কঙ্কণ সরকার, গাইবান্ধা
ভাদ্রের আকাশ মুখ গোমড়া করে আছে। বৃষ্টি হবে হবে ভাব। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে বললাম, আমরা যাচ্ছি পোড়া চা খেতে। বন্ধুর চোখে কৌতূহল, পোড়া চা!
গাইবান্ধা পুরোনো জেলখানা মোড়ে অটোরিকশা থেকে নেমে অটোতে চেপে চললাম মধ্য রাধাকৃষ্ণপুরের উদ্দেশে। শহর পেরিয়ে চলছি ধানখেত-গ্রাম-ঝোপজঙ্গল পেছনে ফেলে। ইটা পীরের মাজার পেরিয়ে একটুখানি এগোলেই তিন কোনা মোড়ে আকাঙ্ক্ষিত চায়ের দোকান। লোকজনের ভিড় আছে। অবশ্য অটোতে থাকতে বৃষ্টির দেখা পেয়েছি। যাহোক, নেমে দোকানে ঢুকে পড়ি। ভিড় করে লোকজন কেউ চা খাচ্ছেন, কেউ গল্প করছেন, কেউ এমনিই বসে আছেন। দোকানের বাইরে অটোরিকশা, রিকশা, মোটরবাইক দাঁড়িয়ে। যাত্রীরা সবাই চায়ের দোকানে।
খুঁজলাম চায়ের কারিগরকে। তিনি ক্যাশবাক্সে বসা। বললাম, চাচা চা খেতে এলাম। তিনি মুখে হাসিভাব এনে বসতে বললেন। বললাম, অনেক দূর থেকে এসেছি! সুন্দরগঞ্জ থেকে। দোকানে বসা লোকজনের মধ্যে কেউ বললেন, ‘গতকাল ময়মনসিংহ থাকি দুজন আচছিল।’ কারিগর চাচা বললেন, ‘খালি ময়মনসিংহ! বইগড়া, জামালপুর আরও কত কত জাগা থাকি আইসে।’ তিনি ক্যাশবাক্স থেকে উঠে চায়ের চুলার কাছে গেলেন। পেছনে আমরাও। চায়ের দোকান হিসেবে সে এলাহি আয়োজন। দুই চুলায় দুই সসপ্যান দুধ ফুটে চলেছে। তার এক সসপ্যানের দুধের রং লালচে। আরেক চুলায় ফুটে চলেছে চা-পাতি। জানলাম, এক সসপ্যানে দুধ জ্বাল দেওয়া হয়ে গেলে লাল হয়ে যাওয়া দুধের সসপ্যানে সেই গরম দুধ রাখা হয়। সেখানে দেওয়া হয় চা-পাতা। সেটিতে ধীরে জ্বাল দেওয়া হয়। এভাবে দীর্ঘ সময় ফুটতে ফুটতে একসময় দুধ লালচে হয়ে যায়।
পাশেই গ্যাসের চুলায় চ্যাপটা কড়াইয়ে বালু রেখে তার ওপর মাটির খুরি গরম করা হচ্ছে। দোকানদার চা-পাতি মেশানো সসপ্যানের চুলায় লাকড়ি নেড়েচেড়ে আগুন বেশি করে জ্বালিয়ে দিলেন। দেখতে দেখতে কথা হলো দোকানির সঙ্গে। চায়ের এই কারিগরের নাম ফয়জার রহমান ব্যাপারী। এই চা বানান কত দিন থেকে? তিনি বললেন, ‘ দেড় বচ্ছর।’ বললাম, আগে কী করতেন? ফয়জার রহমান ব্যাপারী বললেন, ‘ ছোট থেকেই এই চা বানানোর কাজ করি। আগে দোকান ছিল ইটা পীরের মাজারের ওটি (ওখানে)।’ বললাম, এই চা বানানো কেমন করে শিখলেন? তিনি চুলায় লাকড়ি নাড়া দিয়ে বললেন, ‘চা বানাই আর মনে মনে ভাবি, কী করি নতুন কিছু করা যায়! তো ভাবতে ভাবতে এই চা তৈরি শুরু হয়ে গেল।’
ফয়জার রহমান ব্যাপারী একসময় বলে ওঠেন, ‘এই যে এখন চা বানানো হবে।’ আমরা কৌতূহলে সেদিকে তাকাই। তিনি তাতানো মাটির কাপ নেন। চা-পাতি মেশানো জ্বাল দেওয়া দুধ-লিকার মগ দিয়ে তুলে তুলে ছাঁকনির মধ্য দিয়ে মাটির কাপগুলোতে ঢালতে থাকলেন। ঢালা শেষ হলে সামনে রাখা ননি নিয়ে একটু একটু করে দিলেন প্রতি কাপে। এবার হাসিমুখে আমাদের হাতে দিলেন চা ভরা মাটির খুরি।
আমরা সে গরম খুরি কায়দা করে ধরে বাইরে এসে পাতানো বেঞ্চে বসে পড়লাম। স্বাদ নিতে চুমুক দিলাম। এক নতুন স্বাদ এই চায়ের। খানিক পোড়া পোড়া গন্ধ আছে চায়ে। ওটা আসে মূলত বালুতে গরম করা মাটির খুরি থেকে।
দেখলাম এর মাঝে আরও অনেকেই এই চা খেতে এসেছেন। ফয়জার রহমান ব্যাপারীকে বললাম, দিনে কী পরিমাণ চা বিক্রি হয়? ব্যাপারী বললেন, ‘আট-দশ মণ দুধ যায়।’ এই যে নতুন স্বাদ এতে কি মসলা দেন! সসপ্যান দেখিয়ে বললেন, খালি দুধ। এটাই মসলা, এটাই লিকার।
সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় চা তৈরি। ফয়জার রহমান ব্যাপারী চা তৈরি করেন মধ্যরাত পর্যন্ত। স্ত্রী-পুত্র ছাড়া আরও চার-পাঁচজন কাজ করেন তাঁর সঙ্গে। শুক্রবার ভিড় বেশি হয় ফয়জার রহমান ব্যাপারীর দোকানে। তিনি জানান, দুধ যত গরম হবে চায়ের স্বাদ তত হবে। গাইবান্ধা শহর থেকে দক্ষিণে বোনারপাড়া রোডে কিছুদূর গিয়ে ইন্দিরার পাড় থেকে পশ্চিমে কিছুটা গিয়েই ফয়জার রহমান ব্যাপারীর এই পোড়া চায়ের দোকান। এখানে প্রতি কাপ চায়ের দাম ২৫ টাকা।
ভাদ্রের আকাশ মুখ গোমড়া করে আছে। বৃষ্টি হবে হবে ভাব। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে বললাম, আমরা যাচ্ছি পোড়া চা খেতে। বন্ধুর চোখে কৌতূহল, পোড়া চা!
গাইবান্ধা পুরোনো জেলখানা মোড়ে অটোরিকশা থেকে নেমে অটোতে চেপে চললাম মধ্য রাধাকৃষ্ণপুরের উদ্দেশে। শহর পেরিয়ে চলছি ধানখেত-গ্রাম-ঝোপজঙ্গল পেছনে ফেলে। ইটা পীরের মাজার পেরিয়ে একটুখানি এগোলেই তিন কোনা মোড়ে আকাঙ্ক্ষিত চায়ের দোকান। লোকজনের ভিড় আছে। অবশ্য অটোতে থাকতে বৃষ্টির দেখা পেয়েছি। যাহোক, নেমে দোকানে ঢুকে পড়ি। ভিড় করে লোকজন কেউ চা খাচ্ছেন, কেউ গল্প করছেন, কেউ এমনিই বসে আছেন। দোকানের বাইরে অটোরিকশা, রিকশা, মোটরবাইক দাঁড়িয়ে। যাত্রীরা সবাই চায়ের দোকানে।
খুঁজলাম চায়ের কারিগরকে। তিনি ক্যাশবাক্সে বসা। বললাম, চাচা চা খেতে এলাম। তিনি মুখে হাসিভাব এনে বসতে বললেন। বললাম, অনেক দূর থেকে এসেছি! সুন্দরগঞ্জ থেকে। দোকানে বসা লোকজনের মধ্যে কেউ বললেন, ‘গতকাল ময়মনসিংহ থাকি দুজন আচছিল।’ কারিগর চাচা বললেন, ‘খালি ময়মনসিংহ! বইগড়া, জামালপুর আরও কত কত জাগা থাকি আইসে।’ তিনি ক্যাশবাক্স থেকে উঠে চায়ের চুলার কাছে গেলেন। পেছনে আমরাও। চায়ের দোকান হিসেবে সে এলাহি আয়োজন। দুই চুলায় দুই সসপ্যান দুধ ফুটে চলেছে। তার এক সসপ্যানের দুধের রং লালচে। আরেক চুলায় ফুটে চলেছে চা-পাতি। জানলাম, এক সসপ্যানে দুধ জ্বাল দেওয়া হয়ে গেলে লাল হয়ে যাওয়া দুধের সসপ্যানে সেই গরম দুধ রাখা হয়। সেখানে দেওয়া হয় চা-পাতা। সেটিতে ধীরে জ্বাল দেওয়া হয়। এভাবে দীর্ঘ সময় ফুটতে ফুটতে একসময় দুধ লালচে হয়ে যায়।
পাশেই গ্যাসের চুলায় চ্যাপটা কড়াইয়ে বালু রেখে তার ওপর মাটির খুরি গরম করা হচ্ছে। দোকানদার চা-পাতি মেশানো সসপ্যানের চুলায় লাকড়ি নেড়েচেড়ে আগুন বেশি করে জ্বালিয়ে দিলেন। দেখতে দেখতে কথা হলো দোকানির সঙ্গে। চায়ের এই কারিগরের নাম ফয়জার রহমান ব্যাপারী। এই চা বানান কত দিন থেকে? তিনি বললেন, ‘ দেড় বচ্ছর।’ বললাম, আগে কী করতেন? ফয়জার রহমান ব্যাপারী বললেন, ‘ ছোট থেকেই এই চা বানানোর কাজ করি। আগে দোকান ছিল ইটা পীরের মাজারের ওটি (ওখানে)।’ বললাম, এই চা বানানো কেমন করে শিখলেন? তিনি চুলায় লাকড়ি নাড়া দিয়ে বললেন, ‘চা বানাই আর মনে মনে ভাবি, কী করি নতুন কিছু করা যায়! তো ভাবতে ভাবতে এই চা তৈরি শুরু হয়ে গেল।’
ফয়জার রহমান ব্যাপারী একসময় বলে ওঠেন, ‘এই যে এখন চা বানানো হবে।’ আমরা কৌতূহলে সেদিকে তাকাই। তিনি তাতানো মাটির কাপ নেন। চা-পাতি মেশানো জ্বাল দেওয়া দুধ-লিকার মগ দিয়ে তুলে তুলে ছাঁকনির মধ্য দিয়ে মাটির কাপগুলোতে ঢালতে থাকলেন। ঢালা শেষ হলে সামনে রাখা ননি নিয়ে একটু একটু করে দিলেন প্রতি কাপে। এবার হাসিমুখে আমাদের হাতে দিলেন চা ভরা মাটির খুরি।
আমরা সে গরম খুরি কায়দা করে ধরে বাইরে এসে পাতানো বেঞ্চে বসে পড়লাম। স্বাদ নিতে চুমুক দিলাম। এক নতুন স্বাদ এই চায়ের। খানিক পোড়া পোড়া গন্ধ আছে চায়ে। ওটা আসে মূলত বালুতে গরম করা মাটির খুরি থেকে।
দেখলাম এর মাঝে আরও অনেকেই এই চা খেতে এসেছেন। ফয়জার রহমান ব্যাপারীকে বললাম, দিনে কী পরিমাণ চা বিক্রি হয়? ব্যাপারী বললেন, ‘আট-দশ মণ দুধ যায়।’ এই যে নতুন স্বাদ এতে কি মসলা দেন! সসপ্যান দেখিয়ে বললেন, খালি দুধ। এটাই মসলা, এটাই লিকার।
সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় চা তৈরি। ফয়জার রহমান ব্যাপারী চা তৈরি করেন মধ্যরাত পর্যন্ত। স্ত্রী-পুত্র ছাড়া আরও চার-পাঁচজন কাজ করেন তাঁর সঙ্গে। শুক্রবার ভিড় বেশি হয় ফয়জার রহমান ব্যাপারীর দোকানে। তিনি জানান, দুধ যত গরম হবে চায়ের স্বাদ তত হবে। গাইবান্ধা শহর থেকে দক্ষিণে বোনারপাড়া রোডে কিছুদূর গিয়ে ইন্দিরার পাড় থেকে পশ্চিমে কিছুটা গিয়েই ফয়জার রহমান ব্যাপারীর এই পোড়া চায়ের দোকান। এখানে প্রতি কাপ চায়ের দাম ২৫ টাকা।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে