আজকের পত্রিকা: কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এক রাতের মধ্যে বিএনপির সব নেতা-কর্মীকে মুক্তি দিতে চাওয়ার পরও দলটি নির্বাচনে আসতে রাজি হয়নি। আপনি কী বলবেন?
রুমিন ফারহানা: কৃষিমন্ত্রী একজন সজ্জন ব্যক্তি। তিনি চ্যানেল-২৪-এ সাক্ষাৎকারে যা সত্য, তা-ই বলেছেন। আমরা জানি, বিএনপির একটা অংশকে ভেঙে একটা বিকল্প বিএনপি গঠন করে নির্বাচনে আনার চেষ্টা সরকারের ছিল। কৃষিমন্ত্রীর যে বক্তব্য, এক রাতে সব নেতাকে মুক্তির প্রস্তাবে বিএনপি রাজি হয়নি, এটা সেই সত্যটাকে আরও বেশি মজবুত করে। এতে প্রমাণিত হয়, সব নেতাকেই কিন্তু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল—আপনারা মুক্তি পাবেন, তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। নেতাদের বিরুদ্ধে সরকারের দেওয়া সব মামলা আসলে মিথ্যা, বানোয়াট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই মামলাগুলো করা হয়েছে বিএনপিকে চাপে ফেলার জন্যই।
কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য আরও স্পষ্ট করে, বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। কে জামিন পাবেন আর কে পাবেন না, কোন মামলায় জামিন দেওয়া হবে এবং কোনটায় দেওয়া হবে না—এর সবকিছু আসলে নির্ধারিত হয় সরকারের পক্ষ থেকে। তা না হলে সরকার এ প্রস্তাব কীভাবে দিতে পারে? মুক্তি দেওয়ার সরকার কে? কারণ গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জামিন পাওয়া না-পাওয়া নির্ভর করে বিচার বিভাগের ওপর। মন্ত্রীর বক্তব্যেও স্পষ্ট হয়, সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এ ঘটনায় সরকারের দেউলিয়াত্বও প্রকাশ পেয়েছে।
আরেকটি বিষয়, বিএনপিকে নিয়ে অনেক সময় অনেক কথা আমরা শুনে থাকি, যেমন বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি ক্লাব, এ পার্টিটি কিছু বাম-ডানদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব অপবাদ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব সময় বলা হয়। কিন্তু এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, আওয়ামী লীগকে পঁচাত্তর সালের পর ভাঙা সম্ভব হলেও, বিএনপিকে ভাঙা গেল না।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি এখন যে ধারায় আন্দোলন করছে, তাতে সাফল্য আসবে বলে মনে করেন?
রুমিন ফারহানা: নিশ্চয় সাফল্য আসবে। তবে হয়তো সময় লাগবে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার আর একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কিন্তু একই রকম হয় না। জনগণের ভোটের মাধ্যমে যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তারা কিন্তু রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার এবং রাষ্ট্রের সংস্থাগুলোকে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করে না। কিন্তু একটা অগণতান্ত্রিক সরকার, যাদের পক্ষে সাধারণ মানুষের সমর্থন নেই এবং জনগণের প্রতি কোনো জবাবদিহি নেই, তারা যাচ্ছেতাই করে থাকে।
বিএনপির এখনকার লড়াইটা সরকার এবং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে। আমাদের পাশের একটি দেশ কীভাবে এই সরকারের পক্ষে শুধু নগ্নভাবে নয়, তাদের ক্ষমতায় রাখার জন্য যা কিছু করা দরকার, তার সবকিছুই করেছে। তাই অল্প সময়ের মধ্যে সুফল আসবে—এমনটি ভাবলে ভুল হবে।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি কেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল না?
রুমিন ফারহানা: আমরা ২০১৮ সালে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেই নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, তাঁর ওপর যেন আস্থা রাখা হয়। আমরা দেখেছি, সেটার ফল কী ভয়াবহ হয়েছিল। আগের রাতে নির্বাচন হয়ে গিয়েছিল।
২০১৮ সালের নির্বাচন একটা বিষয়কে ইঙ্গিত করে, আর তা হলো প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ সব জায়গায় নেই। বিভিন্ন আসনে যাঁরা নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন, তাঁরা অর্থ, পেশিশক্তি, প্রশাসনকে ব্যবহার করে মধ্যরাতেই নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন। তাঁরা ১৫ বছরে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। আপনারা হয়তো দেখেছেন, এবারের নির্বাচনী হলফনামায় একেকজনের শত শত গুণ সম্পদ বেড়েছে।
‘সুজন’সহ বিদেশি গণমাধ্যম কিন্তু একই কথা বলেছে। তাই ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বিএনপির জন্য ভালো হয়নি। দলীয় সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না এবং বাংলাদেশে সেই সংস্কৃতি আমরা সবাই গড়তে পারিনি, সেটার একটা বড় প্রমাণ হলো ২০১৮ সালের নির্বাচন। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের প্রহসন ও পিঠা ভাগাভাগির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত।
আজকের পত্রিকা: আপনি বলছেন, এই সরকার নির্বাচিত নয়। তারপরও তো পুরো মেয়াদে ক্ষমতায় থাকছে। আগামী নির্বাচনেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আবার পাঁচ বছরের ধাক্কায় পড়ে যাবে না তো দেশ?
রুমিন ফারহানা: এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয়, ২০১৪ ও ২০১৮ সাল এবং ২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওই দুটি নির্বাচনের পর কিন্তু ভিসা নীতি বা স্যাংশন আসেনি। বিশ্ব গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ না পাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। আমরা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যে কানাঘুষা শুনতে পাচ্ছি, সেটা এর আগে শুনতে পাইনি। শ্রম আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে কিন্তু এতটা সোচ্চার হতে দেখিনি। যেটা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।
আজকের পত্রিকা: তার মানে বিদেশনির্ভরতাই বিএনপির আন্দোলনের একটা বড় উপাদান?
রুমিন ফারহানা: না। আমরা আমাদের শক্তিতেই লড়ছি। তবে আমি সব সময় স্পষ্টভাবে বলি, আমাদের মহাসচিবও কথাটি বলেছেন, যারা গণতন্ত্র, বাক্স্বাধীনতা, মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে, তারা কিন্তু দিন শেষে আমাদের একধরনের মানসিক শক্তি দেয়। আমাদের ভরসা, আস্থা ও লড়াইয়ের জায়গা হলো, দেশের মানুষ। বাইরে থেকে এসে কেউ আমাদের গণতন্ত্র দিয়ে যাবে, সে আশা আমরা কখনো করি না। কিন্তু এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশ গ্লোবাল ভিলেজের একটা অংশ। এই জায়গা থেকে বলা যায়, তারা যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে, সেগুলো সরকারের জন্য চাপ হিসেবে কাজ করছে।
আজকের পত্রিকা: সরকার তো চাপ মোকাবিলাও করতে পারছে। কিন্তু বিএনপি কি তার সাংগঠনিক শক্তিকে বাড়াতে পারছে?
রুমিন ফারহানা: ১৫ বছর ধরে যাঁরা বিএনপি করেছেন, তাঁরা মামলা, হামলা, খুন-গুম, পুলিশের নির্যাতন, এলাকায় থাকতে না পারা, চাকরি-ব্যবসা হারানো ছাড়া কিছুই পাননি। কিন্তু এখন পর্যন্ত দলটাকে তাঁরা আঁকড়ে ধরে আছেন। আমাদের কর্মীরা জান বাজি রেখে এ লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্মীদের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। আমরা তাঁদের জিজ্ঞেস করেছি, আপনারা কি মনে করেন নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত? তাঁরা পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘আমরা ১৫ বছর ধরে কষ্ট করেছি, সামনে আরও কষ্ট করতে রাজি আছি। কিন্তু কোনো পাতানো খেলায় আমাদের দল অংশ নেবে না, সেটা আমরা চাই।’
আজকের পত্রিকা: আপনি বলেছেন, আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। কিন্তু সম্প্রতি একটা ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। এটা স্ববিরোধী নয় কি?
রুমিন ফারহানা: বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়, কিন্তু একই সঙ্গে সত্য, জামিন পেতে হলে বা মামলায় লড়তে হলে ওই বিভাগের দ্বারস্থ হতে হয়। আমাদের পার্টির বক্তব্য, রাষ্ট্রের সংস্থাগুলোকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এখন পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই বলছে, এ ঘটনা বিএনপি করেছে। তাহলে পুলিশ কী তদন্ত করবে?
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ট্রেনে যারা আগুন দিয়েছে, তারা রেলকর্মীর পোশাক পরা ছিল। আমাদের প্রশ্ন, ১৫ মিনিট ধরে তিনটি বগি পুড়ল। একটা যাত্রীও শিকল ধরে ট্রেনটা থামাতে পারলেন না। ট্রেনের গার্ডরাও কেন শিকল টানতে পারলেন না? তাঁরা তো চারটা জীবনকে রক্ষা করতে পারতেন। এই প্রশ্নগুলোর তো সুরাহা হওয়া দরকার। পুলিশ তো আগেই বলেছে, এটা বিএনপি করেছে। আমাদের হাতে আর কী থাকতে পারে? কার কাছে বিচার পাব!
আজকের পত্রিকা: অনেকে বলেন, বিএনপি চলছে লন্ডনের নির্দেশে। বিএনপি এভাবে অনলাইন নির্দেশনায় সফল হতে পারবে কি?
রুমিন ফারহানা: এ বিষয়ে আমার দ্বিমত আছে। আমরা যতগুলো মিটিংয়ে অংশ নিয়েছি, তাতে দেখেছি, আমাদের নেতা তারেক রহমান আমাদের মতামত নেন, কথা শোনেন, আলোচনা করেন; তারপর একটা সিদ্ধান্ত নেন। সুতরাং সিদ্ধান্ত লন্ডন থেকে আসে বা এককভাবে তিনি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন, সেটা ভুল কথা।
আর অনলাইনের মাধ্যমে যে দলটাকে চালাতে হচ্ছে, সে দায়টা কার? এ দায় তো সরকারকেই নিতে হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ঘরবন্দী করে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সরকার। সেই কারণে তারেক রহমানকে পরিশ্রম করে ১৫-১৬ ঘণ্টা স্কাইপিতে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে।
তবে এত বাধাবিপত্তির পরেও স্কাইপির মাধ্যমে দূর থেকে দল চালানো নিশ্চয় কঠিন। কিন্তু বিএনপি তো সফলভাবে সেই কঠিন কাজটা করছে। তাঁর দলের প্রতি কমিটমেন্ট, ভালোবাসা এবং সর্বোপরি নানা অত্যাচারের পরেও দলকে টিকিয়ে রাখার যে ব্যাকুল সংগ্রাম আমরা দেখি, সেটাই আমাদের কাছে আশার জায়গা।
আজকের পত্রিকা: কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এক রাতের মধ্যে বিএনপির সব নেতা-কর্মীকে মুক্তি দিতে চাওয়ার পরও দলটি নির্বাচনে আসতে রাজি হয়নি। আপনি কী বলবেন?
রুমিন ফারহানা: কৃষিমন্ত্রী একজন সজ্জন ব্যক্তি। তিনি চ্যানেল-২৪-এ সাক্ষাৎকারে যা সত্য, তা-ই বলেছেন। আমরা জানি, বিএনপির একটা অংশকে ভেঙে একটা বিকল্প বিএনপি গঠন করে নির্বাচনে আনার চেষ্টা সরকারের ছিল। কৃষিমন্ত্রীর যে বক্তব্য, এক রাতে সব নেতাকে মুক্তির প্রস্তাবে বিএনপি রাজি হয়নি, এটা সেই সত্যটাকে আরও বেশি মজবুত করে। এতে প্রমাণিত হয়, সব নেতাকেই কিন্তু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল—আপনারা মুক্তি পাবেন, তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। নেতাদের বিরুদ্ধে সরকারের দেওয়া সব মামলা আসলে মিথ্যা, বানোয়াট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই মামলাগুলো করা হয়েছে বিএনপিকে চাপে ফেলার জন্যই।
কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য আরও স্পষ্ট করে, বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। কে জামিন পাবেন আর কে পাবেন না, কোন মামলায় জামিন দেওয়া হবে এবং কোনটায় দেওয়া হবে না—এর সবকিছু আসলে নির্ধারিত হয় সরকারের পক্ষ থেকে। তা না হলে সরকার এ প্রস্তাব কীভাবে দিতে পারে? মুক্তি দেওয়ার সরকার কে? কারণ গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জামিন পাওয়া না-পাওয়া নির্ভর করে বিচার বিভাগের ওপর। মন্ত্রীর বক্তব্যেও স্পষ্ট হয়, সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এ ঘটনায় সরকারের দেউলিয়াত্বও প্রকাশ পেয়েছে।
আরেকটি বিষয়, বিএনপিকে নিয়ে অনেক সময় অনেক কথা আমরা শুনে থাকি, যেমন বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি ক্লাব, এ পার্টিটি কিছু বাম-ডানদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব অপবাদ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব সময় বলা হয়। কিন্তু এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, আওয়ামী লীগকে পঁচাত্তর সালের পর ভাঙা সম্ভব হলেও, বিএনপিকে ভাঙা গেল না।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি এখন যে ধারায় আন্দোলন করছে, তাতে সাফল্য আসবে বলে মনে করেন?
রুমিন ফারহানা: নিশ্চয় সাফল্য আসবে। তবে হয়তো সময় লাগবে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার আর একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কিন্তু একই রকম হয় না। জনগণের ভোটের মাধ্যমে যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তারা কিন্তু রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার এবং রাষ্ট্রের সংস্থাগুলোকে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করে না। কিন্তু একটা অগণতান্ত্রিক সরকার, যাদের পক্ষে সাধারণ মানুষের সমর্থন নেই এবং জনগণের প্রতি কোনো জবাবদিহি নেই, তারা যাচ্ছেতাই করে থাকে।
বিএনপির এখনকার লড়াইটা সরকার এবং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে। আমাদের পাশের একটি দেশ কীভাবে এই সরকারের পক্ষে শুধু নগ্নভাবে নয়, তাদের ক্ষমতায় রাখার জন্য যা কিছু করা দরকার, তার সবকিছুই করেছে। তাই অল্প সময়ের মধ্যে সুফল আসবে—এমনটি ভাবলে ভুল হবে।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি কেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল না?
রুমিন ফারহানা: আমরা ২০১৮ সালে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেই নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, তাঁর ওপর যেন আস্থা রাখা হয়। আমরা দেখেছি, সেটার ফল কী ভয়াবহ হয়েছিল। আগের রাতে নির্বাচন হয়ে গিয়েছিল।
২০১৮ সালের নির্বাচন একটা বিষয়কে ইঙ্গিত করে, আর তা হলো প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ সব জায়গায় নেই। বিভিন্ন আসনে যাঁরা নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন, তাঁরা অর্থ, পেশিশক্তি, প্রশাসনকে ব্যবহার করে মধ্যরাতেই নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন। তাঁরা ১৫ বছরে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। আপনারা হয়তো দেখেছেন, এবারের নির্বাচনী হলফনামায় একেকজনের শত শত গুণ সম্পদ বেড়েছে।
‘সুজন’সহ বিদেশি গণমাধ্যম কিন্তু একই কথা বলেছে। তাই ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বিএনপির জন্য ভালো হয়নি। দলীয় সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না এবং বাংলাদেশে সেই সংস্কৃতি আমরা সবাই গড়তে পারিনি, সেটার একটা বড় প্রমাণ হলো ২০১৮ সালের নির্বাচন। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের প্রহসন ও পিঠা ভাগাভাগির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত।
আজকের পত্রিকা: আপনি বলছেন, এই সরকার নির্বাচিত নয়। তারপরও তো পুরো মেয়াদে ক্ষমতায় থাকছে। আগামী নির্বাচনেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আবার পাঁচ বছরের ধাক্কায় পড়ে যাবে না তো দেশ?
রুমিন ফারহানা: এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয়, ২০১৪ ও ২০১৮ সাল এবং ২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওই দুটি নির্বাচনের পর কিন্তু ভিসা নীতি বা স্যাংশন আসেনি। বিশ্ব গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ না পাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। আমরা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যে কানাঘুষা শুনতে পাচ্ছি, সেটা এর আগে শুনতে পাইনি। শ্রম আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে কিন্তু এতটা সোচ্চার হতে দেখিনি। যেটা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।
আজকের পত্রিকা: তার মানে বিদেশনির্ভরতাই বিএনপির আন্দোলনের একটা বড় উপাদান?
রুমিন ফারহানা: না। আমরা আমাদের শক্তিতেই লড়ছি। তবে আমি সব সময় স্পষ্টভাবে বলি, আমাদের মহাসচিবও কথাটি বলেছেন, যারা গণতন্ত্র, বাক্স্বাধীনতা, মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে, তারা কিন্তু দিন শেষে আমাদের একধরনের মানসিক শক্তি দেয়। আমাদের ভরসা, আস্থা ও লড়াইয়ের জায়গা হলো, দেশের মানুষ। বাইরে থেকে এসে কেউ আমাদের গণতন্ত্র দিয়ে যাবে, সে আশা আমরা কখনো করি না। কিন্তু এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশ গ্লোবাল ভিলেজের একটা অংশ। এই জায়গা থেকে বলা যায়, তারা যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে, সেগুলো সরকারের জন্য চাপ হিসেবে কাজ করছে।
আজকের পত্রিকা: সরকার তো চাপ মোকাবিলাও করতে পারছে। কিন্তু বিএনপি কি তার সাংগঠনিক শক্তিকে বাড়াতে পারছে?
রুমিন ফারহানা: ১৫ বছর ধরে যাঁরা বিএনপি করেছেন, তাঁরা মামলা, হামলা, খুন-গুম, পুলিশের নির্যাতন, এলাকায় থাকতে না পারা, চাকরি-ব্যবসা হারানো ছাড়া কিছুই পাননি। কিন্তু এখন পর্যন্ত দলটাকে তাঁরা আঁকড়ে ধরে আছেন। আমাদের কর্মীরা জান বাজি রেখে এ লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্মীদের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। আমরা তাঁদের জিজ্ঞেস করেছি, আপনারা কি মনে করেন নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত? তাঁরা পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘আমরা ১৫ বছর ধরে কষ্ট করেছি, সামনে আরও কষ্ট করতে রাজি আছি। কিন্তু কোনো পাতানো খেলায় আমাদের দল অংশ নেবে না, সেটা আমরা চাই।’
আজকের পত্রিকা: আপনি বলেছেন, আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। কিন্তু সম্প্রতি একটা ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। এটা স্ববিরোধী নয় কি?
রুমিন ফারহানা: বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়, কিন্তু একই সঙ্গে সত্য, জামিন পেতে হলে বা মামলায় লড়তে হলে ওই বিভাগের দ্বারস্থ হতে হয়। আমাদের পার্টির বক্তব্য, রাষ্ট্রের সংস্থাগুলোকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এখন পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই বলছে, এ ঘটনা বিএনপি করেছে। তাহলে পুলিশ কী তদন্ত করবে?
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ট্রেনে যারা আগুন দিয়েছে, তারা রেলকর্মীর পোশাক পরা ছিল। আমাদের প্রশ্ন, ১৫ মিনিট ধরে তিনটি বগি পুড়ল। একটা যাত্রীও শিকল ধরে ট্রেনটা থামাতে পারলেন না। ট্রেনের গার্ডরাও কেন শিকল টানতে পারলেন না? তাঁরা তো চারটা জীবনকে রক্ষা করতে পারতেন। এই প্রশ্নগুলোর তো সুরাহা হওয়া দরকার। পুলিশ তো আগেই বলেছে, এটা বিএনপি করেছে। আমাদের হাতে আর কী থাকতে পারে? কার কাছে বিচার পাব!
আজকের পত্রিকা: অনেকে বলেন, বিএনপি চলছে লন্ডনের নির্দেশে। বিএনপি এভাবে অনলাইন নির্দেশনায় সফল হতে পারবে কি?
রুমিন ফারহানা: এ বিষয়ে আমার দ্বিমত আছে। আমরা যতগুলো মিটিংয়ে অংশ নিয়েছি, তাতে দেখেছি, আমাদের নেতা তারেক রহমান আমাদের মতামত নেন, কথা শোনেন, আলোচনা করেন; তারপর একটা সিদ্ধান্ত নেন। সুতরাং সিদ্ধান্ত লন্ডন থেকে আসে বা এককভাবে তিনি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন, সেটা ভুল কথা।
আর অনলাইনের মাধ্যমে যে দলটাকে চালাতে হচ্ছে, সে দায়টা কার? এ দায় তো সরকারকেই নিতে হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ঘরবন্দী করে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সরকার। সেই কারণে তারেক রহমানকে পরিশ্রম করে ১৫-১৬ ঘণ্টা স্কাইপিতে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে।
তবে এত বাধাবিপত্তির পরেও স্কাইপির মাধ্যমে দূর থেকে দল চালানো নিশ্চয় কঠিন। কিন্তু বিএনপি তো সফলভাবে সেই কঠিন কাজটা করছে। তাঁর দলের প্রতি কমিটমেন্ট, ভালোবাসা এবং সর্বোপরি নানা অত্যাচারের পরেও দলকে টিকিয়ে রাখার যে ব্যাকুল সংগ্রাম আমরা দেখি, সেটাই আমাদের কাছে আশার জায়গা।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে