মৃত্যুঞ্জয় রায়
অনেক দিন আগে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কবিতা পড়েছিলাম, কবিতাটির নাম ছিল ‘আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি’। এখনো তার কিছু লাইন মনে আছে: ‘আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ/ এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ/ পুরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা/ আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা/ করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে/ থাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে।...’
কবিতাটি পড়ে মনে প্রশ্ন জাগে, আসলেই আমরা কীভাবে বেঁচে আছি? উদ্ভিদগুলো যদি মানুষদের মতো একবেলা ধর্মঘট করে বলে বসে, ‘যাও মানুষ। তোমাদের কুঠারের আঘাত, রোগের সংক্রমণ, কীটের দংশন, বায়ুর দূষণ আমাদের জর্জরিত করে ফেলেছে, আমরা অসুস্থ। আর আমরা তোমাদের অক্সিজেন দিতে পারব না। তোমরাই আমাদের অসুস্থ করে ফেলেছ, তাই এর প্রতিবাদে আমরা সবাই পত্ররন্ধ্রগুলো পাঁচ মিনিটের জন্য বন্ধ করে রেখে দেব। ওই সময়টুকুতে আর আমরা তোমাদের কোনো অক্সিজেন দেব না।’ যদি সত্যিই পৃথিবীর গাছপালাগুলো সবাই একসঙ্গে এ রকম কাণ্ড কোনো দিন করে বসে? এ রকমটা হলে সেই পাঁচ মিনিটেই পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবে শুধু হোমো স্যাপিয়েন্স নামের জীবই না, আরও অনেক জীব। কী ভয়াবহ হবে সেই দৃশ্য! হরর মুভি অথবা ‘দ্য লাস্ট ডে অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ সিনেমার চেয়েও ভয়ংকর সে দৃশ্য হবে! ভাবলেই গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে।
আমরা আমাদের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করি, আমরা শ্বাসের সঙ্গে যে অক্সিজেন টেনে নিই, তার শতকরা ৯৮ ভাগ আসে উদ্ভিদের কাছ থেকে। তাই উদ্ভিদের ভালো থাকার ওপরই আসলে আমাদের ভালো থাকা, মন্দ থাকা নির্ভর করছে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। প্রাক-শিল্প যুগে এই পৃথিবীর পরিবেশ ছিল স্বর্গের মতো, গাছপালারা ছিল সেই স্বর্গীয় উদ্যানের বাসিন্দা। বায়ুদূষণ নেই, জীবাশ্ম জ্বালানির এরূপ ব্যাপক ব্যবহার তখন শুরু হয়নি, তাই বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাও ছিল নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু বর্তমানে অতি উন্নয়নের লোভ আমাদের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়িয়ে মারছে, পুড়িয়ে মারছে গাছপালাগুলোকেও। বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অনেক পোকামাকড় বেড়ে গেছে, সুপ্ত রোগজীবাণুরা বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব বালাই হলো উদ্ভিদ বিনাশের এক অন্যতম নিয়ামক। তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে এসব ক্ষতিকর জীব ও জীবাণুর বংশবৃদ্ধি বেড়ে গেছে। ফলে আগের তুলনায় এখন উদ্ভিদকুল বেশি রোগগ্রস্ত হচ্ছে, পোকায় ওদের দেহ খাচ্ছে। তাই উদ্ভিদের স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
বনের গাছপালাগুলোর চেহারা দেখার ফুসরত আমাদের হয়তো নেই। কিন্তু আমাদের চোখের সামনে যেসব ফসল চাষ করি, সেই সব খেতের ফসলে এখন অনেক রোগ-পোকার আক্রমণ বেড়ে গেছে। ভুট্টাগাছে এ দেশে কখনো ‘ফল আর্মিওয়ার্ম’ নামের লেদা পোকার আক্রমণ দেখা যায়নি। ২০১৮ সাল থেকে এ দেশে সেই পোকার আক্রমণ ব্যাপকভাবে দেখা গেছে, যা ভুট্টা চাষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যে গমগাছে অতীতে ব্লাস্ট রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সেই গমগাছে এখন এই রোগ দেখা দিয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে গমের ও ধানের চিটা বাড়ছে। অনেক কৃষক এ থেকে ফসল সুরক্ষা দিতে নির্বিচারে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করতে দ্বিধা করছেন না। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে, পরিবেশদূষণে আরেক মাত্রা যোগ হচ্ছে। ফলে পরাগযোগকারী সুপতঙ্গরা কমে যাচ্ছে, তাতে উদ্ভিদের বংশরক্ষাকারী বীজেরা গঠিত হতে পারছে না। বীজ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভিদের পুনরুজ্জীবন ঘটবে না। আর উদ্ভিদের প্রাকৃতিক পুনরুজ্জীবন ছাড়া শুধু মানুষের দ্বারা নামকাওয়াস্তে গাছ লাগিয়ে এ ধরিত্রীর পরিবেশ রক্ষা হবে না।
গাছ লাগানো বা প্রাকৃতিকভাবে জন্মালেই সেসব গাছ টিকে থাকবে, সুস্থ থাকবে—এমন না। গাছপালাকে সুস্থ রাখতে হলে অবিবেচকের মতো বালাইনাশকের ওপর নির্ভর না করে গাছের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব কলাকৌশলের ওপর জোর দিতে হবে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতে উদ্ভিদের ক্ষতিকর রোগজীবাণু ও পোকামাকড় ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য আন্তর্জাতিক ফাইটোস্যানিটারি ব্যবস্থাগুলো কঠোরভাবে মানতে হবে; বিশেষ করে সব সময়ই এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিভিন্ন কৃষিপণ্য ও খাদ্যসামগ্রী আমদানি-রপ্তানি করা হয়। এ কাজে অধিকাংশ সময় কাঠের বাক্স ব্যবহার করা হয়। প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ২৪০ মিলিয়ন কনটেইনার ব্যবহৃত হয় এসব কাজে। এর শতকরা ৮০ ভাগ কনটেইনারই কাঠের তৈরি। এতে এসব কনটেইনার তৈরি করতে অরণ্যে বৃক্ষ উজাড় হচ্ছে, অন্য দিকে এসব কাঠের তৈরি কনটেইনারের কাঠের মাধ্যমে এ দেশ থেকে অন্য দেশে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু ও পোকামাকড়ের বিস্তার ঘটছে।
কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশে জায়ান্ট মিলিবাগ নামের মারাত্মক ক্ষতিকর পোকাটি ছিল না। বিদেশ থেকে এরূপ ব্যাগেজের মাধ্যমে তা এসেছে, এখন তা কাঁঠাল, আম ও শিরীষগাছের জন্য এক মহাক্ষতিকর পোকা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কাজেই কোনো দেশের উদ্ভিদ সম্পদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে কঠোরভাবে এসব আইন অনুসরণ ও প্রতিপালন করা জরুরি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এসব আইনকানুন কঠোরভাবে না মানার ফলে প্রতিবছর সারা বিশ্বে এরূপ আগ্রাসী আপদ বালাইয়ের আগমনে বিশ্বব্যাপী আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২২০ বিলিয়ন ডলার। আর্থিক ক্ষতি হয়তো পুষিয়ে নেওয়া যায়, কিন্তু উদ্ভিদ সম্পদের ক্ষতিপূরণ সহজে করা যায় না।
গত বছরের ১২ মে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আন্তর্জাতিক উদ্ভিদ স্বাস্থ্য দিবসে একটি চমৎকার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিল পৃথিবীর মানুষের জন্য, গাছের বয়ানটি ছিল: ‘আমিই জীবন। আমিই কোটি কোটি জীবনের বাসস্থল। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই পৃথিবীর বুকে আমিই টিকে আছি। আমার প্রাচুর্য আনে সমৃদ্ধি। আর আমার অভাব নিয়ে আসে মৃত্যুর ভয়াবহতা। পৃথিবীর স্থলভাগের অধিকাংশ স্থানজুড়েই আমার বিস্তার। আমার প্রভাবের বিস্তৃতিও অসীম। আমি তোমাদের চারপাশে কতকাল ধরে যে রয়েছি তা তোমরা কল্পনাও করতে পারো না। কিন্তু আমার ভুবন এখন বিপদাপন্ন। মানুষদের এখন অবশ্যই সে সংবাদ জানাতে হবে। কেননা, আমি তোমাদের সম্পদের রক্ষাকারী। আমার ওপরই তোমাদের বেঁচে থাকা ও স্বাস্থ্য নির্ভর করছে। আমি উদ্ভিদ, আমিই জীবন।’
উদ্ভিদের এই আরজি অনেক মানুষের কানেই পৌঁছায়নি। তাই ওরা এখন আরও বিপদাপন্ন হয়ে পড়েছে। সে জন্য ২০২৪ সালে এসে একই দিবসে আমরা শুনেছি সেই উদ্ভিদের একই কান্নার সুর। এ বছরও জাতিসংঘ সবাইকে বলেছে, আমাদের টেকসই অর্থনীতি ও জীবনযাপনের জন্য খাদ্যনিরাপত্তা ও নিরাপদ বাণিজ্যের স্বার্থে এখনই উদ্ভিদের স্বাস্থ্য রক্ষায় মানুষকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। গাছ শুধু লাগানোই নয়, সেসব উদ্ভিদের যত্নও নিতে হবে, তাকে স্বাস্থ্যবান করে বাড়তে সাহায্য করতে হবে; তাকে বিভিন্ন দুর্যোগ, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হবে। উদ্ভিদের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে আমাদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। উদ্ভিদ ভালো থাকলে পৃথিবীও সুন্দর হবে।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
অনেক দিন আগে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কবিতা পড়েছিলাম, কবিতাটির নাম ছিল ‘আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি’। এখনো তার কিছু লাইন মনে আছে: ‘আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ/ এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ/ পুরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা/ আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা/ করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে/ থাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে।...’
কবিতাটি পড়ে মনে প্রশ্ন জাগে, আসলেই আমরা কীভাবে বেঁচে আছি? উদ্ভিদগুলো যদি মানুষদের মতো একবেলা ধর্মঘট করে বলে বসে, ‘যাও মানুষ। তোমাদের কুঠারের আঘাত, রোগের সংক্রমণ, কীটের দংশন, বায়ুর দূষণ আমাদের জর্জরিত করে ফেলেছে, আমরা অসুস্থ। আর আমরা তোমাদের অক্সিজেন দিতে পারব না। তোমরাই আমাদের অসুস্থ করে ফেলেছ, তাই এর প্রতিবাদে আমরা সবাই পত্ররন্ধ্রগুলো পাঁচ মিনিটের জন্য বন্ধ করে রেখে দেব। ওই সময়টুকুতে আর আমরা তোমাদের কোনো অক্সিজেন দেব না।’ যদি সত্যিই পৃথিবীর গাছপালাগুলো সবাই একসঙ্গে এ রকম কাণ্ড কোনো দিন করে বসে? এ রকমটা হলে সেই পাঁচ মিনিটেই পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবে শুধু হোমো স্যাপিয়েন্স নামের জীবই না, আরও অনেক জীব। কী ভয়াবহ হবে সেই দৃশ্য! হরর মুভি অথবা ‘দ্য লাস্ট ডে অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ সিনেমার চেয়েও ভয়ংকর সে দৃশ্য হবে! ভাবলেই গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে।
আমরা আমাদের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করি, আমরা শ্বাসের সঙ্গে যে অক্সিজেন টেনে নিই, তার শতকরা ৯৮ ভাগ আসে উদ্ভিদের কাছ থেকে। তাই উদ্ভিদের ভালো থাকার ওপরই আসলে আমাদের ভালো থাকা, মন্দ থাকা নির্ভর করছে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। প্রাক-শিল্প যুগে এই পৃথিবীর পরিবেশ ছিল স্বর্গের মতো, গাছপালারা ছিল সেই স্বর্গীয় উদ্যানের বাসিন্দা। বায়ুদূষণ নেই, জীবাশ্ম জ্বালানির এরূপ ব্যাপক ব্যবহার তখন শুরু হয়নি, তাই বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাও ছিল নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু বর্তমানে অতি উন্নয়নের লোভ আমাদের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়িয়ে মারছে, পুড়িয়ে মারছে গাছপালাগুলোকেও। বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অনেক পোকামাকড় বেড়ে গেছে, সুপ্ত রোগজীবাণুরা বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব বালাই হলো উদ্ভিদ বিনাশের এক অন্যতম নিয়ামক। তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে এসব ক্ষতিকর জীব ও জীবাণুর বংশবৃদ্ধি বেড়ে গেছে। ফলে আগের তুলনায় এখন উদ্ভিদকুল বেশি রোগগ্রস্ত হচ্ছে, পোকায় ওদের দেহ খাচ্ছে। তাই উদ্ভিদের স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
বনের গাছপালাগুলোর চেহারা দেখার ফুসরত আমাদের হয়তো নেই। কিন্তু আমাদের চোখের সামনে যেসব ফসল চাষ করি, সেই সব খেতের ফসলে এখন অনেক রোগ-পোকার আক্রমণ বেড়ে গেছে। ভুট্টাগাছে এ দেশে কখনো ‘ফল আর্মিওয়ার্ম’ নামের লেদা পোকার আক্রমণ দেখা যায়নি। ২০১৮ সাল থেকে এ দেশে সেই পোকার আক্রমণ ব্যাপকভাবে দেখা গেছে, যা ভুট্টা চাষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যে গমগাছে অতীতে ব্লাস্ট রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সেই গমগাছে এখন এই রোগ দেখা দিয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে গমের ও ধানের চিটা বাড়ছে। অনেক কৃষক এ থেকে ফসল সুরক্ষা দিতে নির্বিচারে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করতে দ্বিধা করছেন না। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে, পরিবেশদূষণে আরেক মাত্রা যোগ হচ্ছে। ফলে পরাগযোগকারী সুপতঙ্গরা কমে যাচ্ছে, তাতে উদ্ভিদের বংশরক্ষাকারী বীজেরা গঠিত হতে পারছে না। বীজ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভিদের পুনরুজ্জীবন ঘটবে না। আর উদ্ভিদের প্রাকৃতিক পুনরুজ্জীবন ছাড়া শুধু মানুষের দ্বারা নামকাওয়াস্তে গাছ লাগিয়ে এ ধরিত্রীর পরিবেশ রক্ষা হবে না।
গাছ লাগানো বা প্রাকৃতিকভাবে জন্মালেই সেসব গাছ টিকে থাকবে, সুস্থ থাকবে—এমন না। গাছপালাকে সুস্থ রাখতে হলে অবিবেচকের মতো বালাইনাশকের ওপর নির্ভর না করে গাছের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব কলাকৌশলের ওপর জোর দিতে হবে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতে উদ্ভিদের ক্ষতিকর রোগজীবাণু ও পোকামাকড় ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য আন্তর্জাতিক ফাইটোস্যানিটারি ব্যবস্থাগুলো কঠোরভাবে মানতে হবে; বিশেষ করে সব সময়ই এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিভিন্ন কৃষিপণ্য ও খাদ্যসামগ্রী আমদানি-রপ্তানি করা হয়। এ কাজে অধিকাংশ সময় কাঠের বাক্স ব্যবহার করা হয়। প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ২৪০ মিলিয়ন কনটেইনার ব্যবহৃত হয় এসব কাজে। এর শতকরা ৮০ ভাগ কনটেইনারই কাঠের তৈরি। এতে এসব কনটেইনার তৈরি করতে অরণ্যে বৃক্ষ উজাড় হচ্ছে, অন্য দিকে এসব কাঠের তৈরি কনটেইনারের কাঠের মাধ্যমে এ দেশ থেকে অন্য দেশে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু ও পোকামাকড়ের বিস্তার ঘটছে।
কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশে জায়ান্ট মিলিবাগ নামের মারাত্মক ক্ষতিকর পোকাটি ছিল না। বিদেশ থেকে এরূপ ব্যাগেজের মাধ্যমে তা এসেছে, এখন তা কাঁঠাল, আম ও শিরীষগাছের জন্য এক মহাক্ষতিকর পোকা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কাজেই কোনো দেশের উদ্ভিদ সম্পদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে কঠোরভাবে এসব আইন অনুসরণ ও প্রতিপালন করা জরুরি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এসব আইনকানুন কঠোরভাবে না মানার ফলে প্রতিবছর সারা বিশ্বে এরূপ আগ্রাসী আপদ বালাইয়ের আগমনে বিশ্বব্যাপী আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২২০ বিলিয়ন ডলার। আর্থিক ক্ষতি হয়তো পুষিয়ে নেওয়া যায়, কিন্তু উদ্ভিদ সম্পদের ক্ষতিপূরণ সহজে করা যায় না।
গত বছরের ১২ মে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আন্তর্জাতিক উদ্ভিদ স্বাস্থ্য দিবসে একটি চমৎকার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিল পৃথিবীর মানুষের জন্য, গাছের বয়ানটি ছিল: ‘আমিই জীবন। আমিই কোটি কোটি জীবনের বাসস্থল। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই পৃথিবীর বুকে আমিই টিকে আছি। আমার প্রাচুর্য আনে সমৃদ্ধি। আর আমার অভাব নিয়ে আসে মৃত্যুর ভয়াবহতা। পৃথিবীর স্থলভাগের অধিকাংশ স্থানজুড়েই আমার বিস্তার। আমার প্রভাবের বিস্তৃতিও অসীম। আমি তোমাদের চারপাশে কতকাল ধরে যে রয়েছি তা তোমরা কল্পনাও করতে পারো না। কিন্তু আমার ভুবন এখন বিপদাপন্ন। মানুষদের এখন অবশ্যই সে সংবাদ জানাতে হবে। কেননা, আমি তোমাদের সম্পদের রক্ষাকারী। আমার ওপরই তোমাদের বেঁচে থাকা ও স্বাস্থ্য নির্ভর করছে। আমি উদ্ভিদ, আমিই জীবন।’
উদ্ভিদের এই আরজি অনেক মানুষের কানেই পৌঁছায়নি। তাই ওরা এখন আরও বিপদাপন্ন হয়ে পড়েছে। সে জন্য ২০২৪ সালে এসে একই দিবসে আমরা শুনেছি সেই উদ্ভিদের একই কান্নার সুর। এ বছরও জাতিসংঘ সবাইকে বলেছে, আমাদের টেকসই অর্থনীতি ও জীবনযাপনের জন্য খাদ্যনিরাপত্তা ও নিরাপদ বাণিজ্যের স্বার্থে এখনই উদ্ভিদের স্বাস্থ্য রক্ষায় মানুষকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। গাছ শুধু লাগানোই নয়, সেসব উদ্ভিদের যত্নও নিতে হবে, তাকে স্বাস্থ্যবান করে বাড়তে সাহায্য করতে হবে; তাকে বিভিন্ন দুর্যোগ, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হবে। উদ্ভিদের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে আমাদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। উদ্ভিদ ভালো থাকলে পৃথিবীও সুন্দর হবে।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে