নির্বাচনের এখনো ৯ মাস বাকি থাকলেও কুমিল্লা-২ আসনের ভোটের মাঠ হোমনা ও তিতাস উপজেলায় গুঞ্জন ও আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে মাঠ চাঙা করে রেখেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ আসনে তাঁদের প্রধান নেতা একজনই, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। নিজেদের দখলে থাকা আসনে তৎপর আওয়ামী লীগও। তবে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ সদস্য বেছে নিতে চান তাঁরা।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দাবি করছেন, গতবারের মতো এবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন সেলিমা আহমাদ মেরী। এবারও মেরী দলীয় মনোনয়ন পেলে এবং বিএনপি নির্বাচনে এলে খন্দকার মোশাররফের মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমনটি হলে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে মেরীকে।

এর আগেই অবশ্য বাধার মুখে পড়েছেন এমপি মেরী। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন দলটির আরেক নেতা। মেরী ছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন দলটির হোমনা উপজেলা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ। বিএনপির মতো জাতীয় পার্টিতেও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে একজনের নামই শোনা যাচ্ছে। তিনি হলেন সাবেক এমপি আমির হোসেন ভূঁইয়া।

মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী এমপি মেরী। নির্বাচন সামনে রেখে তিতাস ও হোমনা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যকার বিভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে এখানকার সরকারি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে অনেক নেতা-কর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন। হামলা-মামলা খেয়ে কোণঠাসা অনেকে। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা এখনই বলা মুশকিল।

সাধারণ ভোটারদের একটি অংশ বলছেন, মেরী এমপি হওয়ার পর গত ৪ বছরে তিতাস ও হোমনা উপজেলায় চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়ন হয়নি। দুই উপজেলার যোগাযোগের ক্ষত্রে সড়কগুলোর অবস্থা একেবারেই নাজুক। তবে কয়েক শতাধিক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আশ্রয়ণের ব্যবস্থা হয়েছে।

তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত আলী বলেন, ‘সেলিমা আহমাদ মেরী নৌকার মনোনয়ন পেলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কার বিজয় হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছি।’ 

তবে হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছি, সেই নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে আমাকে পরাজিত করা হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলাম, দলের সিদ্ধান্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছি। আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দেব।’

তিতাস উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ওসমান গণি ভূঁইয়া বলেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন তিতাস উপজেলা প্রতিষ্ঠা করেছেন। মানুষের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। দাউদকান্দি, তিতাস ও মেঘনা উপজেলায় সব ক্ষেত্রে সহস্রাধিক কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন। এইসব এলাকায় জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে, এই সুফল মানুষ এখন ভোগ করছেন। এ আসনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিজয়ী হবেন।

জাতীয় পার্টির আমির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার মানুষের সেবা করার চেষ্টা করেছি। আবারও এই এলাকার উন্নয়নে কাজ করার লক্ষ্যে সাধারণ মানুষ ও দলের নেতা-কর্মীদের ভালোবাসা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি রয়েছে।’