নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘বাংলাদেশের সংগ্রামী জনসাধারণ এ কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করিয়াছেন যে বাঙালীকে আর শোষিত ও অবদমিত রাখা যাইবে না। গত রবিবার রমনা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়াছেন, তাহাতে প্রতিফলিত হইয়াছে মুক্তিপাগল প্রতিটি বাঙালীর মনোভাব। পূর্ব বাংলার মাটি হইতে এখনো শহীদের রক্তের দাগ মুছিয়া যায় নাই, এখনো এ দেশের বহু ঘরে শোনা যাইতেছে স্বজন-হারানোর আর্তনাদ। তাই শেখ মুজিবুর রহমান প্রদীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করিয়াছেন যে, তিনি শহীদের রক্ত মাড়াইয়া পরিষদে যোগ দিতে পারেন না।
তবে তিনি পরিষদে যোগদানের সম্ভাবনাকে একেবারে উড়াইয়া দেন নাই।’ এই সম্পাদকীয় মন্তব্য ছিল ৯ মার্চ, ১৯৭১ দৈনিক পাকিস্তানে।
‘সঙ্কট মুক্তির একমাত্র পথ’ শিরোনামের ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, ‘শেখ মুজিবুর রহমান পরিষদে যোগদানের প্রশ্নটি বিবেচনা করিয়া দেখার যে চারিটি শর্ত আরোপ করিয়াছেন, সেগুলি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। এই শর্তাবলী মানিয়া লওয়া হইলেই শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁহার পার্টি সদস্যদের পরিষদে যোগদান করার পক্ষে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হইতে পারে, ইহার আগে নয়। বেয়নেটের ছায়ায় কখনো পরিষদের কাজ মুক্ত ও সুষ্ঠুভাবে চলিতে পারে না। এই জন্যই অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার করা এক অপরিহার্য প্রয়োজন দেখা দিয়াছে।
খোদ প্রেসিডেন্টই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলিয়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন।...গণপ্রতিবাদমুখর বাংলার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তিনি বাংলাদেশের জনসাধারণ ও বাঙালী নেতৃত্বকেই দায়ী করিয়াছেন। কিন্তু একটি সংখ্যালঘু দলের যে নেতাটি ইহার জন্য দায়ী, যাহার অনমনীয় মনোভাবের জন্যই বাংলার মাটি আবার রঞ্জিত হইল রক্তে, বুলেটের শিকার হইল এখানকার নিরস্ত্র মানুষ, তাঁহার দোষ প্রেসিডেন্টের লক্ষ্যগোচরই হইল না। ইহা কি একদেশদর্শিতার পরিচায়ক নয়? সে যাহাই হউক, সঙ্কট এড়াইতে হইলে অবিলম্বে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা একান্ত জরুরি। এয়ার মার্শাল নূর খান তো স্পষ্টতই বলিয়াছেন যে, শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ শাসন করার আইনগত অধিকার রহিয়াছে এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের সব রকম প্রতিবন্ধকতা অবিলম্বে দূর করা উচিত। এয়ার মার্শাল আসগর খানও শেখ মুজিবুর রহমানের শর্তাবলীকে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত বলিয়া মনে করেন। বস্তুত ইহাই শান্তি প্রতিষ্ঠা ও দেশ রক্ষা করার একমাত্র পথ।’
আজ সেই ৯ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে মিছিলে মিছিলে উত্তাল ছিল সারা দেশ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই মূলত তাঁর নির্দেশ অনুযায়ীই চলছিল দেশ। চরমে পৌঁছেছিল দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন। উত্তাল এই দিনে ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে এক বিশাল জনসভায় চিরাচরিত দরাজ কণ্ঠে দেওয়া ভাষণে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেছিলেন, ‘হে বাঙালিরা, আপনারা মুজিবের ওপর বিশ্বাস রাখেন, তাকে খামোখা কেউ অবিশ্বাস করবেন না, কারণ মুজিবকে আমি ভালোভাবে চিনি।’ ভাসানীর ঘোষণাই পরদিন ঢাকার সব কটি সংবাদপত্র ফলাও করে ছেপেছিল। আজাদে আট কলামজুড়ে প্রধান শিরোনাম ছিল ‘মুজিবের সহিত একযোগে মুক্তিসংগ্রাম করিব’। সংবাদেও ব্যানার শিরোনাম ছিল ‘মুজিবের সঙ্গে একযোগে আন্দোলন করিব’। দৈনিক ইত্তেফাকে চার কলামজুড়ে প্রধান শিরোনাম ছিল ‘পঁচিশে মার্চের পর শেখ মুজিবের সহিত মিলিয়া আন্দোলন শুরু করিব’।
৯ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে ছাত্র-তরুণেরা। বিভিন্ন স্থানে চলে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি। অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সেনাসদস্যরা গোপনে নানা স্থানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর দামাল ছেলেদের। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভায় ‘স্বাধীন বাংলা দেশ’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। পরদিন ইত্তেফাকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে এ খবর। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সরকারি অফিস-আদালত জনশূন্য হয়ে পড়ার চিত্র ইত্তেফাকের ১০ মার্চের প্রথম পাতায় উঠে আসে তিনটি স্থিরচিত্রের কোলাজে। ‘সরকারী-আধা সরকারী কর্মকেন্দ্র অচল’ শিরোনামে একটি খবরে এর বিস্তারিত তথ্য ছিল।
‘বাংলাদেশের সংগ্রামী জনসাধারণ এ কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করিয়াছেন যে বাঙালীকে আর শোষিত ও অবদমিত রাখা যাইবে না। গত রবিবার রমনা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়াছেন, তাহাতে প্রতিফলিত হইয়াছে মুক্তিপাগল প্রতিটি বাঙালীর মনোভাব। পূর্ব বাংলার মাটি হইতে এখনো শহীদের রক্তের দাগ মুছিয়া যায় নাই, এখনো এ দেশের বহু ঘরে শোনা যাইতেছে স্বজন-হারানোর আর্তনাদ। তাই শেখ মুজিবুর রহমান প্রদীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করিয়াছেন যে, তিনি শহীদের রক্ত মাড়াইয়া পরিষদে যোগ দিতে পারেন না।
তবে তিনি পরিষদে যোগদানের সম্ভাবনাকে একেবারে উড়াইয়া দেন নাই।’ এই সম্পাদকীয় মন্তব্য ছিল ৯ মার্চ, ১৯৭১ দৈনিক পাকিস্তানে।
‘সঙ্কট মুক্তির একমাত্র পথ’ শিরোনামের ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, ‘শেখ মুজিবুর রহমান পরিষদে যোগদানের প্রশ্নটি বিবেচনা করিয়া দেখার যে চারিটি শর্ত আরোপ করিয়াছেন, সেগুলি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। এই শর্তাবলী মানিয়া লওয়া হইলেই শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁহার পার্টি সদস্যদের পরিষদে যোগদান করার পক্ষে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হইতে পারে, ইহার আগে নয়। বেয়নেটের ছায়ায় কখনো পরিষদের কাজ মুক্ত ও সুষ্ঠুভাবে চলিতে পারে না। এই জন্যই অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার করা এক অপরিহার্য প্রয়োজন দেখা দিয়াছে।
খোদ প্রেসিডেন্টই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলিয়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন।...গণপ্রতিবাদমুখর বাংলার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তিনি বাংলাদেশের জনসাধারণ ও বাঙালী নেতৃত্বকেই দায়ী করিয়াছেন। কিন্তু একটি সংখ্যালঘু দলের যে নেতাটি ইহার জন্য দায়ী, যাহার অনমনীয় মনোভাবের জন্যই বাংলার মাটি আবার রঞ্জিত হইল রক্তে, বুলেটের শিকার হইল এখানকার নিরস্ত্র মানুষ, তাঁহার দোষ প্রেসিডেন্টের লক্ষ্যগোচরই হইল না। ইহা কি একদেশদর্শিতার পরিচায়ক নয়? সে যাহাই হউক, সঙ্কট এড়াইতে হইলে অবিলম্বে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা একান্ত জরুরি। এয়ার মার্শাল নূর খান তো স্পষ্টতই বলিয়াছেন যে, শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ শাসন করার আইনগত অধিকার রহিয়াছে এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের সব রকম প্রতিবন্ধকতা অবিলম্বে দূর করা উচিত। এয়ার মার্শাল আসগর খানও শেখ মুজিবুর রহমানের শর্তাবলীকে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত বলিয়া মনে করেন। বস্তুত ইহাই শান্তি প্রতিষ্ঠা ও দেশ রক্ষা করার একমাত্র পথ।’
আজ সেই ৯ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে মিছিলে মিছিলে উত্তাল ছিল সারা দেশ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই মূলত তাঁর নির্দেশ অনুযায়ীই চলছিল দেশ। চরমে পৌঁছেছিল দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন। উত্তাল এই দিনে ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে এক বিশাল জনসভায় চিরাচরিত দরাজ কণ্ঠে দেওয়া ভাষণে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেছিলেন, ‘হে বাঙালিরা, আপনারা মুজিবের ওপর বিশ্বাস রাখেন, তাকে খামোখা কেউ অবিশ্বাস করবেন না, কারণ মুজিবকে আমি ভালোভাবে চিনি।’ ভাসানীর ঘোষণাই পরদিন ঢাকার সব কটি সংবাদপত্র ফলাও করে ছেপেছিল। আজাদে আট কলামজুড়ে প্রধান শিরোনাম ছিল ‘মুজিবের সহিত একযোগে মুক্তিসংগ্রাম করিব’। সংবাদেও ব্যানার শিরোনাম ছিল ‘মুজিবের সঙ্গে একযোগে আন্দোলন করিব’। দৈনিক ইত্তেফাকে চার কলামজুড়ে প্রধান শিরোনাম ছিল ‘পঁচিশে মার্চের পর শেখ মুজিবের সহিত মিলিয়া আন্দোলন শুরু করিব’।
৯ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে ছাত্র-তরুণেরা। বিভিন্ন স্থানে চলে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি। অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সেনাসদস্যরা গোপনে নানা স্থানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর দামাল ছেলেদের। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভায় ‘স্বাধীন বাংলা দেশ’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। পরদিন ইত্তেফাকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে এ খবর। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সরকারি অফিস-আদালত জনশূন্য হয়ে পড়ার চিত্র ইত্তেফাকের ১০ মার্চের প্রথম পাতায় উঠে আসে তিনটি স্থিরচিত্রের কোলাজে। ‘সরকারী-আধা সরকারী কর্মকেন্দ্র অচল’ শিরোনামে একটি খবরে এর বিস্তারিত তথ্য ছিল।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে