রুশা চৌধুরী
প্রতিদিন মৃত্যুর গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে হেঁটে যাচ্ছি আমরা, আমাদের এই প্রিয় শহরে। ভোরের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পাই যেন পুরো শহরটাকে। ধোঁয়া ধোঁয়া আলো, হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে, অলস কিছু লোক।
এই অলস লোকগুলোর পিঠে ভর করেই প্রতিদিন সকালবেলাটা রাত্রির কালো পেট থেকে বের হয়। চা-ওয়ালা, তরকারির গাড়ি, গরম পিঠা, মাছের ঝুড়ি মাথায় লোকগুলো হাজির হয় একে একে।
ক্ষুধার জন্যই এত আয়োজন, বেঁচে থাকার সাজ সাজ রব। রোদ-বৃষ্টি গায়ে মেখে লেকের পানি এখন সবুজ। ছলছল স্রোত ধাক্কা দেয় পাড়ে, যেন মা ঘুম থেকে ডেকে তুলছে বাচ্চাটাকে! স্মৃতির হলুদ খামে এমন অনেক স্মৃতি জমানো আছে। ‘সময়’ বড্ড নিষ্ঠুর, আবার ভীষণ নিবিড়। দূর থেকেও বোঝা যায় হালকা শিশির আর হঠাৎ বৃষ্টির স্মৃতি ভিজিয়ে রেখেছে মাঠটা। এপাশের ব্রিজের মুখে মহুয়াগাছটায় নতুন পাতার সমাহার, ফুলের ঘ্রাণ আর ফলের বাহার সদ্য স্মৃতি হয়ে গেছে।
আচ্ছা মানুষের আরেকটা জন্মের কথা কি সত্যি? নাকি এক জীবনেই কয়েকবার জন্ম নেয় মানুষ? মহুয়াগাছ ঘেঁষে অর্ধচন্দ্রাকৃতির রেলিংটা, অদ্ভুত একটা আলো তৈরি করে, পাশের কদমগাছে পুরোনো ফুলগুলো টুপটাপ ঝরে পড়ে।
হেঁটে যাওয়া পথের পাশে সেই ‘এক পা কাটা লোকটা’। একটা মহামারি এমন বসে থেকে থেকেই জয় করেছে সে। লোকটাকে দেখলেই এ কথাটা স্বস্তি দেয় আমাকে, ‘না, সময় সব কেড়ে নেয়নি।’
জায়নাব নামের মেয়েটা চায়ে রুটি ডুবায়। বহুদূর থেকে এই শহরে এসেছিল ওর মা। সুন্দর মেয়েটা আজকাল খুব অসুস্থ থাকে। কিডনির সমস্যা। লেকের পাশেই থাকে ওরা। বয়স হয়তো আঠারো হবে। একমাথা চুল সব কেটে ফেলেছে। ‘উকুন, গরম আর মাইনসের চোখের অত্যাচারে এই সব করতি হয় রে মা’, ওর মা দুঃখ নিয়ে বলে। ‘খুব সুন্দর দেখায় তোমাকে জায়নাব’, এ কথায় ওর শক্ত চোয়াল একটু নরম হয় শুধু।
জীবন ওর হাসি কেড়ে নিয়েছে। রাতে এই আলো জ্বালা ফুটপাতেই ঘুমায় সুন্দর মেয়েটা। পাতলা অয়েলক্লথের ওপর চাদর বিছিয়ে।পায়ের কাছে সাদা-কালো কুকুরটা ঘুমায়। কুকুরটা ওকে মানুষের কাছ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়।
ফাতেমা খালার সঙ্গে দেখা হয়। আজকাল প্রায়ই তাঁর জ্বর থাকে। তার একটাই ছেলে, সে এবার ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে! সে বলে, ‘মানুষরে আজকাল বিশ্বাস করা খুব কঠিন।’ কথাটা কি চিরকালই ভীষণ সত্যি ছিল না?
পাশ দিয়ে লাফাতে লাফাতে বাচ্চাগুলো যায় যখন, ভীষণ ঘুমঘুম সেই প্রিয় মুখটা মনে পড়ে। কাঁধে ভারী ব্যাগ। গম্ভীর মুখে স্কুলে যেত, আজ সে অনেক দূরের দেশে।
টুংটাং পয়সা ছুড়ে দেয় কেউ ভিক্ষুকদের থালায়। দেড় ফুট সাইজের প্রতিবন্ধী ছেলেটা প্রতিদিন হাসিমুখে হাত পাতে। কী নিষ্পাপ সেই হাসি।
মসজিদের পাশে জারুলগাছটার কোল ঘেঁষে প্রায়ই অ্যাম্বুলেন্স দেখি। বোঝা যায়, খুব ভোরেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে কোনো মানুষ। পথটার কি মনে থাকবে এই সব কথা? কবে তার ধুলোমাখা শরীরের ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়েছিল কোন মানুষ, শিউলিগাছটার নিচে দাঁড়িয়ে ছিল কিছু ফুল তুলে নিতে।
মনের আকাশে একটা কথা খুব ডানা ঝাপটায়, ‘ভালো থাকুক অমৃতের পুত্র-কন্যারা!’ জানি এই আশা পূরণ হওয়ার নয়। তবু বিপদ, শঙ্কা, মৃত্যু থেকে বেঁচে-বর্তে যারা টিকে থাকবে, তারাই পৃথিবীটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
নাকি এই পৃথিবী নিজেই এগিয়ে যাবে, সঙ্গে নিমিত্তের মতো ঝুলে থাকবে মানুষ? এমন ছন্নছাড়া প্রশ্ন আর না মেলানো উত্তরের ধাঁধা হাতে গান মনে আসে, ‘কতটা পথ পেরোলে পরে পথিক হওয়া যায়...’। গানটা গাইতেই মন বলে ওঠে, ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ?’
পথ হারানো মানুষটা পথের মাঝেই নিজেকে ফিরে পায়। প্রিয় পথের ধুলা শরীরে ফিরতে চায় চেনা ঠিকানায়। এই পথের প্রতিটা কোণে ভীষণ মায়া।
ওদের গায়ে একটু ছায়া হতে পাশে গিয়ে দাঁড়াই। চড়ুইপাখিটাও উড়ে উড়ে আসে। একটা টুনটুনি পাখি এসে বসে চড়ুইটার পাশে, আরও দুটো আসে...ছায়ার সঙ্গে খেলে। তৈরি করে অদ্ভুত কিছু বিভ্রম।
বাতাসে ভেসে আসা সকালবেলার ঘ্রাণ তৈরি করে বেঁচে থাকার অপরূপ শিহরণ। রিকশার টুংটাং, ফেরিওয়ালার হাঁক বলে যায়, ‘অজানা এক সম্ভাবনার গা ছুঁয়ে এখনো আমরা স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি...বেঁচে থাকার, ভালোবাসার।’
লেখক: আবৃত্তিশিল্পী
প্রতিদিন মৃত্যুর গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে হেঁটে যাচ্ছি আমরা, আমাদের এই প্রিয় শহরে। ভোরের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পাই যেন পুরো শহরটাকে। ধোঁয়া ধোঁয়া আলো, হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে, অলস কিছু লোক।
এই অলস লোকগুলোর পিঠে ভর করেই প্রতিদিন সকালবেলাটা রাত্রির কালো পেট থেকে বের হয়। চা-ওয়ালা, তরকারির গাড়ি, গরম পিঠা, মাছের ঝুড়ি মাথায় লোকগুলো হাজির হয় একে একে।
ক্ষুধার জন্যই এত আয়োজন, বেঁচে থাকার সাজ সাজ রব। রোদ-বৃষ্টি গায়ে মেখে লেকের পানি এখন সবুজ। ছলছল স্রোত ধাক্কা দেয় পাড়ে, যেন মা ঘুম থেকে ডেকে তুলছে বাচ্চাটাকে! স্মৃতির হলুদ খামে এমন অনেক স্মৃতি জমানো আছে। ‘সময়’ বড্ড নিষ্ঠুর, আবার ভীষণ নিবিড়। দূর থেকেও বোঝা যায় হালকা শিশির আর হঠাৎ বৃষ্টির স্মৃতি ভিজিয়ে রেখেছে মাঠটা। এপাশের ব্রিজের মুখে মহুয়াগাছটায় নতুন পাতার সমাহার, ফুলের ঘ্রাণ আর ফলের বাহার সদ্য স্মৃতি হয়ে গেছে।
আচ্ছা মানুষের আরেকটা জন্মের কথা কি সত্যি? নাকি এক জীবনেই কয়েকবার জন্ম নেয় মানুষ? মহুয়াগাছ ঘেঁষে অর্ধচন্দ্রাকৃতির রেলিংটা, অদ্ভুত একটা আলো তৈরি করে, পাশের কদমগাছে পুরোনো ফুলগুলো টুপটাপ ঝরে পড়ে।
হেঁটে যাওয়া পথের পাশে সেই ‘এক পা কাটা লোকটা’। একটা মহামারি এমন বসে থেকে থেকেই জয় করেছে সে। লোকটাকে দেখলেই এ কথাটা স্বস্তি দেয় আমাকে, ‘না, সময় সব কেড়ে নেয়নি।’
জায়নাব নামের মেয়েটা চায়ে রুটি ডুবায়। বহুদূর থেকে এই শহরে এসেছিল ওর মা। সুন্দর মেয়েটা আজকাল খুব অসুস্থ থাকে। কিডনির সমস্যা। লেকের পাশেই থাকে ওরা। বয়স হয়তো আঠারো হবে। একমাথা চুল সব কেটে ফেলেছে। ‘উকুন, গরম আর মাইনসের চোখের অত্যাচারে এই সব করতি হয় রে মা’, ওর মা দুঃখ নিয়ে বলে। ‘খুব সুন্দর দেখায় তোমাকে জায়নাব’, এ কথায় ওর শক্ত চোয়াল একটু নরম হয় শুধু।
জীবন ওর হাসি কেড়ে নিয়েছে। রাতে এই আলো জ্বালা ফুটপাতেই ঘুমায় সুন্দর মেয়েটা। পাতলা অয়েলক্লথের ওপর চাদর বিছিয়ে।পায়ের কাছে সাদা-কালো কুকুরটা ঘুমায়। কুকুরটা ওকে মানুষের কাছ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়।
ফাতেমা খালার সঙ্গে দেখা হয়। আজকাল প্রায়ই তাঁর জ্বর থাকে। তার একটাই ছেলে, সে এবার ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে! সে বলে, ‘মানুষরে আজকাল বিশ্বাস করা খুব কঠিন।’ কথাটা কি চিরকালই ভীষণ সত্যি ছিল না?
পাশ দিয়ে লাফাতে লাফাতে বাচ্চাগুলো যায় যখন, ভীষণ ঘুমঘুম সেই প্রিয় মুখটা মনে পড়ে। কাঁধে ভারী ব্যাগ। গম্ভীর মুখে স্কুলে যেত, আজ সে অনেক দূরের দেশে।
টুংটাং পয়সা ছুড়ে দেয় কেউ ভিক্ষুকদের থালায়। দেড় ফুট সাইজের প্রতিবন্ধী ছেলেটা প্রতিদিন হাসিমুখে হাত পাতে। কী নিষ্পাপ সেই হাসি।
মসজিদের পাশে জারুলগাছটার কোল ঘেঁষে প্রায়ই অ্যাম্বুলেন্স দেখি। বোঝা যায়, খুব ভোরেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে কোনো মানুষ। পথটার কি মনে থাকবে এই সব কথা? কবে তার ধুলোমাখা শরীরের ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়েছিল কোন মানুষ, শিউলিগাছটার নিচে দাঁড়িয়ে ছিল কিছু ফুল তুলে নিতে।
মনের আকাশে একটা কথা খুব ডানা ঝাপটায়, ‘ভালো থাকুক অমৃতের পুত্র-কন্যারা!’ জানি এই আশা পূরণ হওয়ার নয়। তবু বিপদ, শঙ্কা, মৃত্যু থেকে বেঁচে-বর্তে যারা টিকে থাকবে, তারাই পৃথিবীটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
নাকি এই পৃথিবী নিজেই এগিয়ে যাবে, সঙ্গে নিমিত্তের মতো ঝুলে থাকবে মানুষ? এমন ছন্নছাড়া প্রশ্ন আর না মেলানো উত্তরের ধাঁধা হাতে গান মনে আসে, ‘কতটা পথ পেরোলে পরে পথিক হওয়া যায়...’। গানটা গাইতেই মন বলে ওঠে, ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ?’
পথ হারানো মানুষটা পথের মাঝেই নিজেকে ফিরে পায়। প্রিয় পথের ধুলা শরীরে ফিরতে চায় চেনা ঠিকানায়। এই পথের প্রতিটা কোণে ভীষণ মায়া।
ওদের গায়ে একটু ছায়া হতে পাশে গিয়ে দাঁড়াই। চড়ুইপাখিটাও উড়ে উড়ে আসে। একটা টুনটুনি পাখি এসে বসে চড়ুইটার পাশে, আরও দুটো আসে...ছায়ার সঙ্গে খেলে। তৈরি করে অদ্ভুত কিছু বিভ্রম।
বাতাসে ভেসে আসা সকালবেলার ঘ্রাণ তৈরি করে বেঁচে থাকার অপরূপ শিহরণ। রিকশার টুংটাং, ফেরিওয়ালার হাঁক বলে যায়, ‘অজানা এক সম্ভাবনার গা ছুঁয়ে এখনো আমরা স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি...বেঁচে থাকার, ভালোবাসার।’
লেখক: আবৃত্তিশিল্পী
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৬ ঘণ্টা আগে