ড. মইনুল ইসলাম
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দাবি করেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা অত্যন্ত ভালো। যাঁরা অর্থনীতিতে সমস্যার কথা বলেন, তাঁরা অর্থনীতি জানেন না। এ রকম ‘গলাবাজি’ করে কি তিনি অর্থনীতির সাম্প্রতিক সংকটকে উড়িয়ে দিতে চাইছেন? কিন্তু অনস্বীকার্য সত্য হলো, দেড় বছর ধরে অর্থনীতি বহু ধরনের সংকটে নিমজ্জমান। সংকটগুলোর প্রায় প্রতিটিই গুরুতর।
কিন্তু আমাদের অর্থমন্ত্রীর কাছে এই সব সমস্যা সত্ত্বেও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে ‘কুসুমাস্তীর্ণ’ মনে হচ্ছে! কারণ, দুঃখজনক হলেও সত্য যে দেশের ইতিহাসে এমন অর্থমন্ত্রী অতীতে কখনোই আমরা পাইনি। এমন ধারণা করার কারণ রয়েছে যে তাঁকে অর্থমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে রেখে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব হয়তো অন্য কারও সহায়তায় এবং উচ্চতর পদের আমলাদের পরামর্শে অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণের দায়িত্বটি পালন করতেই বেশি পছন্দ করছেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বেশ কিছুদিন আগেই ‘অ্যাবসেন্ট ফিন্যান্স মিনিস্টার’ আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি দুই বছর ধরে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সভায় অংশ নেননি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৪ সেপ্টেম্বরের পত্রপত্রিকায় দেখলাম জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সংসদে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রীকে ‘বোবা অর্থমন্ত্রী’ বলে গালমন্দ করলেন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই, কিন্তু এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল না!
১৯৯৬-২০০১ সালে শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মতো মেধাবী অর্থমন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়ায় এবং ২০০৯-১৮ পর্যায়ে মেধাবী ও দেশের অভিজ্ঞ সাবেক আমলা আবুল মাল আবদুল মুহিতকে দেশের দীর্ঘতম সময়ের অর্থমন্ত্রী বানিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশে-বিদেশে যে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন, বিপরীতে বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়ে তিনি সবার কাছে হাস্যাস্পদ হয়ে চলেছেন। যদিও অর্থমন্ত্রী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পরীক্ষায় প্রথম স্থান দখল করেছিলেন। যদিও ম্যানপাওয়ার এক্সপোর্টের ব্যবসা করেই তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মিডিয়ায় পারতপক্ষে বক্তব্য দেন না, সংসদে তিনি প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন। তিন বছর ধরে অর্থনীতি যে একাধিক সমস্যায় জর্জরিত, এর জন্য শুধু করোনাভাইরাস মহামারি কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করে পার পাওয়া যাবে না। এর জন্য অর্থমন্ত্রীর যোগ্যতার ঘাটতিকেই প্রধানত দায়ী করা যায়।
ভারত ২০২০-২১ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক ধারায় পতিত হওয়া সত্ত্বেও এ বছর প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ভারতের মূল্যস্ফীতিও ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এমনকি যে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ২০২১ সালে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল, তারাও এ বছর নিজেদের মূল্যস্ফীতির হারকে ৬ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে; অথচ আমাদের মূল্যস্ফীতির হার সরকারের দাবি মোতাবেকই এখনো ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়ে গেছে! সাধারণ ক্রেতাদের জীবনকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যস্ফীতির লাগামহীন পাগলা ঘোড়া যেভাবে অসহনীয় করে তুলেছে, তাদের অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেবে যে প্রকৃতপক্ষে মূল্যস্ফীতির হার আরও অনেক বেশি! বিশ্বের প্রায় সব দেশে মূল্যস্ফীতি এখন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে; অথচ বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতিকে দক্ষ হাতে নিয়ন্ত্রণের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর অদক্ষতা নিয়েও অহরহ অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন আমদানি করা পণ্যের বাজারে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হচ্ছে, যাদের গোপন যোগসাজশে দাম বাড়ানোর অপতৎপরতা পরিদৃষ্ট হলেও সরকারের বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা একেবারেই অকার্যকর হয়ে রয়েছে। এর প্রত্যক্ষ দায়ভার বাণিজ্যমন্ত্রীর ওপরেই এসে পড়ছে। বিদেশে পুঁজি পাচার এখন দেশের ‘এক নম্বর সমস্যায়’ পরিণত হওয়া সত্ত্বেও গত তিন বছরে এ ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। গত বছরের বাজেটে ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার যে ‘টোটকা দাওয়াই’ তিনি ঘোষণা করেছিলেন, সেই সুবিধা বছরজুড়ে একজনও গ্রহণ করেনি।
হুন্ডি ব্যবসা দমনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা আজও নেওয়া হলো না। ফলে ফরমাল চ্যানেলে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো দিন দিন কমছে। বিদেশে অভিবাসন-সম্পর্কিত সরকারি সংস্থা ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি) দাবি করে চলেছে যে এখন প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে এক লাখের বেশি শ্রমিক বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এই তথ্য সত্য হলে রেমিট্যান্স প্রবাহে যে জোয়ার আসার কথা, সেটা দেখা যাচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলেই সত্যের সন্ধান মিলবে যে সিংহভাগ প্রবাসী এখন ফরমাল চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এই ‘হুন্ডি ডলারগুলো’ বিদেশে রয়ে যাচ্ছে, যেগুলো বেশি দামে কিনে নিচ্ছে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারকারীরা—মানে, যে ‘হুন্ডি ডলার’ (বা অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা) বিদেশেই রয়ে যাচ্ছে, সেগুলোর চাহিদা জোগাচ্ছে প্রধানত দেশের দুর্নীতিবাজ ও কালোটাকার মালিকেরা এবং ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার ‘কালচার’ সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীরা। মার্জিনখোর রাজনীতিক বলুন, দুর্নীতিবাজ সিভিল আমলা-প্রকৌশলী বলুন, রাঘববোয়াল ঋণখেলাপি বলুন, ডাকসাইটে ব্যবসায়ী-শিল্পপতি বলুন—হুন্ডি ডলারের সহায়তায় ক্রমেই গড়ে উঠছে বিদেশে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপাতি, সিডনি-ফ্রেটারনিটি, টরন্টোর বেগমপাড়া কিংবা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমগুলো। দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি আমদানির ওভার ইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার পাশাপাশি এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের বহুল ব্যবহৃত হুন্ডি পদ্ধতিতে রেমিট্যান্স পাঠানোর অভ্যাস বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারকারীদের একটি সহজ বিকল্প উপহার দিয়েছে।
এ ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর কি কিছুই করণীয় নেই? কয়েকটি কলামে আমি পুঁজি পাচারকারীদের দমনে সরকারের করণীয় সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেছি। এগুলো কি সরকারের কর্তাব্যক্তিদের চোখে পড়ে না? নাকি সরকারের মধ্যেই পুঁজি পাচারকারীরা গেড়ে বসে আছে? পুঁজি পাচার কঠোরভাবে দমন না করলে ডলার সংকট কাটবে না, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারা থামানো যাবে না, ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্টকে আবার উদ্বৃত্ত অবস্থানে ফেরানো যাবে না, কিংবা ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোকে গতিশীল করা যাবে না। এই সমস্যাগুলো পরস্পর সম্পর্কিত। অর্থমন্ত্রীর যোগ্যতার অভাব থাকায় এসব ব্যাপারে সরকারি নিষ্ক্রিয়তা গেড়ে বসেছে। ভারতেও হুন্ডি ব্যবসা খুবই সচল, ওটাকে তারা ‘হাওয়ালা’ বলে। কিন্তু হাওয়ালা ব্যবসা ভারত থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারের মারাত্মক কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারেনি। এর প্রধান কারণ, ভারতে দুর্নীতি থাকলেও বাংলাদেশের মতো দুর্নীতিকে তারা দেশের ‘এক নম্বর সমস্যা’ হতে দেয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ভারতীয়রাই সংখ্যাগরিষ্ঠ অভিবাসী, যে জন্য রেমিট্যান্সপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও ভারত এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু একজন ভারতীয় অভিবাসীর বিদেশে চাকরি পেতে গড়ে কত টাকা খরচ করতে হয়, তার পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে, ওই খরচ একজন বাংলাদেশি অভিবাসীর খরচের এক-পঞ্চমাংশেরও কম। ভারতের বাজারে ১ ডলারের দাম এখন ৮২-৮৩ রুপি, কিন্তু ওখানে ডলারের তিন-চার রকমের দাম তো সৃষ্টি হয়নি! ভারতে পুঁজি পাচারও বড় সমস্যা হয়ে ওঠেনি। আমরা কি ভারতের কাছ থেকে এ-সম্পর্কে জ্ঞান নিতে পারি না?
ড. মইনুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দাবি করেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা অত্যন্ত ভালো। যাঁরা অর্থনীতিতে সমস্যার কথা বলেন, তাঁরা অর্থনীতি জানেন না। এ রকম ‘গলাবাজি’ করে কি তিনি অর্থনীতির সাম্প্রতিক সংকটকে উড়িয়ে দিতে চাইছেন? কিন্তু অনস্বীকার্য সত্য হলো, দেড় বছর ধরে অর্থনীতি বহু ধরনের সংকটে নিমজ্জমান। সংকটগুলোর প্রায় প্রতিটিই গুরুতর।
কিন্তু আমাদের অর্থমন্ত্রীর কাছে এই সব সমস্যা সত্ত্বেও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে ‘কুসুমাস্তীর্ণ’ মনে হচ্ছে! কারণ, দুঃখজনক হলেও সত্য যে দেশের ইতিহাসে এমন অর্থমন্ত্রী অতীতে কখনোই আমরা পাইনি। এমন ধারণা করার কারণ রয়েছে যে তাঁকে অর্থমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে রেখে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব হয়তো অন্য কারও সহায়তায় এবং উচ্চতর পদের আমলাদের পরামর্শে অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণের দায়িত্বটি পালন করতেই বেশি পছন্দ করছেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বেশ কিছুদিন আগেই ‘অ্যাবসেন্ট ফিন্যান্স মিনিস্টার’ আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি দুই বছর ধরে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সভায় অংশ নেননি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৪ সেপ্টেম্বরের পত্রপত্রিকায় দেখলাম জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সংসদে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রীকে ‘বোবা অর্থমন্ত্রী’ বলে গালমন্দ করলেন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই, কিন্তু এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল না!
১৯৯৬-২০০১ সালে শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মতো মেধাবী অর্থমন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়ায় এবং ২০০৯-১৮ পর্যায়ে মেধাবী ও দেশের অভিজ্ঞ সাবেক আমলা আবুল মাল আবদুল মুহিতকে দেশের দীর্ঘতম সময়ের অর্থমন্ত্রী বানিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশে-বিদেশে যে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন, বিপরীতে বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়ে তিনি সবার কাছে হাস্যাস্পদ হয়ে চলেছেন। যদিও অর্থমন্ত্রী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পরীক্ষায় প্রথম স্থান দখল করেছিলেন। যদিও ম্যানপাওয়ার এক্সপোর্টের ব্যবসা করেই তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মিডিয়ায় পারতপক্ষে বক্তব্য দেন না, সংসদে তিনি প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন। তিন বছর ধরে অর্থনীতি যে একাধিক সমস্যায় জর্জরিত, এর জন্য শুধু করোনাভাইরাস মহামারি কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করে পার পাওয়া যাবে না। এর জন্য অর্থমন্ত্রীর যোগ্যতার ঘাটতিকেই প্রধানত দায়ী করা যায়।
ভারত ২০২০-২১ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক ধারায় পতিত হওয়া সত্ত্বেও এ বছর প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ভারতের মূল্যস্ফীতিও ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এমনকি যে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ২০২১ সালে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল, তারাও এ বছর নিজেদের মূল্যস্ফীতির হারকে ৬ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে; অথচ আমাদের মূল্যস্ফীতির হার সরকারের দাবি মোতাবেকই এখনো ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়ে গেছে! সাধারণ ক্রেতাদের জীবনকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যস্ফীতির লাগামহীন পাগলা ঘোড়া যেভাবে অসহনীয় করে তুলেছে, তাদের অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেবে যে প্রকৃতপক্ষে মূল্যস্ফীতির হার আরও অনেক বেশি! বিশ্বের প্রায় সব দেশে মূল্যস্ফীতি এখন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে; অথচ বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতিকে দক্ষ হাতে নিয়ন্ত্রণের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর অদক্ষতা নিয়েও অহরহ অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন আমদানি করা পণ্যের বাজারে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হচ্ছে, যাদের গোপন যোগসাজশে দাম বাড়ানোর অপতৎপরতা পরিদৃষ্ট হলেও সরকারের বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা একেবারেই অকার্যকর হয়ে রয়েছে। এর প্রত্যক্ষ দায়ভার বাণিজ্যমন্ত্রীর ওপরেই এসে পড়ছে। বিদেশে পুঁজি পাচার এখন দেশের ‘এক নম্বর সমস্যায়’ পরিণত হওয়া সত্ত্বেও গত তিন বছরে এ ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। গত বছরের বাজেটে ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার যে ‘টোটকা দাওয়াই’ তিনি ঘোষণা করেছিলেন, সেই সুবিধা বছরজুড়ে একজনও গ্রহণ করেনি।
হুন্ডি ব্যবসা দমনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা আজও নেওয়া হলো না। ফলে ফরমাল চ্যানেলে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো দিন দিন কমছে। বিদেশে অভিবাসন-সম্পর্কিত সরকারি সংস্থা ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি) দাবি করে চলেছে যে এখন প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে এক লাখের বেশি শ্রমিক বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এই তথ্য সত্য হলে রেমিট্যান্স প্রবাহে যে জোয়ার আসার কথা, সেটা দেখা যাচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলেই সত্যের সন্ধান মিলবে যে সিংহভাগ প্রবাসী এখন ফরমাল চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এই ‘হুন্ডি ডলারগুলো’ বিদেশে রয়ে যাচ্ছে, যেগুলো বেশি দামে কিনে নিচ্ছে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারকারীরা—মানে, যে ‘হুন্ডি ডলার’ (বা অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা) বিদেশেই রয়ে যাচ্ছে, সেগুলোর চাহিদা জোগাচ্ছে প্রধানত দেশের দুর্নীতিবাজ ও কালোটাকার মালিকেরা এবং ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার ‘কালচার’ সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীরা। মার্জিনখোর রাজনীতিক বলুন, দুর্নীতিবাজ সিভিল আমলা-প্রকৌশলী বলুন, রাঘববোয়াল ঋণখেলাপি বলুন, ডাকসাইটে ব্যবসায়ী-শিল্পপতি বলুন—হুন্ডি ডলারের সহায়তায় ক্রমেই গড়ে উঠছে বিদেশে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপাতি, সিডনি-ফ্রেটারনিটি, টরন্টোর বেগমপাড়া কিংবা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমগুলো। দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি আমদানির ওভার ইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার পাশাপাশি এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের বহুল ব্যবহৃত হুন্ডি পদ্ধতিতে রেমিট্যান্স পাঠানোর অভ্যাস বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারকারীদের একটি সহজ বিকল্প উপহার দিয়েছে।
এ ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর কি কিছুই করণীয় নেই? কয়েকটি কলামে আমি পুঁজি পাচারকারীদের দমনে সরকারের করণীয় সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেছি। এগুলো কি সরকারের কর্তাব্যক্তিদের চোখে পড়ে না? নাকি সরকারের মধ্যেই পুঁজি পাচারকারীরা গেড়ে বসে আছে? পুঁজি পাচার কঠোরভাবে দমন না করলে ডলার সংকট কাটবে না, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারা থামানো যাবে না, ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্টকে আবার উদ্বৃত্ত অবস্থানে ফেরানো যাবে না, কিংবা ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোকে গতিশীল করা যাবে না। এই সমস্যাগুলো পরস্পর সম্পর্কিত। অর্থমন্ত্রীর যোগ্যতার অভাব থাকায় এসব ব্যাপারে সরকারি নিষ্ক্রিয়তা গেড়ে বসেছে। ভারতেও হুন্ডি ব্যবসা খুবই সচল, ওটাকে তারা ‘হাওয়ালা’ বলে। কিন্তু হাওয়ালা ব্যবসা ভারত থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারের মারাত্মক কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারেনি। এর প্রধান কারণ, ভারতে দুর্নীতি থাকলেও বাংলাদেশের মতো দুর্নীতিকে তারা দেশের ‘এক নম্বর সমস্যা’ হতে দেয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ভারতীয়রাই সংখ্যাগরিষ্ঠ অভিবাসী, যে জন্য রেমিট্যান্সপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও ভারত এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু একজন ভারতীয় অভিবাসীর বিদেশে চাকরি পেতে গড়ে কত টাকা খরচ করতে হয়, তার পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে, ওই খরচ একজন বাংলাদেশি অভিবাসীর খরচের এক-পঞ্চমাংশেরও কম। ভারতের বাজারে ১ ডলারের দাম এখন ৮২-৮৩ রুপি, কিন্তু ওখানে ডলারের তিন-চার রকমের দাম তো সৃষ্টি হয়নি! ভারতে পুঁজি পাচারও বড় সমস্যা হয়ে ওঠেনি। আমরা কি ভারতের কাছ থেকে এ-সম্পর্কে জ্ঞান নিতে পারি না?
ড. মইনুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে