ইশতিয়াক হাসান
বাঘকে আমরা এখন আটকে ফেলেছি সুন্দরবনে। অথচ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে এমন অনেক জায়গার নাম পাবেন যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঘের নাম। যেমন গাজীপুরের বাঘের বাজার, চট্টগ্রামের টাইগার পাস। আবার বিভিন্ন জায়গা, বাজার এমনকি বিদ্যালয়ের নামের সঙ্গেও আছে বাঘমারা শব্দটি। অর্থাৎ এসব জায়গাগুলোতে এক সময় বাঘ ছিল।
এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল-গাজীপুরের ভাওয়াল ও মধুপুরের অরণ্যসহ অনেক এলাকাতেই ছিল বাঘেদের রাজ্য। বান্দরবান, সিলেট যেখানেই যাই খোঁজ নেই বাঘেদের। একটু বয়স্ক কাউকে পেলে চেপে ধরি পুরোনো দিনের জঙ্গলের গল্প শোনার জন্য। তাঁদের মুখে এসব কাহিনি শুনতে শুনতে আমারও মনে হয় আহ ওই সময় যদি থাকতাম! কিংবা সত্যি যদি টাইম মেশিন থাকত। তবে দেশের কত জঙ্গলেই না বাঘেদের দেখা পেতাম। আশ্চর্যজনক হলেও কখনো কখনো পাহাড়ের দুর্গমে বাঘের নতুন গল্পও শোনা যায়। পুরোনোদের মুখে শোনা নতুন-পুরোনো কিছু বাঘের কাহিনিই তুলে ধরছি পাঠকদের সামনে।
১. শীতের এক সকাল। তবে অন্তত বছর চৌদ্দ-পনেরো আগের। মৌলভীবাজারের জুড়ীর ফুলতলা চা বাগানের মাঝখান দিয়ে হেঁটে কুয়াশামাখা সে সকালে পৌঁছে যাই রাগনার জঙ্গলে। এ সময় বনপথে দেখা এক বৃদ্ধের সঙ্গে। মুখে শত ভাঁজ। দেখেই অনুমান করে নিতে কষ্ট হয় না আশি পেরিয়েছে তাঁর বয়স। পুরোনো দিনের জঙ্গল-বন্যপ্রাণীর খোঁজ নিলাম।
উৎসাহ পেয়ে গল্পের ঝুড়ি মেলে দিলেন স্মৃতিকাতরতা পেয়ে বসা বৃদ্ধ। তখন তাঁর যুবা বয়স। গরুর পাল চরাতে নিয়ে এসেছিলেন জঙ্গলে। হঠাৎ সেখানে হাজির বিশাল এক মদ্দা বাঘ। অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঘটা। হাতের লাঠি দিয়ে পাশের গাছে বারি দিয়ে চিৎকার করতে লাগলেন বৃদ্ধ। ভয় তো পেলই না উল্টো ক্ষুব্ধ হলো বাঘ। পালের চার-পাঁচটা গরুকে মেরে ফেলল সে কয়েক মিনিটের মধ্যে। তারপর একটাকে নিয়ে চলে গেল। তবে ভাগ্যগুণে বেঁচে যান গল্প বয়ানকারী। রোমহর্ষক সে বর্ণনা শুনলাম মুগ্ধ হয়ে। মনে হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে আমিও হাজির হয়ে গিয়েছি সত্তর-আশি বছর আগের রাগনার জঙ্গলে।
২. নভেম্বর, ২০২০। বান্দরবানের কেওক্রাডংয়ের পাদদেশে পরিচ্ছন্ন, শান্ত এক পাড়া। দার্জিলিং পাড়া। সন্ধ্যা নেমেছে। পাড়া প্রধানের খাবার ঘরটায় তাঁকে ঘিরে বসে আছি কয়েক জন। সৌরবিদ্যুতে জ্বলা বাতির মিটমিটে আলোয় ঘরটার অন্ধকার কাটেনি। অদ্ভুত এক আলো-আঁধারির খেলা কামরাজুড়ে। পাড়াপ্রধান ছোটখাটো গড়নের অমায়িক এক মানুষ। মুখের বহু ভাঁজ, চোখের নিচের কুঁচকানো চামড়া জানান দিচ্ছে অনেকগুলো গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত পাড় করে এসেছেন। সেই সঙ্গে স্মৃতি হিসাবে জমা আছে হাজারো বিচিত্র ঘটনা।
একটা গল্প শুনতে চেয়েছিলাম। সত্যি গল্প। শুরু করলেন। মুখময় ছড়িয়ে পড়েছে হাসি। যেন সেই বয়সে ফিরে গেছেন, যে সময়টায় দিনে পাহাড়ি পথে আঠারো-কুড়ি মাইল হাঁটতে পারতেন অনায়াসে। রগচটা ভাল্লুকও তাঁকে দেখলে মেজাজটা একটু ঠান্ডা করা যায় কিনা হিসাব-নিকাশে বসত।
ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলতে লাগলেন। তবে কাহিনিটা এত রোমাঞ্চকর ভাষার ছোট্ট সমস্যাটা উড়ে গেল এক নিমেষে। এমনই এক রাত ছিল। তবে সময়টা অন্তত পঁচিশটা বসন্ত আগের। ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেছে পাড়ার মানুষগুলো। হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম টুটে যায় কারবারির। গোয়ালঘরের দিক থেকে আসছে আওয়াজটা। দৌড়ে ঘরের দরজা খুলে বের হলেন। দেরি হয়ে গেছে। তাঁর সবচেয়ে বড় গরুটাকে নিয়ে গেছে ওটা। ডোরা বাঘ। যখন টের পেলেন তখন ওই রাতে কিছুই করার ছিল না আর।
আমি যেন হঠাৎ করেই পিছিয়ে গেলাম দুই যুগ কিংবা তারও আগে। স্পষ্ট একটা হুটোপুটির শব্দ শুনলাম। তারপর ভারী একটা কিছু হেঁচড়ে নেওয়ার আওয়াজ। বাঘ বড় সাইজের গরু বা মোষ মেরে নেওয়ার সময় মাটিতে মড়ি ঘষটানোর কারণে যে শব্দ হয়!
বৃদ্ধের চেহারায় হঠাৎ যেন একটা ঝিলিক দেখলাম। তারপর আবার হাসলেন। বলতে শুরু করলেন ঘটনার বাকি অংশ। পরদিন আলো হতেই বন্দুক নিয়ে একাকী বেরিয়ে পড়লেন। গরুর রক্ত, আর টেনে নেওয়ার চিহ্ন ধরে খুঁজে বের করলেন বাঘটাকে। তারপর কী করলেন? মুখে ছড়ানো হাসি, আর তাঁর এখানে উপস্থিতি জানিয়ে দিল লড়াইয়ে তাঁর জয় হয়েছিল। পরের দিন কেওক্রাডংয়ে উঠেই দেখা পাহাড়ের মালিক লালাবমের সঙ্গে। দার্জিলিং পাড়ায় জেনেছিলাম বাঘের নতুন খবর মিলবে তাঁর কাছে। জিজ্ঞেস করতেই যা বললেন, চমকালাম।
আগের বছর, মানে ২০১৯-এ তাঁর বিশাল একটা গরু মারা পড়েছিল বাঘের আক্রমণে। লালাবমের বর্ণনা ঠিক হলে দূরের পাহাড়ে থাকে বিশাল বেঙ্গল টাইগার। শিকারের জন্য হানা দেয় মাঝেমধ্যে এদিকে। হেলিপ্যাডের ঠিক নিচেই মেরে খেয়ে গিয়েছিল গরুটাকে।
৩. ২০১১ সাল। মৌলভীবাজারের জুড়ীর লাঠিটিলা জঙ্গলে গিয়েছিলাম। জঙ্গল ভ্রমণের শেষপর্যায়। একজনের পর একজন হাঁটছে, একটি পায়ে চলা পথ ধরে। আমি, দুই বন্ধু মিশুক, মেহেদী ও স্থানীয় দুই তরুণ। ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে। পথ পিছল, তাই হুঁশিয়ার। হঠাৎ পথে একটা বাঁক। ওপাশ থেকে কথাবার্তা ভেসে আসছে। আমাদের মতো জঙ্গল ভ্রমণে আসা কোনো পর্যটক, নাকি স্থানীয় কেউ? দুই কদম এগোতেই তিনজন মানুষের মুখোমুখি। তাঁদের মাঝে মধ্যবয়সী একজনকে দেখিয়ে সঙ্গী এক তরুণ বললেন, সফিক ভাই। জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। জঙ্গলের খবর পাইবেন তাঁর কাছে।
শক্তপোক্ত গড়ন। উচ্চতা মাঝারি, দুই চোখে ধারালো দৃষ্টি। শুরুতে সরকারি লোক মনে করে কথা বলতে চাইছিলেন না। তবে একটু পর আশ্বস্ত হয়ে মন খুলে বললেন। তারপরই বোমাটা ফাটালেন। গত বছরও (২০১০) বড় ডোরা বাঘ দেখেছেন। একটা ঝোপের মধ্যে বসে ছিল ঘাপটি করে। তাড়াহুড়া করে সরে আসেন সফিক ভাই। আমার দেখা সিলেট বিভাগের সেরা জঙ্গল লাঠিটিলা।
তাই বলে ২০১০ সালে লাঠিটিলায় বেঙ্গল টাইগার? আরও কিছুক্ষণ জেরা করেও সফিককে টলাতে পারলাম না। ততক্ষণে বুঝে গেছি, তাঁর ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম। পরে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক মনিরুল খান ভাইও জানিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে শুনেছেন সাম্প্রতিক সময়েও ওই বনে বাঘ বিচরণের গল্প।
অবশ্য ২০১১-র পরে আর লাঠিটিলা যাইনি। তাই জানি না নতুন কোনো বাঘের সংবাদ। লাঠিটিলার ওপাশে ভারতের সীমান্ত। ওই সীমান্তে এখনো দু-একটি বাঘ আছে নাকি?
৪. টাইম মেশিনে চেপে ফিরে যাই তিন দশক আগের। হবিগঞ্জের মাধবপুরের দেবনগর গ্রাম। আমার নানার বাড়ি। হালকা বাতাসের ঝাপটায় কুপির আলোটা কাঁপছে। কম্পনরত সেই আলোয় নানির চেহারাটা আবছাভাবে দেখতে পাচ্ছি। পুরোনো স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে মুখের ভাঁজগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে যেন। কিশোরী কিংবা তরুণী বয়সের গল্প সেসব। তন্ময় হয়ে শুনছি আমরা কয় জন। সাত থেকে তেরোর মধ্যে বয়স সবার।
নানি বলে চলেছেন, রাতে হঠাৎ ঘুম ভাইঙ্গা গেল। একটা হুটোপুটির শব্দ। গোয়াল ঘর থেকে আসতাছে। তারপর গম্ভীর একটা ঘর ঘর আওয়াজ। এক মিনিট সুসনান। এরপর ভারী একটা কিছু হেঁচড়ে নিতেছে, এমন একটা শব্দ। শরীর হিম হইয়া গেল। বুঝতে বাকি নাই নাতি আমার। আবার একটা গরুরে বাঘে নিছে।
বালক বয়সে হবিগঞ্জের মাধবপুরে নানার বাড়িতে গেলেই নানিকে চেপে ধরতাম আমরা পুরোনো দিনের গল্প শোনার জন্য। ভুতুড়ে কাণ্ড-কীর্তি অন্যদের টানত বেশি। তবে আমার আগ্রহে বাঘের আক্রমণের কাহিনিও বলতেন মাঝে-সাজে। বিশাল আকারের লোহাগড়া বাঘ, কেন্দুয়ার বাঘ, ফুলেশ্বরী কত ধরনের বাঘের গল্প। বর্ণনাগুলো মনে গেঁথে থাকায় বড় হয়ে আবার জিজ্ঞেস করে বুঝে নিয়েছিলাম কোনটা রয়েল বেঙ্গল, কোনটা চিতা বাঘ কিংবা মেঘলা চিতা।
নানার বাড়িতে গিয়েই শুনেছিলাম দুই ভাইয়ের খালি হাতে বাঘ মেরে ফেলার এক কাহিনি। ওই কাহিনি নিয়ে স্থানীয় একজন একটা পুঁথিও রচনা করেছিলেন। যতদূর শুনেছি সোনাই নদীর ধারেই ঘটেছিল রোমহর্ষক সে ঘটনা। নদীর এক পাড়ে বাংলাদেশ, আরেক পাড়ে ভারত।
৫. বছর পনেরো আগের কথা। গিয়েছিলাম ভাওয়ালের গড়ে। সেখানে দেখা এক বৃদ্ধের সঙ্গে। দু-পাশে জঙ্গলের মাঝে ধান খেত। সেদিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললেন, ৫০-৬০ বছর আগের এক ঘটনা। অবশ্যটা ঘটনাটা সে সময়ের, তখন সেটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার স্বাভাবিক চিত্র। গরু চরাচ্ছিলেন,। গরুরা মনের আনন্দে চরে বেড়াচ্ছিল। তারপর বিনা মেঘে বজ্রপাত। বিশাল এক বাঘ জঙ্গলের ভেতর থেকে লাফ দিয়ে পড়ল পালের সবচেয়ে মোটাসোটা গরুটির ওপর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওটাকে মেরে, পিঠে নিয়ে আবার হারিয়ে গেল জঙ্গলে।
৬. রাঙামাটির কাপ্তাই আমার খুব প্রিয় একটি জায়গা। অনেক বারই পাড়ি জমিয়েছি সেখানকার জঙ্গল-পাহাড়ে। কাপ্তাইয়ের রাম পাহাড়-সীতা পাহাড়ে চষে বেড়াবার সময় স্থানীয়দের মুখে শুনেছি গাছ বাওয়ায় দক্ষ লতা বাঘের গল্প। বুঝতে বাকি ছিল না মেঘলা চিতাই এখানে লতা বাঘ। পরে ক্যামেরা ট্র্যাপেও মেঘলা চিতার ছবি তোলা সম্ভব হয় কাপ্তাইয়ে। তবে আমাকে চমকে দিয়েছিলেন সেখানকার এক দল কাঠুরে।
রাম পাহাড়ের এক ছড়া ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁদের সঙ্গে দেখা। কী কী বন্যপ্রাণীর দেখা পান তা জিজ্ঞেস করলে, একজন বললেন কাঠ কাটতে গিয়ে বড় বাঘ মানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিলেন। সঙ্গীরা সমর্থন জানালেও আমার মতো অতি আশাবাদীও কাপ্তাইয়ে ওই সময় বাঘ থাকার খবরটা বিশ্বাস করতে পারিনি।
৭. ২০১১ সালের ঘটনা। বন্ধু মিশুক-মেহেদীসহ বড় মোদকের দিকে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল সাঙ্গু রিজার্ভের গহিনে ঢুকে বাঘের খোঁজ করা। আমাদের গাইড ছিলেন মধ্য বয়স্ক এক মারমা। ভারী হাসি-খুশি মানুষ। তিন্দু পেরিয়েছি তখন। রেমাক্রির ধারে। হঠাৎ কোনো এক পাহাড় দেখিয়ে আমাদের মারমা গাইড জানান, এখানে বাঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলেছিলেন। ঝেড়ে কাশতে বললাম। জানালেন পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, হঠাৎ দেখেন বিশাল একটা বাঘ বসে আছে নদীর ধারের এক পাহাড়ে। ভয় পেয়েছিলেন। একটা পাথরের ওপাশে লুকিয়ে পড়লেন। বাঘটাকে আয়েশ করে গড়াগড়ি খেতে দেখেছিলেন ঘাসে। তাঁর অভিজ্ঞতা ১৯৮০-৮২ সালের।
আমরা মোটামুটি বাঘকে সুন্দরবনে বন্দী করে ফেললেও রাঙামাটির কাসালং-সাজেক, বান্দরবানের সাঙ্গু-মাতামুহুরি অরণ্য থেকে এখনো মাঝে মাঝে পাই বাঘের সংবাদ। আশায় বুক বাঁধি, এখনো আমাদের পাহাড়ের গহিনে টিকে আছে প্রিয় প্রাণী বাঘেরা।
বাঘকে আমরা এখন আটকে ফেলেছি সুন্দরবনে। অথচ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে এমন অনেক জায়গার নাম পাবেন যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঘের নাম। যেমন গাজীপুরের বাঘের বাজার, চট্টগ্রামের টাইগার পাস। আবার বিভিন্ন জায়গা, বাজার এমনকি বিদ্যালয়ের নামের সঙ্গেও আছে বাঘমারা শব্দটি। অর্থাৎ এসব জায়গাগুলোতে এক সময় বাঘ ছিল।
এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল-গাজীপুরের ভাওয়াল ও মধুপুরের অরণ্যসহ অনেক এলাকাতেই ছিল বাঘেদের রাজ্য। বান্দরবান, সিলেট যেখানেই যাই খোঁজ নেই বাঘেদের। একটু বয়স্ক কাউকে পেলে চেপে ধরি পুরোনো দিনের জঙ্গলের গল্প শোনার জন্য। তাঁদের মুখে এসব কাহিনি শুনতে শুনতে আমারও মনে হয় আহ ওই সময় যদি থাকতাম! কিংবা সত্যি যদি টাইম মেশিন থাকত। তবে দেশের কত জঙ্গলেই না বাঘেদের দেখা পেতাম। আশ্চর্যজনক হলেও কখনো কখনো পাহাড়ের দুর্গমে বাঘের নতুন গল্পও শোনা যায়। পুরোনোদের মুখে শোনা নতুন-পুরোনো কিছু বাঘের কাহিনিই তুলে ধরছি পাঠকদের সামনে।
১. শীতের এক সকাল। তবে অন্তত বছর চৌদ্দ-পনেরো আগের। মৌলভীবাজারের জুড়ীর ফুলতলা চা বাগানের মাঝখান দিয়ে হেঁটে কুয়াশামাখা সে সকালে পৌঁছে যাই রাগনার জঙ্গলে। এ সময় বনপথে দেখা এক বৃদ্ধের সঙ্গে। মুখে শত ভাঁজ। দেখেই অনুমান করে নিতে কষ্ট হয় না আশি পেরিয়েছে তাঁর বয়স। পুরোনো দিনের জঙ্গল-বন্যপ্রাণীর খোঁজ নিলাম।
উৎসাহ পেয়ে গল্পের ঝুড়ি মেলে দিলেন স্মৃতিকাতরতা পেয়ে বসা বৃদ্ধ। তখন তাঁর যুবা বয়স। গরুর পাল চরাতে নিয়ে এসেছিলেন জঙ্গলে। হঠাৎ সেখানে হাজির বিশাল এক মদ্দা বাঘ। অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঘটা। হাতের লাঠি দিয়ে পাশের গাছে বারি দিয়ে চিৎকার করতে লাগলেন বৃদ্ধ। ভয় তো পেলই না উল্টো ক্ষুব্ধ হলো বাঘ। পালের চার-পাঁচটা গরুকে মেরে ফেলল সে কয়েক মিনিটের মধ্যে। তারপর একটাকে নিয়ে চলে গেল। তবে ভাগ্যগুণে বেঁচে যান গল্প বয়ানকারী। রোমহর্ষক সে বর্ণনা শুনলাম মুগ্ধ হয়ে। মনে হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে আমিও হাজির হয়ে গিয়েছি সত্তর-আশি বছর আগের রাগনার জঙ্গলে।
২. নভেম্বর, ২০২০। বান্দরবানের কেওক্রাডংয়ের পাদদেশে পরিচ্ছন্ন, শান্ত এক পাড়া। দার্জিলিং পাড়া। সন্ধ্যা নেমেছে। পাড়া প্রধানের খাবার ঘরটায় তাঁকে ঘিরে বসে আছি কয়েক জন। সৌরবিদ্যুতে জ্বলা বাতির মিটমিটে আলোয় ঘরটার অন্ধকার কাটেনি। অদ্ভুত এক আলো-আঁধারির খেলা কামরাজুড়ে। পাড়াপ্রধান ছোটখাটো গড়নের অমায়িক এক মানুষ। মুখের বহু ভাঁজ, চোখের নিচের কুঁচকানো চামড়া জানান দিচ্ছে অনেকগুলো গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত পাড় করে এসেছেন। সেই সঙ্গে স্মৃতি হিসাবে জমা আছে হাজারো বিচিত্র ঘটনা।
একটা গল্প শুনতে চেয়েছিলাম। সত্যি গল্প। শুরু করলেন। মুখময় ছড়িয়ে পড়েছে হাসি। যেন সেই বয়সে ফিরে গেছেন, যে সময়টায় দিনে পাহাড়ি পথে আঠারো-কুড়ি মাইল হাঁটতে পারতেন অনায়াসে। রগচটা ভাল্লুকও তাঁকে দেখলে মেজাজটা একটু ঠান্ডা করা যায় কিনা হিসাব-নিকাশে বসত।
ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলতে লাগলেন। তবে কাহিনিটা এত রোমাঞ্চকর ভাষার ছোট্ট সমস্যাটা উড়ে গেল এক নিমেষে। এমনই এক রাত ছিল। তবে সময়টা অন্তত পঁচিশটা বসন্ত আগের। ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেছে পাড়ার মানুষগুলো। হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম টুটে যায় কারবারির। গোয়ালঘরের দিক থেকে আসছে আওয়াজটা। দৌড়ে ঘরের দরজা খুলে বের হলেন। দেরি হয়ে গেছে। তাঁর সবচেয়ে বড় গরুটাকে নিয়ে গেছে ওটা। ডোরা বাঘ। যখন টের পেলেন তখন ওই রাতে কিছুই করার ছিল না আর।
আমি যেন হঠাৎ করেই পিছিয়ে গেলাম দুই যুগ কিংবা তারও আগে। স্পষ্ট একটা হুটোপুটির শব্দ শুনলাম। তারপর ভারী একটা কিছু হেঁচড়ে নেওয়ার আওয়াজ। বাঘ বড় সাইজের গরু বা মোষ মেরে নেওয়ার সময় মাটিতে মড়ি ঘষটানোর কারণে যে শব্দ হয়!
বৃদ্ধের চেহারায় হঠাৎ যেন একটা ঝিলিক দেখলাম। তারপর আবার হাসলেন। বলতে শুরু করলেন ঘটনার বাকি অংশ। পরদিন আলো হতেই বন্দুক নিয়ে একাকী বেরিয়ে পড়লেন। গরুর রক্ত, আর টেনে নেওয়ার চিহ্ন ধরে খুঁজে বের করলেন বাঘটাকে। তারপর কী করলেন? মুখে ছড়ানো হাসি, আর তাঁর এখানে উপস্থিতি জানিয়ে দিল লড়াইয়ে তাঁর জয় হয়েছিল। পরের দিন কেওক্রাডংয়ে উঠেই দেখা পাহাড়ের মালিক লালাবমের সঙ্গে। দার্জিলিং পাড়ায় জেনেছিলাম বাঘের নতুন খবর মিলবে তাঁর কাছে। জিজ্ঞেস করতেই যা বললেন, চমকালাম।
আগের বছর, মানে ২০১৯-এ তাঁর বিশাল একটা গরু মারা পড়েছিল বাঘের আক্রমণে। লালাবমের বর্ণনা ঠিক হলে দূরের পাহাড়ে থাকে বিশাল বেঙ্গল টাইগার। শিকারের জন্য হানা দেয় মাঝেমধ্যে এদিকে। হেলিপ্যাডের ঠিক নিচেই মেরে খেয়ে গিয়েছিল গরুটাকে।
৩. ২০১১ সাল। মৌলভীবাজারের জুড়ীর লাঠিটিলা জঙ্গলে গিয়েছিলাম। জঙ্গল ভ্রমণের শেষপর্যায়। একজনের পর একজন হাঁটছে, একটি পায়ে চলা পথ ধরে। আমি, দুই বন্ধু মিশুক, মেহেদী ও স্থানীয় দুই তরুণ। ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে। পথ পিছল, তাই হুঁশিয়ার। হঠাৎ পথে একটা বাঁক। ওপাশ থেকে কথাবার্তা ভেসে আসছে। আমাদের মতো জঙ্গল ভ্রমণে আসা কোনো পর্যটক, নাকি স্থানীয় কেউ? দুই কদম এগোতেই তিনজন মানুষের মুখোমুখি। তাঁদের মাঝে মধ্যবয়সী একজনকে দেখিয়ে সঙ্গী এক তরুণ বললেন, সফিক ভাই। জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। জঙ্গলের খবর পাইবেন তাঁর কাছে।
শক্তপোক্ত গড়ন। উচ্চতা মাঝারি, দুই চোখে ধারালো দৃষ্টি। শুরুতে সরকারি লোক মনে করে কথা বলতে চাইছিলেন না। তবে একটু পর আশ্বস্ত হয়ে মন খুলে বললেন। তারপরই বোমাটা ফাটালেন। গত বছরও (২০১০) বড় ডোরা বাঘ দেখেছেন। একটা ঝোপের মধ্যে বসে ছিল ঘাপটি করে। তাড়াহুড়া করে সরে আসেন সফিক ভাই। আমার দেখা সিলেট বিভাগের সেরা জঙ্গল লাঠিটিলা।
তাই বলে ২০১০ সালে লাঠিটিলায় বেঙ্গল টাইগার? আরও কিছুক্ষণ জেরা করেও সফিককে টলাতে পারলাম না। ততক্ষণে বুঝে গেছি, তাঁর ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম। পরে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক মনিরুল খান ভাইও জানিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে শুনেছেন সাম্প্রতিক সময়েও ওই বনে বাঘ বিচরণের গল্প।
অবশ্য ২০১১-র পরে আর লাঠিটিলা যাইনি। তাই জানি না নতুন কোনো বাঘের সংবাদ। লাঠিটিলার ওপাশে ভারতের সীমান্ত। ওই সীমান্তে এখনো দু-একটি বাঘ আছে নাকি?
৪. টাইম মেশিনে চেপে ফিরে যাই তিন দশক আগের। হবিগঞ্জের মাধবপুরের দেবনগর গ্রাম। আমার নানার বাড়ি। হালকা বাতাসের ঝাপটায় কুপির আলোটা কাঁপছে। কম্পনরত সেই আলোয় নানির চেহারাটা আবছাভাবে দেখতে পাচ্ছি। পুরোনো স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে মুখের ভাঁজগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে যেন। কিশোরী কিংবা তরুণী বয়সের গল্প সেসব। তন্ময় হয়ে শুনছি আমরা কয় জন। সাত থেকে তেরোর মধ্যে বয়স সবার।
নানি বলে চলেছেন, রাতে হঠাৎ ঘুম ভাইঙ্গা গেল। একটা হুটোপুটির শব্দ। গোয়াল ঘর থেকে আসতাছে। তারপর গম্ভীর একটা ঘর ঘর আওয়াজ। এক মিনিট সুসনান। এরপর ভারী একটা কিছু হেঁচড়ে নিতেছে, এমন একটা শব্দ। শরীর হিম হইয়া গেল। বুঝতে বাকি নাই নাতি আমার। আবার একটা গরুরে বাঘে নিছে।
বালক বয়সে হবিগঞ্জের মাধবপুরে নানার বাড়িতে গেলেই নানিকে চেপে ধরতাম আমরা পুরোনো দিনের গল্প শোনার জন্য। ভুতুড়ে কাণ্ড-কীর্তি অন্যদের টানত বেশি। তবে আমার আগ্রহে বাঘের আক্রমণের কাহিনিও বলতেন মাঝে-সাজে। বিশাল আকারের লোহাগড়া বাঘ, কেন্দুয়ার বাঘ, ফুলেশ্বরী কত ধরনের বাঘের গল্প। বর্ণনাগুলো মনে গেঁথে থাকায় বড় হয়ে আবার জিজ্ঞেস করে বুঝে নিয়েছিলাম কোনটা রয়েল বেঙ্গল, কোনটা চিতা বাঘ কিংবা মেঘলা চিতা।
নানার বাড়িতে গিয়েই শুনেছিলাম দুই ভাইয়ের খালি হাতে বাঘ মেরে ফেলার এক কাহিনি। ওই কাহিনি নিয়ে স্থানীয় একজন একটা পুঁথিও রচনা করেছিলেন। যতদূর শুনেছি সোনাই নদীর ধারেই ঘটেছিল রোমহর্ষক সে ঘটনা। নদীর এক পাড়ে বাংলাদেশ, আরেক পাড়ে ভারত।
৫. বছর পনেরো আগের কথা। গিয়েছিলাম ভাওয়ালের গড়ে। সেখানে দেখা এক বৃদ্ধের সঙ্গে। দু-পাশে জঙ্গলের মাঝে ধান খেত। সেদিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললেন, ৫০-৬০ বছর আগের এক ঘটনা। অবশ্যটা ঘটনাটা সে সময়ের, তখন সেটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার স্বাভাবিক চিত্র। গরু চরাচ্ছিলেন,। গরুরা মনের আনন্দে চরে বেড়াচ্ছিল। তারপর বিনা মেঘে বজ্রপাত। বিশাল এক বাঘ জঙ্গলের ভেতর থেকে লাফ দিয়ে পড়ল পালের সবচেয়ে মোটাসোটা গরুটির ওপর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওটাকে মেরে, পিঠে নিয়ে আবার হারিয়ে গেল জঙ্গলে।
৬. রাঙামাটির কাপ্তাই আমার খুব প্রিয় একটি জায়গা। অনেক বারই পাড়ি জমিয়েছি সেখানকার জঙ্গল-পাহাড়ে। কাপ্তাইয়ের রাম পাহাড়-সীতা পাহাড়ে চষে বেড়াবার সময় স্থানীয়দের মুখে শুনেছি গাছ বাওয়ায় দক্ষ লতা বাঘের গল্প। বুঝতে বাকি ছিল না মেঘলা চিতাই এখানে লতা বাঘ। পরে ক্যামেরা ট্র্যাপেও মেঘলা চিতার ছবি তোলা সম্ভব হয় কাপ্তাইয়ে। তবে আমাকে চমকে দিয়েছিলেন সেখানকার এক দল কাঠুরে।
রাম পাহাড়ের এক ছড়া ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁদের সঙ্গে দেখা। কী কী বন্যপ্রাণীর দেখা পান তা জিজ্ঞেস করলে, একজন বললেন কাঠ কাটতে গিয়ে বড় বাঘ মানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিলেন। সঙ্গীরা সমর্থন জানালেও আমার মতো অতি আশাবাদীও কাপ্তাইয়ে ওই সময় বাঘ থাকার খবরটা বিশ্বাস করতে পারিনি।
৭. ২০১১ সালের ঘটনা। বন্ধু মিশুক-মেহেদীসহ বড় মোদকের দিকে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল সাঙ্গু রিজার্ভের গহিনে ঢুকে বাঘের খোঁজ করা। আমাদের গাইড ছিলেন মধ্য বয়স্ক এক মারমা। ভারী হাসি-খুশি মানুষ। তিন্দু পেরিয়েছি তখন। রেমাক্রির ধারে। হঠাৎ কোনো এক পাহাড় দেখিয়ে আমাদের মারমা গাইড জানান, এখানে বাঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলেছিলেন। ঝেড়ে কাশতে বললাম। জানালেন পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, হঠাৎ দেখেন বিশাল একটা বাঘ বসে আছে নদীর ধারের এক পাহাড়ে। ভয় পেয়েছিলেন। একটা পাথরের ওপাশে লুকিয়ে পড়লেন। বাঘটাকে আয়েশ করে গড়াগড়ি খেতে দেখেছিলেন ঘাসে। তাঁর অভিজ্ঞতা ১৯৮০-৮২ সালের।
আমরা মোটামুটি বাঘকে সুন্দরবনে বন্দী করে ফেললেও রাঙামাটির কাসালং-সাজেক, বান্দরবানের সাঙ্গু-মাতামুহুরি অরণ্য থেকে এখনো মাঝে মাঝে পাই বাঘের সংবাদ। আশায় বুক বাঁধি, এখনো আমাদের পাহাড়ের গহিনে টিকে আছে প্রিয় প্রাণী বাঘেরা।
ঢাকার বাতাস আজ খুবই অস্বাস্থ্যকর। বায়ুদূষণের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সকালে পরিমাপ অনুযায়ী ঢাকার বায়ুদূষণের স্কোর ২৪৫। অন্যদিকে বায়ুদূষণের শীর্ষে পাকিস্তানের লাহোর। গুরুতর বায়ুদূষণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। এ ছাড়া দূষণের শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায় ঘুরে ফিরে এই তিন দেশেরই বিভিন্ন
১১ ঘণ্টা আগেআজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৯) দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর জলবায়ু ও পরিবেশ সাংবাদিকদের সংগঠন ‘সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম’ (সাকজেএফ) এর নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে।
১ দিন আগেসেন্টমার্টিনের প্রবাল রক্ষায় সেখানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপকে কেন্দ্র করে গত কিছুদিন ধরেই আলোচনায় দ্বীপটি । এরই মধ্যে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল আবিষ্কৃত হলো প্রশান্ত মহাসাগরে। অসংখ্য ক্ষুদ্র প্রাণী একসঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি প্রাচীরের পরিবর্তে একটি বিশালাকায় প্রবাল গঠন করেছে সেখা
১ দিন আগেঢাকার বাতাস আজও অস্বাস্থ্যকর। বায়ুদূষণের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ওপরে উঠে দাঁড়িয়েছে পাঁচ এ। সকালে পরিমাপ অনুযায়ী ঢাকার বায়ুদূষণের স্কোর ১২৩। অন্যদিকে একদিনের ব্যবধানে আবারও বায়ুদূষণের শীর্ষে পাকিস্তানের লাহোর। গুরুতর বায়ুদূষণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। এ ছাড়া দূষণের শীর্ষ পাঁচ দেশের
২ দিন আগে