বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
দেশব্যাপী কারফিউ, টানা তিন দিন সাধারণ ছুটি, বন্ধ ইন্টারনেট—এই তিনে মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বড় ক্ষত তৈরি করেছে। ক্ষতির পরিমাণ কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা এখনো নিরূপণ করা হয়নি। তবে প্রতিটি খাত থেকে যে তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দিচ্ছেন, তা আঁতকে ওঠার মতো। হাজারো খাতের মধ্যে শুধু রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, বিমান পরিবহন, স্টিল, সিরামিক, সিমেন্ট ও ই-কমার্স খাতেই গত ছয় দিনে প্রায় ১৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এই সময়ে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় সহিংসতা। এ অবস্থায় সেদিন রাতেই বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। এতে ইন্টারনেটনির্ভর সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই বন্ধ হয়ে যায়। সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে গত শুক্রবার রাত থেকে দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে সরকার।
মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। সেই সঙ্গে টানা তিন দিন সাধারণ ছুটির কবলে পড়ে দেশ। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের কলকারখানা ও যানবাহন চলাচল। এসবের আর্থিক ক্ষত এখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অর্থনীতি এখন মারাত্মক ক্ষতির মুখে। আমি দুদিন আগেও বলেছি, অর্থনীতি টেকাতে হলে যেকোনো মূল্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। এখন আমরা অফলাইনে বা ম্যানুয়ালি হলেও চেষ্টা করছি, যাতে পণ্য খালাসসহ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমটা চালিয়ে নেওয়া যায়। এর মধ্যে যদি ব্রডব্যান্ডটা চালু হয়, তাহলে অন্তত কিছু কাজ ব্যাংক-টু-ব্যাংকে হবে। এতেও অর্থনীতি কিছু সচল হবে। এ ব্যাপারে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প এখন প্রায় বন্ধ। কারখানাগুলো ছুটি দেওয়া হয়েছে। পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরে পড়ে রয়েছে। পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এরই মধ্যে জানিয়েছে, তাদের প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এতে গত ছয় দিনে এই খাতের ক্ষতির অঙ্ক প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পোশাক খাতের ক্ষতির বিষয়টি এরই মধ্যে আমাদের প্রেসিডেন্ট মহোদয় বলেছেন। আসলে পুরো ক্ষতি তো পোষানো কঠিন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
এখন মানুষের জীবনযাপনের একটি বড় অংশ ই-কমার্সের ওপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেট না থাকায় ই-কমার্স বন্ধ রয়েছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, গত ছয় দিনে এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪২০ কোটি টাকা। ইন্টারনেট না থাকায় পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম যেমন চলছে না, তেমনি ফ্রিল্যান্সিংও প্রায় বন্ধ। দেশে সাড়ে ৬ লাখের মতো ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাঁদের কাজ থমকে আছে। তাঁদেরই দিনে অন্তত ১৩-১৪ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হচ্ছে। আর বিপিও খাতের ক্ষতি আরও বেশি। জানা গেছে, অন্তত বড় তিনটি বিপিও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে তাদের হেডকোয়ার্টার অন্যত্র সরিয়ে নেবে। আবার কোনো কোনো বিপিও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে অফিস সরিয়ে শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও ভারতে নিয়ে যাচ্ছে। এটা যদি হতে থাকে, তবে তা আর ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। আর্থিক ক্ষতি হিসাব করা গেলেও ইমেজ-সংকট হিসাব করা যাবে না।
আইসিটি ও ই-কমার্স খাতের ক্ষতির বিষয়ে বেসিসের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মেট্রোনেটের সিইও সৈয়দ আলমাস কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোভিডের সময়ও এমন ক্ষতি হয়নি। অর্থনীতির চাকা সচল ছিল। এর মূল কারণ ছিল ইন্টারনেট নিরবচ্ছিন্ন ছিল। ওই সময় ইন্টারনেট দিয়েই লকডাউনের মধ্যেও ঘরে বসে সব কাজ করেছি। এখন সেটা হচ্ছে না। সুতরাং, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আংশিকভাবে হলেও এ জিনিসটা আমাদের সচল করতে হবে। মোবাইল ইন্টারনেট আসতে দেরি হলেও অন্তত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করে দিতে হবে। এই খাতে ইমেজ-সংকট তৈরি হচ্ছে।’
স্টিল খাতও অচলাবস্থার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই খাতের উদ্যোক্তারা জানান, স্টিল খাতের দিনে ক্ষতি প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ফলে গত ছয় দিনে এই খাতের ক্ষতির অঙ্ক প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পণ্য বিক্রি ও ডেলিভারিও পুরো বন্ধ।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও আরআরএম স্টিলের এমডি সুমন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বন্দরের ক্ষতিপূরণ, ব্যাংকঋণের সুদ, ইউটিলিটি খরচ, বেতন-ভাতাসহ নানান খাতের খরচ মিলিয়ে প্রতিদিন আমাদের ক্ষতি প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বিক্রি ও ডেলিভারি আমাদের একদমই নেই। ঝুঁকি নিয়ে কেউ পণ্য পরিবহনও করছে না, কিন্তু খরচগুলো ঠিকই রয়েছে।’
ইন্টারনেট-সেবা না থাকায় বিমানে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনসেবাও ব্যাহত হচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, কার্গো বিমানে পণ্য পরিবহন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না হওয়ায় এই খাতে দিনে অন্তত ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। একই কারণে দেশের প্রায় ৪ হাজার ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ রয়েছে। এতে বিমানের টিকিট কাটা ব্যাহত হচ্ছে বলে কাঙ্ক্ষিত টিকিটও বিক্রি হচ্ছে না। যাত্রীর টিকিট খাতেই ক্ষতি দিনে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ফলে এই খাতে দৈনিক ক্ষতির অঙ্ক ৯০০ কোটি টাকা হলে ছয় দিনে ক্ষতি অন্তত ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
সিরামিক খাতও এখন বেশ সম্ভাবনাময়। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই খাতে ক্ষতির রেশ লেগেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, গত ছয় দিনে সিরামিক খাতের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সিমেন্টও অর্থনীতির বড় খাত। এই খাতের উদ্যোক্তারা জানান, খাতটিতে দিনে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১০০ কোটি টাকা। ফলে ছয় দিনে এই খাতের ক্ষতি প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ছয় দিন ধরে সব ধরনের পণ্য হ্যান্ডলিং প্রায় বন্ধ। ইন্টারনেট-সেবা না থাকায় ব্যাংকিং লেনদেনও হচ্ছে না। গতকাল থেকে সীমিত পরিসরে ম্যানুয়ালি পচনশীল পণ্য খালাস করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এর সুফল তেমন নেই। কারণ, ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিজস্ব সার্ভার থেকে শুল্কায়ন শুরু করলেও রাজস্বসংক্রান্ত কার্যক্রম করা যাচ্ছে না। ব্যাংকিং সেবা চালু হলে সেটি করা সম্ভব হবে। গতকাল বন্দর থেকে ইয়ার্ডে মাত্র ৬৫ টিইউএস কনটেইনার ইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। তবে বন্দর থেকে বেসরকারি ডিপোতে গেছে ১ হাজার ১১০টি কনটেইনার। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার মো. মাহফুজুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) থেকে নিজস্ব সার্ভারে লেনের মাধ্যমে কাস্টমসের শুল্কায়নসহ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কাজের একমাত্র সফটওয়্যার এসাইকুডা ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। এতে আমদানি পণ্য খালাস এবং রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ বন্ধ রয়েছে। তবে রোববার (২১ জুলাই) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ ম্যানুয়ালি শুল্কায়নের চেষ্টা করেও সফল হচ্ছে না। ম্যানুয়ালি শুল্কায়ন করতে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ম্যানুয়ালি শুল্কায়ন করে পণ্য খালাসের চেষ্টা করছে কিন্তু কাস্টমসের সঙ্গে অন্যান্য ব্যাংক, শিপিং অফিস এবং পরিবহন বন্ধ থাকায় বন্দর কাস্টমস খোলা থাকলেও পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না।
ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা আর ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আয়ও প্রায় বন্ধ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর মিলে গড়ে দিনে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হওয়ার কথা। সেটি হচ্ছে না। শুল্ক বন্দরগুলো এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ইন্টারনেট না থাকলে ওই সফটওয়্যার চলতে পারে না। তাই শুল্কায়ন হচ্ছে না।
সেবা খাতে মানুষের খরচ কমে গেছে, তাই ভ্যাট আদায়ও হচ্ছে না। ফলে রাজস্ব আয় হচ্ছে না। কর অফিস ও ব্যাংকিং সেবা বন্ধ থাকায় আয়করও আদায় হচ্ছে না। এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা আগামীকাল (আজ) থেকে সীমিত পরিসরে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এনবিআরের আওতাধীন অফিসসমূহ খোলা রাখব। কয়েক দিনে রাজস্ব আয় হয়নি ঠিকমতো। তবে আশা করছি, পুরোদমে অফিস চালু হলে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে।’
এদিকে দেশের পুঁজিবাজারও ক্ষতির মুখে। গত সপ্তাহের হিসাব ধরলে, ডিএসইতে দিনে গড়ে লেনদেন হয় ৫৫৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ পরিমাণ লেনদেনও হয়নি। এ থেকে সরকার, বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিভিন্ন কর, ফি ও সেবামাশুল হিসেবে যে আয় হওয়ার কথা, সেটিও হয়নি।
দেশব্যাপী কারফিউ, টানা তিন দিন সাধারণ ছুটি, বন্ধ ইন্টারনেট—এই তিনে মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বড় ক্ষত তৈরি করেছে। ক্ষতির পরিমাণ কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা এখনো নিরূপণ করা হয়নি। তবে প্রতিটি খাত থেকে যে তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দিচ্ছেন, তা আঁতকে ওঠার মতো। হাজারো খাতের মধ্যে শুধু রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, বিমান পরিবহন, স্টিল, সিরামিক, সিমেন্ট ও ই-কমার্স খাতেই গত ছয় দিনে প্রায় ১৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এই সময়ে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় সহিংসতা। এ অবস্থায় সেদিন রাতেই বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। এতে ইন্টারনেটনির্ভর সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই বন্ধ হয়ে যায়। সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে গত শুক্রবার রাত থেকে দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে সরকার।
মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। সেই সঙ্গে টানা তিন দিন সাধারণ ছুটির কবলে পড়ে দেশ। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের কলকারখানা ও যানবাহন চলাচল। এসবের আর্থিক ক্ষত এখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অর্থনীতি এখন মারাত্মক ক্ষতির মুখে। আমি দুদিন আগেও বলেছি, অর্থনীতি টেকাতে হলে যেকোনো মূল্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। এখন আমরা অফলাইনে বা ম্যানুয়ালি হলেও চেষ্টা করছি, যাতে পণ্য খালাসসহ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমটা চালিয়ে নেওয়া যায়। এর মধ্যে যদি ব্রডব্যান্ডটা চালু হয়, তাহলে অন্তত কিছু কাজ ব্যাংক-টু-ব্যাংকে হবে। এতেও অর্থনীতি কিছু সচল হবে। এ ব্যাপারে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প এখন প্রায় বন্ধ। কারখানাগুলো ছুটি দেওয়া হয়েছে। পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরে পড়ে রয়েছে। পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এরই মধ্যে জানিয়েছে, তাদের প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এতে গত ছয় দিনে এই খাতের ক্ষতির অঙ্ক প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পোশাক খাতের ক্ষতির বিষয়টি এরই মধ্যে আমাদের প্রেসিডেন্ট মহোদয় বলেছেন। আসলে পুরো ক্ষতি তো পোষানো কঠিন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
এখন মানুষের জীবনযাপনের একটি বড় অংশ ই-কমার্সের ওপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেট না থাকায় ই-কমার্স বন্ধ রয়েছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, গত ছয় দিনে এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪২০ কোটি টাকা। ইন্টারনেট না থাকায় পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম যেমন চলছে না, তেমনি ফ্রিল্যান্সিংও প্রায় বন্ধ। দেশে সাড়ে ৬ লাখের মতো ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাঁদের কাজ থমকে আছে। তাঁদেরই দিনে অন্তত ১৩-১৪ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হচ্ছে। আর বিপিও খাতের ক্ষতি আরও বেশি। জানা গেছে, অন্তত বড় তিনটি বিপিও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে তাদের হেডকোয়ার্টার অন্যত্র সরিয়ে নেবে। আবার কোনো কোনো বিপিও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে অফিস সরিয়ে শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও ভারতে নিয়ে যাচ্ছে। এটা যদি হতে থাকে, তবে তা আর ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। আর্থিক ক্ষতি হিসাব করা গেলেও ইমেজ-সংকট হিসাব করা যাবে না।
আইসিটি ও ই-কমার্স খাতের ক্ষতির বিষয়ে বেসিসের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মেট্রোনেটের সিইও সৈয়দ আলমাস কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোভিডের সময়ও এমন ক্ষতি হয়নি। অর্থনীতির চাকা সচল ছিল। এর মূল কারণ ছিল ইন্টারনেট নিরবচ্ছিন্ন ছিল। ওই সময় ইন্টারনেট দিয়েই লকডাউনের মধ্যেও ঘরে বসে সব কাজ করেছি। এখন সেটা হচ্ছে না। সুতরাং, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আংশিকভাবে হলেও এ জিনিসটা আমাদের সচল করতে হবে। মোবাইল ইন্টারনেট আসতে দেরি হলেও অন্তত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করে দিতে হবে। এই খাতে ইমেজ-সংকট তৈরি হচ্ছে।’
স্টিল খাতও অচলাবস্থার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই খাতের উদ্যোক্তারা জানান, স্টিল খাতের দিনে ক্ষতি প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ফলে গত ছয় দিনে এই খাতের ক্ষতির অঙ্ক প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পণ্য বিক্রি ও ডেলিভারিও পুরো বন্ধ।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও আরআরএম স্টিলের এমডি সুমন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বন্দরের ক্ষতিপূরণ, ব্যাংকঋণের সুদ, ইউটিলিটি খরচ, বেতন-ভাতাসহ নানান খাতের খরচ মিলিয়ে প্রতিদিন আমাদের ক্ষতি প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বিক্রি ও ডেলিভারি আমাদের একদমই নেই। ঝুঁকি নিয়ে কেউ পণ্য পরিবহনও করছে না, কিন্তু খরচগুলো ঠিকই রয়েছে।’
ইন্টারনেট-সেবা না থাকায় বিমানে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনসেবাও ব্যাহত হচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, কার্গো বিমানে পণ্য পরিবহন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না হওয়ায় এই খাতে দিনে অন্তত ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। একই কারণে দেশের প্রায় ৪ হাজার ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ রয়েছে। এতে বিমানের টিকিট কাটা ব্যাহত হচ্ছে বলে কাঙ্ক্ষিত টিকিটও বিক্রি হচ্ছে না। যাত্রীর টিকিট খাতেই ক্ষতি দিনে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ফলে এই খাতে দৈনিক ক্ষতির অঙ্ক ৯০০ কোটি টাকা হলে ছয় দিনে ক্ষতি অন্তত ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
সিরামিক খাতও এখন বেশ সম্ভাবনাময়। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই খাতে ক্ষতির রেশ লেগেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, গত ছয় দিনে সিরামিক খাতের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সিমেন্টও অর্থনীতির বড় খাত। এই খাতের উদ্যোক্তারা জানান, খাতটিতে দিনে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১০০ কোটি টাকা। ফলে ছয় দিনে এই খাতের ক্ষতি প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ছয় দিন ধরে সব ধরনের পণ্য হ্যান্ডলিং প্রায় বন্ধ। ইন্টারনেট-সেবা না থাকায় ব্যাংকিং লেনদেনও হচ্ছে না। গতকাল থেকে সীমিত পরিসরে ম্যানুয়ালি পচনশীল পণ্য খালাস করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এর সুফল তেমন নেই। কারণ, ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিজস্ব সার্ভার থেকে শুল্কায়ন শুরু করলেও রাজস্বসংক্রান্ত কার্যক্রম করা যাচ্ছে না। ব্যাংকিং সেবা চালু হলে সেটি করা সম্ভব হবে। গতকাল বন্দর থেকে ইয়ার্ডে মাত্র ৬৫ টিইউএস কনটেইনার ইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। তবে বন্দর থেকে বেসরকারি ডিপোতে গেছে ১ হাজার ১১০টি কনটেইনার। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার মো. মাহফুজুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) থেকে নিজস্ব সার্ভারে লেনের মাধ্যমে কাস্টমসের শুল্কায়নসহ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কাজের একমাত্র সফটওয়্যার এসাইকুডা ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। এতে আমদানি পণ্য খালাস এবং রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ বন্ধ রয়েছে। তবে রোববার (২১ জুলাই) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ ম্যানুয়ালি শুল্কায়নের চেষ্টা করেও সফল হচ্ছে না। ম্যানুয়ালি শুল্কায়ন করতে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ম্যানুয়ালি শুল্কায়ন করে পণ্য খালাসের চেষ্টা করছে কিন্তু কাস্টমসের সঙ্গে অন্যান্য ব্যাংক, শিপিং অফিস এবং পরিবহন বন্ধ থাকায় বন্দর কাস্টমস খোলা থাকলেও পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না।
ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা আর ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আয়ও প্রায় বন্ধ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর মিলে গড়ে দিনে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হওয়ার কথা। সেটি হচ্ছে না। শুল্ক বন্দরগুলো এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ইন্টারনেট না থাকলে ওই সফটওয়্যার চলতে পারে না। তাই শুল্কায়ন হচ্ছে না।
সেবা খাতে মানুষের খরচ কমে গেছে, তাই ভ্যাট আদায়ও হচ্ছে না। ফলে রাজস্ব আয় হচ্ছে না। কর অফিস ও ব্যাংকিং সেবা বন্ধ থাকায় আয়করও আদায় হচ্ছে না। এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা আগামীকাল (আজ) থেকে সীমিত পরিসরে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এনবিআরের আওতাধীন অফিসসমূহ খোলা রাখব। কয়েক দিনে রাজস্ব আয় হয়নি ঠিকমতো। তবে আশা করছি, পুরোদমে অফিস চালু হলে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে।’
এদিকে দেশের পুঁজিবাজারও ক্ষতির মুখে। গত সপ্তাহের হিসাব ধরলে, ডিএসইতে দিনে গড়ে লেনদেন হয় ৫৫৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ পরিমাণ লেনদেনও হয়নি। এ থেকে সরকার, বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিভিন্ন কর, ফি ও সেবামাশুল হিসেবে যে আয় হওয়ার কথা, সেটিও হয়নি।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে