বান্দরবানে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। এক দিনের ব্যবধানে জেলায় শনাক্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। প্রশাসন থেকে সচেতনতা সৃষ্টি করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, পর্যটকসহ সবার জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তারপরও নানা অজুহাতে মাস্ক পরতে অনীহা দেখাচ্ছেন লোকজন। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারেও অনেকে উদাসীন।

বান্দরবানে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় করে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৯ জন সদর উপজেলার বাসিন্দা। বাকি ৪ জন লামা উপজেলার। এতে জেলায় করোনা শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত জেলায় করোনা এই তথ্য নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন অংসুই প্রু মারমা। এক দিনে ২৩ জন শনাক্ত হলেও কেউ হাসপাতালে ভর্তি হননি। নিজের বাড়ি থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাচ্ছেন।

অংসুই প্রু বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল, করোনা চলে যায়নি, আবারও করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার পাশাপাশি ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। এ ছাড়া করানো মোকাবিলায় সুরক্ষা টিকা নিতে হবে।

সিভিল সার্জন আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, জেলায় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনা সুরক্ষা টিকার লক্ষ্যমাত্রা প্রায় শতভাগ অর্জিত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলায় মোট শিক্ষার্থী ৩৮ হাজার। তাদের মধ্যে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৩৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে অবশিষ্ট শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে।

বান্দরবানে গত ৮ ডিসেম্বর করোনার বুস্টার (তৃতীয়) ডোজ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন সিদ্ধান্তে মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকাকে বুস্টার হিসেবে দেওয়ার ঘোষণায় বান্দরবানে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সিভিল সার্জন গতকাল বলেন, ‘ইতিমধ্যে বুস্টার ডোজের জন্য বান্দরবানে মডার্নার টিকা এসেছে। বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে বুস্টার ডোজ কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে।’

এদিকে করোনা বেড়ে যাওয়ায় জেলা প্রশাসনের জরুরি বৈঠকে সরকারঘোষিত ১১টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে হোটেল-রিসোর্ট ও খাবার হোটেলে আসা ব্যক্তিকে করোনা টিকা সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়। ১২ জানুয়ারি বান্দরবান সদরে অভিযান চালিয়ে লোকজনকে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সচেতনতা এবং বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গতকালও জেলা সদরে লোকজনকে নানা অজুহাতে মাস্ক না পরে বাজারে, রাস্তায় ঘুরতে দেখা যায়। জানতে চাইলে কেউ বলছেন, ভুলে আনেননি, কেউ বলছেন একটু আগে মাস্ক খুলে পকেটে রেখেছেন। আবার কেউ বলছেন, আর মাস্ক পরতে ইচ্ছে করছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৎপরতা থাকলেও লোকজনের মাস্ক পরায় অনীহা দেখা গেছে।

জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়েসুর রহমান বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। লোকজনকে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও লোকজন নানা অজুহাতে মাস্ক পরিধানে অনীহা দেখাচ্ছে। তবে প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর।

বান্দরবান পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) আবদুল কুদ্দুছ বলেন, রাস্তায় ও যানবাহনে লোকজন যাতে মাস্ক পরিধান করে, সে ব্যাপারে তিনি এবং দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। গাড়ির যাত্রীরা মাস্ক না পরলে তাঁদের মাস্ক পরতে আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে তিনি দাবি করেন, আগের তুলনায় লোকজন মাস্ক বেশি পরছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত মঙ্গলবার প্রকাশিত করোনা প্রতিবেদনে ১৩ জনের করোনা শনাক্তের খবর জানা যায়। এর মধ্যে সদরের বাসিন্দা ১২ জন ও আলীকদম উপজেলার ১ জন। এ ছাড়া জেলায় মোট ৭৯ জন শনাক্তের মধ্যে ৭০ জনই সদরের বাসিন্দা। এ ছাড়া লামায় ৫, আলীকদমে ২ ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ২ জন রোগী রয়েছেন।