মীর রাকিব হাসান
জহির রায়হান প্রচণ্ড সাহসী ছিল
—সুচন্দা, অভিনেত্রী
পশ্চিম পাকিস্তানে একটা কাজে গিয়েছিলাম। আমি জহিরকে বললাম, ‘চলো একটা সিনেমা দেখি।’ জহির রাজি হলো। আমরা অপেক্ষা করছি শো শুরুর। জাহির একের পর এক সিগারেট খাচ্ছে আর পাঁয়চারি করছে। আমি কাছে গিয়ে বললাম, ‘এত কী টেনশন করছ?’ ও বলল, ‘ভাবছি এমন একটা সিনেমা বানাব, যেটা পুরো পাকিস্তানে ধাক্কা দেবে। পাকিস্তানিদের একটা শিক্ষা দিতে হবে।’
আমরা সিনেমা দেখে ফিরলাম। রাতে জহির হঠাৎ করে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল। বলল, ‘কাগজ-কলম নাও। নোট করতে হবে।’ আমি ঘুম ঘুম চোখে নোট লিখলাম।
ঢাকায় ফিরে সহকর্মীদের ডেকে পাঠাল জহির। আমজাদ হোসেন, নুরুল হক বাচ্চুসহ সে সময় যাঁরা তাঁর সঙ্গে কাজ করতেন, সবাইকে নিয়ে বসল। গল্পটা বুঝিয়ে বলল। আমজাদ হোসেনকে দেওয়া হলো গল্প লেখার দায়িত্ব। গল্প তৈরি হলো। অনেকেই সিনেমার নাম প্রস্তাব করলেন। তার মধ্য থেকে বাছাই করা হলো ‘জীবন থেকে নেয়া’।
আমি তখন গর্ভবতী। সিনেমাটি করতে চাইনি। জহিরের কথায় রাজি হলাম। ও প্রচণ্ড সাহসী ছিল। শুটিং করছি, একদিন আর্মি চলে এল। ওকে নিয়ে যাবে ক্যান্টনমেন্টে। আমরা সবাই হইচই শুরু করে দিলাম। জহির তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল। একসময় বলল, ‘চলেন।’ কয়েক ঘণ্টা পর ফিরে এল। বলল, ‘শুটিং শুরু করো।’ পরে জেনেছি, ওরা নাকি বলছে, ‘আপনি এই সিনেমা বানাতে পারেন না।’ জহির বলছে, ‘সেন্সর বোর্ড আছে, তারা নির্ধারণ করবে এই সিনেমা মুক্তি দেওয়া যাবে কি না। আপনারা তো শুটিং আটকাতে পারেন না।’
জহির ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে। কলম আর ক্যামেরা দিয়ে সারা জীবন দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে। একটা সিনেমায় কতটা মেটাফোরিকভাবে নিজের বক্তব্য তুলে ধরা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই সিনেমা। ছবিতে গানের প্রয়োজনে গান তৈরি করা হয়েছে। খান আতা ছাদের ওপরে গিয়েও গাইতে পারেন না। ‘এ খাঁচা ভাঙব আমি কেমন করে’ গানের মাধ্যমে জহির দেখাতে চেয়েছে নিজের বাড়িতে আমরা কীভাবে অবরুদ্ধ। আমরা কী রকম পরাধীন, তা এই সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরেছে। জহিরের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের তখনকার প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা। ঘটনার যে বীজটা জহির ভাষা আন্দোলন থেকে বুনেছে। শুটিং হয়েছে সাভার, এফডিসি এবং আমাদের বাড়ির ছাদে।
আমরা আমাদের উদ্দেশ্যে সফল
—তৌকীর আহমেদ, নির্মাতা ও অভিনেতা
হলিউড পরিচালক আলেহান্দ্রো ইনারিতু বলেছেন, ‘সিনেমা বানানো খুবই সহজ। ভালো সিনেমা বানানো কঠিন। খুব ভালো সিনেমা বানানো যুদ্ধের মতো। আর যে সিনেমা কালোত্তীর্ণ হয়, সেটা মিরাকল।’ আমার কাছে ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমাটি যুদ্ধের মতোই ছিল।
ভাষা আন্দোলন আমাদের গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায়। এই অধ্যায় নিয়ে সিনেমা হওয়া প্রয়োজন। সেই ভাবনা থেকেই ‘ফাগুন হাওয়ায়’ নির্মাণ শুরু করি। এটা আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি মনে করি, নতুন প্রজন্মের সামনে যদি সেই তথ্যগুলো তুলে ধরতে না পারি, তাহলে শিল্পী হিসেবে আমাদের ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারি না। সহজ করে, সবার বোধগম্য করে বানানোর চেষ্টা করেছি। বিনোদন দেওয়ার জন্য হাস্যরস যোগ করেছি।
সময়নির্ভর সিনেমা বানানোটা একটু খরুচে ব্যাপার। সেট, কস্টিউম থেকে শুরু করে সব বিষয়েই কড়া নজর রাখতে হয়। ঢাকা শহরে সেটা আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। আমার গল্পটা তাই মফস্বলের। এমনিতেই আমাদের চলচ্চিত্রে একটা বৈরী সময় চলছে। এখানে না আছে হল, না আছেন প্রডিউসার, না আছে ইন্ডাস্ট্রি। ২০০৮ সালে পরিকল্পনা করলেও প্রডিউসার পাইনি। অনেকে ভেবেছে, এই সিনেমা প্রচলিত অর্থে নাচে-গানে ভরপুর নয়, তাই চলবে না। কেউই টাকা লগ্নি করতে চায়নি।
প্রডিউসার খুঁজতে খুঁজতে প্রায় ১০ বছর কেটে গেল। সরকারি অনুদানের জন্য জমা দিলাম, তা-ও পেলাম না। চরিত্রের প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে শিল্পী আনতে হলো। পুলিশের থ্রি নট থ্রি রাইফেল জোগাড় করা থেকে শুরু করে ’৫২ সালের মডেলের গাড়ি জোগাড় করা- সবকিছুই চ্যালেঞ্জিং ছিল। সিনেমায় পুলিশের গাড়ি দেখাতে হবে, সেটি অবশ্যই ’৫২ সালের হতে হবে। মোটরসাইকেল, টাইপরাইটার, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর সবকিছুতেই পিরিয়ড অথেন্টিসিটি থাকতে হবে। একটি রেডিও জোগাড় করতেই ২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এসব চ্যালেঞ্জের পরেও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল একটি ভালো সিনেমা দর্শককে উপহার দেওয়া। ছবি মুক্তির পর ব্যবসা করেছে কি না, সেটা কখনোই বড় বিষয় ছিল না। তাই, আমরা আমাদের উদ্দেশ্যে সফল।
জহির রায়হান প্রচণ্ড সাহসী ছিল
—সুচন্দা, অভিনেত্রী
পশ্চিম পাকিস্তানে একটা কাজে গিয়েছিলাম। আমি জহিরকে বললাম, ‘চলো একটা সিনেমা দেখি।’ জহির রাজি হলো। আমরা অপেক্ষা করছি শো শুরুর। জাহির একের পর এক সিগারেট খাচ্ছে আর পাঁয়চারি করছে। আমি কাছে গিয়ে বললাম, ‘এত কী টেনশন করছ?’ ও বলল, ‘ভাবছি এমন একটা সিনেমা বানাব, যেটা পুরো পাকিস্তানে ধাক্কা দেবে। পাকিস্তানিদের একটা শিক্ষা দিতে হবে।’
আমরা সিনেমা দেখে ফিরলাম। রাতে জহির হঠাৎ করে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল। বলল, ‘কাগজ-কলম নাও। নোট করতে হবে।’ আমি ঘুম ঘুম চোখে নোট লিখলাম।
ঢাকায় ফিরে সহকর্মীদের ডেকে পাঠাল জহির। আমজাদ হোসেন, নুরুল হক বাচ্চুসহ সে সময় যাঁরা তাঁর সঙ্গে কাজ করতেন, সবাইকে নিয়ে বসল। গল্পটা বুঝিয়ে বলল। আমজাদ হোসেনকে দেওয়া হলো গল্প লেখার দায়িত্ব। গল্প তৈরি হলো। অনেকেই সিনেমার নাম প্রস্তাব করলেন। তার মধ্য থেকে বাছাই করা হলো ‘জীবন থেকে নেয়া’।
আমি তখন গর্ভবতী। সিনেমাটি করতে চাইনি। জহিরের কথায় রাজি হলাম। ও প্রচণ্ড সাহসী ছিল। শুটিং করছি, একদিন আর্মি চলে এল। ওকে নিয়ে যাবে ক্যান্টনমেন্টে। আমরা সবাই হইচই শুরু করে দিলাম। জহির তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল। একসময় বলল, ‘চলেন।’ কয়েক ঘণ্টা পর ফিরে এল। বলল, ‘শুটিং শুরু করো।’ পরে জেনেছি, ওরা নাকি বলছে, ‘আপনি এই সিনেমা বানাতে পারেন না।’ জহির বলছে, ‘সেন্সর বোর্ড আছে, তারা নির্ধারণ করবে এই সিনেমা মুক্তি দেওয়া যাবে কি না। আপনারা তো শুটিং আটকাতে পারেন না।’
জহির ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে। কলম আর ক্যামেরা দিয়ে সারা জীবন দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে। একটা সিনেমায় কতটা মেটাফোরিকভাবে নিজের বক্তব্য তুলে ধরা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই সিনেমা। ছবিতে গানের প্রয়োজনে গান তৈরি করা হয়েছে। খান আতা ছাদের ওপরে গিয়েও গাইতে পারেন না। ‘এ খাঁচা ভাঙব আমি কেমন করে’ গানের মাধ্যমে জহির দেখাতে চেয়েছে নিজের বাড়িতে আমরা কীভাবে অবরুদ্ধ। আমরা কী রকম পরাধীন, তা এই সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরেছে। জহিরের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের তখনকার প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা। ঘটনার যে বীজটা জহির ভাষা আন্দোলন থেকে বুনেছে। শুটিং হয়েছে সাভার, এফডিসি এবং আমাদের বাড়ির ছাদে।
আমরা আমাদের উদ্দেশ্যে সফল
—তৌকীর আহমেদ, নির্মাতা ও অভিনেতা
হলিউড পরিচালক আলেহান্দ্রো ইনারিতু বলেছেন, ‘সিনেমা বানানো খুবই সহজ। ভালো সিনেমা বানানো কঠিন। খুব ভালো সিনেমা বানানো যুদ্ধের মতো। আর যে সিনেমা কালোত্তীর্ণ হয়, সেটা মিরাকল।’ আমার কাছে ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমাটি যুদ্ধের মতোই ছিল।
ভাষা আন্দোলন আমাদের গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায়। এই অধ্যায় নিয়ে সিনেমা হওয়া প্রয়োজন। সেই ভাবনা থেকেই ‘ফাগুন হাওয়ায়’ নির্মাণ শুরু করি। এটা আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি মনে করি, নতুন প্রজন্মের সামনে যদি সেই তথ্যগুলো তুলে ধরতে না পারি, তাহলে শিল্পী হিসেবে আমাদের ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারি না। সহজ করে, সবার বোধগম্য করে বানানোর চেষ্টা করেছি। বিনোদন দেওয়ার জন্য হাস্যরস যোগ করেছি।
সময়নির্ভর সিনেমা বানানোটা একটু খরুচে ব্যাপার। সেট, কস্টিউম থেকে শুরু করে সব বিষয়েই কড়া নজর রাখতে হয়। ঢাকা শহরে সেটা আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। আমার গল্পটা তাই মফস্বলের। এমনিতেই আমাদের চলচ্চিত্রে একটা বৈরী সময় চলছে। এখানে না আছে হল, না আছেন প্রডিউসার, না আছে ইন্ডাস্ট্রি। ২০০৮ সালে পরিকল্পনা করলেও প্রডিউসার পাইনি। অনেকে ভেবেছে, এই সিনেমা প্রচলিত অর্থে নাচে-গানে ভরপুর নয়, তাই চলবে না। কেউই টাকা লগ্নি করতে চায়নি।
প্রডিউসার খুঁজতে খুঁজতে প্রায় ১০ বছর কেটে গেল। সরকারি অনুদানের জন্য জমা দিলাম, তা-ও পেলাম না। চরিত্রের প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে শিল্পী আনতে হলো। পুলিশের থ্রি নট থ্রি রাইফেল জোগাড় করা থেকে শুরু করে ’৫২ সালের মডেলের গাড়ি জোগাড় করা- সবকিছুই চ্যালেঞ্জিং ছিল। সিনেমায় পুলিশের গাড়ি দেখাতে হবে, সেটি অবশ্যই ’৫২ সালের হতে হবে। মোটরসাইকেল, টাইপরাইটার, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর সবকিছুতেই পিরিয়ড অথেন্টিসিটি থাকতে হবে। একটি রেডিও জোগাড় করতেই ২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এসব চ্যালেঞ্জের পরেও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল একটি ভালো সিনেমা দর্শককে উপহার দেওয়া। ছবি মুক্তির পর ব্যবসা করেছে কি না, সেটা কখনোই বড় বিষয় ছিল না। তাই, আমরা আমাদের উদ্দেশ্যে সফল।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে