ইশতিয়াক হাসান
একটা সময় প্রায় গোটা বাংলাদেশেই ছিল চিতা বাঘেদের রাজ্য। গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে, এমনকি উত্তরা ও মিরপুরেও দেখা মিলত এদের। মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় তো ছিল চিতা বাঘেদের প্রিয় বিচরণ ভূমি। সিলেট বিভাগের চা বাগানগুলোতেও মহানন্দে চষে বেড়াত তারা। তবে এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, অনেকে বিশ্বাসই করতে চান না বাংলাদেশের বনাঞ্চলে আর বুনো চিতা বাঘ আছে। কিন্তু শত বিপদ মাথায় নিয়ে এখনো এ দেশের প্রকৃতিতে সত্যি আছে এই প্রাণীটি। চলুন তাহলে বেরিয়ে পড়ি চিতা বাঘের খোঁজে।
উত্তরের মরণফাঁদ
নীলফামারী সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের কাঞ্চনপাড়া গ্রাম। সেখানে অলিয়ার রহমানের মুরগির খামার। তিন হাজারের বেশি মুরগি আছে খামারে। বন বিড়াল ও শিয়ালের কবল থেকে মুরগি বাঁচাতে খামার মালিক পুরো খামারটি জিআই তার দিয়ে ঘিরে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে দেন। এতে ওই বৈদ্যুতিক তারে শক খেয়ে মুরগির লোভে হানা দেওয়া কয়েকটি বনবিড়াল ও শিয়াল মারা পড়ে। তবে গত শুক্রবার রাতে ঘটল অস্বাভাবিক এক কাণ্ড। রাত তখন পৌনে ৩ টা। খামারের পেছনে বন্যপ্রাণীর আওয়াজ পাওয়া গেল। দেরি না করে সুইচ টিপে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হলো। এর কিছুক্ষণ পরই একটি জন্তু বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পড়ার শব্দ শোনা গেল। তবে আওয়াজটা বলে দিচ্ছিল বন বিড়াল বা শিয়াল নয়, অনেক বড় কোনো জন্তু আটকা পড়েছে ফাঁদে। আতঙ্কিত হয়ে বাড়ির মানুষেরা টর্চ লাইট জ্বেলে চমকে ওঠেন। একটি চিতা বাঘ বিদ্যুতায়িত তারের স্পর্শে মরে পড়ে আছে।
বাঘ মারা পড়েছে—এ তো বড় আনন্দের খবর; অন্তত আমাদের কাছে, তাই না! সকালে মৃত বাঘটির গলায় দড়ি পেঁচিয়ে বাইরে আনা হতেই একে দেখতে আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কয়েক হাজার মানুষ হাজির। তবে এলাকার মানুষের মনে আরেকটি বড় দুশ্চিন্তা ভর করেছে, তা হলো আরও একটি চিতা বাঘ এলাকায় রয়ে যাওয়ার গুজব। পত্রিকা মারফত এবং পঞ্চগড়ের বন্যপ্রাণীপ্রেমী ও আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহর সঙ্গে কথা বলে মোটামুটি জানতে পারি নীলফামারীর চিতা বাঘ সম্পর্কে।
তবে কেউ কেউ অলিয়ার রহমানের বাড়ির পেছনের ভুট্টা খেতে ওপর একটি চিতা বাঘ অদৃশ্য হওয়ার কথা বললেও নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি। তবে নিঃসন্দেহে চিতা বাঘটার ভাগ্য ভালো। না হলে মানুষের পিটুনিতে ওটাকে যে পৃথিবীর মায়া কাটাতে হতো সন্দেহ নেই।। গত প্রায় ১৪ বছরে রংপুর বিভাগে আটটি চিতাবাঘের মৃত্যুর ঘটনা এই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। এদের বেশির ভাগকে ধাওয়া করে পিটিয়ে মারা হয়েছে।
এই অঞ্চলের পঞ্চগড়েই জীবিত চিতা বাঘের দুর্লভ একটি ছবি তুলছিলেন বন্যপ্রাণীপ্রেমী ও আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ। সেটা ২০১৮ সালে। একটা ঝোপে আশ্রয় নিয়েছিল বাঘটা। চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছিল উৎসুক জনতা। মরিয়া চিতা বাঘটা হুংকার দিচ্ছিল, লেজ নাচাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, যেকোনো মুহূর্তে ঝোপ থেকে লাফ দেবে। এর মধ্যেই কাছে গিয়ে কয়েকটা ছবি তোলেন সাবাহ। অবশ্য উত্তেজিত জনতার রোষ থেকে আশ্চর্য সুন্দর সেই বাঘটিকে বাঁচানো যায়নি।
এল কীভাবে
কিন্তু ঘটনা হলো নীলফামারীতে চিতা বাঘ এল কীভাবে? এটা সত্যি—এক সময় পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম এলাকায় চিতা বাঘেদের দেখা মিলত বিস্তর। কিন্তু বহু বছর ধরেই এই অঞ্চলে চিতা বাঘ আশ্রয় নেওয়ার মতো বড় বন নেই। তাই এদিকটায় চিতা বাঘেদের বাসও নেই। তবে কথা হলো আমাদের উত্তরের এই জেলাগুলোর ওপাশেই ভারতের ডুয়ার্স এলাকা। চিতা বাঘের আড্ডাখানা। এখানকার চিতা বাঘেরা ডুয়ার্সের সবুজ চা বাগানে ঘুরে বেড়ায় মনের আনন্দে। আর ওগুলোর মধ্যে যেগুলো একটু দুর্ভাগা, সেগুলো আমাদের নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম এলাকায় চলে আসে। তার পর কোনো গৃহস্থের মুরগির খামারে হানা দেওয়ার অপরাধে কিংবা নিজেদের হলুদে-কালোয় মেশানো সুন্দর চেহারাটা প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার কারণে মারা পড়ে গ্রামবাসীদের পিটুনিতে। অথচ আমাদের বরং প্রকৃতির আশ্চর্য সুন্দর এই প্রাণীগুলো এখনো এদিকটায় পা দেওয়ায় খুশি হওয়ার কথা। এই ভেবে ভালো লাগছে যে, পিতৃপুরুষের পুরোনো আস্তানাকে এখনো একেবারে ভুলে যায়নি নয়া জমানার চিতা বাঘেরা।
পাহাড়ি বনের চিতা বাঘ
গল্পটা চিতা বাঘ নিয়ে। এখন বাংলাদেশে ওদের মূল আস্তানা পাহাড়ি বনে। তাই সেদিকে একটু নজর দিই। মাতামুহুরী সংরক্ষিত বন, আলীকদম। মুরং এক যুবক যাচ্ছেন জুমের খেতে। যে পথটা দিয়ে যাচ্ছেন, অরণ্য বেশ গভীর। হঠাৎ দেখলেন ওটাকে। বিদ্যুৎ চমকের মতো লাফিয়ে পড়ল তাঁর পথের একটু সামনে। হলুদ জমিনে কালো ফোঁটার চিতা বাঘ। বহু দিন পর আশ্চর্য সুন্দর এই প্রাণীটিকে দেখলেন মুরং যুবক। কাঁটা দিয়ে উঠল শরীর, রোমাঞ্চে। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখল জন্তুটা। তারপরই এক লাফে হারিয়ে গেল পাশের জঙ্গলে। কোনো উপন্যাস, বা পুরোনো দিনের শিকার কাহিনির অংশ নয় এটি। ঘটনাটা গত বছরের এপ্রিলের।
ওই ঘটনার ঠিক এক মাস আগে চলে যাই টাইম মেশিনে চেপে। এবারের ঘটনাস্থল বান্দরবানের থানচির সাঙ্গু সংরক্ষিত বন। মুরংদের একটি দল জঙ্গলে ঢুকেছে; ইচ্ছে, মাছ শিকার। সঙ্গে তাগড়া কয়েকটা কুকুর। এই কুকুরগুলো হরিণ, শূকরের মতো বন্যপ্রাণী শিকারেও সাহায্য করে তাঁদের। এ সময়ই কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ শুরু করল। কণ্ঠ বলে দিচ্ছে, কিছুটা আতঙ্কিত এরা। তারপরই মুরংদের চোখে পড়ল জন্তুটার দিকে। পাহাড় থেকে নেমে এসেছে। আশ্চর্য সুন্দর এক চিতা বাঘ। বেচারা আচমকা মানুষ, আর কুকুরের দলের সামনে চলে এসেছে। এমনিতে অবশ্য চিতা বাঘের প্রিয় খাবারের তালিকায় কুকুর আছে ওপরের দিকে। তবে মানুষ কী জিনিস—এটা সে এত দিনে বেশ বুঝে গিয়েছে। সরে পড়তে শুরু করল লাজুক প্রাণীটা।
তবে সঙ্গে মালিক থাকাতে সাহস আকাশ ছুঁয়েছে শিকারি কুকুরগুলোর। তাড়া করল ওটাকে। পেছন পেছন হই হল্লা করতে করতে চলল মারমারাও। জঙ্গলের এক পাশে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল চিতাটা। তবে তখনই খেপে গিয়ে করাতচেরা কণ্ঠে গর্জে উঠল জন্তুটা। কুকরগুলো ভয়ে পিছু হটল। মুহূর্তে জঙ্গলে ঢুকে পড়ল ধূর্ত জন্তুটা। তবে এর আগেই একটা প্রমাণ রেখে গেল। মারমা দলটির এক তরুণ দলছুট হয়ে পাশের এক টিলায় উঠে পড়েছিল। সেখান থেকে চিতা বাঘটাকে বন্দী করে ফেলল মোবাইলের ক্যামেরায়।
একটা সময় অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, বাংলাদেশে বুঝি চিতা বাঘ আর নেই। তবে নানা তথ্য-প্রমাণ জানান দিচ্ছিল, এরা আছে। তবে প্রমাণ মিলছিল না। প্রথম নিশ্চিত প্রমাণ হাজির করে ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স (সিসিএ) নামের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করা সংগঠনটি। ২০১৫ সালে সাঙ্গু রিজার্ভে তাদের ক্যামেরা ট্র্যাপে বন্দী হয় এক চিতা বাঘ। তার পর ২০২১ সালে সিসিএর এক পাহাড়ি প্যারা বায়োলজিস্ট সরাসরি ছবি তুলে ফেললেন চিতা বাঘের।
চিতা বাঘ মিতা আমার
আমার সবচেয়ে পছন্দের বন্য প্রাণীগুলোর একটি চিতা বাঘ। তাই যে জঙ্গলে যাই, প্রিয় জন্তুটির খোঁজ নিই। কখনো আবার এদের ট্রেইল অনুসরণ করে সন্ধানে বের হয়ে পড়ি। একসময় বাংলাদেশের অনেক বনেই দেখা মিলত এদের। ছিল ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়ও। এমনকি আজ থেকে বছর ষাটেক আগেও ঢাকার উত্তরা আর মিরপুরে চিতাবাঘ শিকারের কথা বলেছেন এনায়েত মওলা তাঁর ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে।
এনায়েত মাওলা বইটিতে জুড়ির রত্না ও তার পাশের সাগরনাল চা বাগানের জঙ্গলে চিতা বাঘ ও বাঘ শিকারের রোমহর্ষক বিবরণ আছে! তাই সেই ২০০৭-০৮ সালের দিকে ঘুরে এসেছিলাম ওদিকটা। অদ্ভুত এক রাত কেটেছিল পুটিছড়া বাংলোতে। সন্ধ্যা ঘনানোর ঠিক আগে বাংলোর টিলা থেকে নেমে হাঁটার সময় চা বাগানে আলাপ জমে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে। তাঁদের কাছে এখানে নতুন বসতি স্থাপনের পর মশাল দিয়ে চিতা বাঘ তাড়ানোর গল্প চোখ বড় বড় করে শুনেছি নব্বইয়ের দশকে। রাগনার বনে ঘোরার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, এখনো পাথারিয়া রেঞ্জের পাহাড়ে আছে চিতা বাঘেরা।
এর দু-এক বছর পর পাথারিয়া পাহাড়ের আরেক বন জুড়ির লাঠিটিলায় গিয়ে দেখা হয়েছিল বন বিভাগের ভিলেজার মন্টু মিয়া, আর ফখরুদ্দীনের সঙ্গে। তাঁরাই দিল খবর—তিনটি গরু জঙ্গলে চরে বেড়ানোর সময় মারা পড়ে চিতা বাঘের আক্রমণে। প্রথম দুটো মারা পড়ে একই দিনে, আরেকটা ছয় মাস পর। প্রতি শীতেই চিতার ডাক শোনেন তাঁরা। সন্দেহ প্রকাশ করতেই, ফখরুদ্দীন আমাদের চিতা বাঘের ডাক নকল করে শোনাল। চমকে উঠলাম, ভুল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। চিতার সেই হুবহু করাতচেরার ডাকই অনুকরণ করেছেন তিনি। কাছাকাছি সময়ে একটি চিতা বাঘকে গ্রামবাসীরা বিষ টোপ দিয়ে মারার ঘটনা জানান, বন বিভাগের ডেপুটি রেঞ্জার নুরুজ্জামান ভাই।
স্কুলে পড়ি তখন। হবিগঞ্জে নানার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেজ মামা একদিন বলছিলেন, ঢাকা-সিলেটের রাস্তাটা চুনারুঘাটের যেখানটায় একটা বনের ভেতর দিয়ে গেছে, বছর কয়েক আগেও রাতের বেলায় গাড়ির হেডলাইটের আলোয় সেখানে দেখা যেত চিতা বাঘের গায়ের ফোঁটা কিংবা জ্বলতে থাকা চোখ। কখনো আবার রাস্তা পেরোনোর সময় আগুয়ান কোনো গাড়ি দেখে অজানা প্রাণী ঠাউরে থাবা চালিয়ে গ্লাস ভেঙে দিয়েছে চিতারা। ওই পথে যাওয়ার সময় আঁধার নেমে গেলে চালকেরা তাই প্রমাদ গুণত। পরে জানতে পারি ওই বনটা সাতছড়ি। সিলেট বিভাগের আদমপুর, সাতছড়ি, লাউয়াছড়ার মতো জঙ্গলগুলোতে গিয়েও শুনেছি দুঃসাহসী চিতাদের কত কাণ্ড-কীর্তির গল্প। তবে চিতা বাঘের সিলেটে সবচেয়ে সেরা ডেরা ছিল রেমা-কালেঙ্গায়। ২০০৪ সালে যখন রেমা যাই, তখন এক ফরেস্ট গার্ড বলেছিলেন চিতা বাঘেদের শীতে গায়ে রোদ লাগানোর জন্য বনপথে বসে থাকার গল্প। দুই বছর বাদে ২০০৬ সালে কালেঙ্গায় পাহাড়ের ওপরের বন বাংলোয় কাটিয়ে ছিলাম একটি রাত। তখন রেঞ্জার আকবর ভাই বলেছিলেন, মাস কয়েক আগে রাতে রেমা থেকে ফিরছিলেন মোটরসাইকেলে। হঠাৎ পথের ওপর এসে দাঁড়ায় অপূর্ব সুন্দর এক চিতা। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিল ওটা। পরমুহূর্তেই চম্পট দেয়। তখনই শুনি ছনবাড়ি বিটে চিতা বাঘের আক্রমণে গরু মারা পড়ার কাহিনি। পরদিন দেখে এসেছিলাম যেখানে গরুটা মারা পড়েছে, সে জায়গাটি। গত বছরও কালেঙ্গা গিয়ে চিতা বাঘের একটি বাছুর শিকারের গুজব শুনেছিলাম। তবে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারিনি।
সালটা ২০১১। সাঙ্গু রিজার্ভের গহিনে যাওয়ার জন্য থানচি থেকে নৌকা ভাড়া করে রওনা দিয়েছিলাম। নৌকার দুই মাঝি মারমা। এর মধ্যে একজন বয়সে একবারেই তরুণ। ভারী হাসি-খুশি। ভাব জমে গেলে অকপটে স্বীকার করলেন, জঙ্গলে হরিণ শিকারে যাওয়ার কথা। মেলে দিলেন গল্পের ঝাঁপি। দুই বছর আগে শিকারে গিয়েছিলেন, মোদকের মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া পাহাড়ে। তখন দুটো প্রাণী মুখোমুখি হয়ে যায় আচমকা। ছোটাছুটি করে খেলছিল তারা নিজেদের মধ্যে। হলুদ জমিনে কালো ফোঁটা ওগুলোর, চিতা বাঘ। তবে মানুষজন দেখে মুহূর্তেই জঙ্গলে হাওয়া।
এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম কিংবা সিলেট অঞ্চলের যে জঙ্গলেই যাই, আমার অন্যতম কাজ চিতা বাঘের খোঁজ করা। অদ্ভুত সুন্দর এই জন্তুটির ট্রেইল অনুসরণ করে হানা দিয়েছি কত জঙ্গলে!
গড়ের রাজার বিদায়
মধুপুরের জলছত্র মিশনের নাম শুনলেই শিহরণ জাগে শরীরে। যদিও এখন ওই এলাকা ঘুরে আনারস বাগান ছাড়া পাবেন না কিছুই। আমাকে টানে পঞ্চাশ বছর কিংবা তারও আগের পুরোনো সেই জলছত্র মিশন, যেখানে ছিল বাঘ-চিতার আড্ডাখানা।
স্বাধীনতার বছর কয়েক আগের ঘটনা। জলছত্র মিশনের দক্ষিণের পাকা রাস্তা। ধারেই বিশাল এক বট গাছ। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি। প্রবল গরমে প্রাণ যায়। ত্যক্তবিরক্ত একটা চিতা বাঘ বটের মোটা একটা ডালে চড়ে বসল। একটু বাতাস বইতেই আয়েশ করে গা এলিয়ে দিল। শান্তিতে চোখ বুজে এল। তবে সুখ কপালে সইল না। মধুপুরের হাটুরেদের একটি দল ওদিক দিয়ে যাচ্ছিল। ওরা ওটাকে দেখে ফেলল।
হাটুরেরা খবর দিল, শিকারি মনসিনিয়র মাইকেল ডি’কস্তাকে। চিতাটা বেশ দূরে। তারপরও লোকজনের পীড়াপীড়িতে গুলি করলেন। কপাল ভালো চিতাটার। গুলিটা লাগল ও যেখানে বসেছিল, তার একটু নিচে। নিঃশব্দে গাছ থেকে নেমে ঝোপের আড়াল নিয়ে লোকজনের নাগালের বাইরে চলে গেল সে।
বায়জীদ খান পন্নীর ‘বাঘ-বন-বন্দুক’ বইয়েও মধুপুর এলাকায় চিতা বাঘ শিকারের কাহিনি আছে। মধুপুরের জঙ্গলে বাঘ ছিল সম্ভবত ১৯৬০-এর আশপাশ পর্যন্ত। তবে চিতা আরও কিছুটা বেশি দিন টিকেছিল। জানামতে, মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বছর পরও কালেভদ্রে ওদের দেখা মিলত। নিদেনপক্ষে রাতে শোনা যেত রোমহর্ষক সেই করাতচেরা ডাক।
দিবাস্বপ্ন দেখি, হয়তো পরের আরও অনেকগুলো বছরও চিতারা ছিল ওখানে। ধূর্ত জন্তুগুলো হিংস্র দু-পেয়েদের ফাঁকি দিয়ে বেঁচে থাকার কৌশল শিখে ফেলেছিল।
এক সময়ের শিকারি সরওয়ার পাঠান ভাই এখন পুরোদস্তুর বন্যপ্রাণীপ্রেমী। তাঁর কাছে শুনেছিলাম আশ্চর্য এক গল্প। ওটা অন্তত বছর পঁচিশেক আগের কাহিনি। এর বেশ কিছু সময় আগে মধুপুর এলাকা থেকে বিদায় নিয়েছে গড়ের রাজা চিতা বাঘ। তো গাজীপুরের জঙ্গলের ধারের এক বাড়িতে যেতেন তিনি প্রায়ই। ওরা জাল দিয়ে মেছো বাঘ ধরত। ওই বাড়ির লোকেরাই বলত বিশাল এক মেছো বাঘের গল্প। ওটা খুব ধূর্ত ছিল। জালে ধরা পড়ত না কখনো। আমার নিজের সন্দেহ ওটা হয়তো আদপে মেছো বাঘই ছিল না, ছিল মেছো বাঘের ছদ্মবেশে টিকে থাকা গড়ের শেষ চিতা বাঘ!
গবেষণায় আশার আলো
তবে মধুপুর থেকে চিতা হারিয়ে যাওয়াই শেষ কথা নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে এখনো হঠাৎ হঠাৎ মেলে চিতার খবর। শিকারিদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে এখনো টিকে আছে ওরা।
সম্প্রতি ‘ডিটেকটিং দ্য স্পট: আ রিভিউ অন ল্যাপার্ড অকারেন্সেস ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি কাজ করেছেন মুনতাসির আকাশ, স্কট ট্রেগারস, তানিয়া জাকির, শাহরিয়ার সিজার রহমান, ফাতেমা-তুজ-জোহরা খালেক মিলা ও অনিমেষ ঘোষ। চিতা বাঘ নিয়ে বাংলাদেশে এমন গবেষণা এটাই প্রথম। সেখান থেকেও জানা যায় বাংলাদেশে চিতা বাঘদের সাম্প্রতিক বিচরণের নানা খবর। সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে চিতা বাঘ দেখার পাঁচটি ও কক্সবাজার অঞ্চলে চিতা বাঘ দেখার নিশ্চিত দুটি তথ্যের কথা বলা হয়েছে।
সুপ্রিয় চাকমা, শাহরিয়ার সিজার রহমানদের গবেষণা, ক্যামেরা ট্র্যাপও নিশ্চিত করছে, এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্তত কয়েকটি এলাকায় চিতা বাঘের আলাদা বসতি আছে। যদিও কোনোখানেই সংখ্যাটি বেশি নয়। রাঙামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ সুপ্রিয় চাকমা যে গবেষণা করেছিলেন, তার ফলাফল নিশ্চিত করে বান্দরবানের সাঙ্গু এবং রাঙামাটির কাসালং এবং রাইংখং সংরক্ষিত অরণ্যে চিতা বাঘের উপস্থিতি।
রহস্যময় কালো চিতা
বাংলাদেশের বনে এমনকি কালো চিতাও দেখা গেছে। শরীরে মেলানিনের আধিক্যে যেসব চিতাবাঘের গায়ের রং কালো হয়, তারাই পরিচিত কালো চিতা বা ব্ল্যাক প্যান্থার নামে। তবে এরা আলাদা কোনো প্রজাতি নয়। বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ খসরু চৌধুরী কালো চিতা দেখেছিলেন তিন যুগ আগে বান্দরবানের আলীকদম এলাকায়। ২০১১ সালে বড় মোদক যাওয়ার সময় আমাদের মারমা গাইড আংসু মারমার কাছ থেকে জানতে পারলাম, ১৯৯০ সালের দিকে রেমাক্রি এলাকায় একটা কালো চিতা ফাঁদ পেতে মেরেছিল শিকারিরা।
স্বপ্ন দেখতে চাই
তবে ভয়াবহ একটা আশঙ্কায়ও কেঁপে ওঠে বুক। পার্বত্য চট্টগ্রামের চিতা বাঘ অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় চলছে সমানে গাছকাটা, বন্যপ্রাণী শিকার। চিতার অন্য বসতিগুলোও আছে বিপদে। আমাদের পাশের দেশ ভারতের বন বিভাগ প্রতিটি জঙ্গলে চিতা বাঘের সংখ্যা জানা। আর আমাদের বনগুলোতে চিতা বাঘের অবস্থা সম্পর্কে অনেকটাই ধোঁয়াশায় আছি আমরা। এত চমৎকার একটি প্রাণী, কিন্তু কী অবহেলা!
তবে বন্যপ্রাণীর ব্যাপারে আমি সব সময় অতি আশাবাদী মানুষ। তাই যেমন এখনো স্বপ্ন দেখি পার্বত চট্টগ্রামে বাঘের আস্তানার, তেমনি আশা করি পার্বত্য চট্টগ্রাম আর সিলেটের বিভিন্ন অরণ্যে পুরোনো দিনের মতো মহানন্দে ঘুরে বেড়াবে চিতা বাঘেরা। চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড-মিরসরাই এবং ভারতের সীমান্তঘেঁষা শেরপুর-নেত্রকোনা-জামালপুরেও এদের ছোট ছোট দু-একটি বসতিরও স্বপ্ন দেখি। আবার জেগে জেগেই স্বপ্ন দেখি মধুপুরের অরণ্যে গড়ের রাজাদের প্রস্থানের কিংবা নীলফামারী-দিনাজপুর-পঞ্চগড় এলাকার সমতলের ছোট ছোট ঝোপ-ঝাড়, কিংবা জঙ্গলে চিতা বাঘেদের বছরের অন্তত কয়েকটি মাস আস্তানা গাড়ার।
একটা সময় প্রায় গোটা বাংলাদেশেই ছিল চিতা বাঘেদের রাজ্য। গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে, এমনকি উত্তরা ও মিরপুরেও দেখা মিলত এদের। মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় তো ছিল চিতা বাঘেদের প্রিয় বিচরণ ভূমি। সিলেট বিভাগের চা বাগানগুলোতেও মহানন্দে চষে বেড়াত তারা। তবে এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, অনেকে বিশ্বাসই করতে চান না বাংলাদেশের বনাঞ্চলে আর বুনো চিতা বাঘ আছে। কিন্তু শত বিপদ মাথায় নিয়ে এখনো এ দেশের প্রকৃতিতে সত্যি আছে এই প্রাণীটি। চলুন তাহলে বেরিয়ে পড়ি চিতা বাঘের খোঁজে।
উত্তরের মরণফাঁদ
নীলফামারী সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের কাঞ্চনপাড়া গ্রাম। সেখানে অলিয়ার রহমানের মুরগির খামার। তিন হাজারের বেশি মুরগি আছে খামারে। বন বিড়াল ও শিয়ালের কবল থেকে মুরগি বাঁচাতে খামার মালিক পুরো খামারটি জিআই তার দিয়ে ঘিরে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে দেন। এতে ওই বৈদ্যুতিক তারে শক খেয়ে মুরগির লোভে হানা দেওয়া কয়েকটি বনবিড়াল ও শিয়াল মারা পড়ে। তবে গত শুক্রবার রাতে ঘটল অস্বাভাবিক এক কাণ্ড। রাত তখন পৌনে ৩ টা। খামারের পেছনে বন্যপ্রাণীর আওয়াজ পাওয়া গেল। দেরি না করে সুইচ টিপে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হলো। এর কিছুক্ষণ পরই একটি জন্তু বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পড়ার শব্দ শোনা গেল। তবে আওয়াজটা বলে দিচ্ছিল বন বিড়াল বা শিয়াল নয়, অনেক বড় কোনো জন্তু আটকা পড়েছে ফাঁদে। আতঙ্কিত হয়ে বাড়ির মানুষেরা টর্চ লাইট জ্বেলে চমকে ওঠেন। একটি চিতা বাঘ বিদ্যুতায়িত তারের স্পর্শে মরে পড়ে আছে।
বাঘ মারা পড়েছে—এ তো বড় আনন্দের খবর; অন্তত আমাদের কাছে, তাই না! সকালে মৃত বাঘটির গলায় দড়ি পেঁচিয়ে বাইরে আনা হতেই একে দেখতে আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কয়েক হাজার মানুষ হাজির। তবে এলাকার মানুষের মনে আরেকটি বড় দুশ্চিন্তা ভর করেছে, তা হলো আরও একটি চিতা বাঘ এলাকায় রয়ে যাওয়ার গুজব। পত্রিকা মারফত এবং পঞ্চগড়ের বন্যপ্রাণীপ্রেমী ও আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহর সঙ্গে কথা বলে মোটামুটি জানতে পারি নীলফামারীর চিতা বাঘ সম্পর্কে।
তবে কেউ কেউ অলিয়ার রহমানের বাড়ির পেছনের ভুট্টা খেতে ওপর একটি চিতা বাঘ অদৃশ্য হওয়ার কথা বললেও নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি। তবে নিঃসন্দেহে চিতা বাঘটার ভাগ্য ভালো। না হলে মানুষের পিটুনিতে ওটাকে যে পৃথিবীর মায়া কাটাতে হতো সন্দেহ নেই।। গত প্রায় ১৪ বছরে রংপুর বিভাগে আটটি চিতাবাঘের মৃত্যুর ঘটনা এই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। এদের বেশির ভাগকে ধাওয়া করে পিটিয়ে মারা হয়েছে।
এই অঞ্চলের পঞ্চগড়েই জীবিত চিতা বাঘের দুর্লভ একটি ছবি তুলছিলেন বন্যপ্রাণীপ্রেমী ও আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ। সেটা ২০১৮ সালে। একটা ঝোপে আশ্রয় নিয়েছিল বাঘটা। চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছিল উৎসুক জনতা। মরিয়া চিতা বাঘটা হুংকার দিচ্ছিল, লেজ নাচাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, যেকোনো মুহূর্তে ঝোপ থেকে লাফ দেবে। এর মধ্যেই কাছে গিয়ে কয়েকটা ছবি তোলেন সাবাহ। অবশ্য উত্তেজিত জনতার রোষ থেকে আশ্চর্য সুন্দর সেই বাঘটিকে বাঁচানো যায়নি।
এল কীভাবে
কিন্তু ঘটনা হলো নীলফামারীতে চিতা বাঘ এল কীভাবে? এটা সত্যি—এক সময় পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম এলাকায় চিতা বাঘেদের দেখা মিলত বিস্তর। কিন্তু বহু বছর ধরেই এই অঞ্চলে চিতা বাঘ আশ্রয় নেওয়ার মতো বড় বন নেই। তাই এদিকটায় চিতা বাঘেদের বাসও নেই। তবে কথা হলো আমাদের উত্তরের এই জেলাগুলোর ওপাশেই ভারতের ডুয়ার্স এলাকা। চিতা বাঘের আড্ডাখানা। এখানকার চিতা বাঘেরা ডুয়ার্সের সবুজ চা বাগানে ঘুরে বেড়ায় মনের আনন্দে। আর ওগুলোর মধ্যে যেগুলো একটু দুর্ভাগা, সেগুলো আমাদের নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম এলাকায় চলে আসে। তার পর কোনো গৃহস্থের মুরগির খামারে হানা দেওয়ার অপরাধে কিংবা নিজেদের হলুদে-কালোয় মেশানো সুন্দর চেহারাটা প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার কারণে মারা পড়ে গ্রামবাসীদের পিটুনিতে। অথচ আমাদের বরং প্রকৃতির আশ্চর্য সুন্দর এই প্রাণীগুলো এখনো এদিকটায় পা দেওয়ায় খুশি হওয়ার কথা। এই ভেবে ভালো লাগছে যে, পিতৃপুরুষের পুরোনো আস্তানাকে এখনো একেবারে ভুলে যায়নি নয়া জমানার চিতা বাঘেরা।
পাহাড়ি বনের চিতা বাঘ
গল্পটা চিতা বাঘ নিয়ে। এখন বাংলাদেশে ওদের মূল আস্তানা পাহাড়ি বনে। তাই সেদিকে একটু নজর দিই। মাতামুহুরী সংরক্ষিত বন, আলীকদম। মুরং এক যুবক যাচ্ছেন জুমের খেতে। যে পথটা দিয়ে যাচ্ছেন, অরণ্য বেশ গভীর। হঠাৎ দেখলেন ওটাকে। বিদ্যুৎ চমকের মতো লাফিয়ে পড়ল তাঁর পথের একটু সামনে। হলুদ জমিনে কালো ফোঁটার চিতা বাঘ। বহু দিন পর আশ্চর্য সুন্দর এই প্রাণীটিকে দেখলেন মুরং যুবক। কাঁটা দিয়ে উঠল শরীর, রোমাঞ্চে। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখল জন্তুটা। তারপরই এক লাফে হারিয়ে গেল পাশের জঙ্গলে। কোনো উপন্যাস, বা পুরোনো দিনের শিকার কাহিনির অংশ নয় এটি। ঘটনাটা গত বছরের এপ্রিলের।
ওই ঘটনার ঠিক এক মাস আগে চলে যাই টাইম মেশিনে চেপে। এবারের ঘটনাস্থল বান্দরবানের থানচির সাঙ্গু সংরক্ষিত বন। মুরংদের একটি দল জঙ্গলে ঢুকেছে; ইচ্ছে, মাছ শিকার। সঙ্গে তাগড়া কয়েকটা কুকুর। এই কুকুরগুলো হরিণ, শূকরের মতো বন্যপ্রাণী শিকারেও সাহায্য করে তাঁদের। এ সময়ই কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ শুরু করল। কণ্ঠ বলে দিচ্ছে, কিছুটা আতঙ্কিত এরা। তারপরই মুরংদের চোখে পড়ল জন্তুটার দিকে। পাহাড় থেকে নেমে এসেছে। আশ্চর্য সুন্দর এক চিতা বাঘ। বেচারা আচমকা মানুষ, আর কুকুরের দলের সামনে চলে এসেছে। এমনিতে অবশ্য চিতা বাঘের প্রিয় খাবারের তালিকায় কুকুর আছে ওপরের দিকে। তবে মানুষ কী জিনিস—এটা সে এত দিনে বেশ বুঝে গিয়েছে। সরে পড়তে শুরু করল লাজুক প্রাণীটা।
তবে সঙ্গে মালিক থাকাতে সাহস আকাশ ছুঁয়েছে শিকারি কুকুরগুলোর। তাড়া করল ওটাকে। পেছন পেছন হই হল্লা করতে করতে চলল মারমারাও। জঙ্গলের এক পাশে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল চিতাটা। তবে তখনই খেপে গিয়ে করাতচেরা কণ্ঠে গর্জে উঠল জন্তুটা। কুকরগুলো ভয়ে পিছু হটল। মুহূর্তে জঙ্গলে ঢুকে পড়ল ধূর্ত জন্তুটা। তবে এর আগেই একটা প্রমাণ রেখে গেল। মারমা দলটির এক তরুণ দলছুট হয়ে পাশের এক টিলায় উঠে পড়েছিল। সেখান থেকে চিতা বাঘটাকে বন্দী করে ফেলল মোবাইলের ক্যামেরায়।
একটা সময় অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, বাংলাদেশে বুঝি চিতা বাঘ আর নেই। তবে নানা তথ্য-প্রমাণ জানান দিচ্ছিল, এরা আছে। তবে প্রমাণ মিলছিল না। প্রথম নিশ্চিত প্রমাণ হাজির করে ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স (সিসিএ) নামের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করা সংগঠনটি। ২০১৫ সালে সাঙ্গু রিজার্ভে তাদের ক্যামেরা ট্র্যাপে বন্দী হয় এক চিতা বাঘ। তার পর ২০২১ সালে সিসিএর এক পাহাড়ি প্যারা বায়োলজিস্ট সরাসরি ছবি তুলে ফেললেন চিতা বাঘের।
চিতা বাঘ মিতা আমার
আমার সবচেয়ে পছন্দের বন্য প্রাণীগুলোর একটি চিতা বাঘ। তাই যে জঙ্গলে যাই, প্রিয় জন্তুটির খোঁজ নিই। কখনো আবার এদের ট্রেইল অনুসরণ করে সন্ধানে বের হয়ে পড়ি। একসময় বাংলাদেশের অনেক বনেই দেখা মিলত এদের। ছিল ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়ও। এমনকি আজ থেকে বছর ষাটেক আগেও ঢাকার উত্তরা আর মিরপুরে চিতাবাঘ শিকারের কথা বলেছেন এনায়েত মওলা তাঁর ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে।
এনায়েত মাওলা বইটিতে জুড়ির রত্না ও তার পাশের সাগরনাল চা বাগানের জঙ্গলে চিতা বাঘ ও বাঘ শিকারের রোমহর্ষক বিবরণ আছে! তাই সেই ২০০৭-০৮ সালের দিকে ঘুরে এসেছিলাম ওদিকটা। অদ্ভুত এক রাত কেটেছিল পুটিছড়া বাংলোতে। সন্ধ্যা ঘনানোর ঠিক আগে বাংলোর টিলা থেকে নেমে হাঁটার সময় চা বাগানে আলাপ জমে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে। তাঁদের কাছে এখানে নতুন বসতি স্থাপনের পর মশাল দিয়ে চিতা বাঘ তাড়ানোর গল্প চোখ বড় বড় করে শুনেছি নব্বইয়ের দশকে। রাগনার বনে ঘোরার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, এখনো পাথারিয়া রেঞ্জের পাহাড়ে আছে চিতা বাঘেরা।
এর দু-এক বছর পর পাথারিয়া পাহাড়ের আরেক বন জুড়ির লাঠিটিলায় গিয়ে দেখা হয়েছিল বন বিভাগের ভিলেজার মন্টু মিয়া, আর ফখরুদ্দীনের সঙ্গে। তাঁরাই দিল খবর—তিনটি গরু জঙ্গলে চরে বেড়ানোর সময় মারা পড়ে চিতা বাঘের আক্রমণে। প্রথম দুটো মারা পড়ে একই দিনে, আরেকটা ছয় মাস পর। প্রতি শীতেই চিতার ডাক শোনেন তাঁরা। সন্দেহ প্রকাশ করতেই, ফখরুদ্দীন আমাদের চিতা বাঘের ডাক নকল করে শোনাল। চমকে উঠলাম, ভুল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। চিতার সেই হুবহু করাতচেরার ডাকই অনুকরণ করেছেন তিনি। কাছাকাছি সময়ে একটি চিতা বাঘকে গ্রামবাসীরা বিষ টোপ দিয়ে মারার ঘটনা জানান, বন বিভাগের ডেপুটি রেঞ্জার নুরুজ্জামান ভাই।
স্কুলে পড়ি তখন। হবিগঞ্জে নানার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেজ মামা একদিন বলছিলেন, ঢাকা-সিলেটের রাস্তাটা চুনারুঘাটের যেখানটায় একটা বনের ভেতর দিয়ে গেছে, বছর কয়েক আগেও রাতের বেলায় গাড়ির হেডলাইটের আলোয় সেখানে দেখা যেত চিতা বাঘের গায়ের ফোঁটা কিংবা জ্বলতে থাকা চোখ। কখনো আবার রাস্তা পেরোনোর সময় আগুয়ান কোনো গাড়ি দেখে অজানা প্রাণী ঠাউরে থাবা চালিয়ে গ্লাস ভেঙে দিয়েছে চিতারা। ওই পথে যাওয়ার সময় আঁধার নেমে গেলে চালকেরা তাই প্রমাদ গুণত। পরে জানতে পারি ওই বনটা সাতছড়ি। সিলেট বিভাগের আদমপুর, সাতছড়ি, লাউয়াছড়ার মতো জঙ্গলগুলোতে গিয়েও শুনেছি দুঃসাহসী চিতাদের কত কাণ্ড-কীর্তির গল্প। তবে চিতা বাঘের সিলেটে সবচেয়ে সেরা ডেরা ছিল রেমা-কালেঙ্গায়। ২০০৪ সালে যখন রেমা যাই, তখন এক ফরেস্ট গার্ড বলেছিলেন চিতা বাঘেদের শীতে গায়ে রোদ লাগানোর জন্য বনপথে বসে থাকার গল্প। দুই বছর বাদে ২০০৬ সালে কালেঙ্গায় পাহাড়ের ওপরের বন বাংলোয় কাটিয়ে ছিলাম একটি রাত। তখন রেঞ্জার আকবর ভাই বলেছিলেন, মাস কয়েক আগে রাতে রেমা থেকে ফিরছিলেন মোটরসাইকেলে। হঠাৎ পথের ওপর এসে দাঁড়ায় অপূর্ব সুন্দর এক চিতা। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিল ওটা। পরমুহূর্তেই চম্পট দেয়। তখনই শুনি ছনবাড়ি বিটে চিতা বাঘের আক্রমণে গরু মারা পড়ার কাহিনি। পরদিন দেখে এসেছিলাম যেখানে গরুটা মারা পড়েছে, সে জায়গাটি। গত বছরও কালেঙ্গা গিয়ে চিতা বাঘের একটি বাছুর শিকারের গুজব শুনেছিলাম। তবে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারিনি।
সালটা ২০১১। সাঙ্গু রিজার্ভের গহিনে যাওয়ার জন্য থানচি থেকে নৌকা ভাড়া করে রওনা দিয়েছিলাম। নৌকার দুই মাঝি মারমা। এর মধ্যে একজন বয়সে একবারেই তরুণ। ভারী হাসি-খুশি। ভাব জমে গেলে অকপটে স্বীকার করলেন, জঙ্গলে হরিণ শিকারে যাওয়ার কথা। মেলে দিলেন গল্পের ঝাঁপি। দুই বছর আগে শিকারে গিয়েছিলেন, মোদকের মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া পাহাড়ে। তখন দুটো প্রাণী মুখোমুখি হয়ে যায় আচমকা। ছোটাছুটি করে খেলছিল তারা নিজেদের মধ্যে। হলুদ জমিনে কালো ফোঁটা ওগুলোর, চিতা বাঘ। তবে মানুষজন দেখে মুহূর্তেই জঙ্গলে হাওয়া।
এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম কিংবা সিলেট অঞ্চলের যে জঙ্গলেই যাই, আমার অন্যতম কাজ চিতা বাঘের খোঁজ করা। অদ্ভুত সুন্দর এই জন্তুটির ট্রেইল অনুসরণ করে হানা দিয়েছি কত জঙ্গলে!
গড়ের রাজার বিদায়
মধুপুরের জলছত্র মিশনের নাম শুনলেই শিহরণ জাগে শরীরে। যদিও এখন ওই এলাকা ঘুরে আনারস বাগান ছাড়া পাবেন না কিছুই। আমাকে টানে পঞ্চাশ বছর কিংবা তারও আগের পুরোনো সেই জলছত্র মিশন, যেখানে ছিল বাঘ-চিতার আড্ডাখানা।
স্বাধীনতার বছর কয়েক আগের ঘটনা। জলছত্র মিশনের দক্ষিণের পাকা রাস্তা। ধারেই বিশাল এক বট গাছ। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি। প্রবল গরমে প্রাণ যায়। ত্যক্তবিরক্ত একটা চিতা বাঘ বটের মোটা একটা ডালে চড়ে বসল। একটু বাতাস বইতেই আয়েশ করে গা এলিয়ে দিল। শান্তিতে চোখ বুজে এল। তবে সুখ কপালে সইল না। মধুপুরের হাটুরেদের একটি দল ওদিক দিয়ে যাচ্ছিল। ওরা ওটাকে দেখে ফেলল।
হাটুরেরা খবর দিল, শিকারি মনসিনিয়র মাইকেল ডি’কস্তাকে। চিতাটা বেশ দূরে। তারপরও লোকজনের পীড়াপীড়িতে গুলি করলেন। কপাল ভালো চিতাটার। গুলিটা লাগল ও যেখানে বসেছিল, তার একটু নিচে। নিঃশব্দে গাছ থেকে নেমে ঝোপের আড়াল নিয়ে লোকজনের নাগালের বাইরে চলে গেল সে।
বায়জীদ খান পন্নীর ‘বাঘ-বন-বন্দুক’ বইয়েও মধুপুর এলাকায় চিতা বাঘ শিকারের কাহিনি আছে। মধুপুরের জঙ্গলে বাঘ ছিল সম্ভবত ১৯৬০-এর আশপাশ পর্যন্ত। তবে চিতা আরও কিছুটা বেশি দিন টিকেছিল। জানামতে, মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বছর পরও কালেভদ্রে ওদের দেখা মিলত। নিদেনপক্ষে রাতে শোনা যেত রোমহর্ষক সেই করাতচেরা ডাক।
দিবাস্বপ্ন দেখি, হয়তো পরের আরও অনেকগুলো বছরও চিতারা ছিল ওখানে। ধূর্ত জন্তুগুলো হিংস্র দু-পেয়েদের ফাঁকি দিয়ে বেঁচে থাকার কৌশল শিখে ফেলেছিল।
এক সময়ের শিকারি সরওয়ার পাঠান ভাই এখন পুরোদস্তুর বন্যপ্রাণীপ্রেমী। তাঁর কাছে শুনেছিলাম আশ্চর্য এক গল্প। ওটা অন্তত বছর পঁচিশেক আগের কাহিনি। এর বেশ কিছু সময় আগে মধুপুর এলাকা থেকে বিদায় নিয়েছে গড়ের রাজা চিতা বাঘ। তো গাজীপুরের জঙ্গলের ধারের এক বাড়িতে যেতেন তিনি প্রায়ই। ওরা জাল দিয়ে মেছো বাঘ ধরত। ওই বাড়ির লোকেরাই বলত বিশাল এক মেছো বাঘের গল্প। ওটা খুব ধূর্ত ছিল। জালে ধরা পড়ত না কখনো। আমার নিজের সন্দেহ ওটা হয়তো আদপে মেছো বাঘই ছিল না, ছিল মেছো বাঘের ছদ্মবেশে টিকে থাকা গড়ের শেষ চিতা বাঘ!
গবেষণায় আশার আলো
তবে মধুপুর থেকে চিতা হারিয়ে যাওয়াই শেষ কথা নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে এখনো হঠাৎ হঠাৎ মেলে চিতার খবর। শিকারিদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে এখনো টিকে আছে ওরা।
সম্প্রতি ‘ডিটেকটিং দ্য স্পট: আ রিভিউ অন ল্যাপার্ড অকারেন্সেস ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি কাজ করেছেন মুনতাসির আকাশ, স্কট ট্রেগারস, তানিয়া জাকির, শাহরিয়ার সিজার রহমান, ফাতেমা-তুজ-জোহরা খালেক মিলা ও অনিমেষ ঘোষ। চিতা বাঘ নিয়ে বাংলাদেশে এমন গবেষণা এটাই প্রথম। সেখান থেকেও জানা যায় বাংলাদেশে চিতা বাঘদের সাম্প্রতিক বিচরণের নানা খবর। সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে চিতা বাঘ দেখার পাঁচটি ও কক্সবাজার অঞ্চলে চিতা বাঘ দেখার নিশ্চিত দুটি তথ্যের কথা বলা হয়েছে।
সুপ্রিয় চাকমা, শাহরিয়ার সিজার রহমানদের গবেষণা, ক্যামেরা ট্র্যাপও নিশ্চিত করছে, এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্তত কয়েকটি এলাকায় চিতা বাঘের আলাদা বসতি আছে। যদিও কোনোখানেই সংখ্যাটি বেশি নয়। রাঙামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ সুপ্রিয় চাকমা যে গবেষণা করেছিলেন, তার ফলাফল নিশ্চিত করে বান্দরবানের সাঙ্গু এবং রাঙামাটির কাসালং এবং রাইংখং সংরক্ষিত অরণ্যে চিতা বাঘের উপস্থিতি।
রহস্যময় কালো চিতা
বাংলাদেশের বনে এমনকি কালো চিতাও দেখা গেছে। শরীরে মেলানিনের আধিক্যে যেসব চিতাবাঘের গায়ের রং কালো হয়, তারাই পরিচিত কালো চিতা বা ব্ল্যাক প্যান্থার নামে। তবে এরা আলাদা কোনো প্রজাতি নয়। বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ খসরু চৌধুরী কালো চিতা দেখেছিলেন তিন যুগ আগে বান্দরবানের আলীকদম এলাকায়। ২০১১ সালে বড় মোদক যাওয়ার সময় আমাদের মারমা গাইড আংসু মারমার কাছ থেকে জানতে পারলাম, ১৯৯০ সালের দিকে রেমাক্রি এলাকায় একটা কালো চিতা ফাঁদ পেতে মেরেছিল শিকারিরা।
স্বপ্ন দেখতে চাই
তবে ভয়াবহ একটা আশঙ্কায়ও কেঁপে ওঠে বুক। পার্বত্য চট্টগ্রামের চিতা বাঘ অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় চলছে সমানে গাছকাটা, বন্যপ্রাণী শিকার। চিতার অন্য বসতিগুলোও আছে বিপদে। আমাদের পাশের দেশ ভারতের বন বিভাগ প্রতিটি জঙ্গলে চিতা বাঘের সংখ্যা জানা। আর আমাদের বনগুলোতে চিতা বাঘের অবস্থা সম্পর্কে অনেকটাই ধোঁয়াশায় আছি আমরা। এত চমৎকার একটি প্রাণী, কিন্তু কী অবহেলা!
তবে বন্যপ্রাণীর ব্যাপারে আমি সব সময় অতি আশাবাদী মানুষ। তাই যেমন এখনো স্বপ্ন দেখি পার্বত চট্টগ্রামে বাঘের আস্তানার, তেমনি আশা করি পার্বত্য চট্টগ্রাম আর সিলেটের বিভিন্ন অরণ্যে পুরোনো দিনের মতো মহানন্দে ঘুরে বেড়াবে চিতা বাঘেরা। চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড-মিরসরাই এবং ভারতের সীমান্তঘেঁষা শেরপুর-নেত্রকোনা-জামালপুরেও এদের ছোট ছোট দু-একটি বসতিরও স্বপ্ন দেখি। আবার জেগে জেগেই স্বপ্ন দেখি মধুপুরের অরণ্যে গড়ের রাজাদের প্রস্থানের কিংবা নীলফামারী-দিনাজপুর-পঞ্চগড় এলাকার সমতলের ছোট ছোট ঝোপ-ঝাড়, কিংবা জঙ্গলে চিতা বাঘেদের বছরের অন্তত কয়েকটি মাস আস্তানা গাড়ার।
ঢাকার বাতাস আজ খুবই অস্বাস্থ্যকর। বায়ুদূষণের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সকালে পরিমাপ অনুযায়ী ঢাকার বায়ুদূষণের স্কোর ২৪৫। অন্যদিকে বায়ুদূষণের শীর্ষে পাকিস্তানের লাহোর। গুরুতর বায়ুদূষণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। এ ছাড়া দূষণের শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায় ঘুরে ফিরে এই তিন দেশেরই বিভিন্ন
৪ ঘণ্টা আগেআজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৯) দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর জলবায়ু ও পরিবেশ সাংবাদিকদের সংগঠন ‘সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম’ (সাকজেএফ) এর নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগেসেন্টমার্টিনের প্রবাল রক্ষায় সেখানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপকে কেন্দ্র করে গত কিছুদিন ধরেই আলোচনায় দ্বীপটি । এরই মধ্যে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল আবিষ্কৃত হলো প্রশান্ত মহাসাগরে। অসংখ্য ক্ষুদ্র প্রাণী একসঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি প্রাচীরের পরিবর্তে একটি বিশালাকায় প্রবাল গঠন করেছে সেখা
১ দিন আগেঢাকার বাতাস আজও অস্বাস্থ্যকর। বায়ুদূষণের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ওপরে উঠে দাঁড়িয়েছে পাঁচ এ। সকালে পরিমাপ অনুযায়ী ঢাকার বায়ুদূষণের স্কোর ১২৩। অন্যদিকে একদিনের ব্যবধানে আবারও বায়ুদূষণের শীর্ষে পাকিস্তানের লাহোর। গুরুতর বায়ুদূষণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। এ ছাড়া দূষণের শীর্ষ পাঁচ দেশের
১ দিন আগে