পর্যায়ের খাত। ওই সব দেশে বড় বড় গ্রুপ আছে। কিন্তু তাদের মেরুদণ্ড হলো মধ্যম পর্যায়ের উদ্যোক্তা শ্রেণি। এই মধ্যম অর্থনীতিটা হচ্ছে আগামী দশকের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। গড়ে তোলার চেষ্টা আছে। তবে সেখানেও দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতি আছে। আমাদের নজর এখনো ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়ার’ মধ্যে সীমিত।
এটা কেন মনে হলো আপনার? কী কারণে এমনটি হচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: এখানে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বা বেসরকারি খাতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। পোশাক, ওষুধসহ অন্যান্য শিল্প দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো–এই যে মধ্যম অর্থনীতির চাহিদাগুলো, এসএমইর চাহিদাগুলো, এসবের কী হবে? এগুলো বলা তো শুধু গবেষকদের কাজ না। সার্বিকভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পলিটিক্যাল ভয়েস বা রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর হারিয়ে গেছে। আমি যদি এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থাগুলোকে দেখি; এটা বুঝতে কষ্ট হয় যে তাঁরা কি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, নাকি নিছক কোনো ব্যক্তিগোষ্ঠীর, নাকি সরকারেরই কোনো এক্সটেনশন–এই জায়গাগুলো পরিষ্কার নয়। মানে পলিটিক্যাল ভয়েস নেই। পলিটিক্যাল ভয়েস মানেই ক্ষমতার ভাগাভাগি নয়; পলিটিক্যাল ভয়েস হলো–সমাজের যে বিভিন্ন সেক্টর আছে, তাদের দাবিদাওয়াগুলো সুষ্ঠুভাবে তুলে ধরা। সবাই তো ক্ষমতা চায় না। ব্যবসায়ীদেরও তো ভয়েস প্রয়োজন। কোথায় ঘাটতি, কেন ঘাটতি, কেন এখানে আরও শক্তিশালী সহায়তা দেওয়া যাবে না, অন্যান্য যে প্রস্তুতির ঘাটতি, সেখানে কেন সমাধান করা যাবে না? এই যে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের কথা বলি কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেটাও একধরনের আমলাতান্ত্রিক বিষয় হয়ে গেছে। পলিটিক্যাল ভয়েস অন্যান্য দেশের অন্যতম একটা ফ্যাক্টর। উন্নত বিশ্বের ব্যবসায়ীরা তাঁদের সমস্যাগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে যুক্তিসংগত দেনদরবার করেন। এ জায়গায় আমাদের চিত্রটা কেমন–এটা ভাবনার বিষয়। আমাদের ব্যবসায়ীদের পলিটিক্যাল ভয়েস অনুপস্থিত। শিক্ষক সম্প্রদায়ের পলিটিক্যাল ভয়েস অনুপস্থিত। ডাক্তার সম্প্রদায়ের পলিটিক্যাল ভয়েস অনুপস্থিত। অন্য ধরনের পলিটিক্যাল ভয়েস আছে। সেটা কিন্তু সত্যিকারের পলিটিক্যাল ভয়েস নয়। এটাকে গোষ্ঠী ভয়েস বলা যায়। নিজস্ব দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলার যে ভয়েস, সেটাই বাংলাদেশে অনুপস্থিত। এটা বাংলাদেশের জন্য খারাপ প্রবণতা হয়েছে। এটা আমাদের অগ্রযাত্রাকে আরও কঠিন করে দেবে।
দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এটা অর্থনীতির আসল চিত্র কি না?
হোসেন জিল্লুর রহমান: উন্নয়ন সূচক নিয়ে আজকাল বেশ আলোচনা চলছে। এখানে পরিসংখ্যানের মানের বিষয়টি যৌক্তিকভাবে দেখার বিষয়। লজিক্যালি জিডিপি যদি এতটুকু বাড়ে তাহলে রাজস্বও তো এতটুকু বাড়ার কথা। যদি তা না হয়, তাহলে ব্যাখ্যাটা কী? ব্যাখ্যা দুটো হতে পারে। একটি হলো রাজস্ব আয় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর না হলে জিডিপি এত বাড়েনি। সুতরাং আমরা দেখছি এ ধরনের অসংগতিগুলো বাড়ছে। যেমন বেসরকারি বিনিয়োগ; এটা তো একধরনের স্থবিরতার মধ্যে আছে। তা কোনোভাবেই ২২-২৩ শতাংশের ওপরে উঠছে না। আর মানবসম্পদের বিষয়ে যেটা দেখছি সেটা হলো, আমরা বলছি যে ফ্রি বই দিচ্ছি। ১১ বছর পড়াশোনা হচ্ছে স্কুলে, বাস্তবে তা আসলে ৫-৬ বছর। তো আমাদের কি লার্নিং অ্যাচিভমেন্ট দেখা উচিত, নাকি এনরোলমেন্ট দেখা উচিত? সূচক ধরে ধরে আসলে আমাদের আলোচনাটা এ জায়গায় নিয়ে আসা উচিত। পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে একটা প্রশ্ন সামনে চলে আসছে।
করোনাকালে বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রম কেমন ছিল? এখন কেমন চলছে?
হোসেন জিল্লুর রহমান: কোভিডকালে লকডাউনসহ নানান কারণে বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ধাক্কা খেয়েছে। প্রভাবটা ক্ষুদ্রদের ওপর বেশি পড়েছে; বিশেষ করে এনজিওদের ক্ষুদ্রঋণের ওপর বেশি প্রভাব পড়েছে। আমি যেহেতু ব্র্যাকের সঙ্গে আছি, আমি দেখছি এখানে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিটা রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করেছে। এখানে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিটা হচ্ছে অত্যন্ত মানবিক। পিছিয়ে পড়া মানুষের দিকে সহায়তার হাত বাড়ানো। এই দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিটা খুবই কাজে দিয়েছে। এটা যদি নিছক করপোরেট বিবেচনা হতো, তাহলে অ্যাকাউন্টসটাবড় করে দেখা হতো, মানবিক দিকটা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে ব্র্যাক ও অন্যান্য এনজিও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিটা নিয়েছে যে গ্রাহককে গুরুত্ব দিতে হবে। তারপরও আমরা দেখছি, এখানে পুনরুদ্ধারটা বেশ ভালো হয়েছে। যেমন ব্র্যাক ডেইরি, কোভিডকালে এত সংকটেও একবারের জন্যও খামারিদের কাছ থেকে দুধ নেওয়া বন্ধ হয়নি। বিক্রি করা হয়তো কঠিন ছিল। কিন্তু সংগ্রহের কাজটা বন্ধ হয়নি।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে