তাপস মজুমদার
৫ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘রাজনীতিতে শিয়াল’ নামে যে সম্পাদকীয় বেরিয়েছে তা থেকে জানা যায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের একজন কাউন্সিলর ফারজানা হক এক জমি বিক্রির জন্য চারজনের কাছে চারবার বায়না করেছেন। এখন তিনিসহ তাঁর কিছু সাঙ্গপাঙ্গ জেলে আছেন। একই শিয়াল বারবার দেখিয়ে কুমিরকে যেমন শিয়াল পণ্ডিত ফাঁকি দিত, এই কাউন্সিলরও সে রকম ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
কথা হলো, এ ধরনের ফাঁকিতে আমাদের দেশ ছেয়ে গেছে। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, পেশানির্বিশেষে পদলেহন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সিন্ডিকেশন, অর্থ পাচার, অনিয়ম, ঘুষ, চাটুকারবৃত্তি, রুচিহীনতা, ধর্ষণ নিত্যদিনের খবর।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহানের একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রতি আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সেলিম জাহান বিত্ত আর ক্ষমতা দিয়ে মানুষের সাফল্য পরিমাপের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে গেছে এ রকম যে ‘...বাইরের যতগুলো জিনিস আছে, সেগুলো আমাকে পেতে হবে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই এতে আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়েছে। আমি আমার প্রচারের মাধ্যমে অন্যের মতকে কোণঠাসা করে যত ওপরে যেতে পারব, তত আমার নিজের জন্য ভালো।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘ক্ষমতা আর অর্থ দিয়ে যখন মানুষের সাফল্য নির্ণয় করা হয়, তখন মানুষের মানবিক মূল্যবোধের জায়গাটা পেছনে পড়ে যায়।...মানুষের প্রতি মানুষের একটা শ্রদ্ধার বোধ থাকা দরকার।’ কোনো সন্দেহ নেই যে আমাদের সমাজে সফল মানুষ তাকেই বলা হচ্ছে, যার পদের ক্ষমতা আছে অথবা অর্থ আছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ যেনতেন প্রকারে পদ এবং অর্থের পেছনে ছুটবে, এটাই স্বাভাবিক।
২ ফেব্রুয়ারি হাসান আজিজুল হকের জন্মদিন ছিল। বাংলা কথাসাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। যেমন গুণী লেখক, তেমনি গুণী বক্তা তিনি। আমরা জানি, তিনি ‘আগুনপাখি’, ‘একাত্তর করতলে ছিন্ন মাথা’, ‘আত্মজা ও একটি করবীগাছ’, ‘নামহীন গোত্রহীন’, ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’, ‘দেশভাগের গল্প’—এ রকম অসংখ্য কালজয়ী সাহিত্যের রচয়িতা। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। আসাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট উপাধি পেয়েছেন। আনন্দ পুরস্কারসহ অজস্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। বলা যেতে পারে দেশে তাঁর জীবদ্দশায় এমন কোনো পুরস্কার ছিল না, যা তিনি পাননি। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা নিশ্চয়ই জানবেন তিনি আড্ডায় যেসব কথা বলতেন এবং বাইরে মাঠে, রাজপথে তিনি যে লড়াই-সংগ্রাম ও বিরুদ্ধ পরিবেশ মোকাবিলা করেছেন, অবদানের দিক থেকে বলা যেতে পারে তা তাঁর লেখার চেয়েও অনেক বড়। মৌলবাদিতার বিরুদ্ধে তাঁর অগ্নিঝরা সাহসী বক্তব্য তাঁকে অনেকবার হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। সেই সব হুমকির বিপরীতে দাঁড়িয়েও হাসান বলেছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে কেউ যদি নিজেকে ‘আস্তিক’ দাবি করতে পারেন, তবে অন্য কেউ নিজেকে ‘নাস্তিক’ দাবি করারও অধিকার রাখেন।
প্রতিটি জাতির মধ্যে সুনির্দিষ্ট পথ বলে দেওয়ার জন্য কিছু মানুষ থাকেন; তাঁরা তাঁদের সৃষ্টির মাধ্যমে পথের নির্দেশনা দেন, যাঁরা জাতির বিবেক হিসেবে পরিগণিত, যাঁদের স্মরণ করলে গোটা জাতিই উপকৃত হয়। হাসান আজিজুল হক তাঁদেরই প্রথম সারির একজন। তিনি শুধু তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি দিয়ে নয়, তাঁর উল্লিখিত মহিমামণ্ডিত কর্ম দিয়েও আমাদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এবং বাঙালি হিসেবে কৃতার্থ করেছেন। বুদ্ধি, বিবেক, কাজ, কথা ও জ্ঞানের এত অপূর্ব সমন্বয় বিখ্যাত লেখকদের মধ্যে খুব কম দেখা যায়।
প্রশ্ন উঠতে পারে, জন্মদিন পেরিয়ে যাওয়ার পর এত কথা বলছি কেন। বলছি এ জন্য যে হাসান আজিজুল হকের জন্মদিনটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বা সাংগঠনিকভাবে রাজশাহীতে কেউই পালন করেনি। অথচ তিনি অর্থবিত্ত, ক্ষমতা, নামডাকের লোভ এড়িয়ে সারা জীবন রাজশাহীতে কাটিয়ে গেলেন এবং মরণের পরও রাজশাহীতেই শায়িত আছেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে তিনি চিরবিদায় নিলে বড় আদর করে তাঁকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে কবর দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, এর ফলে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো সহজ হবে। এ নিয়ে অনেকের অহংকারের সীমা ছিল না। কিন্তু খবরের কাগজে দেখলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও তাঁর কবরে একজন মানুষও শ্রদ্ধা জানাতে যায়নি। কী বিচিত্র বিস্ময়!
আজকাল পত্রিকা খুললেই দেখতে পাই আমলাতন্ত্র এবং ছোট-বড় জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের ক্ষমতা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করছেন। আমলারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে অথবা স্কুল-কলেজ পরিচালনা কমিটিতে থাকতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অনেক শিক্ষকও পদ-পদবির লোভে ছোট-বড় রাজনীতিবিদ বা আমলাদের কাছে আত্মসম্মান বিলিয়ে ধরনা দেন।
উদ্দেশ্য কী? আরও অর্থ উপার্জন এবং মানুষের ওপর প্রভুত্ব করা। বলা বাহুল্য, এর ফলে যোগ্য লোক সামনে আসতে পারে না এবং জনগণেরও কোনো লাভ হয় না। অবাক লাগে—এই সব পদ ও ক্ষমতা মানুষকে এত অন্ধ করে ফেলে যে মায়া, মমতা, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ, জবাবদিহি, এমনকি চক্ষুলজ্জা পর্যন্তও তিরোহিত হয়ে যায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিককালে অনেক ডিপার্টমেন্টের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হতে দেখছি। প্রায় অর্ধকোটি বা কমবেশি তার কাছাকাছি অঙ্কের টাকা খরচ করে যে আয়োজন করা হয়ে থাকে, তা থেকে কী প্রাপ্তি হয়, সে আমরা জানি না। তবে প্রতিটি পুনর্মিলনীতে অনেক বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে যে গানের আয়োজন হয়, সেখানে বাঙালি সংস্কৃতির কোনো চিহ্ন তো প্রায় থাকেই না; বরং উদ্দাম নাচের পাশাপাশি ড্রাম ও নানা রকম বাদ্যযন্ত্রের শব্দের তোড়ে ৩০০ হেক্টরের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল চত্বর ছাপিয়েও আশপাশের এলাকা কেঁপে কেঁপে ওঠে। ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা শিকেয় ওঠে; ঘুম হারাম হয়। কয়েকজন ছাত্রকে আমি জিজ্ঞাসা করেছি দুই দিনের পুনর্মিলনীতে তাদের অনুভূতি কী? উত্তর এসেছে এ রকম, অনেক পুরোনো ভাইবোনদের সঙ্গে দেখা হলো, সেইটুকু আনন্দ মনে নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এটা ভালো। কিন্তু পাশাপাশি এই লাখ লাখ বা কোটি কোটি টাকা খরচ করে যে আয়োজন করা হচ্ছে তাতে একটি নীতিমালার আওতায় এমন কিছু আয়োজন সংযুক্ত করা সমীচীন, যাতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানোর কথা মানুষ ভুলে না যায়। একটা সুস্থ মানসিকতা গড়ে ওঠার পথ খুলে যায়। লোভহীন, আত্মস্বার্থহীন, সমাজসচেতন, সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা, বিবেকী ও সাহসের কাজে মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়।
ইতিহাসের সাক্ষী বাহাদুর শাহ পার্ক ইজারা দেওয়ার খবর হয়েছে। আমরা ইতিহাসের কথা বলছি ইতিহাস বিস্মৃত হয়ে। শ্রদ্ধা জানানোর কথা বলছি মানুষটিকে ভুলে গিয়ে। জ্ঞানের কথা বলছি অজ্ঞের মতো কাজ করে। ধর্ষণ রুখতে চাইছি নারীকে যৌন বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করে।
আওয়ামী লীগ ১৪ বছর ক্ষমতায়। এই সময়ে অনেক কিছু পেয়েছে মানুষ। তাই তাদের কাছেই আশা করে দেশ। দেশপ্রেমহীন, আত্মপ্রচারসর্বস্ব, চাটুকারী মানসিকতার কিছু মানুষের যেনতেন প্রকারে শুধু পদ বাগানো এবং তা রক্ষা করার সব রকম ফন্দিফিকির বন্ধ করে দুর্নীতি ও অপরাধ দমনে সত্যিকার অর্থে শূন্য সহনশীলতা দেখাতে না পারলে সব অর্জন এবং উন্নয়নের ধারা ভন্ডুল হয়ে যাবে। কিছুতেই আমরা সেটা দেখতে চাই না। মনে রাখতে হবে, এখনো দেশে যোগ্য, দক্ষ ও ত্যাগী মানুষ কিছু আছেন।
৫ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘রাজনীতিতে শিয়াল’ নামে যে সম্পাদকীয় বেরিয়েছে তা থেকে জানা যায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের একজন কাউন্সিলর ফারজানা হক এক জমি বিক্রির জন্য চারজনের কাছে চারবার বায়না করেছেন। এখন তিনিসহ তাঁর কিছু সাঙ্গপাঙ্গ জেলে আছেন। একই শিয়াল বারবার দেখিয়ে কুমিরকে যেমন শিয়াল পণ্ডিত ফাঁকি দিত, এই কাউন্সিলরও সে রকম ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
কথা হলো, এ ধরনের ফাঁকিতে আমাদের দেশ ছেয়ে গেছে। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, পেশানির্বিশেষে পদলেহন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সিন্ডিকেশন, অর্থ পাচার, অনিয়ম, ঘুষ, চাটুকারবৃত্তি, রুচিহীনতা, ধর্ষণ নিত্যদিনের খবর।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহানের একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রতি আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সেলিম জাহান বিত্ত আর ক্ষমতা দিয়ে মানুষের সাফল্য পরিমাপের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে গেছে এ রকম যে ‘...বাইরের যতগুলো জিনিস আছে, সেগুলো আমাকে পেতে হবে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই এতে আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়েছে। আমি আমার প্রচারের মাধ্যমে অন্যের মতকে কোণঠাসা করে যত ওপরে যেতে পারব, তত আমার নিজের জন্য ভালো।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘ক্ষমতা আর অর্থ দিয়ে যখন মানুষের সাফল্য নির্ণয় করা হয়, তখন মানুষের মানবিক মূল্যবোধের জায়গাটা পেছনে পড়ে যায়।...মানুষের প্রতি মানুষের একটা শ্রদ্ধার বোধ থাকা দরকার।’ কোনো সন্দেহ নেই যে আমাদের সমাজে সফল মানুষ তাকেই বলা হচ্ছে, যার পদের ক্ষমতা আছে অথবা অর্থ আছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ যেনতেন প্রকারে পদ এবং অর্থের পেছনে ছুটবে, এটাই স্বাভাবিক।
২ ফেব্রুয়ারি হাসান আজিজুল হকের জন্মদিন ছিল। বাংলা কথাসাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। যেমন গুণী লেখক, তেমনি গুণী বক্তা তিনি। আমরা জানি, তিনি ‘আগুনপাখি’, ‘একাত্তর করতলে ছিন্ন মাথা’, ‘আত্মজা ও একটি করবীগাছ’, ‘নামহীন গোত্রহীন’, ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’, ‘দেশভাগের গল্প’—এ রকম অসংখ্য কালজয়ী সাহিত্যের রচয়িতা। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। আসাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট উপাধি পেয়েছেন। আনন্দ পুরস্কারসহ অজস্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। বলা যেতে পারে দেশে তাঁর জীবদ্দশায় এমন কোনো পুরস্কার ছিল না, যা তিনি পাননি। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা নিশ্চয়ই জানবেন তিনি আড্ডায় যেসব কথা বলতেন এবং বাইরে মাঠে, রাজপথে তিনি যে লড়াই-সংগ্রাম ও বিরুদ্ধ পরিবেশ মোকাবিলা করেছেন, অবদানের দিক থেকে বলা যেতে পারে তা তাঁর লেখার চেয়েও অনেক বড়। মৌলবাদিতার বিরুদ্ধে তাঁর অগ্নিঝরা সাহসী বক্তব্য তাঁকে অনেকবার হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। সেই সব হুমকির বিপরীতে দাঁড়িয়েও হাসান বলেছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে কেউ যদি নিজেকে ‘আস্তিক’ দাবি করতে পারেন, তবে অন্য কেউ নিজেকে ‘নাস্তিক’ দাবি করারও অধিকার রাখেন।
প্রতিটি জাতির মধ্যে সুনির্দিষ্ট পথ বলে দেওয়ার জন্য কিছু মানুষ থাকেন; তাঁরা তাঁদের সৃষ্টির মাধ্যমে পথের নির্দেশনা দেন, যাঁরা জাতির বিবেক হিসেবে পরিগণিত, যাঁদের স্মরণ করলে গোটা জাতিই উপকৃত হয়। হাসান আজিজুল হক তাঁদেরই প্রথম সারির একজন। তিনি শুধু তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি দিয়ে নয়, তাঁর উল্লিখিত মহিমামণ্ডিত কর্ম দিয়েও আমাদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এবং বাঙালি হিসেবে কৃতার্থ করেছেন। বুদ্ধি, বিবেক, কাজ, কথা ও জ্ঞানের এত অপূর্ব সমন্বয় বিখ্যাত লেখকদের মধ্যে খুব কম দেখা যায়।
প্রশ্ন উঠতে পারে, জন্মদিন পেরিয়ে যাওয়ার পর এত কথা বলছি কেন। বলছি এ জন্য যে হাসান আজিজুল হকের জন্মদিনটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বা সাংগঠনিকভাবে রাজশাহীতে কেউই পালন করেনি। অথচ তিনি অর্থবিত্ত, ক্ষমতা, নামডাকের লোভ এড়িয়ে সারা জীবন রাজশাহীতে কাটিয়ে গেলেন এবং মরণের পরও রাজশাহীতেই শায়িত আছেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে তিনি চিরবিদায় নিলে বড় আদর করে তাঁকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে কবর দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, এর ফলে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো সহজ হবে। এ নিয়ে অনেকের অহংকারের সীমা ছিল না। কিন্তু খবরের কাগজে দেখলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও তাঁর কবরে একজন মানুষও শ্রদ্ধা জানাতে যায়নি। কী বিচিত্র বিস্ময়!
আজকাল পত্রিকা খুললেই দেখতে পাই আমলাতন্ত্র এবং ছোট-বড় জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের ক্ষমতা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করছেন। আমলারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে অথবা স্কুল-কলেজ পরিচালনা কমিটিতে থাকতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অনেক শিক্ষকও পদ-পদবির লোভে ছোট-বড় রাজনীতিবিদ বা আমলাদের কাছে আত্মসম্মান বিলিয়ে ধরনা দেন।
উদ্দেশ্য কী? আরও অর্থ উপার্জন এবং মানুষের ওপর প্রভুত্ব করা। বলা বাহুল্য, এর ফলে যোগ্য লোক সামনে আসতে পারে না এবং জনগণেরও কোনো লাভ হয় না। অবাক লাগে—এই সব পদ ও ক্ষমতা মানুষকে এত অন্ধ করে ফেলে যে মায়া, মমতা, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ, জবাবদিহি, এমনকি চক্ষুলজ্জা পর্যন্তও তিরোহিত হয়ে যায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিককালে অনেক ডিপার্টমেন্টের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হতে দেখছি। প্রায় অর্ধকোটি বা কমবেশি তার কাছাকাছি অঙ্কের টাকা খরচ করে যে আয়োজন করা হয়ে থাকে, তা থেকে কী প্রাপ্তি হয়, সে আমরা জানি না। তবে প্রতিটি পুনর্মিলনীতে অনেক বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে যে গানের আয়োজন হয়, সেখানে বাঙালি সংস্কৃতির কোনো চিহ্ন তো প্রায় থাকেই না; বরং উদ্দাম নাচের পাশাপাশি ড্রাম ও নানা রকম বাদ্যযন্ত্রের শব্দের তোড়ে ৩০০ হেক্টরের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল চত্বর ছাপিয়েও আশপাশের এলাকা কেঁপে কেঁপে ওঠে। ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা শিকেয় ওঠে; ঘুম হারাম হয়। কয়েকজন ছাত্রকে আমি জিজ্ঞাসা করেছি দুই দিনের পুনর্মিলনীতে তাদের অনুভূতি কী? উত্তর এসেছে এ রকম, অনেক পুরোনো ভাইবোনদের সঙ্গে দেখা হলো, সেইটুকু আনন্দ মনে নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এটা ভালো। কিন্তু পাশাপাশি এই লাখ লাখ বা কোটি কোটি টাকা খরচ করে যে আয়োজন করা হচ্ছে তাতে একটি নীতিমালার আওতায় এমন কিছু আয়োজন সংযুক্ত করা সমীচীন, যাতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানোর কথা মানুষ ভুলে না যায়। একটা সুস্থ মানসিকতা গড়ে ওঠার পথ খুলে যায়। লোভহীন, আত্মস্বার্থহীন, সমাজসচেতন, সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা, বিবেকী ও সাহসের কাজে মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়।
ইতিহাসের সাক্ষী বাহাদুর শাহ পার্ক ইজারা দেওয়ার খবর হয়েছে। আমরা ইতিহাসের কথা বলছি ইতিহাস বিস্মৃত হয়ে। শ্রদ্ধা জানানোর কথা বলছি মানুষটিকে ভুলে গিয়ে। জ্ঞানের কথা বলছি অজ্ঞের মতো কাজ করে। ধর্ষণ রুখতে চাইছি নারীকে যৌন বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করে।
আওয়ামী লীগ ১৪ বছর ক্ষমতায়। এই সময়ে অনেক কিছু পেয়েছে মানুষ। তাই তাদের কাছেই আশা করে দেশ। দেশপ্রেমহীন, আত্মপ্রচারসর্বস্ব, চাটুকারী মানসিকতার কিছু মানুষের যেনতেন প্রকারে শুধু পদ বাগানো এবং তা রক্ষা করার সব রকম ফন্দিফিকির বন্ধ করে দুর্নীতি ও অপরাধ দমনে সত্যিকার অর্থে শূন্য সহনশীলতা দেখাতে না পারলে সব অর্জন এবং উন্নয়নের ধারা ভন্ডুল হয়ে যাবে। কিছুতেই আমরা সেটা দেখতে চাই না। মনে রাখতে হবে, এখনো দেশে যোগ্য, দক্ষ ও ত্যাগী মানুষ কিছু আছেন।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে