পাভেল পার্থ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমরা বহু নতুন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েছি। নতুন প্রজন্ম দেশজুড়ে রংতুলিতে গ্রাফিতি আঁকছে। প্লাস্টিকের ব্যানার দিয়ে দেশটারে বিচ্ছিরিভাবে সয়লাব করেনি। জুলাইয়ের রক্তদাগ সাক্ষী রেখে আমরা এখন রাষ্ট্র রূপান্তর ও সংস্কারের পথে। দেশকে প্লাস্টিকমুক্ত করা হবে রাষ্ট্রের এক মৌলিক সংস্কার। আমরা চাই বাংলাদেশ প্লাস্টিকমুক্ত হবে। কারণ মাটি থেকে রক্ত, মগজ থেকে বাতাস সর্বত্র মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে কোনোভাবেই কি একটি রাষ্ট্র সুস্থ হতে পারে? মানুষসহ সব প্রাণসত্তা এবং বাস্তুতন্ত্রের প্রাণের নিরাপত্তায় আমাদের প্লাস্টিকমুক্ত রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। কেবল প্লাস্টিকদূষণ বা উৎপাদন বন্ধ নয়, প্লাস্টিকের তথাকথিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্তৃত্বকেও খারিজ করতে হবে বিকল্প অনুশীলনের ভেতর দিয়ে।
নয়া উদারবাদী প্লাস্টিক দুনিয়ায় কাজটি জটিল। আইন-নীতি সব ধাক্কা মেরে প্লাস্টিকের প্রবলভাবে টিকে থাকাকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর সহিংসতা হিসেবে পাঠ করতে হবে। কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা কীভাবে প্লাস্টিককে জায়েজ করে, তাকে প্রশ্ন করতে হবে। জেন-জি প্রজন্মকে প্লাস্টিক-সহিংসতার রাজনীতি বুঝতে হবে। প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। দেশকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে হলে আমাদের হয়তো ধারাবাহিকভাবে একটা রূপান্তর পরিকল্পনা করে আগাতে হবে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি তৎপরতা। প্লাস্টিক বন্ধে একটিমাত্র প্রস্তাবকে আজ চলতি আলাপে আমরা পেশ করছি। আমরা চাই এই মুহূর্ত থেকে দেশের সর্বত্র প্লাস্টিকের ব্যানার বন্ধ হোক। কোনো সরকারি-বেসরকারি অফিস, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান—কোথাও কেউ আর প্লাস্টিকের ব্যানার ব্যবহার করবে না। পিভিসিসহ কোনো প্লাস্টিকের উপকরণে কোনো ব্যানার বা প্রচারণাসামগ্রী আর কেউ উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার করবে না।
আমরা অনেক বড় কিছু দাবি করিনি। একটা ছোট্ট প্রস্তাব করেছি মাত্র। আমরা বহুজন দীর্ঘদিন প্লাস্টিকের ব্যানার ব্যবহার করি না। আমরা কাপড়, কাগজ, পাটের চটের ওপর হাতে লেখা ও আঁকা ব্যানার ব্যবহার করি। এটি একটি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ, যা আমরা এই মুহূর্ত থেকেই শুরু করতে পারি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবি—সরকার এ ক্ষেত্রে আইন ও নীতিপ্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আমাদের সহায়তা করতে পারে। একটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে। সর্বত্র প্রচার করতে পারে।
২. পরিবেশ সংগঠনগুলো মিলে প্রতিবছর একটা অনুষ্ঠান হয় পরিবেশ অধিদপ্তর মিলনায়তনে। ২০২৩ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্লাস্টিক দূষণ থামাও’। প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ওই বছরও বরাবরের মতোই বিচ্ছিরি ডিজাইনের প্লাস্টিক ব্যানার দিয়ে সারা ঢাকা শহর ভরিয়ে দিয়েছিল। তবে আমরা পরিবেশ সংগঠকেরা সেই অনুষ্ঠানে কোনো প্লাস্টিক ব্যবহার করিনি। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে কাপড়, পাট, বাঁশ-বেত, কাগজ, মাটি ও কাঠের বহু উপকরণ প্রদর্শিত হয়েছিল। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর পরেরবারও কথা রাখেনি। পরিবেশ দিবসের আগে আমি লিখেছি এবং অবগত করেছি, দয়া করে অন্তত পরিবেশ দিবসে প্লাস্টিকের ব্যানার ব্যবহার করবেন না। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর আমাদের কথা গ্রাহ্যই করেনি। জনগণের খাজনার টাকায় প্লাস্টিকের ব্যানার দিয়ে দেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সর্বনাশ করেছে।
আমরা আশা করব ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের পরিবেশ প্রশ্ন এবং পরিবেশের যন্ত্রণাকে বোঝার চেষ্টা করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মানিত বহু উপদেষ্টা দীর্ঘদিন প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে সোচ্চার; বিশেষ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে কেবল আইনি লড়াই করেননি; বরং বিকল্প চর্চাগুলোকেও উৎসাহিত করেছেন। যিনি নিজে প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার করেননি, এখন দায়িত্বকালীন তাঁর মন্ত্রণালয় কীভাবে প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার করবে? আমরা আশা করব সরকার খুব দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এবং বাস্তবায়নে তৎপর হবে। আমরা আগস্ট মাসের ভেতর এ বিষয়ে কার্যকর নোটিশ দেখতে চাই।
৩. বিগত সময়ে ২০২৬ সালের ভেতরে দেশকে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকমুক্ত করার লক্ষ্য অর্জনে প্রথম ধাপে সব সরকারি দপ্তরে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানা গিয়েছিল। সরকারি দপ্তরগুলোয় প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাচের বোতলে পানি রাখার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এমনকি সরকারি আমন্ত্রণপত্র, নিমন্ত্রণপত্র, ভিজিটিং কার্ড এবং ফাইল ফোল্ডারে প্লাস্টিক ব্যবহার ও লেমিনেটিং ব্যবহার বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বন্ধে প্রাথমিকভাবে দেশের ১২ জেলার ৪০টি উপজেলাকে বেছে নিয়েছিল পদত্যাগী সরকার। কিন্তু সরকারি অফিসগুলোয় কেন প্লাস্টিক বন্ধ হয়নি? রাষ্ট্র কেন অঙ্গীকার ভঙ্গ করল?
৪. আমাদের চারপাশজুড়ে আজ বিপজ্জনক প্লাস্টিক। পানির বোতল থেকে খাবারের থালা, শিশুদের খেলনা থেকে প্রসাধনীর মোড়ক। সরকারি অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক কোম্পানি বা নির্বাচনী প্রচারণার ব্যানার। পৃথিবীর জনসংখ্যার মোট ওজনের সমান প্লাস্টিক প্রতিবছর উৎপাদিত হয়। কঠিন বর্জ্যের ১০ শতাংশই প্লাস্টিক। প্লাস্টিক পচে না, গলে না, প্রকৃতিতে মিশে যায় না। প্লাস্টিক ভেঙে অতিক্ষুদ্র কণা হিসেবে বাতাস, মাটি, পানি, খাদ্যচক্র এবং প্রাণীর শরীরে মিশে যায়। প্লাস্টিক কণা ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে আজ আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলে ঢুকে পড়েছে। শস্য, মাংস, মাছ, সর্বত্র মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক।
১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৬ (ক) (সংশোধিত ২০০২) ধারা অনুযায়ী ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা শহরে এবং ১ মার্চ বাংলাদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। খাবার পানি, ওষুধসহ খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকরণে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বাজার থেকে প্রত্যাহার ও ধ্বংসের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট ২০১৪ সালে। সে বছর ২৩ নভেম্বর সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নিষিদ্ধ পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহার বন্ধে করণীয় নির্ধারণে জাতীয় সংসদে একটি সাব-কমিটি গঠিত হয়েছিল। ২০১৯ সালে বেলাসহ ১১টি পরিবেশ সংগঠন একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্য বন্ধে রিট করে। পরে দেশের উপকূল অঞ্চলে, দেশের সর্বত্র হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় পানিবহনকারী প্লাস্টিকের বোতলসহ একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন।
এত নির্দেশনা, জনগণের এত দাবির পরও সরকারি অফিসেই প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না কেন? পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং দেশের জনগণের প্রতি কোনো পরিবেশ-সংবেদনশীল আচরণ গড়ে উঠছে না কেন? কারণ হলো, প্রশ্নহীন কর্তৃত্ববাদ। আজকের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা এই কর্তৃত্ববাদকে সজোরে সমূলে প্রশ্ন করেছে। আশা করছি, আমরা প্লাস্টিকমুক্ত রাষ্ট্রের রূপান্তর-প্রক্রিয়ায় সবাই দায়িত্বশীল ও সক্রিয় থাকব।
৫. জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার তুমুল স্লোগান আমরা শুনেছি, ‘আমি কে, তুমি কে, বিকল্প, বিকল্প’। আমাদের চারধারে প্লাস্টিকের বহু বিকল্প আছে। মাটি, কাঠ, ধাতু, কাগজ, কাপড়, পাট—বহু কিছু। আমরা আমাদের বিকল্পকে কখনোই আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার এবং অর্থনীতির চালিকা হিসেবে চিন্তা করিনি। আমরা বরাবর একটা করপোরেট ভোগবাদী বাজারকে প্রশ্রয় দিয়েছি। প্লাস্টিক টিকে থাকার অন্যতম কারণ উৎপাদন-বাণিজ্য, ভোক্তার সংস্কৃতি এবং বাজার। এই ব্যবস্থাকে চুরমার করে না দাঁড়ালে রাষ্ট্রের সংস্কার সম্ভব নয়।
আজকে যে নতুন প্রজন্ম রংতুলিতে দেশজুড়ে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকছে, তাদের এই দক্ষতা এবং আগ্রহকে আমরা দারুণভাবে কাজে লাগাতে পারি। দেশজুড়ে প্রতিদিন বহু ব্যানার প্রয়োজন হয়। সরকারি, বেসরকারি, বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। চাইলে গ্রাফিতি আঁকিয়েরা এই পরিবেশবান্ধব ব্যানার তৈরির উদ্যোক্তা হতে পারেন।
লেখক: পাভেল পার্থ
লেখক ও গবেষক
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমরা বহু নতুন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েছি। নতুন প্রজন্ম দেশজুড়ে রংতুলিতে গ্রাফিতি আঁকছে। প্লাস্টিকের ব্যানার দিয়ে দেশটারে বিচ্ছিরিভাবে সয়লাব করেনি। জুলাইয়ের রক্তদাগ সাক্ষী রেখে আমরা এখন রাষ্ট্র রূপান্তর ও সংস্কারের পথে। দেশকে প্লাস্টিকমুক্ত করা হবে রাষ্ট্রের এক মৌলিক সংস্কার। আমরা চাই বাংলাদেশ প্লাস্টিকমুক্ত হবে। কারণ মাটি থেকে রক্ত, মগজ থেকে বাতাস সর্বত্র মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে কোনোভাবেই কি একটি রাষ্ট্র সুস্থ হতে পারে? মানুষসহ সব প্রাণসত্তা এবং বাস্তুতন্ত্রের প্রাণের নিরাপত্তায় আমাদের প্লাস্টিকমুক্ত রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। কেবল প্লাস্টিকদূষণ বা উৎপাদন বন্ধ নয়, প্লাস্টিকের তথাকথিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্তৃত্বকেও খারিজ করতে হবে বিকল্প অনুশীলনের ভেতর দিয়ে।
নয়া উদারবাদী প্লাস্টিক দুনিয়ায় কাজটি জটিল। আইন-নীতি সব ধাক্কা মেরে প্লাস্টিকের প্রবলভাবে টিকে থাকাকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর সহিংসতা হিসেবে পাঠ করতে হবে। কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা কীভাবে প্লাস্টিককে জায়েজ করে, তাকে প্রশ্ন করতে হবে। জেন-জি প্রজন্মকে প্লাস্টিক-সহিংসতার রাজনীতি বুঝতে হবে। প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। দেশকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে হলে আমাদের হয়তো ধারাবাহিকভাবে একটা রূপান্তর পরিকল্পনা করে আগাতে হবে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি তৎপরতা। প্লাস্টিক বন্ধে একটিমাত্র প্রস্তাবকে আজ চলতি আলাপে আমরা পেশ করছি। আমরা চাই এই মুহূর্ত থেকে দেশের সর্বত্র প্লাস্টিকের ব্যানার বন্ধ হোক। কোনো সরকারি-বেসরকারি অফিস, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান—কোথাও কেউ আর প্লাস্টিকের ব্যানার ব্যবহার করবে না। পিভিসিসহ কোনো প্লাস্টিকের উপকরণে কোনো ব্যানার বা প্রচারণাসামগ্রী আর কেউ উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার করবে না।
আমরা অনেক বড় কিছু দাবি করিনি। একটা ছোট্ট প্রস্তাব করেছি মাত্র। আমরা বহুজন দীর্ঘদিন প্লাস্টিকের ব্যানার ব্যবহার করি না। আমরা কাপড়, কাগজ, পাটের চটের ওপর হাতে লেখা ও আঁকা ব্যানার ব্যবহার করি। এটি একটি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ, যা আমরা এই মুহূর্ত থেকেই শুরু করতে পারি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবি—সরকার এ ক্ষেত্রে আইন ও নীতিপ্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আমাদের সহায়তা করতে পারে। একটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে। সর্বত্র প্রচার করতে পারে।
২. পরিবেশ সংগঠনগুলো মিলে প্রতিবছর একটা অনুষ্ঠান হয় পরিবেশ অধিদপ্তর মিলনায়তনে। ২০২৩ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্লাস্টিক দূষণ থামাও’। প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ওই বছরও বরাবরের মতোই বিচ্ছিরি ডিজাইনের প্লাস্টিক ব্যানার দিয়ে সারা ঢাকা শহর ভরিয়ে দিয়েছিল। তবে আমরা পরিবেশ সংগঠকেরা সেই অনুষ্ঠানে কোনো প্লাস্টিক ব্যবহার করিনি। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে কাপড়, পাট, বাঁশ-বেত, কাগজ, মাটি ও কাঠের বহু উপকরণ প্রদর্শিত হয়েছিল। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর পরেরবারও কথা রাখেনি। পরিবেশ দিবসের আগে আমি লিখেছি এবং অবগত করেছি, দয়া করে অন্তত পরিবেশ দিবসে প্লাস্টিকের ব্যানার ব্যবহার করবেন না। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর আমাদের কথা গ্রাহ্যই করেনি। জনগণের খাজনার টাকায় প্লাস্টিকের ব্যানার দিয়ে দেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সর্বনাশ করেছে।
আমরা আশা করব ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের পরিবেশ প্রশ্ন এবং পরিবেশের যন্ত্রণাকে বোঝার চেষ্টা করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মানিত বহু উপদেষ্টা দীর্ঘদিন প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে সোচ্চার; বিশেষ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে কেবল আইনি লড়াই করেননি; বরং বিকল্প চর্চাগুলোকেও উৎসাহিত করেছেন। যিনি নিজে প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার করেননি, এখন দায়িত্বকালীন তাঁর মন্ত্রণালয় কীভাবে প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার করবে? আমরা আশা করব সরকার খুব দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এবং বাস্তবায়নে তৎপর হবে। আমরা আগস্ট মাসের ভেতর এ বিষয়ে কার্যকর নোটিশ দেখতে চাই।
৩. বিগত সময়ে ২০২৬ সালের ভেতরে দেশকে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকমুক্ত করার লক্ষ্য অর্জনে প্রথম ধাপে সব সরকারি দপ্তরে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানা গিয়েছিল। সরকারি দপ্তরগুলোয় প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাচের বোতলে পানি রাখার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এমনকি সরকারি আমন্ত্রণপত্র, নিমন্ত্রণপত্র, ভিজিটিং কার্ড এবং ফাইল ফোল্ডারে প্লাস্টিক ব্যবহার ও লেমিনেটিং ব্যবহার বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বন্ধে প্রাথমিকভাবে দেশের ১২ জেলার ৪০টি উপজেলাকে বেছে নিয়েছিল পদত্যাগী সরকার। কিন্তু সরকারি অফিসগুলোয় কেন প্লাস্টিক বন্ধ হয়নি? রাষ্ট্র কেন অঙ্গীকার ভঙ্গ করল?
৪. আমাদের চারপাশজুড়ে আজ বিপজ্জনক প্লাস্টিক। পানির বোতল থেকে খাবারের থালা, শিশুদের খেলনা থেকে প্রসাধনীর মোড়ক। সরকারি অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক কোম্পানি বা নির্বাচনী প্রচারণার ব্যানার। পৃথিবীর জনসংখ্যার মোট ওজনের সমান প্লাস্টিক প্রতিবছর উৎপাদিত হয়। কঠিন বর্জ্যের ১০ শতাংশই প্লাস্টিক। প্লাস্টিক পচে না, গলে না, প্রকৃতিতে মিশে যায় না। প্লাস্টিক ভেঙে অতিক্ষুদ্র কণা হিসেবে বাতাস, মাটি, পানি, খাদ্যচক্র এবং প্রাণীর শরীরে মিশে যায়। প্লাস্টিক কণা ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে আজ আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলে ঢুকে পড়েছে। শস্য, মাংস, মাছ, সর্বত্র মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক।
১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৬ (ক) (সংশোধিত ২০০২) ধারা অনুযায়ী ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা শহরে এবং ১ মার্চ বাংলাদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। খাবার পানি, ওষুধসহ খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকরণে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বাজার থেকে প্রত্যাহার ও ধ্বংসের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট ২০১৪ সালে। সে বছর ২৩ নভেম্বর সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নিষিদ্ধ পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহার বন্ধে করণীয় নির্ধারণে জাতীয় সংসদে একটি সাব-কমিটি গঠিত হয়েছিল। ২০১৯ সালে বেলাসহ ১১টি পরিবেশ সংগঠন একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্য বন্ধে রিট করে। পরে দেশের উপকূল অঞ্চলে, দেশের সর্বত্র হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় পানিবহনকারী প্লাস্টিকের বোতলসহ একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন।
এত নির্দেশনা, জনগণের এত দাবির পরও সরকারি অফিসেই প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না কেন? পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং দেশের জনগণের প্রতি কোনো পরিবেশ-সংবেদনশীল আচরণ গড়ে উঠছে না কেন? কারণ হলো, প্রশ্নহীন কর্তৃত্ববাদ। আজকের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা এই কর্তৃত্ববাদকে সজোরে সমূলে প্রশ্ন করেছে। আশা করছি, আমরা প্লাস্টিকমুক্ত রাষ্ট্রের রূপান্তর-প্রক্রিয়ায় সবাই দায়িত্বশীল ও সক্রিয় থাকব।
৫. জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার তুমুল স্লোগান আমরা শুনেছি, ‘আমি কে, তুমি কে, বিকল্প, বিকল্প’। আমাদের চারধারে প্লাস্টিকের বহু বিকল্প আছে। মাটি, কাঠ, ধাতু, কাগজ, কাপড়, পাট—বহু কিছু। আমরা আমাদের বিকল্পকে কখনোই আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার এবং অর্থনীতির চালিকা হিসেবে চিন্তা করিনি। আমরা বরাবর একটা করপোরেট ভোগবাদী বাজারকে প্রশ্রয় দিয়েছি। প্লাস্টিক টিকে থাকার অন্যতম কারণ উৎপাদন-বাণিজ্য, ভোক্তার সংস্কৃতি এবং বাজার। এই ব্যবস্থাকে চুরমার করে না দাঁড়ালে রাষ্ট্রের সংস্কার সম্ভব নয়।
আজকে যে নতুন প্রজন্ম রংতুলিতে দেশজুড়ে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকছে, তাদের এই দক্ষতা এবং আগ্রহকে আমরা দারুণভাবে কাজে লাগাতে পারি। দেশজুড়ে প্রতিদিন বহু ব্যানার প্রয়োজন হয়। সরকারি, বেসরকারি, বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। চাইলে গ্রাফিতি আঁকিয়েরা এই পরিবেশবান্ধব ব্যানার তৈরির উদ্যোক্তা হতে পারেন।
লেখক: পাভেল পার্থ
লেখক ও গবেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে