নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বেশ নাটকীয়তার মধ্যে চার বছর আগে দেশ ছেড়েছিলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা)। তখন তিনি প্রধান বিচারপতি। দেশে আর ফেরেননি। বিদেশে বসেই দিয়েছিলেন পদত্যাগপত্র। এখনো তিনি বিদেশেই আছেন।
‘পরবাসী’ এস কে সিনহাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। জালিয়াতির মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় গতকাল মঙ্গলবার এই রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম।
দেশের ইতিহাসে এই প্রথম সাবেক কোনো বিচারপতিকে দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হলো। রায় ঘোষণার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
দুই অপরাধের শাস্তি
মানি লন্ডারিং আইনে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থ আত্মসাতের দায়ে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এস কে সিনহাকে। তবে উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন। এ কারণে সাত বছর সাজা খাটতে হবে তাঁকে।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি আইনের একটি ধারায় ৫০ হাজার টাকা ও আরেকটি ধারায় ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
একই মামলায় আরও আট আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস দেওয়া হয়েছে দুজনকে।
ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, সাবেক ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ক্রেডিটপ্রধান গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, রণজিৎ সাহা ও শান্ত্রী রায়কে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে তিন বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।
আর ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) সাবেক এমডি এ কে এম শামীমকে একই অভিযোগে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
এস কে সিনহাসহ চারজন পলাতক থাকায় তাঁদের অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করা হয়। আদালত রায়ে উল্লেখ করেন, তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর অথবা আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তাঁদের ক্ষেত্রে এই রায় কার্যকর হবে। এস কে সিনহাসহ পলাতক আসামি সফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ সাহা ও শান্ত্রী রায়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
আসামি বাবুল চিশতীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। জামিনপ্রাপ্ত অন্য আসামিরাও আদালতে হাজির ছিলেন।
আর আসামিদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা খালাস পেয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় খালাস দেওয়া হয় বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেন।
যেভাবে দেশ ছাড়েন এস কে সিনহা
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটি নিয়ে বিদেশে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। প্রথমে অস্ট্রেলিয়া, সেখান থেকে যান সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পরই বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
পরে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ২০১৮ সালে সেখান থেকেই একটি বই প্রকাশ করেন এস কে সিনহা। দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বইতে তিনি দাবি করেন, তাঁকে ‘পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে’ পাঠানো হয়েছে। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন এস কে সিনহা। পরে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে খবর আসে সিনহা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় গিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।
যে অভিযোগে মামলা
২০১৯ সালের ১০ জুলাই ঋণ জালিয়াতি ও চার কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১-এ মামলা করা হয়। মামলার বাদী দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আদালতে ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ। ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম অভিযোগ গঠন করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, উত্তোলন ও পাচার করেছেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরদিন তাঁরা ওই ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যাঁর মালিক ছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে ২ কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর।
ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেন তাঁর বড় ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং ভাতিজা শঙ্খজিৎ সিংহ। ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর তাঁরা আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাঁরা দুজনই আদালতকে বলেন, তাঁদের ব্যাংক হিসাবে নিজেরা কোনো টাকা জমা দেননি, উত্তোলনও করেননি।
সিনহা ছিলেন প্রধান সুবিধাভোগী: আদালতের পর্যবেক্ষণ
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে ঋণ নিয়ে তা বিভিন্ন ব্যাংকে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেন এস কে সিনহা। মামলাসংক্রান্ত সব কাগজপত্র, ব্যাংকের বিভিন্ন দলিলপত্র ও সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত হয় তিনি ছিলেন ব্যাংকের ঋণের টাকার প্রধান সুবিধাভোগী।
রায়ে আরও বলা হয়, এস কে সিনহা প্রভাবিত করে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দিয়ে অতি দ্রুততার সঙ্গে অন্যদের ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়ে সেই টাকা নিজের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন। ব্যাংক আইন ও বিধি, ব্যাংকের ক্রেডিট পলিসি অসততার সঙ্গে ও বেআইনিভাবে অমান্য করেছেন এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তারা। ঋণ মঞ্জুরিপত্রের সব নিয়মনীতি অসততার সঙ্গে এবং বেআইনিভাবে উপেক্ষা করে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে টাকা দিয়েছেন তাঁরা।
এই রায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে: আইনমন্ত্রী
রায় ঘোষণার পর গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বলব যে বিচার বিভাগের জন্য এটা সুখকর দিন নয়। কিন্তু এটাও সঠিক, অন্যায় করলে তার বিচার হবে। এ রকম অন্যায় যখন হয়েছে, আদালত অপরাধ পেয়েছে, বিচার করেছে।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রকম অন্যায় কোনো প্রধান বিচারপতি করেন নাই, সে জন্য এ রকম বিচার করার প্রয়োজন হয়নি।’
সিনহা সরকারের মতের বাইরে না গেলে সাজা পেতে হতো না বলে বিরোধী দলগুলো দাবি করেছে। সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা এটা বলছেন, তাঁরা সরকারের সমালোচনা করার জন্য বলছেন, এটার কোনো সারমর্ম নেই।’
বেশ নাটকীয়তার মধ্যে চার বছর আগে দেশ ছেড়েছিলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা)। তখন তিনি প্রধান বিচারপতি। দেশে আর ফেরেননি। বিদেশে বসেই দিয়েছিলেন পদত্যাগপত্র। এখনো তিনি বিদেশেই আছেন।
‘পরবাসী’ এস কে সিনহাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। জালিয়াতির মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় গতকাল মঙ্গলবার এই রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম।
দেশের ইতিহাসে এই প্রথম সাবেক কোনো বিচারপতিকে দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হলো। রায় ঘোষণার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
দুই অপরাধের শাস্তি
মানি লন্ডারিং আইনে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থ আত্মসাতের দায়ে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এস কে সিনহাকে। তবে উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন। এ কারণে সাত বছর সাজা খাটতে হবে তাঁকে।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি আইনের একটি ধারায় ৫০ হাজার টাকা ও আরেকটি ধারায় ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
একই মামলায় আরও আট আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস দেওয়া হয়েছে দুজনকে।
ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, সাবেক ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ক্রেডিটপ্রধান গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, রণজিৎ সাহা ও শান্ত্রী রায়কে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে তিন বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।
আর ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) সাবেক এমডি এ কে এম শামীমকে একই অভিযোগে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
এস কে সিনহাসহ চারজন পলাতক থাকায় তাঁদের অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করা হয়। আদালত রায়ে উল্লেখ করেন, তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর অথবা আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তাঁদের ক্ষেত্রে এই রায় কার্যকর হবে। এস কে সিনহাসহ পলাতক আসামি সফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ সাহা ও শান্ত্রী রায়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
আসামি বাবুল চিশতীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। জামিনপ্রাপ্ত অন্য আসামিরাও আদালতে হাজির ছিলেন।
আর আসামিদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা খালাস পেয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় খালাস দেওয়া হয় বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেন।
যেভাবে দেশ ছাড়েন এস কে সিনহা
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটি নিয়ে বিদেশে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। প্রথমে অস্ট্রেলিয়া, সেখান থেকে যান সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পরই বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
পরে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ২০১৮ সালে সেখান থেকেই একটি বই প্রকাশ করেন এস কে সিনহা। দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বইতে তিনি দাবি করেন, তাঁকে ‘পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে’ পাঠানো হয়েছে। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন এস কে সিনহা। পরে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে খবর আসে সিনহা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় গিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।
যে অভিযোগে মামলা
২০১৯ সালের ১০ জুলাই ঋণ জালিয়াতি ও চার কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১-এ মামলা করা হয়। মামলার বাদী দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আদালতে ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ। ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম অভিযোগ গঠন করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, উত্তোলন ও পাচার করেছেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরদিন তাঁরা ওই ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যাঁর মালিক ছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে ২ কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর।
ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেন তাঁর বড় ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং ভাতিজা শঙ্খজিৎ সিংহ। ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর তাঁরা আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাঁরা দুজনই আদালতকে বলেন, তাঁদের ব্যাংক হিসাবে নিজেরা কোনো টাকা জমা দেননি, উত্তোলনও করেননি।
সিনহা ছিলেন প্রধান সুবিধাভোগী: আদালতের পর্যবেক্ষণ
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে ঋণ নিয়ে তা বিভিন্ন ব্যাংকে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেন এস কে সিনহা। মামলাসংক্রান্ত সব কাগজপত্র, ব্যাংকের বিভিন্ন দলিলপত্র ও সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত হয় তিনি ছিলেন ব্যাংকের ঋণের টাকার প্রধান সুবিধাভোগী।
রায়ে আরও বলা হয়, এস কে সিনহা প্রভাবিত করে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দিয়ে অতি দ্রুততার সঙ্গে অন্যদের ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়ে সেই টাকা নিজের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন। ব্যাংক আইন ও বিধি, ব্যাংকের ক্রেডিট পলিসি অসততার সঙ্গে ও বেআইনিভাবে অমান্য করেছেন এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তারা। ঋণ মঞ্জুরিপত্রের সব নিয়মনীতি অসততার সঙ্গে এবং বেআইনিভাবে উপেক্ষা করে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে টাকা দিয়েছেন তাঁরা।
এই রায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে: আইনমন্ত্রী
রায় ঘোষণার পর গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বলব যে বিচার বিভাগের জন্য এটা সুখকর দিন নয়। কিন্তু এটাও সঠিক, অন্যায় করলে তার বিচার হবে। এ রকম অন্যায় যখন হয়েছে, আদালত অপরাধ পেয়েছে, বিচার করেছে।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রকম অন্যায় কোনো প্রধান বিচারপতি করেন নাই, সে জন্য এ রকম বিচার করার প্রয়োজন হয়নি।’
সিনহা সরকারের মতের বাইরে না গেলে সাজা পেতে হতো না বলে বিরোধী দলগুলো দাবি করেছে। সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা এটা বলছেন, তাঁরা সরকারের সমালোচনা করার জন্য বলছেন, এটার কোনো সারমর্ম নেই।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে