ড. মঞ্জুরে খোদা
কোথায়, কেমন সংস্কার হতে পারে?
সরকারপদ্ধতি কী হবে? সংসদীয় পদ্ধতিই থাকবে, নাকি রাষ্ট্রপতিশাসিত হবে। কিংবা উভয় ব্যবস্থার মধ্যে একটি ভারসাম্য আনা হবে? এক কক্ষবিশিষ্ট না দ্বি কক্ষবিশিষ্ট সংসদ হবে? ভোটের পদ্ধতি কী হবে, এফপিটিপি না সংখ্যানুপাতিক? রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও সরাসরি ভোটে হবে কি না? মোটকথা নির্বাচনী ব্যবস্থা ও সাংবিধানিক কাঠামোয় কী ধরনের সংস্কার-পরিবর্তন ঘটবে, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুর হিসাব।
সংবিধান পরিবর্তনের আলাপ শুরু হয়েছে। সংবিধানের কী ধরনের পরিবর্তন হবে, তার ওপরও নির্ভর করছে ভোট ও জোটের হিসাব। রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কী ধরনের সংস্কার হবে, কী ধরনের বাধ্যবাধকতা থাকবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই সংস্কার করবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর অধিক আগ্রহ নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকেন্দ্রিক বিষয় নিয়ে। কী ধরনের সংস্কার হবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ধারণা থেকে বলা, তা সাধারণ বা জোড়াতালির কোনো বিষয় ঘটবে না। প্রার্থীর যোগ্যতার শর্ত, মনোনয়নপদ্ধতি, ভোট প্রদানের ধারায় বাধ্যবাধকতা নির্বাচনের চেহারা অতীতের মতো না-ও থাকতে পারে।
কত দিন থাকবে ছাত্রদের এই ঐক্য ও শক্তি?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা বলছে কিন্তু ছাত্রদল, শিবিরসহ অন্য সংগঠনগুলো যদি এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে দাঁড়ায় তাহলে কী হবে? এখন না হয় তারা পরিস্থিতির কারণে নীরব, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তনে তারা সুযোগ নেবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এটা কোনো আদর্শ বা কর্মসূচিভিত্তিক সংগঠনও নয়। তাদের কোনো একক নেতৃত্বও নেই, অভিভাবক সংগঠনও নেই। এদের মধ্যে কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী সুবিধাভোগী হবে, অন্যরা কি দীর্ঘ মেয়াদে তাকে সহজভাবে নেবে? একটা ইস্যুতে তারা একত্র হয়েছিল, তাদের আবেদনের অধিক পূরণ হয়েছে, এখন তারা সমন্বয়কদের নির্দেশ-আহ্বান মানবে কেন? বিভিন্ন স্থানে সিক্সটিন্থ ডিভিশনের মতো ৫ আগস্টের পর কমিটি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠিত ছাত্রসংগঠনগুলোর দেশজুড়ে একটা সাংগঠনিক কাঠামো, শক্তি ও শৃঙ্খলা (?) আছে। বৈষম্যবিরোধীদের সে অবস্থা ভাসা ভাসা, সেটা কত দিন টিকবে সে প্রশ্ন সংগত। সমাজে যে শক্তিগুলো তাদের সাহস-ইন্ধন জুগিয়েছে, তারা সেটা কত দিন করবে তা নির্ভর করছে আসন্ন রাজনীতির সমীকরণের ওপর। বিএনপি নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরলে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, সেটা তাদের জন্য স্বস্তিকর না-ও হতে পারে। পরিস্থিতি তেমন হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে অন্যান্য ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর অবস্থা ছাত্ররাজনীতির প্রশ্নে মুখোমুখি হতে পারে।
ছাত্রদের পুলিশি দায়িত্ব কি দ্বন্দ্ব-সংঘাত বাড়াবে না?
২৫ আগস্ট আনসার বাহিনী সচিবালয়ে তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করতে যায়। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশ ব্যর্থ হলে ছাত্রদের ডাকা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রদের সচিবালয়ে এনে আনসারদের ধাওয়া করে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে গেলে আনসারদের সঙ্গে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ছাত্রদের পেশাজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেটা কি ভালো হচ্ছে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এইভাবে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত তৈরি হলে ছাত্র-জনতার বিভেদ বাড়বে। সেটা হলে অন্তর্বর্তী সরকার বিতর্কিত হবে, তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমবে।
নির্বাচন যদি অনিশ্চিত হয়
নির্বাচন যদি বিলম্বিত ও অনিশ্চিত হয়, তাহলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠের সমীকরণ ভিন্ন হতে পারে। বিএনপি যদি নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামে, সে ক্ষেত্রে জামায়াত কি তাদের সঙ্গী হবে? কিন্তু জামায়াতের আপাত কৌশল ও বক্তব্য সে কথা বলছে না। সেক্ষেত্রে কি আওয়ামী লীগ? আওয়ামী লীগ কি নির্বাচনের দাবি করে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাবে? সেটা করলে কি তাদের কোনো স্বার্থ-সমীকরণ থাকবে না? সেটা কী হতে পারে? জেলে থাকা তাদের নেতা-কর্মীদের মুক্তি, মামলা-মোকদ্দমা প্রত্যাহার, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি ইত্যাদি এমন কোনো কিছু? তেমন পরিস্থিতি হলে বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে ও নির্বাচনের দাবি আদায়ে আওয়ামী লীগকে লাগতেও পারে, সেটা সময়ই বলবে।
জামায়াত ও ইসলামি দলগুলো যদি আলাদা কোনো জোট হয়, ইউনূসের নেতৃত্বে তৃতীয় কোনো শক্তির উত্থান ঘটে, সেক্ষেত্রে এমনও সমীকরণ হতে পারে যে আওয়ামী লীগ, বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে রেখে ড. ইউনূসের ক্ষমতায় থাকাকে সমর্থন করবে বা নিজেরা ক্ষমতায় আসতে চাইবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় আসুক সেটা তারা চাইবে না নিশ্চয়ই। তারচেয়ে বরং তৃতীয় পক্ষ ক্ষমতায় গেলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। এমনকি সেটা যদি জামায়াত ও ইসলামপন্থী দলগুলোর জোটও হয়? এটা কি মাইনাস টু ফর্মুলার নতুন সংস্করণ ও কৌশল?
ড. ইউনূসের ছত্রচ্ছায়ায় যদি নতুন একটি দল গড়ে ওঠে, তারা যদি প্রধান দলগুলোর চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে, সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ক্ষমতাকেন্দ্রিক দলগুলোর সমীকরণ কী হবে, সেটাও ভাবার বিষয়। অথবা, বিএনপি যদি নির্বাচনের প্রশ্নে নিঃসঙ্গ হয়, সে ক্ষেত্রে কি তারা জামায়াত, আওয়ামী লীগ ও অন্তর্বর্তী সরকার দুই-তিন ফ্রন্টে একাই সংগ্রাম করবে?
ছাত্র-জনতার অবস্থা, সমর্থন কি এখনকার মতো থাকবে? সে ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হবে, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তারা কি রাজনৈতিক দলগুলোর বিপক্ষে অবস্থান নেবে? এই সরকার কি সে ক্ষেত্রে সেনাসমর্থিত সরকার হবে? অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ অবস্থান ও কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করছে নানা মাত্রিক রাজনৈতিক জটিলতা ও সমীকরণ।
জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বয়স্ক বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল। সে সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অজুহাতে দুর্বল সাত্তারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী তথা এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছিলেন! অন্তর্বর্তী সরকার যদি ব্যর্থ ও অকার্যকর হয়, তেমন কিছুর আশঙ্কাও অমূলক নয়। হাসিনার পতনের পর এই সরকার এখনো এমন কোনো চমক দেখাতে পারেনি যে মানুষ তাদের প্রচণ্ড আস্থায় নিতে পারে। যেভাবে হামলা-মামলা-দখল, মব ভায়োলেন্স, দলীয় নিয়োগ, চিহ্নিত অপরাধীদের খালাস, শিল্পকারখানা বন্ধ হচ্ছে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্নে জন্ম দিচ্ছে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ, চর্চা কোথায়, কীভাবে হচ্ছে? সরকারি অনেক সিদ্ধান্ত কোন স্থান থেকে আসছে সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।
দেশ কি অজানাতন্ত্রের খোলায় পড়বে?
সমাজতাত্ত্বিক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান দৈনিক সমকালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ছাত্র-জনতার দাবি কোটা থেকে সরকারের পদত্যাগ ছিল, তার বেশি কিছু নয়। এর বেশি কিছুর ম্যান্ডেট তারা জনগণ থেকে নেয়নি।’ তাহলে প্রশ্ন, এর চেয়ে বেশি কিছু তারা করতে চাইছে কোন অধিকারে, কিসের ভিত্তিতে? ৭০-এর নির্বাচনের ইশতেহারের সঙ্গে ৭২-এর সংবিধানের রাষ্ট্রীয় ৪ মূলনীতি নিয়ে অনেকে বিতর্ক করেন। সেটার যদি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তা যদি বিতর্কের বিষয় হয়, তাহলে এই ক্ষেত্রে কেন নয়? ছাত্র-জনতা একত্র হয়েছিল এক দফা তথা হাসিনার পতনের লক্ষ্যে। এই ছাত্র-জনতার কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। এই আন্দোলনে সাধারণ জনতার সঙ্গে সরকারবিরোধীদের একটি বড় অংশ ছিল, তাদেরও একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল। যে কারণে সরকারকে বড় কোনো পরিবর্তন ও সংস্কারে অভ্যুত্থানকারীদের সম্মতি দরকার আছে।
সে যাই হোক, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ছাত্র-জনতা যত দিন চাইবে তিনি তত দিন ক্ষমতায় থাকবেন কিন্তু সেটা বোঝার মানদণ্ড কী? কথার মারপ্যাঁচে এমন ধূম্রজাল সৃষ্টি না করে সংস্কার ও ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ হাজির করা জরুরি। সেটাই হবে সম্ভাব্য আসন্ন রাজনৈতিক জটিলতা এড়ানোর পথ। একজন নন্দিত ব্যক্তি নিন্দিত হবেন—সেটা কারও কাম্য নয়।
লেখক: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
কোথায়, কেমন সংস্কার হতে পারে?
সরকারপদ্ধতি কী হবে? সংসদীয় পদ্ধতিই থাকবে, নাকি রাষ্ট্রপতিশাসিত হবে। কিংবা উভয় ব্যবস্থার মধ্যে একটি ভারসাম্য আনা হবে? এক কক্ষবিশিষ্ট না দ্বি কক্ষবিশিষ্ট সংসদ হবে? ভোটের পদ্ধতি কী হবে, এফপিটিপি না সংখ্যানুপাতিক? রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও সরাসরি ভোটে হবে কি না? মোটকথা নির্বাচনী ব্যবস্থা ও সাংবিধানিক কাঠামোয় কী ধরনের সংস্কার-পরিবর্তন ঘটবে, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুর হিসাব।
সংবিধান পরিবর্তনের আলাপ শুরু হয়েছে। সংবিধানের কী ধরনের পরিবর্তন হবে, তার ওপরও নির্ভর করছে ভোট ও জোটের হিসাব। রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কী ধরনের সংস্কার হবে, কী ধরনের বাধ্যবাধকতা থাকবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই সংস্কার করবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর অধিক আগ্রহ নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকেন্দ্রিক বিষয় নিয়ে। কী ধরনের সংস্কার হবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ধারণা থেকে বলা, তা সাধারণ বা জোড়াতালির কোনো বিষয় ঘটবে না। প্রার্থীর যোগ্যতার শর্ত, মনোনয়নপদ্ধতি, ভোট প্রদানের ধারায় বাধ্যবাধকতা নির্বাচনের চেহারা অতীতের মতো না-ও থাকতে পারে।
কত দিন থাকবে ছাত্রদের এই ঐক্য ও শক্তি?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা বলছে কিন্তু ছাত্রদল, শিবিরসহ অন্য সংগঠনগুলো যদি এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে দাঁড়ায় তাহলে কী হবে? এখন না হয় তারা পরিস্থিতির কারণে নীরব, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তনে তারা সুযোগ নেবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এটা কোনো আদর্শ বা কর্মসূচিভিত্তিক সংগঠনও নয়। তাদের কোনো একক নেতৃত্বও নেই, অভিভাবক সংগঠনও নেই। এদের মধ্যে কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী সুবিধাভোগী হবে, অন্যরা কি দীর্ঘ মেয়াদে তাকে সহজভাবে নেবে? একটা ইস্যুতে তারা একত্র হয়েছিল, তাদের আবেদনের অধিক পূরণ হয়েছে, এখন তারা সমন্বয়কদের নির্দেশ-আহ্বান মানবে কেন? বিভিন্ন স্থানে সিক্সটিন্থ ডিভিশনের মতো ৫ আগস্টের পর কমিটি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠিত ছাত্রসংগঠনগুলোর দেশজুড়ে একটা সাংগঠনিক কাঠামো, শক্তি ও শৃঙ্খলা (?) আছে। বৈষম্যবিরোধীদের সে অবস্থা ভাসা ভাসা, সেটা কত দিন টিকবে সে প্রশ্ন সংগত। সমাজে যে শক্তিগুলো তাদের সাহস-ইন্ধন জুগিয়েছে, তারা সেটা কত দিন করবে তা নির্ভর করছে আসন্ন রাজনীতির সমীকরণের ওপর। বিএনপি নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরলে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, সেটা তাদের জন্য স্বস্তিকর না-ও হতে পারে। পরিস্থিতি তেমন হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে অন্যান্য ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর অবস্থা ছাত্ররাজনীতির প্রশ্নে মুখোমুখি হতে পারে।
ছাত্রদের পুলিশি দায়িত্ব কি দ্বন্দ্ব-সংঘাত বাড়াবে না?
২৫ আগস্ট আনসার বাহিনী সচিবালয়ে তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করতে যায়। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশ ব্যর্থ হলে ছাত্রদের ডাকা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রদের সচিবালয়ে এনে আনসারদের ধাওয়া করে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে গেলে আনসারদের সঙ্গে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ছাত্রদের পেশাজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেটা কি ভালো হচ্ছে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এইভাবে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত তৈরি হলে ছাত্র-জনতার বিভেদ বাড়বে। সেটা হলে অন্তর্বর্তী সরকার বিতর্কিত হবে, তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমবে।
নির্বাচন যদি অনিশ্চিত হয়
নির্বাচন যদি বিলম্বিত ও অনিশ্চিত হয়, তাহলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠের সমীকরণ ভিন্ন হতে পারে। বিএনপি যদি নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামে, সে ক্ষেত্রে জামায়াত কি তাদের সঙ্গী হবে? কিন্তু জামায়াতের আপাত কৌশল ও বক্তব্য সে কথা বলছে না। সেক্ষেত্রে কি আওয়ামী লীগ? আওয়ামী লীগ কি নির্বাচনের দাবি করে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাবে? সেটা করলে কি তাদের কোনো স্বার্থ-সমীকরণ থাকবে না? সেটা কী হতে পারে? জেলে থাকা তাদের নেতা-কর্মীদের মুক্তি, মামলা-মোকদ্দমা প্রত্যাহার, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি ইত্যাদি এমন কোনো কিছু? তেমন পরিস্থিতি হলে বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে ও নির্বাচনের দাবি আদায়ে আওয়ামী লীগকে লাগতেও পারে, সেটা সময়ই বলবে।
জামায়াত ও ইসলামি দলগুলো যদি আলাদা কোনো জোট হয়, ইউনূসের নেতৃত্বে তৃতীয় কোনো শক্তির উত্থান ঘটে, সেক্ষেত্রে এমনও সমীকরণ হতে পারে যে আওয়ামী লীগ, বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে রেখে ড. ইউনূসের ক্ষমতায় থাকাকে সমর্থন করবে বা নিজেরা ক্ষমতায় আসতে চাইবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় আসুক সেটা তারা চাইবে না নিশ্চয়ই। তারচেয়ে বরং তৃতীয় পক্ষ ক্ষমতায় গেলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। এমনকি সেটা যদি জামায়াত ও ইসলামপন্থী দলগুলোর জোটও হয়? এটা কি মাইনাস টু ফর্মুলার নতুন সংস্করণ ও কৌশল?
ড. ইউনূসের ছত্রচ্ছায়ায় যদি নতুন একটি দল গড়ে ওঠে, তারা যদি প্রধান দলগুলোর চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে, সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ক্ষমতাকেন্দ্রিক দলগুলোর সমীকরণ কী হবে, সেটাও ভাবার বিষয়। অথবা, বিএনপি যদি নির্বাচনের প্রশ্নে নিঃসঙ্গ হয়, সে ক্ষেত্রে কি তারা জামায়াত, আওয়ামী লীগ ও অন্তর্বর্তী সরকার দুই-তিন ফ্রন্টে একাই সংগ্রাম করবে?
ছাত্র-জনতার অবস্থা, সমর্থন কি এখনকার মতো থাকবে? সে ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হবে, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তারা কি রাজনৈতিক দলগুলোর বিপক্ষে অবস্থান নেবে? এই সরকার কি সে ক্ষেত্রে সেনাসমর্থিত সরকার হবে? অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ অবস্থান ও কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করছে নানা মাত্রিক রাজনৈতিক জটিলতা ও সমীকরণ।
জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বয়স্ক বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল। সে সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অজুহাতে দুর্বল সাত্তারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী তথা এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছিলেন! অন্তর্বর্তী সরকার যদি ব্যর্থ ও অকার্যকর হয়, তেমন কিছুর আশঙ্কাও অমূলক নয়। হাসিনার পতনের পর এই সরকার এখনো এমন কোনো চমক দেখাতে পারেনি যে মানুষ তাদের প্রচণ্ড আস্থায় নিতে পারে। যেভাবে হামলা-মামলা-দখল, মব ভায়োলেন্স, দলীয় নিয়োগ, চিহ্নিত অপরাধীদের খালাস, শিল্পকারখানা বন্ধ হচ্ছে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্নে জন্ম দিচ্ছে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ, চর্চা কোথায়, কীভাবে হচ্ছে? সরকারি অনেক সিদ্ধান্ত কোন স্থান থেকে আসছে সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।
দেশ কি অজানাতন্ত্রের খোলায় পড়বে?
সমাজতাত্ত্বিক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান দৈনিক সমকালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ছাত্র-জনতার দাবি কোটা থেকে সরকারের পদত্যাগ ছিল, তার বেশি কিছু নয়। এর বেশি কিছুর ম্যান্ডেট তারা জনগণ থেকে নেয়নি।’ তাহলে প্রশ্ন, এর চেয়ে বেশি কিছু তারা করতে চাইছে কোন অধিকারে, কিসের ভিত্তিতে? ৭০-এর নির্বাচনের ইশতেহারের সঙ্গে ৭২-এর সংবিধানের রাষ্ট্রীয় ৪ মূলনীতি নিয়ে অনেকে বিতর্ক করেন। সেটার যদি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তা যদি বিতর্কের বিষয় হয়, তাহলে এই ক্ষেত্রে কেন নয়? ছাত্র-জনতা একত্র হয়েছিল এক দফা তথা হাসিনার পতনের লক্ষ্যে। এই ছাত্র-জনতার কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। এই আন্দোলনে সাধারণ জনতার সঙ্গে সরকারবিরোধীদের একটি বড় অংশ ছিল, তাদেরও একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল। যে কারণে সরকারকে বড় কোনো পরিবর্তন ও সংস্কারে অভ্যুত্থানকারীদের সম্মতি দরকার আছে।
সে যাই হোক, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ছাত্র-জনতা যত দিন চাইবে তিনি তত দিন ক্ষমতায় থাকবেন কিন্তু সেটা বোঝার মানদণ্ড কী? কথার মারপ্যাঁচে এমন ধূম্রজাল সৃষ্টি না করে সংস্কার ও ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ হাজির করা জরুরি। সেটাই হবে সম্ভাব্য আসন্ন রাজনৈতিক জটিলতা এড়ানোর পথ। একজন নন্দিত ব্যক্তি নিন্দিত হবেন—সেটা কারও কাম্য নয়।
লেখক: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে