‘কাছের লোকে’ ডুবাল নৌকা

রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ১০

পঞ্চম ধাপে রাজশাহীর তিন উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন হয়েছে গত বুধবার। এ নির্বাচনে মাত্র ছয়টি ইউপিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। এক কেন্দ্রের ভোট স্থগিত থাকায় একটি ইউপির চূড়ান্ত ফলাফল না হলেও সেখানেও ডুবতে বসেছে নৌকা। অন্য ১২টি ইউপির মধ্যে সাতটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং পাঁচটিতে বিএনপি নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন।

গত বুধবার রাজশাহীর বাগমারার ১৬টি, পুঠিয়ার দুটি এবং দুর্গাপুরের একটি ইউপির ভোট হয়। তিন উপজেলায় দুই-তৃতীয়াংশ ইউপিতেই নৌকার প্রার্থীদের পরাজয়ের পেছনে দলীয় নেতা–কর্মীরা বলছেন, এবার দলের মনোনয়নই এনে দেওয়া হয়েছিল প্রভাবশালী নেতাদের ‘কাছের লোকদের’। জনপ্রিয় এবং ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কাছের লোকের হাতে নৌকা তুলে দেওয়ার ফলে ভোটে এমন ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে আওয়ামী লীগের।

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাংসদ মুনসুর রহমান এবং সাবেক সাংসদ কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারার মধ্যে চলছে দ্বন্দ্ব। আবদুল ওয়াদুদ দারা এখন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ দুই নেতার জন্য পুঠিয়া-দুর্গাপুরে এখন দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভেদ। সাংগঠনিক প্রভাব খাঁটিয়ে আবদুল ওয়াদুদ দারা তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিত নেতাদের পুঠিয়া-দুর্গাপুরের তিন ইউপির মনোনয়ন এনে দেন। এর মধ্যে শুধু দুর্গাপুরের মাড়িয়া ইউপির নৌকার প্রার্থী জয় পেয়েছেন।

পুঠিয়ার বেলপুকুরিয়া ইউপিতে মনোনয়ন পান দারার নিকটাত্মীয় রাজিবুল হক। রাজিবুলের পুরো পরিবারের রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেও তিনি মনোনয়ন পান। ফলে নেতা-কর্মীদের একাংশ তাঁর পক্ষে কাজ করেননি। তিনি ধরাশায়ী হয়েছেন দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মো. বদিউজ্জামানের কাছে। পুঠিয়ার বানেশ্বরের একটি কেন্দ্রে জোরপূর্বক ঢুকে নৌকায় সিল মারার কারণে সে কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। এই কেন্দ্র বাদ দিয়েই দুই হাজার ভোটে পিছিয়ে আছেন নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। স্থগিত হওয়া দীঘলকান্দি কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৮৪৪ জন।

২০১৬ সালের নির্বাচনে বাগমারার ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১ টিতেই জয় পেয়েছিলেন নৌকার প্রার্থীরা। এবার সেখানে মাত্র পাঁচটিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্য ১১টি ইউপির মধ্যে ছয়টিতেই জয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। আর পাঁচটিতে জয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এখানে নৌকার এমন ভরাডুবির পেছনেও কারণ দলীয় কোন্দল।

এর মধ্যে বাগমারার মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয় পেয়েছেন স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের ভাই রেজাউল হক। মোটরসাইকেল প্রতীকে ৫ হাজার ২৯৮ ভোট পেয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। আর নৌকা প্রতীকে ৩ হাজার ৪৭৯ ভোট পেয়ে হেরেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আসলাম আলী আসকান। দলের নেতা–কর্মীরাই এখানে ছিলেন নৌকার বিপক্ষে।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, এখানেও দলীয় কোন্দলের কারণে হেরেছেন নৌকার প্রার্থীরা। ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তৃণমূলের অর্ধশত নেতা। কিন্তু ১৩ টিতেই বর্তমান চেয়ারম্যানদের মনোনয়ন দেওয়া হয়। নরদাশ ইউনিয়ন পরিষদে মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার আবুল। এই ১৪ জনই স্থানীয় সাংসদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্য দুই ইউপিতে প্রথমে সাংসদের অনুসারীরা মনোনয়ন পেলেও বিতর্ক উঠলে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়। পরিবর্তিত দুই প্রার্থীই ফেল করেছেন। আর মনোনয়ন হারানো দুজন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়ে জয় পেয়েছেন। এঁরা দুজনও সাংসদের অনুসারী। এখানেও দলীয় নেতা-কর্মীরা নৌকার বিপক্ষে ছিলেন।

বাগমারায় নৌকার ভরাডুবি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, তিনি একটি সভায় আছেন। কথা বলতে পারবেন না।

পুঠিয়ার নৌকাডুবির বিষয়ে কথা বলতে ওই এলাকার সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও একটি সভায় আছেন জানিয়ে কথা বলতে চাননি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

দ্রুত বেতন-ভাতা পাবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান

দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগ, সুযোগ পেতে পারে ইলন মাস্কের স্টারলিংক

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

মালামালের সঙ্গে শিশুকেও তুলে নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত