‘চরণ ছুঁয়ে যাই’ নামের নতুন ধারাবাহিক নির্মাণ করছেন। এর গল্পটা কেমন?
এটা আমার একটা মিশন ছিল। বছর দুয়েক আগে লেখা শুরু করেছিলাম। শিক্ষার ক্ষেত্রে যে অধঃপতনটা হয়েছে, সেটি তুলে ধরাই ছিল লক্ষ্য। একটা গ্রামের হাইস্কুল। অনেক পুরোনো। ১৯১৭ সালের প্রতিষ্ঠান। অর্ধচন্দ্র ইংলিশ হাইস্কুল। সেই স্কুলটায় প্রাচীন একজন লোক আছে, বাকি সবাই এই সময়ের। স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছে প্রভাবশালী এক লোক, যে আগে এলাকার চেয়ারম্যান ছিল। এই স্কুলে নানা অজুহাতে টাকাপয়সা লেনদেন হয়। একটা কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে। এরা ঠিকমতো ক্লাস করে না, অন্য শিক্ষার্থীদের ডিস্টার্ব করে। শিক্ষকদের যোগসাজশে এখানে কোচিং-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। বেচারা হেডমাস্টার অন্য এলাকা থেকে এসেছে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চাকরি নিয়ে, তার আপ্রাণ চেষ্টা স্কুলটাকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনার।
কারা অভিনয় করছেন?
আমি, আজাদ আবুল কালাম, চঞ্চল চৌধুরী, সুষমা সরকার, আহসান হাবিব নাসিম, মোহাম্মদ বারী, শুভাশিস ভৌমিক, সুজাত শিমুল, রুবলি চৌধুরী প্রমুখ। আরও আছে একদল কিশোর অভিনেতা।
শিক্ষা ও শিক্ষকদের নিয়ে ধারাবাহিক নির্মাণের কারণ কী?
সাভারের একটা ঘটনার পর এই নাটক লেখার প্রয়োজন অনুভব করি। একজন শিক্ষককে এক শিক্ষার্থী ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে মাথায় আঘাত করে মেরে ফেলল। সেই ঘটনা আমাকে ভাবিয়ে তুলল। আমি শিখেছিলাম, শিক্ষকের অঙ্গের কোথাও স্পর্শ করা যায় না, শুধু চরণ স্পর্শ করা যায়। সেই জায়গা থেকেই আমি নাটকটি লিখলাম, যার নাম ‘চরণ ছুঁয়ে যাই’।
ধারাবাহিকটি কত পর্বে শেষ হবে? কোথায় প্রচারিত হবে?
এটা ৫২ পর্বের ধারাবাহিক। প্রচারিত হবে চ্যানেল আইয়ে। ৩০ পর্বের মতো কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, নভেম্বরে পুরো কাজ শেষ করে জমা দিতে পারব। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ প্রচারসূচি ঠিক করবে।
টিভি নাটকগুলো আগের তুলনায় জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। এর কারণ কী?
টিভি নাটক জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে এটা সত্য, আবার ইউটিউবের নাটকগুলোর বেশ ভিউ হয়, এটাও সত্য। এর কারণ, ইউটিউবের নাটকগুলো যখন খুশি তখন দেখা যায়, কিন্তু টিভি নাটকগুলোর একটা টাইমলাইন আছে। ওই সময়ে দেখতে না পারলে আর দেখা হয় না। আরেকটা কারণ হলো, টিভি চ্যানেলগুলোয় প্রিভিউ করে প্রচারের একটা বিষয় থাকে, ইউটিউবে সেটা নেই। ফলে যে কেউ যা খুশি বানিয়ে ইউটিউবে প্রচার করে ফেলতে পারে। একটা ব্যাঙ লাফাচ্ছে, ওই ভিডিওটাও ভিউ হয়ে যাচ্ছে। আমি দেখলাম, একটা মানুষ মাছ ধরছে, মাছটা কাদার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে, আবার বের হচ্ছে, এটাই লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখছে। একই রকমভাবে ইউটিউবে যে নাটকগুলো দেখি, এগুলোর অধিকাংশই খুব দায়িত্বহীন প্রযোজনা। নাটকগুলোতে কোনো ম্যাসেজ তো দূরের কথা, এগুলোতে একধরনের সেক্স অ্যাপিল থাকে, ভায়োলেন্স থাকে, স্থূল সব বিষয় থাকে। তার মানে, আমাদের রুচিরও একটা দুর্ভিক্ষ আছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব নাটকের দর্শক বেশির ভাগই আমাদের প্রবাসী ভাই-বোন।
কেবল দর্শকদের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়া কি ঠিক? নির্মাতারও তো দায়িত্ব থাকে ভালো মানের নির্মাণ এবং গল্প দিয়ে দর্শকের রুচি সমৃদ্ধ করা।
এটা খুবই প্রয়োজনীয় কথা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা, দীক্ষা, প্রশিক্ষণ, সমাজভাবনা—সবকিছু জড়িত। কোনো নির্মাতা যদি ভাবে, নাটকটা শুধুই বিনোদন, এর মাঝে সুস্থ চিন্তা, সুস্থ চেতনা বা সমাজভাবনার প্রতিফলনের প্রয়োজন নেই, তাহলে সে ভুলের রাজ্যে বাস করে। নাটকের জন্মই হয়েছে বার্তা দেওয়ার জন্য। এই দেশে টেলিভিশনের জন্ম থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত বিটিভি সেই ভূমিকা পালন করেছে। বেসরকারি টেলিভিশন শুরুর পরেও অনেক দিন পর্যন্ত এটা মেইনটেইন করা হয়েছে। নির্মাণের আগে দেখা হতো নাটকটা দর্শককে কী বার্তা দেবে।
দর্শক ধরে রাখতে একসময় কমেডির আশ্রয় নেওয়া হলো। অসংখ্য কমেডি নাটক হলো, এখনো হচ্ছে। দেখা যায়, নাটকের সিরিয়াস বিষয়টাও কমেডির কারণে গৌণ হয়ে যায়...
এটা নাট্যকার ও নির্মাতাদের ভাবনার অভাব। কী নিয়ে কমেডি করতে হবে, আর কী নিয়ে নয়, সেটা বুঝতে হবে আগে। ইদানীং দেখি, একটা টার্ম ব্যবহার করে। রোমান্টিক কমেডি, রমকম। এটা আবার কী? রোমান্টিসিজম নিয়েও কমেডি করতে হবে?
ইউটিউব বা অনলাইনের দাপটে ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাতে বসা টেলিভিশনের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী হতে পারে?
এটা তো খুব কঠিন। কঠিন এই কারণে যে, কোনো টেলিভিশনে এখন থিংকট্যাংক নেই। রিসার্চের কোনো জায়গা নেই। যার যার মতো করে কাজ করে। রিসার্চের জায়গাটা একমাত্র হয়েছিল একুশে টেলিভিশনে, সে কারণে তখন ওই চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলোও মানুষের নজর কেড়েছিল, মন জয় করেছিল। পরে এই চ্যানেলের কর্মীরা অন্য চ্যানেলে গিয়ে নিউজটা ভালো করেছেন, কিন্তু যেসব অনুষ্ঠান মানুষের চিন্তাচেতনা বা মননের উন্নয়ন ঘটাত, তেমন অনুষ্ঠান খুব একটা করা যায়নি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি, এসবের পেছনে কিন্তু আমাদের সংস্কৃতির অবদান আছে। নাটক, সিনেমা, গান, মঞ্চনাটক—এসব কিন্তু আমাদের ভীষণভাবে আন্দোলিত করেছে।
শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বেইলি রোডের দুটি মঞ্চ, পরে যোগ হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির তিনটি মঞ্চ। পুরান ঢাকায় একটা মঞ্চ শুরু করেও চালানো গেল না। একই এলাকায় এত মঞ্চ। এত দিনেও মঞ্চনাটককে সম্প্রসারণ করা গেল না। কেন?
এটা খুব দুঃখজনক। একটা লোকের পক্ষে উত্তরা থেকে এসে নাটক দেখা এবং ফিরে যাওয়া বেশ ধকলের। পুরান ঢাকার জহির রায়হান মঞ্চটা সিটি করপোরেশন দাঁড় করাতেই পারল না। মঞ্চটা হলো, কিন্তু তার তো যত্ন প্রয়োজন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। সেটা করা গেল না। মিরপুর, উত্তরার মতো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোনো মঞ্চ নেই, লাইব্রেরি নেই; গুলশান, বনানীর মতো এলাকায় মঞ্চ নেই, সিনেমা হল নেই, লাইব্রেরি নেই; তাহলে এসব এলাকার মানুষ বিনোদনের জন্য, সংস্কৃতিচর্চার জন্য কী করবে? কোথায় যাবে? অথচ, প্রতিটি এলাকায় অনেক রেস্টুরেন্ট হচ্ছে। মানুষ এখন কী করে—রেস্টুরেন্টে যায় আর খায়। আর এ কারণে আমাদের হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
বেইলি রোডের মঞ্চগুলো কি নাট্যদর্শকদের ফিরিয়ে আনতে পারছে?
গাইড হাউসে তো এখন নাটক মঞ্চায়ন করা যাচ্ছে না। মহিলা সমিতিতে করা যাচ্ছে। মহিলা সমিতিতেই আমাদের মঞ্চনাটক জনপ্রিয় হয়েছে। পরে এর উন্নয়নের জন্য সরকার যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে, এখনো করছে। সেই মহিলা সমিতির নিচের ফ্লোরে এখন মেলা বসানো হয়েছে। নাট্যমঞ্চ তো একটা নির্মল জায়গা। এখানে যখন মেলা বসে যায়, তখন মানুষের ধারণা বদলে যায়। বেইলি রোড জুড়ে এত এত দোকান, তারপরেও এখানে মেলা লাগবে! আবার দোতলায় করেছে একটা রেস্টুরেন্ট। ওখানে পার্টি চলে, উচ্চস্বরে গানবাজনা হয়, এতে নাটকের পরিবেশ নষ্ট হয়।
মঞ্চনাটকের উন্নয়নে নাট্যকর্মীদের জন্য কী করা যেতে পারে বলে মনে করেন?
নাট্যকর্মীরা সারা বছর কাজ করে, নাটক মঞ্চে আনে, অথচ তাদের একটা পয়সা দিতে পারে না দলগুলো। কেন? নাট্যদলগুলোর মহড়াকক্ষের ভাড়া, নাট্য প্রদর্শনীর হলভাড়াসহ সারা মাসের খরচটাও নাট্যকর্মীদের চাঁদার টাকায় ম্যানেজ করতে হয়। আমি অনেকবার বলেছি, নিয়মিত যাঁরা নাট্যচর্চা করেন, তাঁদের একটা তালিকা করে মাসিক বেতনের ব্যবস্থা করা হোক।
আপনাদের নাট্যদল আরণ্যকের কী অবস্থা?
চলছে ভালোই। ‘কম্পানি’ নামের নতুন নাটক নামিয়েছি। এ ছাড়া কয়েকটি নাটকের নিয়মিত প্রদর্শনী করছি। এগুলো হলো ‘কহে ফেসবুক’, ‘ময়ূরসিংহাসন’ ও ‘নানকার পালা’।
নাট্যকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শিল্পকলার মহাপরিচালকের অপসারণ। সেটা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন এসেছে। কী আশা করছেন নতুন পরিচালনা পর্ষদের কাছে?
সৈয়দ জামিল আহমেদ মহাপরিচালক হিসেবে এসেছেন। নবীন অনেকে পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন। আমার বিশ্বাস, তাঁদের হাত ধরে মঞ্চনাটক, আমাদের সংস্কৃতির চর্চা নতুন গতি পাবে।
‘চরণ ছুঁয়ে যাই’ নামের নতুন ধারাবাহিক নির্মাণ করছেন। এর গল্পটা কেমন?
এটা আমার একটা মিশন ছিল। বছর দুয়েক আগে লেখা শুরু করেছিলাম। শিক্ষার ক্ষেত্রে যে অধঃপতনটা হয়েছে, সেটি তুলে ধরাই ছিল লক্ষ্য। একটা গ্রামের হাইস্কুল। অনেক পুরোনো। ১৯১৭ সালের প্রতিষ্ঠান। অর্ধচন্দ্র ইংলিশ হাইস্কুল। সেই স্কুলটায় প্রাচীন একজন লোক আছে, বাকি সবাই এই সময়ের। স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছে প্রভাবশালী এক লোক, যে আগে এলাকার চেয়ারম্যান ছিল। এই স্কুলে নানা অজুহাতে টাকাপয়সা লেনদেন হয়। একটা কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে। এরা ঠিকমতো ক্লাস করে না, অন্য শিক্ষার্থীদের ডিস্টার্ব করে। শিক্ষকদের যোগসাজশে এখানে কোচিং-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। বেচারা হেডমাস্টার অন্য এলাকা থেকে এসেছে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চাকরি নিয়ে, তার আপ্রাণ চেষ্টা স্কুলটাকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনার।
কারা অভিনয় করছেন?
আমি, আজাদ আবুল কালাম, চঞ্চল চৌধুরী, সুষমা সরকার, আহসান হাবিব নাসিম, মোহাম্মদ বারী, শুভাশিস ভৌমিক, সুজাত শিমুল, রুবলি চৌধুরী প্রমুখ। আরও আছে একদল কিশোর অভিনেতা।
শিক্ষা ও শিক্ষকদের নিয়ে ধারাবাহিক নির্মাণের কারণ কী?
সাভারের একটা ঘটনার পর এই নাটক লেখার প্রয়োজন অনুভব করি। একজন শিক্ষককে এক শিক্ষার্থী ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে মাথায় আঘাত করে মেরে ফেলল। সেই ঘটনা আমাকে ভাবিয়ে তুলল। আমি শিখেছিলাম, শিক্ষকের অঙ্গের কোথাও স্পর্শ করা যায় না, শুধু চরণ স্পর্শ করা যায়। সেই জায়গা থেকেই আমি নাটকটি লিখলাম, যার নাম ‘চরণ ছুঁয়ে যাই’।
ধারাবাহিকটি কত পর্বে শেষ হবে? কোথায় প্রচারিত হবে?
এটা ৫২ পর্বের ধারাবাহিক। প্রচারিত হবে চ্যানেল আইয়ে। ৩০ পর্বের মতো কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, নভেম্বরে পুরো কাজ শেষ করে জমা দিতে পারব। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ প্রচারসূচি ঠিক করবে।
টিভি নাটকগুলো আগের তুলনায় জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। এর কারণ কী?
টিভি নাটক জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে এটা সত্য, আবার ইউটিউবের নাটকগুলোর বেশ ভিউ হয়, এটাও সত্য। এর কারণ, ইউটিউবের নাটকগুলো যখন খুশি তখন দেখা যায়, কিন্তু টিভি নাটকগুলোর একটা টাইমলাইন আছে। ওই সময়ে দেখতে না পারলে আর দেখা হয় না। আরেকটা কারণ হলো, টিভি চ্যানেলগুলোয় প্রিভিউ করে প্রচারের একটা বিষয় থাকে, ইউটিউবে সেটা নেই। ফলে যে কেউ যা খুশি বানিয়ে ইউটিউবে প্রচার করে ফেলতে পারে। একটা ব্যাঙ লাফাচ্ছে, ওই ভিডিওটাও ভিউ হয়ে যাচ্ছে। আমি দেখলাম, একটা মানুষ মাছ ধরছে, মাছটা কাদার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে, আবার বের হচ্ছে, এটাই লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখছে। একই রকমভাবে ইউটিউবে যে নাটকগুলো দেখি, এগুলোর অধিকাংশই খুব দায়িত্বহীন প্রযোজনা। নাটকগুলোতে কোনো ম্যাসেজ তো দূরের কথা, এগুলোতে একধরনের সেক্স অ্যাপিল থাকে, ভায়োলেন্স থাকে, স্থূল সব বিষয় থাকে। তার মানে, আমাদের রুচিরও একটা দুর্ভিক্ষ আছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব নাটকের দর্শক বেশির ভাগই আমাদের প্রবাসী ভাই-বোন।
কেবল দর্শকদের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়া কি ঠিক? নির্মাতারও তো দায়িত্ব থাকে ভালো মানের নির্মাণ এবং গল্প দিয়ে দর্শকের রুচি সমৃদ্ধ করা।
এটা খুবই প্রয়োজনীয় কথা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা, দীক্ষা, প্রশিক্ষণ, সমাজভাবনা—সবকিছু জড়িত। কোনো নির্মাতা যদি ভাবে, নাটকটা শুধুই বিনোদন, এর মাঝে সুস্থ চিন্তা, সুস্থ চেতনা বা সমাজভাবনার প্রতিফলনের প্রয়োজন নেই, তাহলে সে ভুলের রাজ্যে বাস করে। নাটকের জন্মই হয়েছে বার্তা দেওয়ার জন্য। এই দেশে টেলিভিশনের জন্ম থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত বিটিভি সেই ভূমিকা পালন করেছে। বেসরকারি টেলিভিশন শুরুর পরেও অনেক দিন পর্যন্ত এটা মেইনটেইন করা হয়েছে। নির্মাণের আগে দেখা হতো নাটকটা দর্শককে কী বার্তা দেবে।
দর্শক ধরে রাখতে একসময় কমেডির আশ্রয় নেওয়া হলো। অসংখ্য কমেডি নাটক হলো, এখনো হচ্ছে। দেখা যায়, নাটকের সিরিয়াস বিষয়টাও কমেডির কারণে গৌণ হয়ে যায়...
এটা নাট্যকার ও নির্মাতাদের ভাবনার অভাব। কী নিয়ে কমেডি করতে হবে, আর কী নিয়ে নয়, সেটা বুঝতে হবে আগে। ইদানীং দেখি, একটা টার্ম ব্যবহার করে। রোমান্টিক কমেডি, রমকম। এটা আবার কী? রোমান্টিসিজম নিয়েও কমেডি করতে হবে?
ইউটিউব বা অনলাইনের দাপটে ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাতে বসা টেলিভিশনের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী হতে পারে?
এটা তো খুব কঠিন। কঠিন এই কারণে যে, কোনো টেলিভিশনে এখন থিংকট্যাংক নেই। রিসার্চের কোনো জায়গা নেই। যার যার মতো করে কাজ করে। রিসার্চের জায়গাটা একমাত্র হয়েছিল একুশে টেলিভিশনে, সে কারণে তখন ওই চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলোও মানুষের নজর কেড়েছিল, মন জয় করেছিল। পরে এই চ্যানেলের কর্মীরা অন্য চ্যানেলে গিয়ে নিউজটা ভালো করেছেন, কিন্তু যেসব অনুষ্ঠান মানুষের চিন্তাচেতনা বা মননের উন্নয়ন ঘটাত, তেমন অনুষ্ঠান খুব একটা করা যায়নি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি, এসবের পেছনে কিন্তু আমাদের সংস্কৃতির অবদান আছে। নাটক, সিনেমা, গান, মঞ্চনাটক—এসব কিন্তু আমাদের ভীষণভাবে আন্দোলিত করেছে।
শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বেইলি রোডের দুটি মঞ্চ, পরে যোগ হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির তিনটি মঞ্চ। পুরান ঢাকায় একটা মঞ্চ শুরু করেও চালানো গেল না। একই এলাকায় এত মঞ্চ। এত দিনেও মঞ্চনাটককে সম্প্রসারণ করা গেল না। কেন?
এটা খুব দুঃখজনক। একটা লোকের পক্ষে উত্তরা থেকে এসে নাটক দেখা এবং ফিরে যাওয়া বেশ ধকলের। পুরান ঢাকার জহির রায়হান মঞ্চটা সিটি করপোরেশন দাঁড় করাতেই পারল না। মঞ্চটা হলো, কিন্তু তার তো যত্ন প্রয়োজন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। সেটা করা গেল না। মিরপুর, উত্তরার মতো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোনো মঞ্চ নেই, লাইব্রেরি নেই; গুলশান, বনানীর মতো এলাকায় মঞ্চ নেই, সিনেমা হল নেই, লাইব্রেরি নেই; তাহলে এসব এলাকার মানুষ বিনোদনের জন্য, সংস্কৃতিচর্চার জন্য কী করবে? কোথায় যাবে? অথচ, প্রতিটি এলাকায় অনেক রেস্টুরেন্ট হচ্ছে। মানুষ এখন কী করে—রেস্টুরেন্টে যায় আর খায়। আর এ কারণে আমাদের হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
বেইলি রোডের মঞ্চগুলো কি নাট্যদর্শকদের ফিরিয়ে আনতে পারছে?
গাইড হাউসে তো এখন নাটক মঞ্চায়ন করা যাচ্ছে না। মহিলা সমিতিতে করা যাচ্ছে। মহিলা সমিতিতেই আমাদের মঞ্চনাটক জনপ্রিয় হয়েছে। পরে এর উন্নয়নের জন্য সরকার যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে, এখনো করছে। সেই মহিলা সমিতির নিচের ফ্লোরে এখন মেলা বসানো হয়েছে। নাট্যমঞ্চ তো একটা নির্মল জায়গা। এখানে যখন মেলা বসে যায়, তখন মানুষের ধারণা বদলে যায়। বেইলি রোড জুড়ে এত এত দোকান, তারপরেও এখানে মেলা লাগবে! আবার দোতলায় করেছে একটা রেস্টুরেন্ট। ওখানে পার্টি চলে, উচ্চস্বরে গানবাজনা হয়, এতে নাটকের পরিবেশ নষ্ট হয়।
মঞ্চনাটকের উন্নয়নে নাট্যকর্মীদের জন্য কী করা যেতে পারে বলে মনে করেন?
নাট্যকর্মীরা সারা বছর কাজ করে, নাটক মঞ্চে আনে, অথচ তাদের একটা পয়সা দিতে পারে না দলগুলো। কেন? নাট্যদলগুলোর মহড়াকক্ষের ভাড়া, নাট্য প্রদর্শনীর হলভাড়াসহ সারা মাসের খরচটাও নাট্যকর্মীদের চাঁদার টাকায় ম্যানেজ করতে হয়। আমি অনেকবার বলেছি, নিয়মিত যাঁরা নাট্যচর্চা করেন, তাঁদের একটা তালিকা করে মাসিক বেতনের ব্যবস্থা করা হোক।
আপনাদের নাট্যদল আরণ্যকের কী অবস্থা?
চলছে ভালোই। ‘কম্পানি’ নামের নতুন নাটক নামিয়েছি। এ ছাড়া কয়েকটি নাটকের নিয়মিত প্রদর্শনী করছি। এগুলো হলো ‘কহে ফেসবুক’, ‘ময়ূরসিংহাসন’ ও ‘নানকার পালা’।
নাট্যকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শিল্পকলার মহাপরিচালকের অপসারণ। সেটা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন এসেছে। কী আশা করছেন নতুন পরিচালনা পর্ষদের কাছে?
সৈয়দ জামিল আহমেদ মহাপরিচালক হিসেবে এসেছেন। নবীন অনেকে পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন। আমার বিশ্বাস, তাঁদের হাত ধরে মঞ্চনাটক, আমাদের সংস্কৃতির চর্চা নতুন গতি পাবে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে