ড. মঞ্জুরে খোদা
১১ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণটি ছিল খুব সাবলীল। ক্ষমতা গ্রহণের পর এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় ভাষণ। তাঁর এই ভাষণের আকর্ষণীয় দিকটি ছিল, তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিভাগ-প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কমিশনের প্রধানের নাম ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে ড. শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হলেও, পরে এ দায়িত্ব পেয়েছেন ড. আলী রীয়াজ। কমিশনপ্রধানদের নামগুলো দেখে আশাবাদী হয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলাম।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে না।’ তিনি কেন এমন কথা বললেন? তাঁর দায়িত্ব নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাবনা হাজির করা। তার আগে তাঁকে এই কমিশনের কমিটি করতে হবে। রাজনৈতিক দল, প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। নির্বাচন কে করবে না করবে সেই বিষয়ে কথা বলার দায়িত্ব তাঁর নয়। বাংলাদেশের প্রধান কোনো রাজনৈতিক দলও এখনো এমন কথা বলেনি কিন্তু তিনি বলে ফেললেন। অথচ আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনের সময় তিনিই বলেছিলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।’ তাহলে তিনি একই মুখে ভিন্ন কথা বলার কারণ কী? তিনি বলছেন, আওয়ামী লীগের এখন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু রাজনীতিতে আজকের দিনটাই কি শেষ কথা? আর নির্বাচন কবে হবে, কীভাবে হবে তারও কোনো পরিষ্কার রোডম্যাপ নেই? তার আগে সংস্কারগুলো শেষ করতে হবে। নির্বাচন যখন হবে তখন দেখা যাবে তাদের কেউ আছে কি নেই?
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কোনো দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখা তো কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয়। শেখ হাসিনা বারবার বিরোধীদের বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু তার মূল্য তাঁকে এবং তাঁর দলকে এখন দিতে হচ্ছে। সামনের দিনে মূল্য তাঁদের আরও দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্য যদি হয় আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখা, তাহলে সংস্কারের দরকার কী? পতিত আওয়ামী লীগের সেই ফর্মুলা অনুসরণ করলেই চলে।
নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের প্রয়োজন হবে মূলত এইসব স্থানে ১. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, ২. স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন, ৩. নির্বাচনকে প্রশাসনের প্রভাবমুক্তকরণ, ৪. নির্বাচনকে অবৈধ টাকার প্রভাবমুক্ত করা, ৫. রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের সংস্কার, ৬. এফপিটিপি নয়, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করা, ৭. প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির শাসনক্ষমতায় ভারসাম্য আনা এবং রাষ্ট্রপতি পদেও নির্বাচন আনা, ৮. সংসদকে আইন প্রণয়নের জায়গায় রাখা, ৯. আইন, শাসন, বিচারিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন ও শক্তিশালী করা, ১০. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হতে পারে, তাতে খরচ বাড়বে এবং ১১. রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করা ইত্যাদি।
এর বাইরে কি আর কাজ আছে? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন হয়, তাদের ভালো দিকগুলো অনুসরণ করলে কাজ অনেক কমে যাবে। তার জন্য এখন সেসব দেশে যাওয়ারও দরকার নেই। ঘরে বসেই এখন তা করা সম্ভব। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে এই সুযোগ এখন এসেছে, তাকে কাজে লাগাতে হবে। একে কোনোভাবেই অবহেলা ও হাতছাড়া করা যাবে না।
‘নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন: তরুণদের প্রত্যাশা’ শিরোনামের আলোচনায় অংশ নিয়ে টিআইবির প্রধান ও দুর্নীতিবিষয়ক সংস্কার কমিটির প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশের চেতনা তৈরি হয়েছে, সেই চেতনার ধারক হিসেবে একটি রাজনৈতিক শক্তির বিকাশের অপরিহার্যতা রয়েছে। এই আলোচনায় অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা।
ড. ইউনূস টিআইবির ড. ইফতেখারুজ্জামানকে দুর্নীতিবিষয়ক সংস্কার কমিটির প্রধানের দায়িত্ব দিয়েছেন কিন্তু তাঁর কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। বাংলাদেশে যে সমস্যা-সংকট তা কি রাজনৈতিক দলের অভাবে, না তাকে যারা চালায়, পরিচালনা করে তাদের নীতি ও চরিত্রের কারণে? বাংলাদেশে যে দুর্নীতি হয় সেটা কি দুর্নীতির আইন না থাকার কারণে, না আইনের পালন ও কার্যকর না হওয়ার অভাবে? কী বলবেন আপনি?
বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল ও জোট আছে। এত দল যে মানুষ বিরক্ত, তার খবরও রাখে না। কিন্তু সবার ইতিহাস আকৃতি-প্রকৃতি ও কর্ম এক না। তার ভালো-মন্দ আমি বলছি না কিন্তু সবাই কি খারাপ? দেশে দল আছে ৭০-৮০টির মতো। কিন্তু পালা করে ক্ষমতায় ছিল দুটি দল। বাংলাদেশে গণতন্ত্রও নেই, নির্বাচনও নেই, তাহলে দলের ভালো-মন্দ বুঝবেন কীভাবে? দেশে ধারাবাহিক প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে মানুষ শুভ শক্তিকে বেছে নেবে। সে প্রক্রিয়ায় আসুক নতুন শক্তি ও দল– কোনো বাধা নেই। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে কিংস পার্টি বানাবেন, সেটা কি গ্রহণযোগ্য হবে?
আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিকল্প শক্তির কথা বলছি। সেই চেষ্টাও নানাভাবে হয়েছে ও হচ্ছে। ড. কামাল হোসেন চেষ্টা করেছেন, বি চৌধুরী চেষ্টা করেছেন, বামপন্থী দলগুলো চেষ্টা করেছে। ইসলামপন্থী দলগুলো চেষ্টা করেছে। এমনকি বর্তমানের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসও ২০০৭ সালে নাগরিক শক্তি নামের একটি রাজনৈতিক দল করার অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনোটাই সফল হয়নি।
শুধু তা-ই নয়, ১/১১-এর সময় ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর নেতৃত্বে কিংস পার্টি গঠনেরও নানা চেষ্টা-প্রক্রিয়া ছিল, সেটাও সফল হয়নি। কেন হয়নি? হয়নি কারণ মানুষ আরোপ করা, অহিতে পাওয়া, ড্রয়িংরুম, সেমিনার রুমে, অফিস রুমে বসে বানানো শিকড়-বাকর, নামগোত্র ও মাটি-মানুষের সঙ্গে সম্পর্কহীন নেতৃত্ব এবং দলকে সমর্থন করেনি। এরশাদও ক্ষমতায় থেকে দল বানিয়েছিলেন, ক্ষমতা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দলও প্রায় বিলীন।
আমরা এ দেশে একটি সুস্থ ধারার দল ও রাজনীতি চাই, কিন্তু সেটা বিদেশ থেকে আমদানি করে, ড্রইংরুমের ছকে কচিকাঁচা দিয়ে হবে না। ইতিমধ্যে তারা নানা কাজে নিজেদের বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ করে ফেলছে। তাদেরকে ক্ষমতালোভী করবেন না। আপনারা যে কথা বলছেন, দেশে আরেকটি সহিংসতার অবস্থা তৈরি করছেন, সে কথা কি ভাবছেন?
অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যাঁদের দায়িত্ব দিয়েছে, তাঁদের মধ্য থেকে বলা হচ্ছে, নতুন দল তৈরি করতে হবে। নতুন দল তৈরি করার কথা বললে জনগণ কীভাবে বুঝবে তাঁরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন?’
আপনার বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, আপনারা সংস্কার করতে আসেননি, অন্য কোনো অ্যাজেন্ডা নিয়ে এসেছেন। নতুন দল যদি কেউ করতে চায় বাধা নেই, কিন্তু আপনারা সরকারের অংশ হয়ে সে কাজ করছেন কেন? নিজেদের আর বিতর্কিত করবেন না, যে দায়িত্ব নিয়েছেন সেটাই করুন। মানুষ খুশি হবে। দেশে এমন ধরনের এক সংস্কার করুন, এমন এক পরিবেশ তৈরি করুন যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চেহারা, চরিত্র ও বাস্তবতা আগের মতো থাকবে না; পাল্টে যাবে, পাল্টে যেতে বাধ্য হবে।
লেখক: ড. মঞ্জুরে খোদা, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
১১ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণটি ছিল খুব সাবলীল। ক্ষমতা গ্রহণের পর এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় ভাষণ। তাঁর এই ভাষণের আকর্ষণীয় দিকটি ছিল, তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিভাগ-প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কমিশনের প্রধানের নাম ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে ড. শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হলেও, পরে এ দায়িত্ব পেয়েছেন ড. আলী রীয়াজ। কমিশনপ্রধানদের নামগুলো দেখে আশাবাদী হয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলাম।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে না।’ তিনি কেন এমন কথা বললেন? তাঁর দায়িত্ব নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাবনা হাজির করা। তার আগে তাঁকে এই কমিশনের কমিটি করতে হবে। রাজনৈতিক দল, প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। নির্বাচন কে করবে না করবে সেই বিষয়ে কথা বলার দায়িত্ব তাঁর নয়। বাংলাদেশের প্রধান কোনো রাজনৈতিক দলও এখনো এমন কথা বলেনি কিন্তু তিনি বলে ফেললেন। অথচ আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনের সময় তিনিই বলেছিলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।’ তাহলে তিনি একই মুখে ভিন্ন কথা বলার কারণ কী? তিনি বলছেন, আওয়ামী লীগের এখন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু রাজনীতিতে আজকের দিনটাই কি শেষ কথা? আর নির্বাচন কবে হবে, কীভাবে হবে তারও কোনো পরিষ্কার রোডম্যাপ নেই? তার আগে সংস্কারগুলো শেষ করতে হবে। নির্বাচন যখন হবে তখন দেখা যাবে তাদের কেউ আছে কি নেই?
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কোনো দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখা তো কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয়। শেখ হাসিনা বারবার বিরোধীদের বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু তার মূল্য তাঁকে এবং তাঁর দলকে এখন দিতে হচ্ছে। সামনের দিনে মূল্য তাঁদের আরও দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্য যদি হয় আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখা, তাহলে সংস্কারের দরকার কী? পতিত আওয়ামী লীগের সেই ফর্মুলা অনুসরণ করলেই চলে।
নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের প্রয়োজন হবে মূলত এইসব স্থানে ১. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, ২. স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন, ৩. নির্বাচনকে প্রশাসনের প্রভাবমুক্তকরণ, ৪. নির্বাচনকে অবৈধ টাকার প্রভাবমুক্ত করা, ৫. রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের সংস্কার, ৬. এফপিটিপি নয়, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করা, ৭. প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির শাসনক্ষমতায় ভারসাম্য আনা এবং রাষ্ট্রপতি পদেও নির্বাচন আনা, ৮. সংসদকে আইন প্রণয়নের জায়গায় রাখা, ৯. আইন, শাসন, বিচারিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন ও শক্তিশালী করা, ১০. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হতে পারে, তাতে খরচ বাড়বে এবং ১১. রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করা ইত্যাদি।
এর বাইরে কি আর কাজ আছে? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন হয়, তাদের ভালো দিকগুলো অনুসরণ করলে কাজ অনেক কমে যাবে। তার জন্য এখন সেসব দেশে যাওয়ারও দরকার নেই। ঘরে বসেই এখন তা করা সম্ভব। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে এই সুযোগ এখন এসেছে, তাকে কাজে লাগাতে হবে। একে কোনোভাবেই অবহেলা ও হাতছাড়া করা যাবে না।
‘নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন: তরুণদের প্রত্যাশা’ শিরোনামের আলোচনায় অংশ নিয়ে টিআইবির প্রধান ও দুর্নীতিবিষয়ক সংস্কার কমিটির প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশের চেতনা তৈরি হয়েছে, সেই চেতনার ধারক হিসেবে একটি রাজনৈতিক শক্তির বিকাশের অপরিহার্যতা রয়েছে। এই আলোচনায় অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা।
ড. ইউনূস টিআইবির ড. ইফতেখারুজ্জামানকে দুর্নীতিবিষয়ক সংস্কার কমিটির প্রধানের দায়িত্ব দিয়েছেন কিন্তু তাঁর কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। বাংলাদেশে যে সমস্যা-সংকট তা কি রাজনৈতিক দলের অভাবে, না তাকে যারা চালায়, পরিচালনা করে তাদের নীতি ও চরিত্রের কারণে? বাংলাদেশে যে দুর্নীতি হয় সেটা কি দুর্নীতির আইন না থাকার কারণে, না আইনের পালন ও কার্যকর না হওয়ার অভাবে? কী বলবেন আপনি?
বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল ও জোট আছে। এত দল যে মানুষ বিরক্ত, তার খবরও রাখে না। কিন্তু সবার ইতিহাস আকৃতি-প্রকৃতি ও কর্ম এক না। তার ভালো-মন্দ আমি বলছি না কিন্তু সবাই কি খারাপ? দেশে দল আছে ৭০-৮০টির মতো। কিন্তু পালা করে ক্ষমতায় ছিল দুটি দল। বাংলাদেশে গণতন্ত্রও নেই, নির্বাচনও নেই, তাহলে দলের ভালো-মন্দ বুঝবেন কীভাবে? দেশে ধারাবাহিক প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে মানুষ শুভ শক্তিকে বেছে নেবে। সে প্রক্রিয়ায় আসুক নতুন শক্তি ও দল– কোনো বাধা নেই। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে কিংস পার্টি বানাবেন, সেটা কি গ্রহণযোগ্য হবে?
আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিকল্প শক্তির কথা বলছি। সেই চেষ্টাও নানাভাবে হয়েছে ও হচ্ছে। ড. কামাল হোসেন চেষ্টা করেছেন, বি চৌধুরী চেষ্টা করেছেন, বামপন্থী দলগুলো চেষ্টা করেছে। ইসলামপন্থী দলগুলো চেষ্টা করেছে। এমনকি বর্তমানের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসও ২০০৭ সালে নাগরিক শক্তি নামের একটি রাজনৈতিক দল করার অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনোটাই সফল হয়নি।
শুধু তা-ই নয়, ১/১১-এর সময় ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর নেতৃত্বে কিংস পার্টি গঠনেরও নানা চেষ্টা-প্রক্রিয়া ছিল, সেটাও সফল হয়নি। কেন হয়নি? হয়নি কারণ মানুষ আরোপ করা, অহিতে পাওয়া, ড্রয়িংরুম, সেমিনার রুমে, অফিস রুমে বসে বানানো শিকড়-বাকর, নামগোত্র ও মাটি-মানুষের সঙ্গে সম্পর্কহীন নেতৃত্ব এবং দলকে সমর্থন করেনি। এরশাদও ক্ষমতায় থেকে দল বানিয়েছিলেন, ক্ষমতা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দলও প্রায় বিলীন।
আমরা এ দেশে একটি সুস্থ ধারার দল ও রাজনীতি চাই, কিন্তু সেটা বিদেশ থেকে আমদানি করে, ড্রইংরুমের ছকে কচিকাঁচা দিয়ে হবে না। ইতিমধ্যে তারা নানা কাজে নিজেদের বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ করে ফেলছে। তাদেরকে ক্ষমতালোভী করবেন না। আপনারা যে কথা বলছেন, দেশে আরেকটি সহিংসতার অবস্থা তৈরি করছেন, সে কথা কি ভাবছেন?
অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যাঁদের দায়িত্ব দিয়েছে, তাঁদের মধ্য থেকে বলা হচ্ছে, নতুন দল তৈরি করতে হবে। নতুন দল তৈরি করার কথা বললে জনগণ কীভাবে বুঝবে তাঁরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন?’
আপনার বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, আপনারা সংস্কার করতে আসেননি, অন্য কোনো অ্যাজেন্ডা নিয়ে এসেছেন। নতুন দল যদি কেউ করতে চায় বাধা নেই, কিন্তু আপনারা সরকারের অংশ হয়ে সে কাজ করছেন কেন? নিজেদের আর বিতর্কিত করবেন না, যে দায়িত্ব নিয়েছেন সেটাই করুন। মানুষ খুশি হবে। দেশে এমন ধরনের এক সংস্কার করুন, এমন এক পরিবেশ তৈরি করুন যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চেহারা, চরিত্র ও বাস্তবতা আগের মতো থাকবে না; পাল্টে যাবে, পাল্টে যেতে বাধ্য হবে।
লেখক: ড. মঞ্জুরে খোদা, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে