আমীন আল রশীদ
জাতীয় সরকারের ধারণা বিশ্ব তো বটেই, বাংলাদেশেও নতুন নয়। ২০২১ সালে এ রকম একটি সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সেটি আলোর মুখ দেখেনি। সাধারণভাবে জাতীয় সরকার বলতে বোঝানো হয় এমন একটি সরকারকে, যারা দৃশ্যত জনগণের স্বার্থে কাজ করে এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য তৈরি করে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে।
যুক্তরাজ্যে ১৯৩০-এর দশকে অর্থনৈতিক সংকটের সময় একটি জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল। এই সরকার মূলত বিভিন্ন প্রধান রাজনৈতিক দল যেমন লেবার পার্টি, কনজারভেটিভ পার্টি ও লিবারেল পার্টির মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল। এই সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইতালিতে একটি জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল, যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর দেশ পুনর্গঠনে সহযোগিতা করতে পারে। এপার্থাইডের অবসানের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠিত হয়েছিল, যাতে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস, ন্যাশনাল পার্টি এবং ইনকাথা ফ্রিডম পার্টির সদস্যরা অংশ নেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা জাতিগত এবং রাজনৈতিক বিভক্তি থেকে বেরিয়ে আসছিল।
তার মানে জাতীয় সরকার হচ্ছে কোনো একটি দেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে গড়ে তোলা একধরনের বহুদলীয় সরকার। সেই অর্থে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছে, সেগুলো জাতীয় সরকার নয়। কেননা ওই সরকার পরিচালনার সঙ্গে ছিলেন মূলত সাবেক সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, লেখক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী তথা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। অর্থাৎ এটি নির্দলীয়। নির্দলীয় সরকারকে জাতীয় সরকার বলার সুযোগ নেই। ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে নাগরিক অধিকার-বিষয়ক সংগঠন ব্লাস্টের আয়োজনে সংবিধান সংশোধন ইস্যুতে একটি আলোচনায় একজন সিনিয়র আইনজীবী এই সরকারকে বলেছেন ‘ভালো মানুষের সরকার’।
বাস্তবতা হলো, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ভালো মানুষের চেয়েও বেশি দরকার যোগ্য ও দক্ষ মানুষ। একজন শিক্ষক ক্লাসে যতই ভালো পড়ান না কেন; একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী যত মানবিক ও সৎ মানুষ হোন না কেন; একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা যতই দুর্নীতিমুক্ত হোন না কেন—দিন শেষে রাষ্ট্র পরিচালনা একটি বিরাট রাজনৈতিক যজ্ঞ। তবে নাগরিক সমাজের মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনার মতো যোগ্য ব্যক্তি নেই, এমনটিও বলার সুযোগ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যাঁরা এবারের অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন—এখন পর্যন্ত তাঁদের কারও ব্যক্তিগত দুর্নীতি বা অসততার অভিযোগ না উঠলেও বা তাঁদের ট্র্যাক রেকর্ড ভালো হলেও কারও কারও যোগ্যতা, বিশেষ করে মন্ত্রণালয় চালানোর মতো দক্ষতা আছে কি না—তা নিয়ে জনপরিসরে আলোচনা আছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান সম্প্রতি একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলে বলেছেন, ‘একজন আমলা যদি শয়তান হয়, তাহলে সে এক শ ইবলিসের চেয়েও বড় ভয়ংকর।’ কথা হচ্ছে, এ রকম আমলা কি এখনো নেই? তাঁদের সঙ্গে পেরে ওঠার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে শুধু ভালো মানুষ হলেই চলবে না, শয়তানের শয়তানি ধরতে পারার মতো কৌশলও তাঁর জানা থাকা দরকার। এটি ভালো বোঝেন রাজনীতিবিদেরা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যদিও রাজনীতিবিদেরা, বিশেষ করে মন্ত্রী-এমপিরা অনেক বেশি আমলানির্ভর হয়ে গিয়েছিলেন। তার কারণ অযোগ্য লোকদের এমপি-মন্ত্রী হওয়া। কিন্তু যখন যোগ্য লোকেরা এমপি-মন্ত্রী হতেন, তখন আমলারা তটস্থ থাকতেন। অতএব এখন অন্তর্বর্তী সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁরা বদিউর রহমানের ভাষায় ‘ইবলিস আমলাদের’ কতটা বাগে আনতে পারছেন বা পেরেছেন—সেটি বিরাট প্রশ্ন। কারণ, এরই মধ্যে গণমাধ্যমে অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে যে পুলিশ এখনো সেভাবে সক্রিয় হয়নি। প্রশাসনেও যে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে, সেটিও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাহলে সমাধান কী? সমাধান জাতীয় সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকার যে তিন বা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে চলে যাবে না বরং তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি শেষ করার পরেই ভোটের আয়োজন করবে, তা এরই মধ্যে একাধিকবার বলা হয়েছে। জাতিসংঘ অধিবেশনে গিয়ে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টাও এ কথা বলেছেন। সম্প্রতি সেনাপ্রধান আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে দেড় বছর পরে নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু সরকারের ভেতরে আরও বেশি সময় (দুই থেকে তিন বছর) থাকার বিষয়ে আলোচনা আছে।
যদি তাই হয়, অর্থাৎ যদি দেড়-দুই বছরের আগে নির্বাচন না হয়, তাহলে এখন যে ২১ জন উপদেষ্টা আছেন, তাঁরা এই লম্বা সময় সরকার চালিয়ে যেতে পারবেন? আইনশৃঙ্খলা এবং অর্থনীতি, বিশেষ করে বাজার ঠিক রাখা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যদি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানায় এবং অভ্যুত্থানের মুখে পতন হলেও আওয়ামী লীগ যদি মাস কয়েকের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে এবং তারাও যদি মাঠ গরম করে ফেলে—সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আরও কঠিন কাজ। তার সঙ্গে আছে সরকারের প্রতিশ্রুত সংস্কার। বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন হয়েছে। তারা নিশ্চয়ই অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি করে প্রতিবেদন সরকারকে দেবে। সেই প্রতিবেদনের আলোকে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে। সুতরাং বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ এতসব কাজের চাপ নিতে আদৌ সক্ষম কি না—সেটি বিরাট প্রশ্ন।
এমতাবস্থায় উপদেষ্টাদের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। একজনের মাথার ওপর একটির বেশি মন্ত্রণালয় রাখা উচিত নয়। কেননা একজন ব্যক্তির ওপর একাধিক মন্ত্রণালয় থাকলে তাঁর পক্ষে কোনো মন্ত্রণালয়ের কাজ ঠিকমতো করা সম্ভব নয়। একসঙ্গে অনেক কাজ করতে গেলে ভুল হওয়ারও শঙ্কা থাকে। কাজের গুণগত মান বজায় রাখা কঠিন।
উপদেষ্টাদের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি এই সরকারকে একটি বহুদলীয় জাতীয় সরকারে রূপ দিতে পারলে চলমান সংস্কার এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি সর্বজনগ্রাহ্য ক্ষেত্র তৈরি করা সহজ হবে। এই সরকার আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলগুলো থেকে কাউকে হয়তো নেবে না বা নিতে চাইলেও অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী কোনো অংশের আপত্তির মুখে পড়বে, কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলের বাইরে আরও যেসব দল আছে, সেসব দলে নিশ্চয়ই মন্ত্রণালয় চালানোর মতো যোগ্য, দক্ষ এবং তুলনামূলক ভালো মানুষ আছেন।
রাজনীতিবিদ মানেই খারাপ, দুর্নীতিবাজ—এটি একটি গড়পড়তা ধারণা। এখনো প্রচুর রাজনীতিবিদ পাওয়া যাবে যাঁরা নীতিনৈতিকতা মেনে চলেন। যাঁদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে। যাঁরা যোগ্য ও দক্ষ এবং নেতৃত্বের গুণাবলি আছে। তা ছাড়া ১৮ কোটি মানুষের মধ্য থেকে ১০-১৫ জন ভালো রাজনীতিবিদ পাওয়া যাবে না, সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
হেফাজতে ইসলাম নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল না হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের প্রভাব অনেক। অন্তর্বর্তী সরকারে তাদের একজন প্রতিনিধি আছেন। একইভাবে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবিসহ অন্যান্য তুলনামূলক ছোট দল থেকেও যদি যোগ্যতম লোকদের নিয়ে এই সরকার পুনর্গঠন করা যায়, তাহলে সেটি দেশের স্থিতিশীলতা, আগামী রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা এবং সর্বোপরি কাঙ্ক্ষিত সংস্কারকাজ এগিয়ে নেওয়া সহজ করবে। শর্ত থাকবে, যেসব নেতা এই অন্তর্বর্তী বা জাতীয় সরকারে থাকবেন, তাঁরা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা আছে, এ রকম অনেক রাজনীতিবিদ নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে—যাঁরা একই সঙ্গে ভালো মানুষ এবং একই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষ।
সাংবাদিক ও লেখক
জাতীয় সরকারের ধারণা বিশ্ব তো বটেই, বাংলাদেশেও নতুন নয়। ২০২১ সালে এ রকম একটি সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সেটি আলোর মুখ দেখেনি। সাধারণভাবে জাতীয় সরকার বলতে বোঝানো হয় এমন একটি সরকারকে, যারা দৃশ্যত জনগণের স্বার্থে কাজ করে এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য তৈরি করে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে।
যুক্তরাজ্যে ১৯৩০-এর দশকে অর্থনৈতিক সংকটের সময় একটি জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল। এই সরকার মূলত বিভিন্ন প্রধান রাজনৈতিক দল যেমন লেবার পার্টি, কনজারভেটিভ পার্টি ও লিবারেল পার্টির মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল। এই সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইতালিতে একটি জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল, যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর দেশ পুনর্গঠনে সহযোগিতা করতে পারে। এপার্থাইডের অবসানের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠিত হয়েছিল, যাতে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস, ন্যাশনাল পার্টি এবং ইনকাথা ফ্রিডম পার্টির সদস্যরা অংশ নেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা জাতিগত এবং রাজনৈতিক বিভক্তি থেকে বেরিয়ে আসছিল।
তার মানে জাতীয় সরকার হচ্ছে কোনো একটি দেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে গড়ে তোলা একধরনের বহুদলীয় সরকার। সেই অর্থে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছে, সেগুলো জাতীয় সরকার নয়। কেননা ওই সরকার পরিচালনার সঙ্গে ছিলেন মূলত সাবেক সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, লেখক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী তথা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। অর্থাৎ এটি নির্দলীয়। নির্দলীয় সরকারকে জাতীয় সরকার বলার সুযোগ নেই। ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে নাগরিক অধিকার-বিষয়ক সংগঠন ব্লাস্টের আয়োজনে সংবিধান সংশোধন ইস্যুতে একটি আলোচনায় একজন সিনিয়র আইনজীবী এই সরকারকে বলেছেন ‘ভালো মানুষের সরকার’।
বাস্তবতা হলো, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ভালো মানুষের চেয়েও বেশি দরকার যোগ্য ও দক্ষ মানুষ। একজন শিক্ষক ক্লাসে যতই ভালো পড়ান না কেন; একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী যত মানবিক ও সৎ মানুষ হোন না কেন; একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা যতই দুর্নীতিমুক্ত হোন না কেন—দিন শেষে রাষ্ট্র পরিচালনা একটি বিরাট রাজনৈতিক যজ্ঞ। তবে নাগরিক সমাজের মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনার মতো যোগ্য ব্যক্তি নেই, এমনটিও বলার সুযোগ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যাঁরা এবারের অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন—এখন পর্যন্ত তাঁদের কারও ব্যক্তিগত দুর্নীতি বা অসততার অভিযোগ না উঠলেও বা তাঁদের ট্র্যাক রেকর্ড ভালো হলেও কারও কারও যোগ্যতা, বিশেষ করে মন্ত্রণালয় চালানোর মতো দক্ষতা আছে কি না—তা নিয়ে জনপরিসরে আলোচনা আছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান সম্প্রতি একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলে বলেছেন, ‘একজন আমলা যদি শয়তান হয়, তাহলে সে এক শ ইবলিসের চেয়েও বড় ভয়ংকর।’ কথা হচ্ছে, এ রকম আমলা কি এখনো নেই? তাঁদের সঙ্গে পেরে ওঠার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে শুধু ভালো মানুষ হলেই চলবে না, শয়তানের শয়তানি ধরতে পারার মতো কৌশলও তাঁর জানা থাকা দরকার। এটি ভালো বোঝেন রাজনীতিবিদেরা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যদিও রাজনীতিবিদেরা, বিশেষ করে মন্ত্রী-এমপিরা অনেক বেশি আমলানির্ভর হয়ে গিয়েছিলেন। তার কারণ অযোগ্য লোকদের এমপি-মন্ত্রী হওয়া। কিন্তু যখন যোগ্য লোকেরা এমপি-মন্ত্রী হতেন, তখন আমলারা তটস্থ থাকতেন। অতএব এখন অন্তর্বর্তী সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁরা বদিউর রহমানের ভাষায় ‘ইবলিস আমলাদের’ কতটা বাগে আনতে পারছেন বা পেরেছেন—সেটি বিরাট প্রশ্ন। কারণ, এরই মধ্যে গণমাধ্যমে অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে যে পুলিশ এখনো সেভাবে সক্রিয় হয়নি। প্রশাসনেও যে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে, সেটিও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাহলে সমাধান কী? সমাধান জাতীয় সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকার যে তিন বা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে চলে যাবে না বরং তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি শেষ করার পরেই ভোটের আয়োজন করবে, তা এরই মধ্যে একাধিকবার বলা হয়েছে। জাতিসংঘ অধিবেশনে গিয়ে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টাও এ কথা বলেছেন। সম্প্রতি সেনাপ্রধান আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে দেড় বছর পরে নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু সরকারের ভেতরে আরও বেশি সময় (দুই থেকে তিন বছর) থাকার বিষয়ে আলোচনা আছে।
যদি তাই হয়, অর্থাৎ যদি দেড়-দুই বছরের আগে নির্বাচন না হয়, তাহলে এখন যে ২১ জন উপদেষ্টা আছেন, তাঁরা এই লম্বা সময় সরকার চালিয়ে যেতে পারবেন? আইনশৃঙ্খলা এবং অর্থনীতি, বিশেষ করে বাজার ঠিক রাখা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যদি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানায় এবং অভ্যুত্থানের মুখে পতন হলেও আওয়ামী লীগ যদি মাস কয়েকের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে এবং তারাও যদি মাঠ গরম করে ফেলে—সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আরও কঠিন কাজ। তার সঙ্গে আছে সরকারের প্রতিশ্রুত সংস্কার। বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন হয়েছে। তারা নিশ্চয়ই অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি করে প্রতিবেদন সরকারকে দেবে। সেই প্রতিবেদনের আলোকে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে। সুতরাং বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ এতসব কাজের চাপ নিতে আদৌ সক্ষম কি না—সেটি বিরাট প্রশ্ন।
এমতাবস্থায় উপদেষ্টাদের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। একজনের মাথার ওপর একটির বেশি মন্ত্রণালয় রাখা উচিত নয়। কেননা একজন ব্যক্তির ওপর একাধিক মন্ত্রণালয় থাকলে তাঁর পক্ষে কোনো মন্ত্রণালয়ের কাজ ঠিকমতো করা সম্ভব নয়। একসঙ্গে অনেক কাজ করতে গেলে ভুল হওয়ারও শঙ্কা থাকে। কাজের গুণগত মান বজায় রাখা কঠিন।
উপদেষ্টাদের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি এই সরকারকে একটি বহুদলীয় জাতীয় সরকারে রূপ দিতে পারলে চলমান সংস্কার এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি সর্বজনগ্রাহ্য ক্ষেত্র তৈরি করা সহজ হবে। এই সরকার আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলগুলো থেকে কাউকে হয়তো নেবে না বা নিতে চাইলেও অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী কোনো অংশের আপত্তির মুখে পড়বে, কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলের বাইরে আরও যেসব দল আছে, সেসব দলে নিশ্চয়ই মন্ত্রণালয় চালানোর মতো যোগ্য, দক্ষ এবং তুলনামূলক ভালো মানুষ আছেন।
রাজনীতিবিদ মানেই খারাপ, দুর্নীতিবাজ—এটি একটি গড়পড়তা ধারণা। এখনো প্রচুর রাজনীতিবিদ পাওয়া যাবে যাঁরা নীতিনৈতিকতা মেনে চলেন। যাঁদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে। যাঁরা যোগ্য ও দক্ষ এবং নেতৃত্বের গুণাবলি আছে। তা ছাড়া ১৮ কোটি মানুষের মধ্য থেকে ১০-১৫ জন ভালো রাজনীতিবিদ পাওয়া যাবে না, সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
হেফাজতে ইসলাম নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল না হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের প্রভাব অনেক। অন্তর্বর্তী সরকারে তাদের একজন প্রতিনিধি আছেন। একইভাবে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবিসহ অন্যান্য তুলনামূলক ছোট দল থেকেও যদি যোগ্যতম লোকদের নিয়ে এই সরকার পুনর্গঠন করা যায়, তাহলে সেটি দেশের স্থিতিশীলতা, আগামী রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা এবং সর্বোপরি কাঙ্ক্ষিত সংস্কারকাজ এগিয়ে নেওয়া সহজ করবে। শর্ত থাকবে, যেসব নেতা এই অন্তর্বর্তী বা জাতীয় সরকারে থাকবেন, তাঁরা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা আছে, এ রকম অনেক রাজনীতিবিদ নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে—যাঁরা একই সঙ্গে ভালো মানুষ এবং একই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষ।
সাংবাদিক ও লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে