মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
পরপর গত দুই মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি উদ্যোগে ইফতার পার্টি না করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। ১৩ মার্চ মন্ত্রিসভায় তিনি দেশের সবার প্রতি রমজান মাসে ইফতার পার্টি না করে সেই টাকা দিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন। এর আগে নিজ দল আওয়ামী লীগকেও ইফতার পার্টি না করে সেই অর্থ দুস্থ ও অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সে কারণে এবার এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কোথাও ইফতার পার্টির কোনো খবর গণমাধ্যমেও প্রচারিত হতে দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইফতার পার্টি সরকার কিংবা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে না করার সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। এর বাইরেও তিনি জনগণের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা ধর্মীয় দৃষ্টিতে যেমন সমর্থনযোগ্য, একইভাবে দুস্থ ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে ইফতার পার্টির অর্থ ব্যয় করার বিষয়টিও সমর্থনযোগ্য।
বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা গেছে সরকারি উদ্যোগে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে। যখনই যে সরকার ক্ষমতায় ছিল, রমজানে সরকারপ্রধানের বিশেষ ইফতার পার্টিতে বিশেষ গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং দলীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হতো। অনেকেই যেন এই আয়োজনে আমন্ত্রণ পাওয়ার জন্য আগে থেকেই মুখিয়ে থাকতেন। গণভবনে সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে ইফতার পার্টির পরিবেশ দেখার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে, তারা টেবিলে ইফতারের রমরমা আয়োজন যেমন উপভোগ করতেন, সরকারপ্রধান কিংবা মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেও প্রীত হতেন। আয়োজনে বহু মানুষেরই সমাবেশ ঘটত। দু-একটি আমন্ত্রণ পেয়ে যাওয়ার সৌভাগ্যও আমার হয়। ইফতার পার্টির এমন বিশাল আয়োজনের দৃশ্য দেখে মনে হতো এত বিপুল সরকারি অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজনটা কী, এর লাভই বা কী? আমাদের দেশটা এখনো এমন পর্যায়ে যায়নি যে ইফতার পার্টির নামে এত বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করা যায়।
শুধু সরকারপ্রধানের দপ্তরই নয়, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় প্রতিবছর রমজান এলেই ইফতার আয়োজনের নামে যা করত, তা সংযমের মাসের চরিত্রের সঙ্গে খুব একটা যায় না। যে অর্থ এভাবে খরচ করা হয়ে থাকে, তা দিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের কল্যাণমূলক কোনো কাজ করা গেলে কয়েক বছরে অনেক ভালো কাজই দৃশ্যমান হওয়ার মতো হতো হয়তো। রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে এসব আয়োজন অনেকটা বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে। যাঁরা এসব ইফতার পার্টিতে অংশ নেন, তাঁদের ভালো মানের ইফতার খাওয়ার সামর্থ্য নিশ্চয়ই রয়েছে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ইফতার পার্টি দেওয়ার সংস্কৃতি বছরে বছরে যেন বেড়েই চলছিল।
অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও একের পর এক প্রতিযোগিতা দিয়ে ইফতার পার্টির জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করতে থাকে। সেখানে ছোটখাটো রাজনৈতিক বক্তৃতা দেওয়ার খবরও গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা জেনেছি। বড় দলগুলোর ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগে ইফতার পার্টি শুধু শহরেই নয়, গ্রামে-গঞ্জেও রোজার মাসে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। উদীয়মান কোনো কোনো নেতাকে গ্রামে ইফতার পার্টির আয়োজন করে নিজের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জানান দিতেই এসব উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। কোনো কোনো দল ইফতার পার্টিতে এলাকার গণ্যমান্য ও তরুণদের নিমন্ত্রণ জানিয়ে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে থাকে। গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে সর্বত্রই ইফতার পার্টি রমজানে কোনো না কোনো সংগঠনের নেতা বা নেতা হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের আয়োজনে করা হয়ে থাকে। এসব ইফতার পার্টি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ঘটনা ঘটতেও দেখা গেছে, আবার কোথাও চাঁদাবাজির কথাও শোনা যায়। সব মিলিয়ে বিষয়টি রোজার তাৎপর্যে পালিত হওয়ার চেয়ে ভোগ-বিলাস, দল, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর প্রদর্শনীর বিষয়টি বিস্তৃত হয়েছে। অথচ রোজার আসল শিক্ষাই হচ্ছে সংযম, কিন্তু ইফতার পার্টিতে সংযমের চেয়ে অপব্যয় এবং কারও কারও ক্ষমতা প্রদর্শনের বিষয় হিসেবেও বিষয়টি আবির্ভূত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি ও দলীয় ক্ষেত্রে যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তাতে যদি ভবিষ্যতে বাড়-বাড়ন্ত ইফতার পার্টির আয়োজন বন্ধ হয়, সেটি সব দিক থেকেই মঙ্গলজনক হতে পারে। বিশেষত ইফতার পার্টির বরাদ্দ অর্থ যদি গরিব ও দুস্থ মানুষের খাদ্য, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেটি হবে জাতির জন্য কল্যাণকর। রমজানে যে যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, তিনি বা তাঁরা সামর্থ্য অনুযায়ী ইফতারের সময় ইফতার করেই থাকেন। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই নিজ ঘরে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করে থাকেন। যাঁদের অর্থ-বিত্ত আছে, তাঁরা হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে পছন্দের ইফতারসামগ্রী কিনে এনে থাকেন। আবার অনেকেই নিজের বাসা-বাড়িতেই ইফতারসামগ্রী তৈরি করেন। ফল কিংবা পানীয় জিনিস কিনে থাকেন। কেউ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ইফতারি বিলি করেন। আবার অনেকে গরিবদের মধ্যে ইফতারসামগ্রী বিলি করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে রমজানে ইফতারের বিষয়টি পারিবারিকভাবেই আমরা করতে দেখে আসছি।
এবার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অভিঘাত আমাদের দেশেও পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে সরকারের শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নয়, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমনিতেই রমজানে প্রতিবছর দেশের ব্যবসায়ী সমাজ আয়-উপার্জন বৃদ্ধির নানা প্রস্তুতি নিয়ে পসরা সাজায়। গ্রামেও এখন হাট-বাজারে নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে
ছোট ছোট নগরীর অবয়ব লাভ করতে যাচ্ছে। শহরে অভিজাত বাণিজ্যিক এলাকা ছাড়াও আবাসিক এলাকাগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।
সুপারশপ, মল নামে অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এমনকি উপজেলা পর্যায়েও গড়ে উঠেছে। গ্রাম থেকে অসংখ্য মানুষকে এই রমজানে সেই সব সুপারমার্কেটে কেনাকাটায় ভিড় করতে দেখা যায়। ঢাকা বা অন্যান্য শহরেও ঈদের এক মাস ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের ভালো প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। ব্যবসায়ীদের টার্গেটই থাকে এই মাসে ব্যবসা করে কিছু বাড়তি উপার্জন করে নেওয়া। কাঁচাবাজারগুলোতেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নিয়ে যাঁরা বসেন, তাঁরাও রোজার মাসকে আয়-উপার্জনের বিশেষ মাস হিসেবে দেখে থাকেন। রমজান উপলক্ষে সে কারণে দ্রব্যমূল্যও বাড়িয়ে দেওয়ার নানা চেষ্টা-অজুহাত আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা করে আসছেন।
এবার বেশ আগে থেকেই নানা অজুহাতে বাজার অস্থির করার সব চেষ্টাই করা হয়েছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ কাঁচাবাজারে ভয়ানকভাবে নাকাল হচ্ছে। সেই দৃশ্য প্রতিদিনই ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোতে দেখানো হচ্ছে। সরকারকে বেশ বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়েছে। সে কারণেই সম্ভবত ১৩ মার্চের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আটটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে করে বিভিন্ন পণ্য মৌসুমের বাইরেও ভোক্তারা সহনশীল দামে কিনতে পারে। সেই রকম অতি উন্নতমানের সংরক্ষণাগার যেন সেগুলো হয়, তার প্রতিও দৃষ্টি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আমাদের বাজারব্যবস্থায় যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে অসময়ের অনেক কাঁচা পণ্যসামগ্রী সারা বছর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাজারে পাওয়া যায় না, পেলেও সেগুলোর দাম অনেক চড়া হয়ে যায়। তখনই এ নিয়ে বাজারে নানা শোরগোল পড়ে যায়।
যদি আমাদের পর্যাপ্তসংখ্যক কাঁচামালের সংরক্ষণাগার থাকত, তাহলে লেবু, শসা, পেঁপেসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা যেত। বিষয়টি বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী সংরক্ষণাগার নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছেন। বলা চলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার যে দুটি নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের দেশে ইফতার পার্টি নিয়ে যে অসংযমের অপ্রয়োজনীয় সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা হয়তো ভবিষ্যতে আর আমরা দেখব না এবং কাঁচা পণ্যসামগ্রী নিয়ে যে ধরনের সংকট, দুর্নীতি, মানুষের পকেট কাটার বাজারব্যবস্থা চলে আসছে, সেটি থেকে নিকট ভবিষ্যতে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
পরপর গত দুই মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি উদ্যোগে ইফতার পার্টি না করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। ১৩ মার্চ মন্ত্রিসভায় তিনি দেশের সবার প্রতি রমজান মাসে ইফতার পার্টি না করে সেই টাকা দিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন। এর আগে নিজ দল আওয়ামী লীগকেও ইফতার পার্টি না করে সেই অর্থ দুস্থ ও অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সে কারণে এবার এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কোথাও ইফতার পার্টির কোনো খবর গণমাধ্যমেও প্রচারিত হতে দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইফতার পার্টি সরকার কিংবা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে না করার সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। এর বাইরেও তিনি জনগণের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা ধর্মীয় দৃষ্টিতে যেমন সমর্থনযোগ্য, একইভাবে দুস্থ ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে ইফতার পার্টির অর্থ ব্যয় করার বিষয়টিও সমর্থনযোগ্য।
বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা গেছে সরকারি উদ্যোগে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে। যখনই যে সরকার ক্ষমতায় ছিল, রমজানে সরকারপ্রধানের বিশেষ ইফতার পার্টিতে বিশেষ গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং দলীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হতো। অনেকেই যেন এই আয়োজনে আমন্ত্রণ পাওয়ার জন্য আগে থেকেই মুখিয়ে থাকতেন। গণভবনে সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে ইফতার পার্টির পরিবেশ দেখার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে, তারা টেবিলে ইফতারের রমরমা আয়োজন যেমন উপভোগ করতেন, সরকারপ্রধান কিংবা মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেও প্রীত হতেন। আয়োজনে বহু মানুষেরই সমাবেশ ঘটত। দু-একটি আমন্ত্রণ পেয়ে যাওয়ার সৌভাগ্যও আমার হয়। ইফতার পার্টির এমন বিশাল আয়োজনের দৃশ্য দেখে মনে হতো এত বিপুল সরকারি অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজনটা কী, এর লাভই বা কী? আমাদের দেশটা এখনো এমন পর্যায়ে যায়নি যে ইফতার পার্টির নামে এত বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করা যায়।
শুধু সরকারপ্রধানের দপ্তরই নয়, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় প্রতিবছর রমজান এলেই ইফতার আয়োজনের নামে যা করত, তা সংযমের মাসের চরিত্রের সঙ্গে খুব একটা যায় না। যে অর্থ এভাবে খরচ করা হয়ে থাকে, তা দিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের কল্যাণমূলক কোনো কাজ করা গেলে কয়েক বছরে অনেক ভালো কাজই দৃশ্যমান হওয়ার মতো হতো হয়তো। রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে এসব আয়োজন অনেকটা বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে। যাঁরা এসব ইফতার পার্টিতে অংশ নেন, তাঁদের ভালো মানের ইফতার খাওয়ার সামর্থ্য নিশ্চয়ই রয়েছে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ইফতার পার্টি দেওয়ার সংস্কৃতি বছরে বছরে যেন বেড়েই চলছিল।
অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও একের পর এক প্রতিযোগিতা দিয়ে ইফতার পার্টির জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করতে থাকে। সেখানে ছোটখাটো রাজনৈতিক বক্তৃতা দেওয়ার খবরও গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা জেনেছি। বড় দলগুলোর ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগে ইফতার পার্টি শুধু শহরেই নয়, গ্রামে-গঞ্জেও রোজার মাসে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। উদীয়মান কোনো কোনো নেতাকে গ্রামে ইফতার পার্টির আয়োজন করে নিজের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জানান দিতেই এসব উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। কোনো কোনো দল ইফতার পার্টিতে এলাকার গণ্যমান্য ও তরুণদের নিমন্ত্রণ জানিয়ে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে থাকে। গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে সর্বত্রই ইফতার পার্টি রমজানে কোনো না কোনো সংগঠনের নেতা বা নেতা হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের আয়োজনে করা হয়ে থাকে। এসব ইফতার পার্টি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ঘটনা ঘটতেও দেখা গেছে, আবার কোথাও চাঁদাবাজির কথাও শোনা যায়। সব মিলিয়ে বিষয়টি রোজার তাৎপর্যে পালিত হওয়ার চেয়ে ভোগ-বিলাস, দল, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর প্রদর্শনীর বিষয়টি বিস্তৃত হয়েছে। অথচ রোজার আসল শিক্ষাই হচ্ছে সংযম, কিন্তু ইফতার পার্টিতে সংযমের চেয়ে অপব্যয় এবং কারও কারও ক্ষমতা প্রদর্শনের বিষয় হিসেবেও বিষয়টি আবির্ভূত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি ও দলীয় ক্ষেত্রে যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তাতে যদি ভবিষ্যতে বাড়-বাড়ন্ত ইফতার পার্টির আয়োজন বন্ধ হয়, সেটি সব দিক থেকেই মঙ্গলজনক হতে পারে। বিশেষত ইফতার পার্টির বরাদ্দ অর্থ যদি গরিব ও দুস্থ মানুষের খাদ্য, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেটি হবে জাতির জন্য কল্যাণকর। রমজানে যে যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, তিনি বা তাঁরা সামর্থ্য অনুযায়ী ইফতারের সময় ইফতার করেই থাকেন। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই নিজ ঘরে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করে থাকেন। যাঁদের অর্থ-বিত্ত আছে, তাঁরা হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে পছন্দের ইফতারসামগ্রী কিনে এনে থাকেন। আবার অনেকেই নিজের বাসা-বাড়িতেই ইফতারসামগ্রী তৈরি করেন। ফল কিংবা পানীয় জিনিস কিনে থাকেন। কেউ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ইফতারি বিলি করেন। আবার অনেকে গরিবদের মধ্যে ইফতারসামগ্রী বিলি করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে রমজানে ইফতারের বিষয়টি পারিবারিকভাবেই আমরা করতে দেখে আসছি।
এবার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অভিঘাত আমাদের দেশেও পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে সরকারের শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নয়, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমনিতেই রমজানে প্রতিবছর দেশের ব্যবসায়ী সমাজ আয়-উপার্জন বৃদ্ধির নানা প্রস্তুতি নিয়ে পসরা সাজায়। গ্রামেও এখন হাট-বাজারে নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে
ছোট ছোট নগরীর অবয়ব লাভ করতে যাচ্ছে। শহরে অভিজাত বাণিজ্যিক এলাকা ছাড়াও আবাসিক এলাকাগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।
সুপারশপ, মল নামে অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এমনকি উপজেলা পর্যায়েও গড়ে উঠেছে। গ্রাম থেকে অসংখ্য মানুষকে এই রমজানে সেই সব সুপারমার্কেটে কেনাকাটায় ভিড় করতে দেখা যায়। ঢাকা বা অন্যান্য শহরেও ঈদের এক মাস ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের ভালো প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। ব্যবসায়ীদের টার্গেটই থাকে এই মাসে ব্যবসা করে কিছু বাড়তি উপার্জন করে নেওয়া। কাঁচাবাজারগুলোতেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নিয়ে যাঁরা বসেন, তাঁরাও রোজার মাসকে আয়-উপার্জনের বিশেষ মাস হিসেবে দেখে থাকেন। রমজান উপলক্ষে সে কারণে দ্রব্যমূল্যও বাড়িয়ে দেওয়ার নানা চেষ্টা-অজুহাত আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা করে আসছেন।
এবার বেশ আগে থেকেই নানা অজুহাতে বাজার অস্থির করার সব চেষ্টাই করা হয়েছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ কাঁচাবাজারে ভয়ানকভাবে নাকাল হচ্ছে। সেই দৃশ্য প্রতিদিনই ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোতে দেখানো হচ্ছে। সরকারকে বেশ বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়েছে। সে কারণেই সম্ভবত ১৩ মার্চের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আটটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে করে বিভিন্ন পণ্য মৌসুমের বাইরেও ভোক্তারা সহনশীল দামে কিনতে পারে। সেই রকম অতি উন্নতমানের সংরক্ষণাগার যেন সেগুলো হয়, তার প্রতিও দৃষ্টি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আমাদের বাজারব্যবস্থায় যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে অসময়ের অনেক কাঁচা পণ্যসামগ্রী সারা বছর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাজারে পাওয়া যায় না, পেলেও সেগুলোর দাম অনেক চড়া হয়ে যায়। তখনই এ নিয়ে বাজারে নানা শোরগোল পড়ে যায়।
যদি আমাদের পর্যাপ্তসংখ্যক কাঁচামালের সংরক্ষণাগার থাকত, তাহলে লেবু, শসা, পেঁপেসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা যেত। বিষয়টি বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী সংরক্ষণাগার নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছেন। বলা চলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার যে দুটি নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের দেশে ইফতার পার্টি নিয়ে যে অসংযমের অপ্রয়োজনীয় সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা হয়তো ভবিষ্যতে আর আমরা দেখব না এবং কাঁচা পণ্যসামগ্রী নিয়ে যে ধরনের সংকট, দুর্নীতি, মানুষের পকেট কাটার বাজারব্যবস্থা চলে আসছে, সেটি থেকে নিকট ভবিষ্যতে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে