অজয় দাশগুপ্ত
ভেবেছিলাম সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতি নিয়ে লিখব। পরে মনে হলো বিনির্মাণ কেন? নির্মাণের আগে যে ‘বি’ উপসর্গটি যুক্ত, তা ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়। যে দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচকতা বলে আসলে কিছুই আর নেই, সেই সমাজে ‘সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতি’ এই শিরোনাম কি যুক্তিযুক্ত? তার চেয়ে রাজনীতি সমাজ নির্মাণে কী ভূমিকা রাখছে তার আলোচনা জরুরি।
ব্যক্তিগতভাবে আমি ভাগ্যবান এই কারণে যে আমি বাংলাদেশের জন্ম দেখেছি। জন্মসূত্রে পরাধীন দেশের নাগরিক ছিলাম আমি।মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত দেশের স্বাধীনতায় নিজেকে স্বাধীন হতে দেখেছি। শরণার্থী কী বা কাকে বলে, সেটাও জানা আছে আমার। একাত্তরে আমার বয়স কম হলেও বুদ্ধি খোলার বয়স হয়ে গিয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলও দেখেছি আমি। বাহাত্তরে যে দেশটি স্বপ্ন আর আদর্শ নিয়ে সামনে যাবে বলে চিন্তা করেছিল তার পেছনে যাওয়ার শুরুটা দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে আমার। দুর্ভাগ্য এই, তিয়াত্তর সালে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্র ইউনিয়নকর্মী মাহবুব পরাগের হত্যাকাণ্ড ছিল কিশোরবেলার চরম বিস্ময়! সে বিস্ময় কাটতে না কাটতেই বাকশাল, এরপর বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিহত হওয়ার রাতটিই মূলত টার্নিং পয়েন্ট।
যার সর্বশেষ পরিণতি পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বরে জেল হত্যাকাণ্ড। দুনিয়ার ইতিহাসে এমন জঘন্য অমানবিক হত্যাকাণ্ড খুব বেশি দেখা যায় না। সে রাতেই মূলত আদর্শিক রাজনীতির কবর খোঁড়া হয়েছিল। এরপর কালো অধ্যায়ের রাজনীতি ছিল জিয়ার সামরিক শাসন আর দালালদের ফিরে আসার অপ ইতিহাস। সেই ধারাবাহিকতায় একনায়ক এরশাদ; অতঃপর যা যা ঘটনা তা আমাদের কারও অজানা কিছু নয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি অতীত নিয়েই থাকব? নাকি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এবং ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠা কয়েক প্রজন্মের কথা ভাবব? যেকোনো জাতি তার ভবিষ্যতের সঙ্গে আপস করে না। একমাত্র আমরাই ভবিষ্যৎ ভাবার বদলে অতীত নিয়ে মেতে থাকি। দেশের দিকে তাকালে প্রবাসী বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের মনে যে বেদনা জাগে তা-ও অকপটে বলা যায় না। বন্ধুরাও মনে করে বিদেশে আরামে বসবাস করা মানুষের এসব বলার অধিকার নেই। আসলে কি তাই? যাঁরা দেশের রেমিট্যান্সে অবদান রেখে দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করেন, তাঁদের বলার অধিকার থাকবে না? না থাকলে দেশের বাইরে অবস্থানরত নেতাদেরও তো বলার অধিকার থাকে না। থাক সে কথা।
সমাজ নির্মাণে রাজনীতি কথাটা উঠছে এই কারণে যে, এখন দেশে আসলে কোনো রাজনীতি নেই। শুধু দেশে না, পৃথিবীর কোনো দেশেই আগের মতো রাজনীতি নেই। না থাকার বাহ্যিক কারণ ‘প্রযুক্তি’। ডিজিটাল মিডিয়া, বিশেষ করে হাতে হাতে মোবাইল আসার পর তরুণ সমাজ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এটা দুনিয়াময় সত্য। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে লাভ হবে না।
যেসব দেশ বা সমাজে গণতন্ত্র আসন পেতেছে, সেখানে নির্বাচনে নিশ্চিন্তে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যায়। তবে তাদের আর আমাদের বাস্তবতা এক নয়। আমাদের দেশে গণতন্ত্র আসলে সোনার হরিণ। যাঁরা যখন বিরোধী দলে থাকেন, তাঁরাই গণতন্ত্র চাই বলে সমাজে আওয়াজ তোলেন।
অথচ দেশশাসনে থাকার সময় তাঁরা গণতন্ত্রের কথা বেমালুম ভুলে যান। শুধু ভুলে গেলে তো চলত, সবাই তখন হয়ে ওঠেন বড় বড় একনায়ক। এমন সমাজে রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা কি আসলেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো?
সমাজে রাজনীতি নেই, কিন্তু অপরাজনীতি কি নেই? ধর্মান্ধতা নেই? অপপ্রচার নেই? বাকি সব আছে, শুধু শুদ্ধ ধারার রাজনীতি নেই। সে কারণেই ধর্ম নিয়ে, সংস্কার নিয়ে, পদ নিয়ে, পদবি নিয়ে মত্ত সবাই। হারিয়ে গেছে সংস্কৃতি। নেই গানবাজনা। নেই ছোটদের সংগঠন। নেই শিল্প-সংস্কৃতির বিস্তার। অথচ একসময় রাজনীতি ছিল বলে এগুলো কখনোই পথ হারায়নি। সব বাদ দিয়ে খালি পথনাটকের কথা ভাবুন।
বহু উল্টাপাল্টা কাজ থাকলেও পথনাটকে ভালো কাজও কম হয়নি। সব বাদ দিলেও এসব কর্মকাণ্ড মূলত আমাদের সমাজকে সংহত করত। প্রতিবাদ যে একটি শিল্প হতে পারে তার জানান দিত। সেই প্রক্রিয়াগুলো এখন মৃত। যে কারণে সমাজে হিরো আলমদের উদ্ভব সম্ভব হয়েছে। হিরো আলম একটি প্রতীক মাত্র। শিল্প সংস্কৃতির অধঃপতনে রাজনীতির কুপ্রভাবেই তাদের জন্ম। মনে রাখা উচিত, অপরাধী বা দুষ্ট কেউ মায়ের পেটে জন্মায় না। এদের জন্ম দেয় সমাজ।
সে কারণে সমাজ নির্মাণে রাজনীতির ভূমিকা জরুরি। আমরা মনে রাখব একাত্তর-পূর্ববর্তী দেশের সমাজ ছিল রাজনীতিনির্ভর। তখন আমরা স্লোগান শুনতাম—এক একটি বাংলা অক্ষর, এক একটি বাঙালির জীবন। কী অপূর্ব স্লোগান! সে কারণেই আমরা হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম মনেপ্রাণে বাঙালি। অথচ অপরাজনীতির কারণেই পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়কালে সে আমরাই বাঙালিত্ব পরিহার করার জন্য এখন মরিয়া। রাজনীতি কী না পারে? যে বাঙালি পাঞ্জাবি, পায়জামা, শাড়ি, লুঙ্গি ও ধুতি পরিধান করতে ভালোবাসত, তার পছন্দে এখন শাড়ি নেই। ধুতি উধাও। লুঙ্গিও আধা মরা। চেপে বসেছে অন্য দেশের পোশাক। ভাষার বেলায়ও তাই। যে ভাষার জন্য আমাদের অগ্রজরা জান দিয়েছিলেন, রক্ত দিয়েছেন, সেই ভাষা এখন তারুণ্যে নেই। অবহেলিত বাংলা ভাষার ওপর নির্যাতন এখন নিত্যদিনের ঘটনা। কোনো ব্যক্তি বা সংঘবদ্ধ মানুষের দ্বারা এর প্রতিকার অসম্ভব। একমাত্র রাজনীতিই পারে এর প্রতিকার করতে। তার কাছেই আছে সমাধান। যার প্রমাণ বাঙালির নির্মল শুদ্ধ অতীত।
সমাজ বিনির্মাণ তো দূর অস্ত। এখন আশু দরকার নির্মাণের কাজ শুরু করা। মনে রাখতে হবে, একসময় মেধাবী শিক্ষার্থীরাই রাজনীতি করত। সে কারণে মেধার লড়াইয়ে দেশ ও সমাজ এগিয়ে থাকতে পেরেছিল। বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যখন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো, তখন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই জন্ম নিয়েছিলেন দেশের সেরা যত রাজনীতিবিদ। বিশ্ববিদ্যালয় জন্ম দিয়েছিল মেধাবী ছাত্র নেতাদের, যাঁদের বলিষ্ঠ ভূমিকা ছাড়া এ দেশের স্বাধীনতা সম্ভব হতো না। সম্ভব হতো না দুঃসময়গুলোতে দেশের উত্তরণ।
সমাজ নির্মাণের কথা যখন উঠলেই তখন বলতে হয়, সমাজ এখন ধুঁকছে। কয়েক মাস আগে চট্টগ্রাম ঘুরে এসেছি। নানা কারণে জীবনযাপন কঠিন হয়ে উঠছে মানুষের। শুধু দ্রব্যমূল্য বললে ভুল হবে। রাজনীতিও ম্লান করে দিচ্ছে উন্নয়ন। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ। যে সমাজ অচলায়তন, যে সমাজে বাকস্বাধীনতা প্রশ্নের মুখোমুখি, সে দেশে উত্তরণের উপায় তো একটাই—জনগণের অংশগ্রহণে রাজনীতির পুনর্বার ফিরে আসা। রাজনীতি বদলায়। সমাজ, দেশ, পৃথিবীর বাস্তবতাভেদে রাজনীতি সচল থাকে। সচল থাকে বলেই ভারত এগিয়ে চলেছে। ইউরোপের দেশগুলো আছে নিরাপদ শক্ত অবস্থানে।
আমরা যে দেশে থাকি সেই অস্ট্রেলিয়ায় রাজনীতি মানে ভিন্ন কিছু। কোনো হরতাল-অবরোধ বা আন্দোলন বলে কিছু নেই এখানে।যুবশক্তিও রাজনীতিবিমুখ। কিন্তু তারা দেশমুখী। তারা দেশের ‘ইনস অ্যান্ড আউটস’ জানে। ভোট এখানে দিতেই হয়। না হলে জরিমানা গুনতে হয়। আর সেই ভোট আমরা দিই পেনসিলে টিক দিয়ে। পেনসিলের টিকচিহ্ন মুছে দিতে পারে না কেউ। এই নিশ্চয়তার নামই গণতন্ত্র।
সমাজ নির্মাণে রাজনীতির মূল ভূমিকা মানুষকে কথা বলতে দেওয়া। ন্যায্য, যোগ্য ও উপযুক্ত কথার গুরুত্ব দেওয়া। মানুষকে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে দিয়ে সামনে এগিয়ে নেওয়ার নাম বিনির্মাণ। সেই কাজ শুরুর আগে নির্মাণ কি জরুরি মনে হয় না? আমার তো হয়।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী, কলামিস্ট
ভেবেছিলাম সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতি নিয়ে লিখব। পরে মনে হলো বিনির্মাণ কেন? নির্মাণের আগে যে ‘বি’ উপসর্গটি যুক্ত, তা ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়। যে দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচকতা বলে আসলে কিছুই আর নেই, সেই সমাজে ‘সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতি’ এই শিরোনাম কি যুক্তিযুক্ত? তার চেয়ে রাজনীতি সমাজ নির্মাণে কী ভূমিকা রাখছে তার আলোচনা জরুরি।
ব্যক্তিগতভাবে আমি ভাগ্যবান এই কারণে যে আমি বাংলাদেশের জন্ম দেখেছি। জন্মসূত্রে পরাধীন দেশের নাগরিক ছিলাম আমি।মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত দেশের স্বাধীনতায় নিজেকে স্বাধীন হতে দেখেছি। শরণার্থী কী বা কাকে বলে, সেটাও জানা আছে আমার। একাত্তরে আমার বয়স কম হলেও বুদ্ধি খোলার বয়স হয়ে গিয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলও দেখেছি আমি। বাহাত্তরে যে দেশটি স্বপ্ন আর আদর্শ নিয়ে সামনে যাবে বলে চিন্তা করেছিল তার পেছনে যাওয়ার শুরুটা দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে আমার। দুর্ভাগ্য এই, তিয়াত্তর সালে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্র ইউনিয়নকর্মী মাহবুব পরাগের হত্যাকাণ্ড ছিল কিশোরবেলার চরম বিস্ময়! সে বিস্ময় কাটতে না কাটতেই বাকশাল, এরপর বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিহত হওয়ার রাতটিই মূলত টার্নিং পয়েন্ট।
যার সর্বশেষ পরিণতি পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বরে জেল হত্যাকাণ্ড। দুনিয়ার ইতিহাসে এমন জঘন্য অমানবিক হত্যাকাণ্ড খুব বেশি দেখা যায় না। সে রাতেই মূলত আদর্শিক রাজনীতির কবর খোঁড়া হয়েছিল। এরপর কালো অধ্যায়ের রাজনীতি ছিল জিয়ার সামরিক শাসন আর দালালদের ফিরে আসার অপ ইতিহাস। সেই ধারাবাহিকতায় একনায়ক এরশাদ; অতঃপর যা যা ঘটনা তা আমাদের কারও অজানা কিছু নয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি অতীত নিয়েই থাকব? নাকি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এবং ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠা কয়েক প্রজন্মের কথা ভাবব? যেকোনো জাতি তার ভবিষ্যতের সঙ্গে আপস করে না। একমাত্র আমরাই ভবিষ্যৎ ভাবার বদলে অতীত নিয়ে মেতে থাকি। দেশের দিকে তাকালে প্রবাসী বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের মনে যে বেদনা জাগে তা-ও অকপটে বলা যায় না। বন্ধুরাও মনে করে বিদেশে আরামে বসবাস করা মানুষের এসব বলার অধিকার নেই। আসলে কি তাই? যাঁরা দেশের রেমিট্যান্সে অবদান রেখে দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করেন, তাঁদের বলার অধিকার থাকবে না? না থাকলে দেশের বাইরে অবস্থানরত নেতাদেরও তো বলার অধিকার থাকে না। থাক সে কথা।
সমাজ নির্মাণে রাজনীতি কথাটা উঠছে এই কারণে যে, এখন দেশে আসলে কোনো রাজনীতি নেই। শুধু দেশে না, পৃথিবীর কোনো দেশেই আগের মতো রাজনীতি নেই। না থাকার বাহ্যিক কারণ ‘প্রযুক্তি’। ডিজিটাল মিডিয়া, বিশেষ করে হাতে হাতে মোবাইল আসার পর তরুণ সমাজ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এটা দুনিয়াময় সত্য। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে লাভ হবে না।
যেসব দেশ বা সমাজে গণতন্ত্র আসন পেতেছে, সেখানে নির্বাচনে নিশ্চিন্তে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যায়। তবে তাদের আর আমাদের বাস্তবতা এক নয়। আমাদের দেশে গণতন্ত্র আসলে সোনার হরিণ। যাঁরা যখন বিরোধী দলে থাকেন, তাঁরাই গণতন্ত্র চাই বলে সমাজে আওয়াজ তোলেন।
অথচ দেশশাসনে থাকার সময় তাঁরা গণতন্ত্রের কথা বেমালুম ভুলে যান। শুধু ভুলে গেলে তো চলত, সবাই তখন হয়ে ওঠেন বড় বড় একনায়ক। এমন সমাজে রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা কি আসলেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো?
সমাজে রাজনীতি নেই, কিন্তু অপরাজনীতি কি নেই? ধর্মান্ধতা নেই? অপপ্রচার নেই? বাকি সব আছে, শুধু শুদ্ধ ধারার রাজনীতি নেই। সে কারণেই ধর্ম নিয়ে, সংস্কার নিয়ে, পদ নিয়ে, পদবি নিয়ে মত্ত সবাই। হারিয়ে গেছে সংস্কৃতি। নেই গানবাজনা। নেই ছোটদের সংগঠন। নেই শিল্প-সংস্কৃতির বিস্তার। অথচ একসময় রাজনীতি ছিল বলে এগুলো কখনোই পথ হারায়নি। সব বাদ দিয়ে খালি পথনাটকের কথা ভাবুন।
বহু উল্টাপাল্টা কাজ থাকলেও পথনাটকে ভালো কাজও কম হয়নি। সব বাদ দিলেও এসব কর্মকাণ্ড মূলত আমাদের সমাজকে সংহত করত। প্রতিবাদ যে একটি শিল্প হতে পারে তার জানান দিত। সেই প্রক্রিয়াগুলো এখন মৃত। যে কারণে সমাজে হিরো আলমদের উদ্ভব সম্ভব হয়েছে। হিরো আলম একটি প্রতীক মাত্র। শিল্প সংস্কৃতির অধঃপতনে রাজনীতির কুপ্রভাবেই তাদের জন্ম। মনে রাখা উচিত, অপরাধী বা দুষ্ট কেউ মায়ের পেটে জন্মায় না। এদের জন্ম দেয় সমাজ।
সে কারণে সমাজ নির্মাণে রাজনীতির ভূমিকা জরুরি। আমরা মনে রাখব একাত্তর-পূর্ববর্তী দেশের সমাজ ছিল রাজনীতিনির্ভর। তখন আমরা স্লোগান শুনতাম—এক একটি বাংলা অক্ষর, এক একটি বাঙালির জীবন। কী অপূর্ব স্লোগান! সে কারণেই আমরা হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম মনেপ্রাণে বাঙালি। অথচ অপরাজনীতির কারণেই পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়কালে সে আমরাই বাঙালিত্ব পরিহার করার জন্য এখন মরিয়া। রাজনীতি কী না পারে? যে বাঙালি পাঞ্জাবি, পায়জামা, শাড়ি, লুঙ্গি ও ধুতি পরিধান করতে ভালোবাসত, তার পছন্দে এখন শাড়ি নেই। ধুতি উধাও। লুঙ্গিও আধা মরা। চেপে বসেছে অন্য দেশের পোশাক। ভাষার বেলায়ও তাই। যে ভাষার জন্য আমাদের অগ্রজরা জান দিয়েছিলেন, রক্ত দিয়েছেন, সেই ভাষা এখন তারুণ্যে নেই। অবহেলিত বাংলা ভাষার ওপর নির্যাতন এখন নিত্যদিনের ঘটনা। কোনো ব্যক্তি বা সংঘবদ্ধ মানুষের দ্বারা এর প্রতিকার অসম্ভব। একমাত্র রাজনীতিই পারে এর প্রতিকার করতে। তার কাছেই আছে সমাধান। যার প্রমাণ বাঙালির নির্মল শুদ্ধ অতীত।
সমাজ বিনির্মাণ তো দূর অস্ত। এখন আশু দরকার নির্মাণের কাজ শুরু করা। মনে রাখতে হবে, একসময় মেধাবী শিক্ষার্থীরাই রাজনীতি করত। সে কারণে মেধার লড়াইয়ে দেশ ও সমাজ এগিয়ে থাকতে পেরেছিল। বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যখন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো, তখন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই জন্ম নিয়েছিলেন দেশের সেরা যত রাজনীতিবিদ। বিশ্ববিদ্যালয় জন্ম দিয়েছিল মেধাবী ছাত্র নেতাদের, যাঁদের বলিষ্ঠ ভূমিকা ছাড়া এ দেশের স্বাধীনতা সম্ভব হতো না। সম্ভব হতো না দুঃসময়গুলোতে দেশের উত্তরণ।
সমাজ নির্মাণের কথা যখন উঠলেই তখন বলতে হয়, সমাজ এখন ধুঁকছে। কয়েক মাস আগে চট্টগ্রাম ঘুরে এসেছি। নানা কারণে জীবনযাপন কঠিন হয়ে উঠছে মানুষের। শুধু দ্রব্যমূল্য বললে ভুল হবে। রাজনীতিও ম্লান করে দিচ্ছে উন্নয়ন। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ। যে সমাজ অচলায়তন, যে সমাজে বাকস্বাধীনতা প্রশ্নের মুখোমুখি, সে দেশে উত্তরণের উপায় তো একটাই—জনগণের অংশগ্রহণে রাজনীতির পুনর্বার ফিরে আসা। রাজনীতি বদলায়। সমাজ, দেশ, পৃথিবীর বাস্তবতাভেদে রাজনীতি সচল থাকে। সচল থাকে বলেই ভারত এগিয়ে চলেছে। ইউরোপের দেশগুলো আছে নিরাপদ শক্ত অবস্থানে।
আমরা যে দেশে থাকি সেই অস্ট্রেলিয়ায় রাজনীতি মানে ভিন্ন কিছু। কোনো হরতাল-অবরোধ বা আন্দোলন বলে কিছু নেই এখানে।যুবশক্তিও রাজনীতিবিমুখ। কিন্তু তারা দেশমুখী। তারা দেশের ‘ইনস অ্যান্ড আউটস’ জানে। ভোট এখানে দিতেই হয়। না হলে জরিমানা গুনতে হয়। আর সেই ভোট আমরা দিই পেনসিলে টিক দিয়ে। পেনসিলের টিকচিহ্ন মুছে দিতে পারে না কেউ। এই নিশ্চয়তার নামই গণতন্ত্র।
সমাজ নির্মাণে রাজনীতির মূল ভূমিকা মানুষকে কথা বলতে দেওয়া। ন্যায্য, যোগ্য ও উপযুক্ত কথার গুরুত্ব দেওয়া। মানুষকে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে দিয়ে সামনে এগিয়ে নেওয়ার নাম বিনির্মাণ। সেই কাজ শুরুর আগে নির্মাণ কি জরুরি মনে হয় না? আমার তো হয়।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী, কলামিস্ট
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৬ ঘণ্টা আগে