জি এম এমদাদ
এই যে এক্সপ্লোর করা… মানুষ, মাটি, ঐতিহ্য, যেখানে থাকেন তার আশপাশ, আশপাশের জনপদ, লোকালয়, বিখ্যাত মানুষ, এখানকার সংস্কৃতি, কৃষ্টি দীর্ঘদিন ধরে আপনার লেখায়, আপনার গবেষণায় এক্সপ্লোর করে চলেছেন। এই চিন্তা কবে থেকে হলো? কেন?
জি এম এমদাদ: মূলত আমি তো তোমাদের শিক্ষক হিসেবেই ছিলাম। তখন থেকে আমার মনের মধ্যে একটা ইয়ে হলো, সাংবাদিকতা করতে গেলাম। চিন্তা করলাম প্রচলিত সাংবাদিকতার বাইরে যেয়ে সাংবাদিকতাটা করার।
ভাবলাম ফিচারধর্মী কোনো নিউজ, যা এলাকার উন্নয়নের কাজে লাগে (এ রকম কিছু করা যায় কিনা)! ধরা যাক—এলাকার রাস্তাঘাট, স্কুল নেই, কলেজ নেই, সেটার জন্য বছরের পর বছর নিরক্ষর থেকে যাচ্ছে। অথচ সেখানে একটা স্কুল করা যায় কিনা—তা নিয়ে কেউ লেখে না।
অসংখ্য গুণীজন পড়ে আছে। অবহেলিত গুণীজন যারা, তাঁদের খোঁজ কেউ নেয় না। খুঁজে খুঁজে দেখতে লাগলাম; ধরো এই মানিকতলা (স্থানীয় বাজার) কীভাবে হলো, এর মূলে কে কে ছিল? ধীরাজতুল্ল সরদার এখানে প্রথম স্কুল করিচে। বসিরগাজী নামে একজন ছিলেন, এখানে এই বাজারের জন্য জমিটমি দিয়েছেন।
তাঁদের পঞ্চাশ বছর এক শ বছর আগের দান করা জমিতে আজ আমরা ফলাফল ভোগ করতিছি। এই ইতিহাসটা তো কেউ জানে না। কেউ লেখে না। তখন আমি এই বিষয়ের ওপর ফিচার করতে শুরু করলাম। একটা নিউজ এল—‘অবহেলিত এক গ্রামের নাম রামনগর’…
[এতক্ষণ ধরে চলা প্রথম ধাপের চা-পর্বের রেশ নেতিয়ে এসেছে। চায়ের কাপ নিতে এসেছিল দোকানদার। জি এম এমদাদ পানটা মুখে দিয়ে কাগজে আঙুলের অগ্রভাগ মুছে নিলেন। ‘একটা পান নিয়ে আসো দি’ আমার দিকে ইঙ্গিত—পান খেতে চাই কিনা! না চাওয়ার যেহেতু কোনো কারণই নেই, ফলে আরেক দফা অর্ডার হয়—‘আর দুটো পান নিয়ে আসো।’ কথা শুরু করেন জি এম এমদাদ]
আমার রামনগর গ্রাম নিয়েও তো নিউজ আসে! এবং সেটা বড় আকারে! ভাবলাম, রামনগর গ্রাম নিয়ে যদি নিউজ আসে, তাহলে প্রতিডা গ্রামের ওপর নিউজ করা লাগবে। তখন আমি বিভিন্ন জায়গায় যাতি (যেতে) লাগলাম। কাজী ইমদাদুল হককে খুঁজতে লাগলাম, মেহের মুসুল্লীকে খুঁজতে লাগলাম। ইদানীং আমি আবার একটা ফিচার লেখার ইয়ে করিচি (করেছি), এখনকার যে বিলুপ্ত হাটবাজার, এখানে ওই যে ঘোষের হাট ছিল, সেই হাটটা নেই।
এখানে দুবোডাঙ্গার হাট ছিল। বিলের মাথায় একটা হাট ছিল দুবোডাঙ্গার হাট, সেটা তোমরা দ্যাখোনি। হাটটা এইরাম (এ রকম) সময় মানে সন্ধ্যার সময় বসত। রাত দশটার দিকে হাট ভাঙলে মানুষজন টেমি (কেরোসিনের ল্যাম্প) মাথায়–টাথায় করে নিয়ে বাড়ি ফিরত। রাত্তিরি রান্নাবান্না করে খেয়ে রাত বারোটার দিকে ঘুমাত।
তাহলে কিছু হাট বিলুপ্ত হয়েছে, এবং বিনিময়ে নতুন নতুন কিছু হাটও জন্মাইছে। একচড়ের হাট, এই হাট সেই হাট… এসব নাম জানি, যেগুলো আছে। কিন্তু বিলুপ্ত হয়ে গেছে যেগুলো, সেগুলো জানার কোনো উপায় নেই।
তারপর দেখলাম আমাদের বাড়ির পাশে একটা নদী ছিল; আদাসুর। খলিলনগর যাতি (যাওয়ার) পথে একটা খাল পড়ে না? ওটা হচ্ছে আদাসুর নদীর অবশিষ্ট অংশ। ওই নদীটা যদি না থাকত, তাহলে এখানে দমদমা হতো না। ধনপতি সওদাগর ব্যবসা–বাণিজ্য করে, মালটাল কিনে এনে যে জায়গায় রাখত, সেই জায়গাডার নাম হয়িচে (হচ্ছে) দমদমা। চাঁদসওদাগর, ধনপতি সওদাগর বাস করত এখানে।
জি এম এমদাদ: এ রকমভাবে ইতিহাস খুঁজদি খুঁজদি (খুঁজতে খুঁজতে) দেখলাম, একটা বেশ কালেকশন হয়ে গেছে। মাথায় এল এইগুলো দিয়েই তো আমি বই করতে পারি! তখন বের করলাম ‘সাদা সোনার রাজ্য’। বাইরিত্তি (বাইরে থেকে) যাঁরা আসেন, তাঁরা পাইকগাছাকে জানার জন্য এই একটা বই-ই পায়। বইটা যদি না করতাম, তাহলে কী হতো? হয়তো কপিলমুনি একজন আসলো এই এলাকাটা সম্পর্কে জানার জন্য। বিশিষ্ট যারা শিক্ষাবিদ আছেন, তাঁদের কাছে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা সন্ধান দেবে, এখানে রায়সাহেব (বিনোদ বিহারী) আছেন। আরও যদি দেখতে চান, তাহলে পিসি রায়ের ওখানে যান। পিসি রায়ের বাড়ি কোথায়? ওই যে, খুলনার পাইকগাছার বাড়ুলিতে।
এখানে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হকের জন্মস্থান। এখানে একজন বৃক্ষপ্রেমী মানুষ ছিলেন (মেহের মুসল্লী) তিনি রাস্তার ধারে গাছ লাগাইছেন, তালা থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত (প্রায় ২৩ কিলোমিটার)। এ রকম অনেক কথাই বলে দিল বিশিষ্টজনরা। কিন্তু লেখা আকারে তো আর তাঁদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে ভাবলাম এই ইতিহাস-ঐতিহ্যকে কবিতা আকারে, ছন্দ আকারে রূপ দেওয়া যায় কিনা! ওই বইটার নাম দিলাম ‘পাইকগাছার পাসওয়ার্ড’।
জি এম এমদাদ: আমার আগাগোড়া কেটেছে এখানেই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সচক্ষে উপলদ্ধি করেছি। একষট্টিতে জন্ম। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্লাস ফাইভের ছাত্র। কপিলমুনি হসপিটালে আব্বা যখন চাকরি করত, ওখানেই ছিলাম। আব্বা এইটটি টুতে মারা যাওয়ার পর রামনগর এসে বাড়ি করলাম। তার আগ পর্যন্ত কপিলমুনি (পাইকগাছা উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান) ছিলাম। এখানকার সবাই মনে করত, আমি কপিলমুনির ছেলে। গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি নিলাম, পোস্টিং হলো বরগুনা।
জি এম এমদাদ: যেখানেই যাই না কেন সার্বিকভাবে মেশার চেষ্টা করি। দেখার চেষ্টা করি। ওখানে যে এক বছর ছিলাম, বরগুনার অনেক গ্রাম ঘুরেছি। সেখানকার মানুষের সাথে মিশেছি। ওই সময় এ রকম নিষেধাজ্ঞা—কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে একগ্লাস পানিও খাওয়া যাবে না। আমার ওপরের যে অফিসার ছিলেন, তাঁর সঙ্গে একবার একটা জায়গায় গেলাম। ব্যাংকের টাকা নিয়ে গাভী কিনেছেন এক মহিলা। সে খুব অনুরোধ করল, ‘আমার নতুন গাইয়ের দুধ হয়িচে (হয়েছে), আপনাদের দুই স্যারের জন্যি (জন্য) আমি দুই গ্লাস দুধ নিয়ে আসছি।’
আমার অফিসার আপত্তি করল, এই দুধ আমরা খেতে পারব না। চাকরি চলে যাবে। বললাম যে, আমি খাব। এতে যদি আমার চাকরি যায়, তো যাক! সে আমাকে আদর আপ্যায়ন করে ডিম খাওয়াচ্ছে আর একগ্লাস দুধ খাওয়াচ্ছে! অফিসারকে বললাম, খান। আমি খেয়েছি আপনি খান। একজন ভালোবেসে কিছু খেতে দিচ্ছে। সামাজিকতা বলে তো একটা কথা আছে!
জি এম এমদাদ: পঁচাশি সাল। এত কঠিন নিয়ম ছিল ওই সময়! এখন এটা আর নেই। যে ব্রাঞ্চে ছিলাম, সেখানে প্রতি বছর দুটো করে অনুষ্ঠান হতো। সেখানে মাইক ধরার মতো কেউ ছিল না। আমি একদিন একটু মাইক ধরলাম। দুটো–চারটে কথা বলার পর ম্যানেজার বলতে লাগল, ‘এমদাদ সাহেব, এখন থেকে আপনিই মাইক ধরবেন।’ সারাদিন মাইক ধরে আমার এমন অবস্থা! মাইক আর ছাড়ার কায়দা নেই!
এইভাবে ওখানকার লোকজনের সঙ্গে আমার বেশ সুসম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। তারপর একদিন বোরহান সাহেব (কপিলমুনি জাফর আউলিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার তৎকালিন অধ্যক্ষ) বললেন, ‘মাদরাসায় একটা পোস্ট খালি হয়েছে। তুমি চলে আস।’ এইটটি সিক্সে জয়েন করে বেতন চালু হলো এইটটি নাইনে গিয়ে।
জি এম এমদাদ: তখন আমার ফাদার নেই। মা আছে। ফ্যামিলি আছে। এদের জন্য। এসে ভালোই হয়েছে, লেখালেখিটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। ওই পেশায় যদি বহাল থাকতাম, হয়তো লিখতে পারতাম। কিন্তু আঞ্চলিকতা নিয়ে এত কিছু করতে পারতাম না। ওখানে থেকেও সাংবাদিকতা করতে পারতাম। কিন্তু সেই সাংবাদিকতা হতো শুধুমাত্র সাংবাদিকতা। আমার এলাকার কোনো উপকারে আসত না। এখানে যখন আসলাম, ভাবলাম সেই জীবনটাই যখন মাটি করে দিলাম এলাকায় বসে, তাহলে এলাকার জন্য কিছু করি!
[জি এম এমদাদের টেবিলে একটা চিরকুটে হাতে লেখা দুলাইনের ছড়া। আলাপের ধারাবাহিকতা ডিঙ্গিয়ে চিরকুটের ব্যাখ্যায় মনোযোগী হয়ে পড়েন তিনি। মজিদ হুজুরের বাড়ি আছে ওখানে। সেই বাড়ির দেয়ালে নানান ছড়া, গুরুত্বপূর্ণ বাণী ইত্যাদি লিখে রাখার পরিকল্পনা করেছেন জি এম এমদাদ। এই যেমন, ‘নিজের ছেলে মেয়েকে করতে হবে আদর, তবে অধিক আদরে আবার হয়ে যায় বাঁদর’ অথবা ‘নামাজ বেহেস্তের চাবি, লোক দেখানো নামাজ হলে দোযখে তুই যাবি’। আরও একটা শোনালেন স্মৃতি থেকে- ‘মাতব্বরের সংখ্যা যে ঘরে বাড়ে, সে ঘরের দফা সারে (সর্বনাশ হয়)!]
জি এম এমদাদ: এর মধ্যে আবার স্কুল করলাম। আরেকটা আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছি, গ্রামে গ্রামে পাঠাগার। যেকোনো জায়গায় যদি কেউ পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়, আমার দশ হাজার টাকা অনুদান থাকবে সেখানে। জায়গা খুঁজছি। কিছু না করতে পারলেও যেন একটা লাইব্রেরি করে যেতে পারি! চাকরি শেষে যে বিশ-পঁচিশ লাখ টাকা পাব, ওই টাকা দিয়ে এসব করব।
মানুষ তো প্রতি বছর দান করে, জাকাত দেয়, নানান কিছু করে। আমি প্রতি বছর বইয়ের পারপাসে পঞ্চাশ হাজার-এক লাখ টাকা খরচ করলাম, তাতে অসুবিধে কী!
তাতে আমার একটা সৃষ্টি থেকে গেল! আমি চলে যাব। বইটা তো থেকে যাবে। রায় সাহেবকে (বিনোদ বিহারী) নিয়ে একটা বই করলাম। আমি একটা মুসলমান মানুষ কেন হিন্দুকে নিয়ে লিখলাম? এ নিয়ে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে।
বিনোদের ইতিহাস যদি আমি না লিখতাম, আরও ২০ বছর পর্যন্ত কেউ লিখত না। এমনিভাবে চিন্তা করতেছি, জাফর আউলিয়া নিয়ে অনেক কিছু ছড়ায়ে আছে। সেগুলো একত্রিত করে, অন্তুত দু–চারডা (দু–চারটি) কথা তো আমি লিপিবদ্ধ করে রাখি। মেহের মুসল্লী নিয়ে এ রকম কোনো বই বেরোয়নি। যদি কেউ ভবিষ্যতে গবেষণা করতে চায়, বা লিখতে চায়… অন্তত ইতিহাস খোঁজার প্রথম সূত্রটা আমার কাছ থেকে পাক!
[রাত বাড়ছে। একটু একটু করে ভাংতে শুরু করেছে সন্ধ্যার হাট। শেষ বাজারে বাড়ি ফেরে যারা, তারা সঙ্গী খোঁজে। নানান গল্পের সাঁকো বেয়ে চলতে পারলে পথ এগোয় ভালো। জি এম এমদাদের চেম্বারে বাড়ি ফেরত মুখের উঁকিঝুঁকি বাড়ে। দু–একজন নিয়মিত রোগী পরবর্তী কোর্সের ওষুধ নিতে আসে। রেডিও অন করে খবর শোনেন এমদাদ। আরেক দফা চা-পান চক্র চলে। গল্পে ফেরা হয় আবার]
এখন যে অবস্থায় পড়ে আছি আমরা। আসলে এখানে তো আমরা পড়ে থাকব না। বিশ বছর পঞ্চাশ বছর পর আরও ডেভলপ হবে। তখন মানুষ ইতিহাসগুলো খোঁজবে (খুঁজবে)। আমি না খুঁজলে, তুমি না খুঁজলে, খোঁজবে একসময় কেউ। মন তৈরি হয়ে যাবে। আমি সেই পথটাকে একটু পরিস্কার করে দিতে চাই।
কোনো প্রকাশনা বের করে এর মধ্যে আর্থিক কোনো কিছু খুঁজতে চাই না। অনেকে, আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়রা এসে বলে—ফালতু এইডা লেখেন কেন! ওই সময়টা আপনি অন্য কাজে ব্যয় করলে তো টাকা আসে!
জি এম এমদাদ: তাঁদের এ প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারব না। যারা টাকাকে ভালোবেসেছে একবার, অর্থকে ভালোবেসে ফেলেছে; তাঁদের দ্বারা অন্য কোনো কাজ হয়নি।
জি এম এমদাদের চেম্বার মানে ‘গাজী ফার্মেসী’ এক অর্থে তাঁর লেখালেখি ও গবেষণার জায়গা। ওখানে রোজ কিছু অপরিচিত মুখের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। নানা সমস্যাগ্রস্ত মুখ। তাঁদের সেবা দিতে পারলে এমদাদের ভালো লাগে। পনেরো, বিশ, পঞ্চাশ—যে যা দিয়ে যায়… টাকা চেয়ে নেন না কারও কাছে।
শেষ বিকেলে, সন্ধ্যার একটু আগ দিয়ে তিনি সাইকেলটা বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে, গাজী ফার্মেসীর তালা খোলেন।
আমরা যারা বছরে এক–দুবার নিয়মিত সংগ্রামে খানিকটা ইস্তফা দিয়ে শেকড়ের কাছে ফিরে যাই, অতীতের কাছে; অবধারিতভাবে তাদের জানাই থাকে- সন্ধ্যায় জি এম এমদাদকে ওখানেই পাওয়া যাবে!
আমাদের পেলে তিনি অনেকটা শিশুর মতো হয়ে পড়েন। নানা ডায়েরি বের করেন, কবিতা-গানের খাতা বের করেন; শোনাতে থাকেন একের পর এক। ইদানীং তিনি আঞ্চলিক গান-কবিতা লিখছেন।
এই যেমন ‘দাদি আমার সেকালি মানুষ, ভাসুরের নাম নেয় না/ স্বামীর নাম বুধুই বলি বুধবার আর হয় না’ অথবা ‘ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই/ কাল বিয়ানে উঠি দেহিস তোর মুহে মারবো ছাই’ অথবা ‘ভাসুর আনে চানাচুর কিনে, নোন্দাই আনে রসমালাই/ চ্যাংড়া দেওর ঘুরঘুর করে এহন আমি কনে যাই!’
কাজী ইমদাদুল হক: ব্রিটিশ ভারতের একজন বাঙালি লেখক ও শিক্ষাবিদ। ‘আব্দুল্লাহ’ উপন্যাসের লেখক তিনি।
পি সি রায় (আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়) : প্রখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ, বিজ্ঞানশিক্ষক, দার্শনিক, কবি। তিনি বেঙ্গল কেমিকেলসের প্রতিষ্ঠাতা ও মারকিউরাস নাইট্রাইট-এর আবিষ্কারক। দেশি শিল্পায়নের উদ্যোক্তা।
বিনোদ বিহারী রায়: দানবীর হিসেবেই তাঁর খ্যাতি। সফল ব্যবসায়ী। তৎকালীন সিদ্ধেশ্বরী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। তৈরি করেছেন দক্ষিণ খুলনার অন্যতম বড় ব্যবসাকেন্দ্র বিনোদগঞ্জসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও মন্দির।
মেহের মুসল্লী: লোকে তাঁর নাম জানে বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে। সাতক্ষীরার তালা থেকে খুলনার পাইকগাছা পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটারজুড়ে রাস্তার ধারে বৃক্ষ রোপন করেছেন নিজ উদ্যোগে। ছিলেন সমাজসেবক ও দানবীর।
জাফর আউলিয়া: ‘জাগ্রত পির’ জাফর আউলিয়া; দক্ষিণবঙ্গে যে কয়েকজন পির-আউলিয়া আছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সাধনার জন্য কপিলমুনিতে আসেন। তখন ওই অঞ্চল ছিল বনজঙ্গলে ভরা সুন্দরবনের একটি অংশ। খুলনার পাইকগাছার কপিলমুনিতে তাঁর মাজার আছে।
এই যে এক্সপ্লোর করা… মানুষ, মাটি, ঐতিহ্য, যেখানে থাকেন তার আশপাশ, আশপাশের জনপদ, লোকালয়, বিখ্যাত মানুষ, এখানকার সংস্কৃতি, কৃষ্টি দীর্ঘদিন ধরে আপনার লেখায়, আপনার গবেষণায় এক্সপ্লোর করে চলেছেন। এই চিন্তা কবে থেকে হলো? কেন?
জি এম এমদাদ: মূলত আমি তো তোমাদের শিক্ষক হিসেবেই ছিলাম। তখন থেকে আমার মনের মধ্যে একটা ইয়ে হলো, সাংবাদিকতা করতে গেলাম। চিন্তা করলাম প্রচলিত সাংবাদিকতার বাইরে যেয়ে সাংবাদিকতাটা করার।
ভাবলাম ফিচারধর্মী কোনো নিউজ, যা এলাকার উন্নয়নের কাজে লাগে (এ রকম কিছু করা যায় কিনা)! ধরা যাক—এলাকার রাস্তাঘাট, স্কুল নেই, কলেজ নেই, সেটার জন্য বছরের পর বছর নিরক্ষর থেকে যাচ্ছে। অথচ সেখানে একটা স্কুল করা যায় কিনা—তা নিয়ে কেউ লেখে না।
অসংখ্য গুণীজন পড়ে আছে। অবহেলিত গুণীজন যারা, তাঁদের খোঁজ কেউ নেয় না। খুঁজে খুঁজে দেখতে লাগলাম; ধরো এই মানিকতলা (স্থানীয় বাজার) কীভাবে হলো, এর মূলে কে কে ছিল? ধীরাজতুল্ল সরদার এখানে প্রথম স্কুল করিচে। বসিরগাজী নামে একজন ছিলেন, এখানে এই বাজারের জন্য জমিটমি দিয়েছেন।
তাঁদের পঞ্চাশ বছর এক শ বছর আগের দান করা জমিতে আজ আমরা ফলাফল ভোগ করতিছি। এই ইতিহাসটা তো কেউ জানে না। কেউ লেখে না। তখন আমি এই বিষয়ের ওপর ফিচার করতে শুরু করলাম। একটা নিউজ এল—‘অবহেলিত এক গ্রামের নাম রামনগর’…
[এতক্ষণ ধরে চলা প্রথম ধাপের চা-পর্বের রেশ নেতিয়ে এসেছে। চায়ের কাপ নিতে এসেছিল দোকানদার। জি এম এমদাদ পানটা মুখে দিয়ে কাগজে আঙুলের অগ্রভাগ মুছে নিলেন। ‘একটা পান নিয়ে আসো দি’ আমার দিকে ইঙ্গিত—পান খেতে চাই কিনা! না চাওয়ার যেহেতু কোনো কারণই নেই, ফলে আরেক দফা অর্ডার হয়—‘আর দুটো পান নিয়ে আসো।’ কথা শুরু করেন জি এম এমদাদ]
আমার রামনগর গ্রাম নিয়েও তো নিউজ আসে! এবং সেটা বড় আকারে! ভাবলাম, রামনগর গ্রাম নিয়ে যদি নিউজ আসে, তাহলে প্রতিডা গ্রামের ওপর নিউজ করা লাগবে। তখন আমি বিভিন্ন জায়গায় যাতি (যেতে) লাগলাম। কাজী ইমদাদুল হককে খুঁজতে লাগলাম, মেহের মুসুল্লীকে খুঁজতে লাগলাম। ইদানীং আমি আবার একটা ফিচার লেখার ইয়ে করিচি (করেছি), এখনকার যে বিলুপ্ত হাটবাজার, এখানে ওই যে ঘোষের হাট ছিল, সেই হাটটা নেই।
এখানে দুবোডাঙ্গার হাট ছিল। বিলের মাথায় একটা হাট ছিল দুবোডাঙ্গার হাট, সেটা তোমরা দ্যাখোনি। হাটটা এইরাম (এ রকম) সময় মানে সন্ধ্যার সময় বসত। রাত দশটার দিকে হাট ভাঙলে মানুষজন টেমি (কেরোসিনের ল্যাম্প) মাথায়–টাথায় করে নিয়ে বাড়ি ফিরত। রাত্তিরি রান্নাবান্না করে খেয়ে রাত বারোটার দিকে ঘুমাত।
তাহলে কিছু হাট বিলুপ্ত হয়েছে, এবং বিনিময়ে নতুন নতুন কিছু হাটও জন্মাইছে। একচড়ের হাট, এই হাট সেই হাট… এসব নাম জানি, যেগুলো আছে। কিন্তু বিলুপ্ত হয়ে গেছে যেগুলো, সেগুলো জানার কোনো উপায় নেই।
তারপর দেখলাম আমাদের বাড়ির পাশে একটা নদী ছিল; আদাসুর। খলিলনগর যাতি (যাওয়ার) পথে একটা খাল পড়ে না? ওটা হচ্ছে আদাসুর নদীর অবশিষ্ট অংশ। ওই নদীটা যদি না থাকত, তাহলে এখানে দমদমা হতো না। ধনপতি সওদাগর ব্যবসা–বাণিজ্য করে, মালটাল কিনে এনে যে জায়গায় রাখত, সেই জায়গাডার নাম হয়িচে (হচ্ছে) দমদমা। চাঁদসওদাগর, ধনপতি সওদাগর বাস করত এখানে।
জি এম এমদাদ: এ রকমভাবে ইতিহাস খুঁজদি খুঁজদি (খুঁজতে খুঁজতে) দেখলাম, একটা বেশ কালেকশন হয়ে গেছে। মাথায় এল এইগুলো দিয়েই তো আমি বই করতে পারি! তখন বের করলাম ‘সাদা সোনার রাজ্য’। বাইরিত্তি (বাইরে থেকে) যাঁরা আসেন, তাঁরা পাইকগাছাকে জানার জন্য এই একটা বই-ই পায়। বইটা যদি না করতাম, তাহলে কী হতো? হয়তো কপিলমুনি একজন আসলো এই এলাকাটা সম্পর্কে জানার জন্য। বিশিষ্ট যারা শিক্ষাবিদ আছেন, তাঁদের কাছে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা সন্ধান দেবে, এখানে রায়সাহেব (বিনোদ বিহারী) আছেন। আরও যদি দেখতে চান, তাহলে পিসি রায়ের ওখানে যান। পিসি রায়ের বাড়ি কোথায়? ওই যে, খুলনার পাইকগাছার বাড়ুলিতে।
এখানে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হকের জন্মস্থান। এখানে একজন বৃক্ষপ্রেমী মানুষ ছিলেন (মেহের মুসল্লী) তিনি রাস্তার ধারে গাছ লাগাইছেন, তালা থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত (প্রায় ২৩ কিলোমিটার)। এ রকম অনেক কথাই বলে দিল বিশিষ্টজনরা। কিন্তু লেখা আকারে তো আর তাঁদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে ভাবলাম এই ইতিহাস-ঐতিহ্যকে কবিতা আকারে, ছন্দ আকারে রূপ দেওয়া যায় কিনা! ওই বইটার নাম দিলাম ‘পাইকগাছার পাসওয়ার্ড’।
জি এম এমদাদ: আমার আগাগোড়া কেটেছে এখানেই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সচক্ষে উপলদ্ধি করেছি। একষট্টিতে জন্ম। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্লাস ফাইভের ছাত্র। কপিলমুনি হসপিটালে আব্বা যখন চাকরি করত, ওখানেই ছিলাম। আব্বা এইটটি টুতে মারা যাওয়ার পর রামনগর এসে বাড়ি করলাম। তার আগ পর্যন্ত কপিলমুনি (পাইকগাছা উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান) ছিলাম। এখানকার সবাই মনে করত, আমি কপিলমুনির ছেলে। গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি নিলাম, পোস্টিং হলো বরগুনা।
জি এম এমদাদ: যেখানেই যাই না কেন সার্বিকভাবে মেশার চেষ্টা করি। দেখার চেষ্টা করি। ওখানে যে এক বছর ছিলাম, বরগুনার অনেক গ্রাম ঘুরেছি। সেখানকার মানুষের সাথে মিশেছি। ওই সময় এ রকম নিষেধাজ্ঞা—কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে একগ্লাস পানিও খাওয়া যাবে না। আমার ওপরের যে অফিসার ছিলেন, তাঁর সঙ্গে একবার একটা জায়গায় গেলাম। ব্যাংকের টাকা নিয়ে গাভী কিনেছেন এক মহিলা। সে খুব অনুরোধ করল, ‘আমার নতুন গাইয়ের দুধ হয়িচে (হয়েছে), আপনাদের দুই স্যারের জন্যি (জন্য) আমি দুই গ্লাস দুধ নিয়ে আসছি।’
আমার অফিসার আপত্তি করল, এই দুধ আমরা খেতে পারব না। চাকরি চলে যাবে। বললাম যে, আমি খাব। এতে যদি আমার চাকরি যায়, তো যাক! সে আমাকে আদর আপ্যায়ন করে ডিম খাওয়াচ্ছে আর একগ্লাস দুধ খাওয়াচ্ছে! অফিসারকে বললাম, খান। আমি খেয়েছি আপনি খান। একজন ভালোবেসে কিছু খেতে দিচ্ছে। সামাজিকতা বলে তো একটা কথা আছে!
জি এম এমদাদ: পঁচাশি সাল। এত কঠিন নিয়ম ছিল ওই সময়! এখন এটা আর নেই। যে ব্রাঞ্চে ছিলাম, সেখানে প্রতি বছর দুটো করে অনুষ্ঠান হতো। সেখানে মাইক ধরার মতো কেউ ছিল না। আমি একদিন একটু মাইক ধরলাম। দুটো–চারটে কথা বলার পর ম্যানেজার বলতে লাগল, ‘এমদাদ সাহেব, এখন থেকে আপনিই মাইক ধরবেন।’ সারাদিন মাইক ধরে আমার এমন অবস্থা! মাইক আর ছাড়ার কায়দা নেই!
এইভাবে ওখানকার লোকজনের সঙ্গে আমার বেশ সুসম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। তারপর একদিন বোরহান সাহেব (কপিলমুনি জাফর আউলিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার তৎকালিন অধ্যক্ষ) বললেন, ‘মাদরাসায় একটা পোস্ট খালি হয়েছে। তুমি চলে আস।’ এইটটি সিক্সে জয়েন করে বেতন চালু হলো এইটটি নাইনে গিয়ে।
জি এম এমদাদ: তখন আমার ফাদার নেই। মা আছে। ফ্যামিলি আছে। এদের জন্য। এসে ভালোই হয়েছে, লেখালেখিটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। ওই পেশায় যদি বহাল থাকতাম, হয়তো লিখতে পারতাম। কিন্তু আঞ্চলিকতা নিয়ে এত কিছু করতে পারতাম না। ওখানে থেকেও সাংবাদিকতা করতে পারতাম। কিন্তু সেই সাংবাদিকতা হতো শুধুমাত্র সাংবাদিকতা। আমার এলাকার কোনো উপকারে আসত না। এখানে যখন আসলাম, ভাবলাম সেই জীবনটাই যখন মাটি করে দিলাম এলাকায় বসে, তাহলে এলাকার জন্য কিছু করি!
[জি এম এমদাদের টেবিলে একটা চিরকুটে হাতে লেখা দুলাইনের ছড়া। আলাপের ধারাবাহিকতা ডিঙ্গিয়ে চিরকুটের ব্যাখ্যায় মনোযোগী হয়ে পড়েন তিনি। মজিদ হুজুরের বাড়ি আছে ওখানে। সেই বাড়ির দেয়ালে নানান ছড়া, গুরুত্বপূর্ণ বাণী ইত্যাদি লিখে রাখার পরিকল্পনা করেছেন জি এম এমদাদ। এই যেমন, ‘নিজের ছেলে মেয়েকে করতে হবে আদর, তবে অধিক আদরে আবার হয়ে যায় বাঁদর’ অথবা ‘নামাজ বেহেস্তের চাবি, লোক দেখানো নামাজ হলে দোযখে তুই যাবি’। আরও একটা শোনালেন স্মৃতি থেকে- ‘মাতব্বরের সংখ্যা যে ঘরে বাড়ে, সে ঘরের দফা সারে (সর্বনাশ হয়)!]
জি এম এমদাদ: এর মধ্যে আবার স্কুল করলাম। আরেকটা আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছি, গ্রামে গ্রামে পাঠাগার। যেকোনো জায়গায় যদি কেউ পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়, আমার দশ হাজার টাকা অনুদান থাকবে সেখানে। জায়গা খুঁজছি। কিছু না করতে পারলেও যেন একটা লাইব্রেরি করে যেতে পারি! চাকরি শেষে যে বিশ-পঁচিশ লাখ টাকা পাব, ওই টাকা দিয়ে এসব করব।
মানুষ তো প্রতি বছর দান করে, জাকাত দেয়, নানান কিছু করে। আমি প্রতি বছর বইয়ের পারপাসে পঞ্চাশ হাজার-এক লাখ টাকা খরচ করলাম, তাতে অসুবিধে কী!
তাতে আমার একটা সৃষ্টি থেকে গেল! আমি চলে যাব। বইটা তো থেকে যাবে। রায় সাহেবকে (বিনোদ বিহারী) নিয়ে একটা বই করলাম। আমি একটা মুসলমান মানুষ কেন হিন্দুকে নিয়ে লিখলাম? এ নিয়ে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে।
বিনোদের ইতিহাস যদি আমি না লিখতাম, আরও ২০ বছর পর্যন্ত কেউ লিখত না। এমনিভাবে চিন্তা করতেছি, জাফর আউলিয়া নিয়ে অনেক কিছু ছড়ায়ে আছে। সেগুলো একত্রিত করে, অন্তুত দু–চারডা (দু–চারটি) কথা তো আমি লিপিবদ্ধ করে রাখি। মেহের মুসল্লী নিয়ে এ রকম কোনো বই বেরোয়নি। যদি কেউ ভবিষ্যতে গবেষণা করতে চায়, বা লিখতে চায়… অন্তত ইতিহাস খোঁজার প্রথম সূত্রটা আমার কাছ থেকে পাক!
[রাত বাড়ছে। একটু একটু করে ভাংতে শুরু করেছে সন্ধ্যার হাট। শেষ বাজারে বাড়ি ফেরে যারা, তারা সঙ্গী খোঁজে। নানান গল্পের সাঁকো বেয়ে চলতে পারলে পথ এগোয় ভালো। জি এম এমদাদের চেম্বারে বাড়ি ফেরত মুখের উঁকিঝুঁকি বাড়ে। দু–একজন নিয়মিত রোগী পরবর্তী কোর্সের ওষুধ নিতে আসে। রেডিও অন করে খবর শোনেন এমদাদ। আরেক দফা চা-পান চক্র চলে। গল্পে ফেরা হয় আবার]
এখন যে অবস্থায় পড়ে আছি আমরা। আসলে এখানে তো আমরা পড়ে থাকব না। বিশ বছর পঞ্চাশ বছর পর আরও ডেভলপ হবে। তখন মানুষ ইতিহাসগুলো খোঁজবে (খুঁজবে)। আমি না খুঁজলে, তুমি না খুঁজলে, খোঁজবে একসময় কেউ। মন তৈরি হয়ে যাবে। আমি সেই পথটাকে একটু পরিস্কার করে দিতে চাই।
কোনো প্রকাশনা বের করে এর মধ্যে আর্থিক কোনো কিছু খুঁজতে চাই না। অনেকে, আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়রা এসে বলে—ফালতু এইডা লেখেন কেন! ওই সময়টা আপনি অন্য কাজে ব্যয় করলে তো টাকা আসে!
জি এম এমদাদ: তাঁদের এ প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারব না। যারা টাকাকে ভালোবেসেছে একবার, অর্থকে ভালোবেসে ফেলেছে; তাঁদের দ্বারা অন্য কোনো কাজ হয়নি।
জি এম এমদাদের চেম্বার মানে ‘গাজী ফার্মেসী’ এক অর্থে তাঁর লেখালেখি ও গবেষণার জায়গা। ওখানে রোজ কিছু অপরিচিত মুখের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। নানা সমস্যাগ্রস্ত মুখ। তাঁদের সেবা দিতে পারলে এমদাদের ভালো লাগে। পনেরো, বিশ, পঞ্চাশ—যে যা দিয়ে যায়… টাকা চেয়ে নেন না কারও কাছে।
শেষ বিকেলে, সন্ধ্যার একটু আগ দিয়ে তিনি সাইকেলটা বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে, গাজী ফার্মেসীর তালা খোলেন।
আমরা যারা বছরে এক–দুবার নিয়মিত সংগ্রামে খানিকটা ইস্তফা দিয়ে শেকড়ের কাছে ফিরে যাই, অতীতের কাছে; অবধারিতভাবে তাদের জানাই থাকে- সন্ধ্যায় জি এম এমদাদকে ওখানেই পাওয়া যাবে!
আমাদের পেলে তিনি অনেকটা শিশুর মতো হয়ে পড়েন। নানা ডায়েরি বের করেন, কবিতা-গানের খাতা বের করেন; শোনাতে থাকেন একের পর এক। ইদানীং তিনি আঞ্চলিক গান-কবিতা লিখছেন।
এই যেমন ‘দাদি আমার সেকালি মানুষ, ভাসুরের নাম নেয় না/ স্বামীর নাম বুধুই বলি বুধবার আর হয় না’ অথবা ‘ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই/ কাল বিয়ানে উঠি দেহিস তোর মুহে মারবো ছাই’ অথবা ‘ভাসুর আনে চানাচুর কিনে, নোন্দাই আনে রসমালাই/ চ্যাংড়া দেওর ঘুরঘুর করে এহন আমি কনে যাই!’
কাজী ইমদাদুল হক: ব্রিটিশ ভারতের একজন বাঙালি লেখক ও শিক্ষাবিদ। ‘আব্দুল্লাহ’ উপন্যাসের লেখক তিনি।
পি সি রায় (আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়) : প্রখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ, বিজ্ঞানশিক্ষক, দার্শনিক, কবি। তিনি বেঙ্গল কেমিকেলসের প্রতিষ্ঠাতা ও মারকিউরাস নাইট্রাইট-এর আবিষ্কারক। দেশি শিল্পায়নের উদ্যোক্তা।
বিনোদ বিহারী রায়: দানবীর হিসেবেই তাঁর খ্যাতি। সফল ব্যবসায়ী। তৎকালীন সিদ্ধেশ্বরী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। তৈরি করেছেন দক্ষিণ খুলনার অন্যতম বড় ব্যবসাকেন্দ্র বিনোদগঞ্জসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও মন্দির।
মেহের মুসল্লী: লোকে তাঁর নাম জানে বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে। সাতক্ষীরার তালা থেকে খুলনার পাইকগাছা পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটারজুড়ে রাস্তার ধারে বৃক্ষ রোপন করেছেন নিজ উদ্যোগে। ছিলেন সমাজসেবক ও দানবীর।
জাফর আউলিয়া: ‘জাগ্রত পির’ জাফর আউলিয়া; দক্ষিণবঙ্গে যে কয়েকজন পির-আউলিয়া আছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সাধনার জন্য কপিলমুনিতে আসেন। তখন ওই অঞ্চল ছিল বনজঙ্গলে ভরা সুন্দরবনের একটি অংশ। খুলনার পাইকগাছার কপিলমুনিতে তাঁর মাজার আছে।
সারা বছর ঝিমিয়ে থাকলেও ঈদের সময় চাঙা হয়ে ওঠে দেশের সিনেমা হলগুলো। নির্মাতা ও প্রযোজকেরা দুই ঈদ ঘিরে সিনেমা বানাতে চান। রোজার ঈদের এখনো সাড়ে চার মাস বাকি, এরই মধ্যে ঈদের সিনেমা নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে জানা গেছে, রোজার ঈদে নতুন সিনেমা নিয়ে আসছেন শাকিব খান, আফরান নিশো ও সিয়াম আহমেদ।
২ ঘণ্টা আগেতরুণ রক মিউজিশিয়ানদের খোঁজে শুরু হচ্ছে ট্যালেন্ট হান্ট রিয়েলিটি শো ‘দ্য কেইজ’। অনলাইন অডিশনের মাধ্যমে ‘দ্য কেইজ’-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। শীর্ষ ১০০ প্রার্থী সরাসরি অডিশনের জন্য নির্বাচিত হবেন।
২ ঘণ্টা আগেপ্রায় আট বছর পর ‘লাল গোলাপ’ অনুষ্ঠান নিয়ে ফিরছেন সাংবাদিক ও উপস্থাপক শফিক রেহমান। এরই মধ্যে দুই পর্বের শুটিংও শেষ করেছেন, যা সম্প্রচার হবে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে।
২ ঘণ্টা আগেপ্রতি সপ্তাহেই নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খবর থাকছে এই প্রতিবেদনে।
২ ঘণ্টা আগে