রুইতনের কাছেই বুঝি চলে গেলেন কাকলী

নাজমুল হক নাঈম, ঢাকা
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৪, ১১: ৫৭

বৃন্দাবন দাসের লেখা ও সালাউদ্দিন লাভলু পরিচালিত সাকিন সারিসুরি ধারাবাহিক দিয়ে অভিনেত্রী রিশতা লাবণী সীমানার পথচলা। নাটকটিতে রুইতন চরিত্রে অভিনয় করা মোশাররফ করিমের বিপরীতে কাকলী চরিত্রে দর্শকপ্রিয়তা পান তিনি। নাটকটির শেষ দৃশ্যে মণ্ডলের গুলিতে মারা যায় রুইতন। আজ সীমানার মৃত্যুতে দর্শক যেন ফিরে গেছে সেই গল্পে। ফেসবুকজুড়ে তাদের পোস্ট, ‘রুইতনের কাছেই বুঝি চলে গেলেন কাকলী!’

২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরু করেন সীমানা। এরপর ‘সাকিন সারিসুরি’ ধারাবাহিক দিয়ে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। সীমানাকে প্রথমবার সুযোগ দেওয়া প্রসঙ্গে কথা হয় নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলুর সঙ্গে। তাঁর কথায়, ‘প্রথম দিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর পরই বুঝেছিলাম, সীমানা অসম্ভব মেধাবী একজন অভিনেত্রী।’

আজকের পত্রিকাকে তিনি সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘সীমানার শুরু সুন্দরী প্রতিযোগিতা দিয়ে। প্রথমে একটু সন্দিহান ছিলাম, মোশাররফ করিমের বিপরীতে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্রে কেমন করবে। দুই-তিন দিনের মতো গ্রুমিং হলো, বেশ দ্রুত সময়ে সেসব আয়ত্ত করে ফেলল। যখন ক্যামেরা ওপেন হলো, সীমানার অভিনয়ে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এত ভালো অভিনয়! ও তখন অনেক পরিশ্রম করেছিল, কারণ ও একজন অভিনেত্রী হতে চেয়েছিল। ওর সবচেয়ে বড় গুণ সততা, শুটিংয়ে কখনো ফাঁকিবাজি করেনি, সময় নষ্ট করেনি।’

‘সাকিন সারিসুরি’ নাটকের দৃশ্যে মোশাররফ করিমের সঙ্গে সীমানা। ছবি: ভিডিও থেকে সীমানার সঙ্গে সালাউদ্দিন লাভলুর শেষ কথা হয় দুই মাস আগে। লাভলুর নাটক দিয়েই ফিরতে চেয়েছিলেন সীমানা। নির্মাতাও আশ্বাস দিয়েছিলেন নতুন কাজে অবশ্যই সীমানা থাকবেন। লাভলু বলেন, ‘দুই মাস আগে আমাকে টেক্সট করল—লাভলু ভাই, আমি তোমার নাটক দিয়েই কামব্যাক করতে চাই। আমি তাঁকে বললাম, নতুন কাজ করলে অবশ্যই তুমি থাকবে। কিন্তু হঠাৎ নিউজ দেখলাম অচেতন অবস্থায় সীমানা হাসপাতালে। আর আজ ও চলেই গেল। মানুষের কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। সীমানা তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে।’

‘সাকিন সারিসুরি’ ধারাবাহিকটি লিখেছেন বৃন্দাবন দাস। সীমানার মৃত্যু তাঁর কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি কাকলী চরিত্রে সীমানাকে যেন দেখছেন সেই সাকিন সারিসুরি গ্রামে। মোশাররফ করিমের বিপরীতে প্রথমবার পর্দায় সীমানার অভিনয়, তৃপ্তি দিয়েছিল একজন লেখককেও।

সালাউদ্দিন লাভলু। ছবি: সংগৃহীতবৃন্দাবন দাস বলেন, ‘আমি তো শুটিংয়ে যাই না তেমন, তো লাভলু ভাই একদিন বললেন এই চরিত্রে নতুন একজনকে নিয়েছেন। ও যে নতুন অভিনেত্রী, দেখে একদমই বোঝা গেল না। এরপর আমার সঙ্গেও ওর বেশ কিছু কাজ হয়েছে, অসম্ভব গুণী একজন অভিনেত্রী ছিল সীমানা। ওর বিনয় আমাকে মুগ্ধ করত, সিনিয়র অভিনেতাদের সম্মান করত সীমানা। ওর মৃত্যু আমাকে স্তব্ধ করেছে।’

‘রুইতনের কাছেই বুঝি চলে গেলেন কাকলী!’ সীমানার মৃত্যুর পর ফেসবুকজুড়ে ভাসছে এমন অনেক পোস্ট। নাটকটির লেখক হিসেবে বৃন্দাবন দাস বিষয়টি কীভাবে দেখছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘লাইনটা শুনে অনেক কষ্ট পাচ্ছি। আমার কলমেই তো রুইতনের মৃত্যু হয়, আর এখন সীমানার মৃত্যু কাকলীকে নিয়ে যাচ্ছে রুইতনের কাছে! একজন লেখকের কাছে এর চেয়ে কষ্টের আর কঅ হতে পারে? আমি যদি রুইতনকে না মারতাম, তাহলে কি কাকলী (সীমানা) বেঁচে থাকত? আসলে এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো হয় না। তবে এতটুকু বলতে পারি, এই অল্প বয়সে সীমানার মৃত্যু মানতে অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার।’

বৃন্দাবন দাস। ছবি: সংগৃহীতপ্রসঙ্গত, ১৪ দিনের দীর্ঘ লড়াই শেষে আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় অভিনেত্রী রিশতা লাবণী সীমানার মৃত্যু হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে শেষ হলো এই অভিনেত্রীর কর্মময় পথচলা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত