লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ এবং সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-৩। আসনটি একসময় জাতীয় পার্টির (জাপা) ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। গত তিনবারের নির্বাচনে এই আসনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবু জাহির। বর্তমানে আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। আগামী নির্বাচনে সেই ঘাঁটি আরও মজবুত করতে চায় দলটি। কিন্তু বিএনপি চাইছে আসনটি নিজেদের দখলে নিতে। জাতীয় পার্টিও পরিকল্পনা শুরু করেছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারাই কেবল মাঠে আছেন। বাকি দুই দলের নেতাদের তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।
এমপি আবু জাহির জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আগামী নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন, এমনটাই নিশ্চিত। তবে শক্তিশালী নেতা হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাচ্ছিরুল ইসলাম। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তিনি ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এই নেতার সমর্থকদের ধারণা, এবার তিনিই মনোনয়ন পাচ্ছেন। তবে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, প্রার্থী যাচাইয়ে ভুল হলে খেসারত দিতে হবে দলকে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি) আবুল হাশেম মোল্লা মাসুম এবং ইংল্যান্ডপ্রবাসী সুশান্ত দাস গুপ্ত।
বিএনপি নির্বাচনে গেলে কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার টানা তিনবারের মেয়র জি কে গউছ হতে পারেন দলটির মনোনীত প্রার্থী। তবে তিনি ছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এনামুল হক সেলিম এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ড্যাবের সভাপতি ডা. আহমুদুর রহমান আবদাল।
জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী এম এ মুনিম চৌধুরী বুলবুল। এ ছাড়া এই আসন থেকে আরও মনোনয়ন চাইতে পারেন গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আশরাফুল বারী চৌধুরী নোমান এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা কমিটির সভাপতি মহিব উদ্দিন আহমেদ সোহেল।
বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের নেতা আবু জাহির বলেন, ‘দল আমাকে তিনবার মনোনয়ন দিয়েছে। প্রতিবার আমি বিজয়ী হয়েছি। দল যদি মনে করে, আমাকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হওয়া সম্ভব, তাহলে মনোনয়ন দেবে। নির্বাচন করতে আমি সব সময় প্রস্তুত। দল অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে তাঁর পক্ষেও কাজ করতে প্রস্তুত। এককথায় নৌকা যাঁর, আমরা তাঁর।’
আওয়ামী লীগের আরেক নেতা মোতাচ্ছিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত উপজেলা নির্বাচনে হবিগঞ্জের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি সৈয়দ আহমদুল হককে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছি। আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইব। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। তবে দল যাঁকেই মনোনয়ন দেয়, তাঁকে বিজয়ী করতে কাজ করব।’
নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাওয়া হলে বিএনপির জি কে গউছ বলেন, ‘বর্তমানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। পরিবেশ হলে দলীয় মনোনয়ন বোর্ড যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে নির্বাচন করব। গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলাম, কিন্তু কারচুপির মাধ্যমে আমাকে পরাজিত করা হয়েছে।’
বিএনপির আরেক নেতা অ্যাডভোকেট এনামুল হক সেলিম বলছেন, ‘বিগত নির্বাচনে দল প্রাথমিকভাবে আমিসহ দুজনকে মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে জি কে গউছকে প্রতীক দেওয়া হয়। ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দলীয় কর্মকাণ্ডে আমি সক্রিয়ভাবে জড়িত। এমনকি ২০১৪ সালের আন্দোলনের সময়ও মাঠে ছিলাম। এ সময় দলের অনেকে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। আশা করি দলের হাইকমান্ড সব দিক বিবেচনা করে আমাকে মনোনয়ন দেবেন।’
এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৯ জন। ভোটের মাঠে কথা হয় তিন উপজেলার বেশ কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে। তাঁদের বেশির ভাগ মনে করছেন, এবারও নির্বাচন ২০১৮ সালের মতো হতে পারে। বিএনপি নির্বাচনে গেলে মাঠ একটু গরম থাকবে। নির্বাচনী আমেজ আসবে। তাঁরা সেটাই চাইছেন। তাঁদের মতে, বিএনপি এলেও আওয়ামী লীগের জাহির এমপিই জিতবেন। যদিও এর আগে দল থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে হবে তাঁকে। সেটা তিনি পারবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।