অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র বন্যা দেখা দিচ্ছে। যার সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশ, চীন ও কানাডার ভয়াবহ বন্যা। এত ঘন ঘন বন্যার কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠতে থাকা বায়ুমণ্ডলে আগের চেয়ে অনেক বেশি আর্দ্রতা ধারণ করছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে ইরাক, ইরান, কুয়েত ও জর্ডান—প্রতিটি দেশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে ছিল তীব্র বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি এবং অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত। আবহাওয়াবিদেরা পরে ওই সব অঞ্চলের আকাশ বা বায়ুমণ্ডলে রেকর্ড পরিমাণ আর্দ্রতার উপস্থিতি লক্ষ করেন। যা ২০০৫ সালের পরিস্থিতিকেও ছাড়িয়ে গেছে।
ওই বছরের জুলাইয়ে চিলিতে মাত্র তিন দিনে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এমন প্রবল বৃষ্টিপাতে আন্দিজ পর্বতের কিছু অংশের তুষারও গলে যায়। এতে ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। দেশটির রাস্তাঘাট, সেতু এবং পানি সরবরাহব্যবস্থা সব ধ্বংস হয়ে যায়।
এর এক বছর আগে অর্থাৎ ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। যাকে সেই দেশের রাজনীতিবিদেরা ‘বৃষ্টিবোমা’ আখ্যা দিয়েছিলেন। ওই বন্যায় ২০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় এবং হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটি ছাড়া হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব ঘটনা বায়ুমণ্ডলীয় বা ভাসমান নদীগুলোর কারণে হয়েছে। এসব নদী ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। নাসার তথ্যমতে, বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো প্রতিনিয়ত দীর্ঘ, প্রশস্ত এবং ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে। বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষকে বন্যার ঝুঁকিতে ফেলছে।
এই ‘ভাসমান নদী’ বা ‘উড়ন্ত নদী’ হলো ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত লম্বা ও প্রশস্ত জলীয়বাষ্পের স্তর। এসব নদীর সৃষ্টি বা উদ্ভব হয় সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল থেকে। পরে তাঁরা ঠান্ডা মেরু অঞ্চলের দিকে সরতে থাকে। এই উড়ন্ত নদীগুলো পৃথিবীর মধ্য-অক্ষাংশজুড়ে চলাচল করা মোট জলীয়বাষ্পের প্রায় ৯০ শতাংশ বহন করে।
একটি বায়ুমণ্ডলীয় নদী গড়ে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ, ৫০০ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং প্রায় তিন কিলোমিটার গভীর হয়ে থাকে। যদিও এই নদীগুলো ক্রমেই দীর্ঘ ও প্রশস্ত হচ্ছে। অনেক সময় তা পাঁচ হাজার কিলোমিটারের চেয়েও বেশি প্রশস্ত হয়ে থাকে। তবুও, মানুষ এই নদী চোখে দেখতে পায় না। তাঁরা যা দেখে তা শুধুই কিছু পুঞ্জিভূত মেঘ।
নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বায়ুমণ্ডলীয় গবেষক ব্রায়ান কান বলেছেন, এই নদীর অস্তিত্ব ইনফ্রারেড এবং মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে দেখা যেতে পারে। এ কারণে বিশ্বজুড়ে জলীয় বাষ্প এবং বায়ুমণ্ডলীয় নদী পর্যবেক্ষণের জন্য স্যাটেলাইট বেশ কার্যকর হতে পারে।
উত্তর আমেরিকার দীর্ঘতম নদী মিসিসিপি যতোটা না আর্দ্রতা ছড়ায় তার চাইতে ১৫ গুণ বেশি আর্দ্রতা ছড়াতে পারে বায়ুমণ্ডলের বিশাল ও শক্তিশালী নদীগুলো। এই উড়ন্ত নদীগুলো গড়ে যে পরিমাণ পানি নিঃসরণ করে—তা বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী আমাজনের নিয়মিত পানি প্রবাহের প্রায় দ্বিগুণ।
বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো সব সময়ই ছিল। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বেশি জলীয়বাষ্প তৈরি মাত্রা বাড়িয়েছে, যা পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। অল্প সময়ের মধ্যে ভূপৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে বিপর্যয়কর বন্যা ও ভূমিধস।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৬০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী বায়ুমণ্ডলীয় জলীয়বাষ্প ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে তা ক্রমেই বাড়ছে। জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব জিওসায়েন্সের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বায়ুমণ্ডলীয় নদী অনেক দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছে। এর অর্থ, সামনের দিনগুলোতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হবে এবং জনজীবনের ওপর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের খলিফা ইউনিভার্সিটির আরেকটি সমীক্ষা অনুসারে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ঠিক এমনটাই হয়েছিল। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, হাই-রেজল্যুশন সিমুলেশনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। এই নদীগুলো উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা থেকে পশ্চিম ইরানের দিকে দ্রুতগতিতে প্রবাহিত হলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
আরও ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা
পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সারা এম ভ্যালেজো-বার্নালের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বায়ুমণ্ডলীয় নদী ঘনীভূত হওয়ার হার ক্রমেই বাড়ছে। তিনি বলেন, বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ায় ১৯৪০ সাল থেকে বায়ুমণ্ডলীয় নদী উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এবং মাদাগাস্কার, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের তুলনায় এই নদীগুলো আরও ঘনীভূত হয়ে উঠছে।
জিওফিজিক্যাল রিসার্চ জার্নালের ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্ব চীন, কোরিয়া এবং পশ্চিম জাপানে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে (মার্চ এবং এপ্রিল) ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এই ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে ৮০ শতাংশ ছিল বায়ুমণ্ডলীয় নদীর কারণে।
এদিকে, ভারতের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ভারত মহাসাগরের উষ্ণ পরিবেশ ‘উড়ন্ত নদী’ তৈরি করছে এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বরে এই অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যালের আবহাওয়াবিদ ড. রক্সি ম্যাথিউ কোল বলেছেন, যখন সমুদ্রের পানি উষ্ণ হয়ে ওঠে তখন তা বাষ্পীভূত হয়ে ওপরে উঠে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোয় জমা হতে থাকে। বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো এই বিপুল পরিমাণ আর্দ্রতা বা পানি কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন ধরে আবার ভূপৃষ্ঠে ঝরাতে থাকে। এর ফলে, কম সময়ের মধ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয় এবং থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরে। সারা দেশে ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার ঘটনা বাড়ে।
যদিও সব বন্যা এবং ভূমিধস বায়ুমণ্ডলীয় নদীর কারণে হয় না। ঘূর্ণিঝড়, আবহাওয়া, ঝড় ইত্যাদি নানা কারণেও হতে পারে। তবে আশঙ্কার বিষয় এই যে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো পৃথিবীর নতুন নতুন অঞ্চলেও পৌঁছে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এর একটি কারণ হিসেবে জেট স্ট্রিমের কথা বলছেন। জেট স্ট্রিম হলো— জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুর একটি পরিবর্তিত ধরন। এর গতি অনেক দ্রুত এবং পরিধি বেশ সংকীর্ণ হয়।
এই জেট স্ট্রিম বেশ দ্রুত গতিতে এবং সংকীর্ণ স্রোতে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হতে থাকে। এ বিষয়ে চিলির ভালপারাইসো বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ ডেনিজ বোজকুর্ট বলেন, ‘বাতাসে ঢেউয়ের পরিমাণ বেশি থাকা এবং জেট স্ট্রিম মানে এই দ্রুত গতির বাতাস আঁকাবাঁকা পথে যাবে এবং এতে সাধারণ গতিপথ থেকে বিচ্যুতিও হতে পারে। এটি বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোকে আরও জটিল পথে ধাবিত করতে পারে, সেই সঙ্গে এর সময়কাল এবং বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে।’
সারা বিশ্বে বিপর্যয়কর বন্যা এবং ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে, এমন বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোকে তাঁদের আকার এবং শক্তির ভিত্তিতে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে—ঠিক হারিকেনের মতো। তবে সব বায়ুমণ্ডলীয় নদী ক্ষতিকর নয়, যদি সেগুলোর তীব্রতা কম হয়। অথবা নদীগুলো এমন কোনো জায়গায় বৃষ্টিপাত ঘটায় যেখানে দীর্ঘদিন ধরে খরা চলছে। সেসব ক্ষেত্রে এসব বায়ুমণ্ডলীয় নদী উপকারী হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোর পর্যবেক্ষণ এবং পূর্বাভাস শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল থেকেই দেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ, বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো ওই অঞ্চলে অবস্থান করলে সেখান থেকে এর প্রভাবসমূহ পর্যবেক্ষণ করা যায়। বহু দশক ধরে তাঁরা বেশ ভালভাবেই পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
ভালপারাইসো বিশ্ববিদ্যালয়ের বোজকার্ট বলেছেন, ‘আঞ্চলিক আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বায়ুমণ্ডলীয় নদী সম্পর্কে ধারণা বেশ সীমিত। এক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো জটিল অঞ্চলগুলোয় বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোর উপস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য ঘাটতি।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র বন্যা দেখা দিচ্ছে। যার সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশ, চীন ও কানাডার ভয়াবহ বন্যা। এত ঘন ঘন বন্যার কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠতে থাকা বায়ুমণ্ডলে আগের চেয়ে অনেক বেশি আর্দ্রতা ধারণ করছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে ইরাক, ইরান, কুয়েত ও জর্ডান—প্রতিটি দেশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে ছিল তীব্র বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি এবং অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত। আবহাওয়াবিদেরা পরে ওই সব অঞ্চলের আকাশ বা বায়ুমণ্ডলে রেকর্ড পরিমাণ আর্দ্রতার উপস্থিতি লক্ষ করেন। যা ২০০৫ সালের পরিস্থিতিকেও ছাড়িয়ে গেছে।
ওই বছরের জুলাইয়ে চিলিতে মাত্র তিন দিনে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এমন প্রবল বৃষ্টিপাতে আন্দিজ পর্বতের কিছু অংশের তুষারও গলে যায়। এতে ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। দেশটির রাস্তাঘাট, সেতু এবং পানি সরবরাহব্যবস্থা সব ধ্বংস হয়ে যায়।
এর এক বছর আগে অর্থাৎ ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। যাকে সেই দেশের রাজনীতিবিদেরা ‘বৃষ্টিবোমা’ আখ্যা দিয়েছিলেন। ওই বন্যায় ২০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় এবং হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটি ছাড়া হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব ঘটনা বায়ুমণ্ডলীয় বা ভাসমান নদীগুলোর কারণে হয়েছে। এসব নদী ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। নাসার তথ্যমতে, বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো প্রতিনিয়ত দীর্ঘ, প্রশস্ত এবং ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে। বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষকে বন্যার ঝুঁকিতে ফেলছে।
এই ‘ভাসমান নদী’ বা ‘উড়ন্ত নদী’ হলো ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত লম্বা ও প্রশস্ত জলীয়বাষ্পের স্তর। এসব নদীর সৃষ্টি বা উদ্ভব হয় সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল থেকে। পরে তাঁরা ঠান্ডা মেরু অঞ্চলের দিকে সরতে থাকে। এই উড়ন্ত নদীগুলো পৃথিবীর মধ্য-অক্ষাংশজুড়ে চলাচল করা মোট জলীয়বাষ্পের প্রায় ৯০ শতাংশ বহন করে।
একটি বায়ুমণ্ডলীয় নদী গড়ে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ, ৫০০ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং প্রায় তিন কিলোমিটার গভীর হয়ে থাকে। যদিও এই নদীগুলো ক্রমেই দীর্ঘ ও প্রশস্ত হচ্ছে। অনেক সময় তা পাঁচ হাজার কিলোমিটারের চেয়েও বেশি প্রশস্ত হয়ে থাকে। তবুও, মানুষ এই নদী চোখে দেখতে পায় না। তাঁরা যা দেখে তা শুধুই কিছু পুঞ্জিভূত মেঘ।
নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বায়ুমণ্ডলীয় গবেষক ব্রায়ান কান বলেছেন, এই নদীর অস্তিত্ব ইনফ্রারেড এবং মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে দেখা যেতে পারে। এ কারণে বিশ্বজুড়ে জলীয় বাষ্প এবং বায়ুমণ্ডলীয় নদী পর্যবেক্ষণের জন্য স্যাটেলাইট বেশ কার্যকর হতে পারে।
উত্তর আমেরিকার দীর্ঘতম নদী মিসিসিপি যতোটা না আর্দ্রতা ছড়ায় তার চাইতে ১৫ গুণ বেশি আর্দ্রতা ছড়াতে পারে বায়ুমণ্ডলের বিশাল ও শক্তিশালী নদীগুলো। এই উড়ন্ত নদীগুলো গড়ে যে পরিমাণ পানি নিঃসরণ করে—তা বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী আমাজনের নিয়মিত পানি প্রবাহের প্রায় দ্বিগুণ।
বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো সব সময়ই ছিল। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বেশি জলীয়বাষ্প তৈরি মাত্রা বাড়িয়েছে, যা পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। অল্প সময়ের মধ্যে ভূপৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে বিপর্যয়কর বন্যা ও ভূমিধস।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৬০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী বায়ুমণ্ডলীয় জলীয়বাষ্প ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে তা ক্রমেই বাড়ছে। জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব জিওসায়েন্সের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বায়ুমণ্ডলীয় নদী অনেক দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছে। এর অর্থ, সামনের দিনগুলোতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হবে এবং জনজীবনের ওপর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের খলিফা ইউনিভার্সিটির আরেকটি সমীক্ষা অনুসারে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ঠিক এমনটাই হয়েছিল। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, হাই-রেজল্যুশন সিমুলেশনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। এই নদীগুলো উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা থেকে পশ্চিম ইরানের দিকে দ্রুতগতিতে প্রবাহিত হলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
আরও ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা
পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সারা এম ভ্যালেজো-বার্নালের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বায়ুমণ্ডলীয় নদী ঘনীভূত হওয়ার হার ক্রমেই বাড়ছে। তিনি বলেন, বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ায় ১৯৪০ সাল থেকে বায়ুমণ্ডলীয় নদী উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এবং মাদাগাস্কার, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের তুলনায় এই নদীগুলো আরও ঘনীভূত হয়ে উঠছে।
জিওফিজিক্যাল রিসার্চ জার্নালের ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্ব চীন, কোরিয়া এবং পশ্চিম জাপানে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে (মার্চ এবং এপ্রিল) ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এই ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে ৮০ শতাংশ ছিল বায়ুমণ্ডলীয় নদীর কারণে।
এদিকে, ভারতের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ভারত মহাসাগরের উষ্ণ পরিবেশ ‘উড়ন্ত নদী’ তৈরি করছে এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বরে এই অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যালের আবহাওয়াবিদ ড. রক্সি ম্যাথিউ কোল বলেছেন, যখন সমুদ্রের পানি উষ্ণ হয়ে ওঠে তখন তা বাষ্পীভূত হয়ে ওপরে উঠে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোয় জমা হতে থাকে। বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো এই বিপুল পরিমাণ আর্দ্রতা বা পানি কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন ধরে আবার ভূপৃষ্ঠে ঝরাতে থাকে। এর ফলে, কম সময়ের মধ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয় এবং থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরে। সারা দেশে ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার ঘটনা বাড়ে।
যদিও সব বন্যা এবং ভূমিধস বায়ুমণ্ডলীয় নদীর কারণে হয় না। ঘূর্ণিঝড়, আবহাওয়া, ঝড় ইত্যাদি নানা কারণেও হতে পারে। তবে আশঙ্কার বিষয় এই যে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো পৃথিবীর নতুন নতুন অঞ্চলেও পৌঁছে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এর একটি কারণ হিসেবে জেট স্ট্রিমের কথা বলছেন। জেট স্ট্রিম হলো— জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুর একটি পরিবর্তিত ধরন। এর গতি অনেক দ্রুত এবং পরিধি বেশ সংকীর্ণ হয়।
এই জেট স্ট্রিম বেশ দ্রুত গতিতে এবং সংকীর্ণ স্রোতে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হতে থাকে। এ বিষয়ে চিলির ভালপারাইসো বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ ডেনিজ বোজকুর্ট বলেন, ‘বাতাসে ঢেউয়ের পরিমাণ বেশি থাকা এবং জেট স্ট্রিম মানে এই দ্রুত গতির বাতাস আঁকাবাঁকা পথে যাবে এবং এতে সাধারণ গতিপথ থেকে বিচ্যুতিও হতে পারে। এটি বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোকে আরও জটিল পথে ধাবিত করতে পারে, সেই সঙ্গে এর সময়কাল এবং বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে।’
সারা বিশ্বে বিপর্যয়কর বন্যা এবং ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে, এমন বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোকে তাঁদের আকার এবং শক্তির ভিত্তিতে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে—ঠিক হারিকেনের মতো। তবে সব বায়ুমণ্ডলীয় নদী ক্ষতিকর নয়, যদি সেগুলোর তীব্রতা কম হয়। অথবা নদীগুলো এমন কোনো জায়গায় বৃষ্টিপাত ঘটায় যেখানে দীর্ঘদিন ধরে খরা চলছে। সেসব ক্ষেত্রে এসব বায়ুমণ্ডলীয় নদী উপকারী হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোর পর্যবেক্ষণ এবং পূর্বাভাস শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল থেকেই দেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ, বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো ওই অঞ্চলে অবস্থান করলে সেখান থেকে এর প্রভাবসমূহ পর্যবেক্ষণ করা যায়। বহু দশক ধরে তাঁরা বেশ ভালভাবেই পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
ভালপারাইসো বিশ্ববিদ্যালয়ের বোজকার্ট বলেছেন, ‘আঞ্চলিক আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বায়ুমণ্ডলীয় নদী সম্পর্কে ধারণা বেশ সীমিত। এক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো জটিল অঞ্চলগুলোয় বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোর উপস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য ঘাটতি।
ঢাকার বাতাস আজ খুবই অস্বাস্থ্যকর। বায়ুদূষণের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সকালে পরিমাপ অনুযায়ী ঢাকার বায়ুদূষণের স্কোর ২৪৫। অন্যদিকে বায়ুদূষণের শীর্ষে পাকিস্তানের লাহোর। গুরুতর বায়ুদূষণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। এ ছাড়া দূষণের শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায় ঘুরে ফিরে এই তিন দেশেরই বিভিন্ন
২ ঘণ্টা আগেআজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৯) দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর জলবায়ু ও পরিবেশ সাংবাদিকদের সংগঠন ‘সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম’ (সাকজেএফ) এর নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগেসেন্টমার্টিনের প্রবাল রক্ষায় সেখানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপকে কেন্দ্র করে গত কিছুদিন ধরেই আলোচনায় দ্বীপটি । এরই মধ্যে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল আবিষ্কৃত হলো প্রশান্ত মহাসাগরে। অসংখ্য ক্ষুদ্র প্রাণী একসঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি প্রাচীরের পরিবর্তে একটি বিশালাকায় প্রবাল গঠন করেছে সেখা
২১ ঘণ্টা আগেঢাকার বাতাস আজও অস্বাস্থ্যকর। বায়ুদূষণের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ওপরে উঠে দাঁড়িয়েছে পাঁচ এ। সকালে পরিমাপ অনুযায়ী ঢাকার বায়ুদূষণের স্কোর ১২৩। অন্যদিকে একদিনের ব্যবধানে আবারও বায়ুদূষণের শীর্ষে পাকিস্তানের লাহোর। গুরুতর বায়ুদূষণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। এ ছাড়া দূষণের শীর্ষ পাঁচ দেশের
১ দিন আগে