সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
একজন সাংবাদিকের কাজ কী? সারাদিন এদিক-সেদিক দৌড়ে এটা-ওটা সংবাদ সংগ্রহ করে অফিসে জমা দেওয়া? হ্যাঁ, যেসব সাংবাদিক শুধু মাঠে কাজ করেন, তাঁদের বেলায় এটা সত্যি।
কিন্তু যারা শুধূ কর্মস্থলে বসে সেই সংবাদগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে দর্শক-পাঠকদের কাছে পরিবেশন করেন, তাঁরা কি সাংবাদিক নন? হ্যাঁ, তাঁরাও তো সাংবাদিক। ডেস্কে কাজ করেন বলে তাঁদের ‘দেরাজ’ সাংবাদিক বললে হয়তো ভুল হবে না। আমি নিজেও সেই দলে পড়ি।
চলমান সহিংস পরিস্থিতিতে সবাই হয়তো ভাবছেন, সাংবাদিকেরা কেউ ঘরে বসে নেই, মাঠ-ঘাট দাপিয়ে খবর জোগাড় করছেন আপনাদের জন্য। এই সাংবাদিকদের আত্মীয়-অনাত্মীয় পরিচিত কিংবা বন্ধু-বান্ধব সবাই দুশ্চিন্তা করছেন বলে ধারণা করা নিশ্চয় অমূলক নয়। আমার মতো দেরাজ সাংবাদিকদের শুভাকাঙ্ক্ষী খোঁজ নিচ্ছেন ফোনে ফোনে। অনেকেই ভাবছেন, মাঠে না থাকলেও নিশ্চয়ই জরুরি সেবার আওতায় সহিংসতার পথ মাড়িয়ে অফিসে যেতে হচ্ছে।
তবে আমরা সবাই যে কর্মস্থলে সবসময় যেতে পারছি, তা নয়। এই যেমন, আমার কর্মস্থল থেকে বাড়ি খানিকটা দূরে হওয়ায় অফিসে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু ছুটি তো নেই, কাজ থামানো সম্ভব নয়। করোনাকালে ‘নিউ নর্মাল’ হিসেবে বাড়িতে বসে কাজের যে প্রচলন হয়েছিল, তা আবার চালু করা হলো। অথচ একদিন যেতে না যেতেই সেটাও আর সম্ভব হলো না ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। তবে কী উপায়?
পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করি আমরা। উপায় বের করা হলো, সবাই একদিনে অফিসে যাব না। যেকোনো একজন বা দুইজন সশরীরে উপস্থিত থাকব। বাকিদের সঙ্গে ফোনে ফোনে আলাপ করে চলতে থাকবে অফিসের কাজ।
বাড়ি বাড়ি একজন গিয়ে সম্পাদকীয় পাতার লেখা জোগাড় করবেন পেনড্রাইভ দিয়ে। হুম, সবমিলিয়ে ব্যয়বহুল, কিন্তু কাজ তো করা চাই। এবং এই কঠিন কাজটা আমরা সম্ভব করেও ফেলছি।
দিনশেষে আমরা যখন একটা পাতা সাজিয়ে ফেলছি, সেটা যেন আমাদের সন্তানসম হয়ে যায়। অনুভূতিটা এমন, যেন আমরা আমাদের সন্তানদের দেশের সেবা করার কাজে তৈরি করলাম! যে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সুশিক্ষা আর ভালো চাকরির আশা করে, সেই চাকরি দিয়ে দেশ ও দশের সেবা করার আশা করে, আমাদের আশাটাও যেন সেরকমই—পাঠকের কাছে ‘ওপিনিয়ন লিডার’দের মতামত এমনভাবে পৌঁছে দেওয়া, যেন পাঠক তা সাদরে গ্রহণ করে, তাদের জানার আগ্রহ মেটাতে পারে।
পাঠকের সেবায় যেন কোনো কমতি না থাকে, সেই কাজের জন্য আমরা নিয়োজিত।
না, কোনো কৈফিয়ত দিতে লিখছি না। এসবই হয়তো পাঠক জানেন। এই সময়ে কীভাবে দায়িত্ব পালন করেছি সেই কথাগুলো এজন্য লিপিবদ্ধ করছি, যেন একটা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকতে পারি। পরের প্রজন্মকে যেন জানাতে পারি, এই দেশে একদিন সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আন্দোলন হয়েছিল, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল, সেই আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছিল, আর সেই আন্দোলনকে পুঁজি করে কিছু দুষ্কৃতকারী পুরো দেশে সহিংসতা চালিয়েছিল, সহজ ব্যাপারটা এক সময় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছিল, সারাদেশে কারফিউ জারি হয়েছিল; পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, বিমানবাহিনী টহল দিয়েছিল; আমরা ছিলাম গৃহবন্দী, সবাই ভাবছিলাম, বড়দের কাছে আমরা যেমনটা শুনেছি, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ কিংবা নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কথা, সেভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে ২০২৪ সালের কথাও বলতে হবে আমাদের। ধারাবাহিকভাবে যে ঘটনাগুলো ঘটল এবং এই সময়টি যেভাবে প্রত্যেকে তা মোকাবিলা করল, তা লিপিবদ্ধ করে রাখা দরকার।
আবার সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু ইতিহাসে এই দিনগুলো চিহ্ন রেখে গেল এবং তার সাক্ষী হয়ে রইলাম আমরা। এ খুব কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
লেখক: সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন,
সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
একজন সাংবাদিকের কাজ কী? সারাদিন এদিক-সেদিক দৌড়ে এটা-ওটা সংবাদ সংগ্রহ করে অফিসে জমা দেওয়া? হ্যাঁ, যেসব সাংবাদিক শুধু মাঠে কাজ করেন, তাঁদের বেলায় এটা সত্যি।
কিন্তু যারা শুধূ কর্মস্থলে বসে সেই সংবাদগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে দর্শক-পাঠকদের কাছে পরিবেশন করেন, তাঁরা কি সাংবাদিক নন? হ্যাঁ, তাঁরাও তো সাংবাদিক। ডেস্কে কাজ করেন বলে তাঁদের ‘দেরাজ’ সাংবাদিক বললে হয়তো ভুল হবে না। আমি নিজেও সেই দলে পড়ি।
চলমান সহিংস পরিস্থিতিতে সবাই হয়তো ভাবছেন, সাংবাদিকেরা কেউ ঘরে বসে নেই, মাঠ-ঘাট দাপিয়ে খবর জোগাড় করছেন আপনাদের জন্য। এই সাংবাদিকদের আত্মীয়-অনাত্মীয় পরিচিত কিংবা বন্ধু-বান্ধব সবাই দুশ্চিন্তা করছেন বলে ধারণা করা নিশ্চয় অমূলক নয়। আমার মতো দেরাজ সাংবাদিকদের শুভাকাঙ্ক্ষী খোঁজ নিচ্ছেন ফোনে ফোনে। অনেকেই ভাবছেন, মাঠে না থাকলেও নিশ্চয়ই জরুরি সেবার আওতায় সহিংসতার পথ মাড়িয়ে অফিসে যেতে হচ্ছে।
তবে আমরা সবাই যে কর্মস্থলে সবসময় যেতে পারছি, তা নয়। এই যেমন, আমার কর্মস্থল থেকে বাড়ি খানিকটা দূরে হওয়ায় অফিসে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু ছুটি তো নেই, কাজ থামানো সম্ভব নয়। করোনাকালে ‘নিউ নর্মাল’ হিসেবে বাড়িতে বসে কাজের যে প্রচলন হয়েছিল, তা আবার চালু করা হলো। অথচ একদিন যেতে না যেতেই সেটাও আর সম্ভব হলো না ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। তবে কী উপায়?
পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করি আমরা। উপায় বের করা হলো, সবাই একদিনে অফিসে যাব না। যেকোনো একজন বা দুইজন সশরীরে উপস্থিত থাকব। বাকিদের সঙ্গে ফোনে ফোনে আলাপ করে চলতে থাকবে অফিসের কাজ।
বাড়ি বাড়ি একজন গিয়ে সম্পাদকীয় পাতার লেখা জোগাড় করবেন পেনড্রাইভ দিয়ে। হুম, সবমিলিয়ে ব্যয়বহুল, কিন্তু কাজ তো করা চাই। এবং এই কঠিন কাজটা আমরা সম্ভব করেও ফেলছি।
দিনশেষে আমরা যখন একটা পাতা সাজিয়ে ফেলছি, সেটা যেন আমাদের সন্তানসম হয়ে যায়। অনুভূতিটা এমন, যেন আমরা আমাদের সন্তানদের দেশের সেবা করার কাজে তৈরি করলাম! যে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সুশিক্ষা আর ভালো চাকরির আশা করে, সেই চাকরি দিয়ে দেশ ও দশের সেবা করার আশা করে, আমাদের আশাটাও যেন সেরকমই—পাঠকের কাছে ‘ওপিনিয়ন লিডার’দের মতামত এমনভাবে পৌঁছে দেওয়া, যেন পাঠক তা সাদরে গ্রহণ করে, তাদের জানার আগ্রহ মেটাতে পারে।
পাঠকের সেবায় যেন কোনো কমতি না থাকে, সেই কাজের জন্য আমরা নিয়োজিত।
না, কোনো কৈফিয়ত দিতে লিখছি না। এসবই হয়তো পাঠক জানেন। এই সময়ে কীভাবে দায়িত্ব পালন করেছি সেই কথাগুলো এজন্য লিপিবদ্ধ করছি, যেন একটা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকতে পারি। পরের প্রজন্মকে যেন জানাতে পারি, এই দেশে একদিন সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আন্দোলন হয়েছিল, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল, সেই আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছিল, আর সেই আন্দোলনকে পুঁজি করে কিছু দুষ্কৃতকারী পুরো দেশে সহিংসতা চালিয়েছিল, সহজ ব্যাপারটা এক সময় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছিল, সারাদেশে কারফিউ জারি হয়েছিল; পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, বিমানবাহিনী টহল দিয়েছিল; আমরা ছিলাম গৃহবন্দী, সবাই ভাবছিলাম, বড়দের কাছে আমরা যেমনটা শুনেছি, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ কিংবা নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কথা, সেভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে ২০২৪ সালের কথাও বলতে হবে আমাদের। ধারাবাহিকভাবে যে ঘটনাগুলো ঘটল এবং এই সময়টি যেভাবে প্রত্যেকে তা মোকাবিলা করল, তা লিপিবদ্ধ করে রাখা দরকার।
আবার সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু ইতিহাসে এই দিনগুলো চিহ্ন রেখে গেল এবং তার সাক্ষী হয়ে রইলাম আমরা। এ খুব কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
লেখক: সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন,
সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে