আঁচল ফাউন্ডেশনের হিসাবমতে, ২০২৩ সালে দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। তাদের মধ্যে ২২৭ জন স্কুলশিক্ষার্থী, কলেজশিক্ষার্থী ১৪০ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৯৮ জন। আত্মহত্যা প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আজহারুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন মো. আশিকুর রহমান।
আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি
অন্যকে সহযোগিতার আগে নিজেকে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হয়। তাই একজন শিক্ষার্থীকে প্রথমে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এ জন্য কিছু বিষয়ের উত্তর খুঁজতে হবে। সেগুলো হলো—
- আমি কেমন বোধ করছি।
- মন ভালো আছে কি না।
- ঘুম কেমন হচ্ছে।
- মেজাজ কেমন যাচ্ছে।
- হঠাৎ ভয় পাচ্ছি কি না।
- সিদ্ধান্ত গ্রহণে এলোমেলো লাগছে কি না।
- কাছের মানুষের সঙ্গে অযথাই তিক্ততা তৈরি হচ্ছে কি না।
- সম্পর্কগুলো ধরে রাখতে অসুবিধা হচ্ছে কি না।
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে প্রয়োজনে পেশাদার মনোবিজ্ঞানীর সহায়তা নিয়ে নিজের মনের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে হবে।
শোনার দক্ষতা অর্জন করা
মনের যত্নে এবং আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে সহপাঠীদের সহায়তা ভীষণ কার্যকরী। সহপাঠীদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে অনেক উপকার হয়। কোনো কিছুর সমাধান করার প্রয়োজন নেই, শুধু বন্ধুর কথা মন দিয়ে শুনুন। আপনার নিজের মনের স্বাস্থ্য বোঝার জন্য যে বিষয়গুলো খেয়াল করেছেন, বন্ধুর বেলায়ও সেগুলো লক্ষ করুন। তিনি যদি কোনো দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে যান, তাহলে তা শেয়ার করতে বলুন। আত্মহত্যা প্রতিরোধে মনোযোগ দিয়ে অন্যের কথা শোনা অনেক উপকার করে। কারণ, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি মন খুলে কথা বললে তাঁর সমস্যা সমাধানের কিছু না কিছু নির্দেশনা পাওয়া যায়। সে অনুযায়ী পরে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়। তা ছাড়া মনোযোগ দিয়ে শুনলে আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির কষ্টের মাত্রা লঘু হতে শুরু করে।
অ্যাজেন্ডানির্ভর কাজ করতে পারেন
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধিতে শিক্ষার্থীরা কাজ করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের ক্লাব কিংবা সোসাইটিতে অ্যাজেন্ডাভিত্তিক কাজ করেন শিক্ষার্থীরা। সেসব অ্যাজেন্ডায় মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করুন। মানসিক স্বাস্থ্য এবং এর চিকিৎসা নিয়ে সমাজে যেসব ভ্রান্ত ধারণা বা কুসংস্কার রয়েছে, সেগুলো দূর করতে মুক্ত আলোচনা, বিতর্ক, কুইজ প্রতিযোগিতা, সৃষ্টিশীল কনটেন্ট তৈরি ইত্যাদি ক্যাম্পাসভিত্তিক উদ্যোগ বেশ ফলপ্রসূ।
দোরগোড়ায় সাহায্য পৌঁছে দিন
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার যেসব সুযোগ রয়েছে, সেগুলোকে একত্র করে সহজভাবে সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে যে কেউ চাইলে সেগুলো থেকে সেবা নিতে পারে। যেমন বিভিন্ন ধরনের হেল্পলাইন নম্বর কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফ্রি কাউন্সেলিং সার্ভিসের তথ্য শিক্ষার্থীদের জানার সুযোগ করে দিতে হবে।
দাবি হোক ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার
বর্তমানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে সক্রিয় রয়েছেন। এসব দাবির মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। একজন মানুষের মনের অবস্থা তার নিজের ওপর যেমন নির্ভর করে, তেমনি নির্ভর করে পরিবার, সমাজ এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের চরিত্রের ওপরেও। একটি অংশে অসুস্থতা থাকলে তা অন্যটিকে প্রভাবিত করে। ভয়ভীতিহীন ক্যাম্পাস বা আবাসিক হলের গেস্টরুম বা গণরুম সংস্কৃতি দূর হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বস্তি লক্ষ করা গেছে। ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক মানসিক স্বাস্থ্য যেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।