মায়ের প্রতি অবহেলা কেন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭: ২৩

ঘটনাটি যেকোনো বিবেকবান মানুষকে আহত করবে। নিজ দুই সন্তান ও জামাতা মিলে ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধ মাকে মারধর করেছেন। মা উপায় না দেখে আদালতে সন্তানদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সেই মামলায় তিন আসামিকে  আদালত জামিন দেননি। কারণ তারা জেল থেকে বের হয়ে মাকে মেরে ফেলতে পারেন—মায়ের এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন।

এ নিয়ে আজকের পত্রিকার মঙ্গলবারের প্রথম পাতায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পিতা-মাতা বাড়ি বানান, কষ্টকর উপার্জিত অর্থের অনেকখানি সঞ্চিত রাখেন সন্তানের সুখের জন্য, অথচ বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের কাছ থেকে নিগ্রহের শিকার হতে হয়। জীবনের শেষ বেলায় পিতা-মাতা অচ্ছুত হয়ে যান সন্তানের কাছে। এসব নিয়ে নানান বিশ্লেষণ আছে। সমাজবিজ্ঞানী থেকে মনোবিজ্ঞানী এবং অর্থনীতিবিদ নানা ধরনের বিশ্লেষণ করেন। কিন্তু পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে কোনো বিশ্লেষণই যথেষ্ট নয়।

জীবনসায়াহ্নে সন্তানের সেবা পাওয়া বাবা-মায়ের একমাত্র চাওয়া। তাই বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দায়িত্ব নেওয়া, দেখাশোনা করা প্রত্যেক সন্তানের কর্তব্য। আইনগতভাবেও সন্তানেরা বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে বাধ্য। কিন্তু উল্টো ঘটনা আমাদের চোখে পড়ছে। ইন্টারনেটের এই সময়ে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথাকথিত সামাজিক হলেও ব্যক্তিজীবনে অতিমাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছি। পরিবারগুলো ভেঙে অণু থেকে পরমাণু পরিবারে পরিণত হচ্ছে। পরিবারে ভাঙন, যৌথ পরিবার ভেঙে আলাদা ছোট ছোট পরিবারে জন্ম হওয়াটা নতুন ব্যাপার নয়। কিন্তু যেসব পরিবার দিনে দিনে দারুণভাবে আত্মকেন্দ্রিক ও অমানবিক হয়ে উঠল কবে, তা আমরা টের পাচ্ছি তো?

একজন সন্তান কোনোভাবেই পিতা-মাতার ঋণ শোধ করতে পারবে না। কারণ তাঁদের হাত ধরেই এই পৃথিবীর আলো দেখা, চলতে শেখা, এগিয়ে যাওয়া। জন্মের পর থেকে আমাদের বহতা জীবনের উৎস তো তাঁরাই। অথচ কী অবলীলায় আমরা বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের অবহেলা, অনাদর, অসম্মান করছি। যে সময়ে তাঁদের আগলে রাখার কথা, সেই সময়েই আমরা তাঁদের অবহেলা করছি। আতঙ্কের বিষয়, সংখ্যাটা দিনে দিনে বাড়ছে।

সংবাদ সূত্রে জানা যায়, ওই বৃদ্ধ মায়ের ছেলে ব্যবসায়ী এবং মেয়ে ও তাঁর স্বামী সরকারি কর্মকর্তা। ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত না হলে, মা তাঁর সম্পত্তি না দিলে তিনি অপরাধ করতেন বলে ভাবা যেত। কিন্তু ছেলেমেয়েরা যখন প্রতিষ্ঠিত, তখন সম্পত্তির জন্য মাকে আঘাত করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

অনেকে পাশ্চাত্য সমাজের কথা বলে থাকেন। কিন্তু সেখানে রাষ্ট্র বৃদ্ধদের সব দায়িত্ব গ্রহণ করে। সন্তান ও পিতা-মাতা আলাদা থাকলেও তাদের মধ্যে দায়িত্বে অবহেলার কোনো ব্যাপার থাকে না।

এ ধরনের ঘটনা রোধ করতে আইনের প্রয়োগই যথেষ্ট নয়। ব্যক্তির দায়িত্ববোধের জায়গা মজবুত হওয়া জরুরি। যেকোনো ব্যক্তি যদি সম্পত্তির প্রতি লোভ পরিহার করতে না পারে, তাহলে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা যাবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত