হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীর ওপর নৃশংসতার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কয়েকজন তরুণ তাঁকে কুপিয়ে হাতের কবজি, স্তনসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম করেছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছেন তরুণীর বাবা। মামলার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয় তরুণীর শরীরে ৬০টি সেলাই লেগেছে। তবে পুলিশ বলছে, ২০০টিরও বেশি সেলাই লেগেছে।
গত ১৯ এপ্রিল ভোররাতে মাধবপুর উপজেলায় এ ঘটনার পর এক সপ্তাহের চিকিৎসা নিয়ে ভুক্তভোগী ওই তরুণীকে সোমবার বিকেলে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মামলায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি করা হয় স্থানীয় যুবক সুমন (২২) ও নাইমসহ (২১) আরও ছয়জনকে।
আজ মঙ্গলবার ভুক্তভোগী তরুণীর বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, তরুণীর শারীরিক অবস্থা এখনো ভালো না। বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি। তাঁর মা পাশে বসে চিনি মিশ্রিত পানি পান করাচ্ছেন।
তরুণীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বাবা হবিগঞ্জ গ্যাসফিল্ড এলাকায় তালুকদার কেমিক্যালে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর মা নোয়াপাড়ার একটি গার্মেন্টসের শ্রমিক। তিন ভাইবোনের মধ্যে ওই তরুণী সবার বড়। ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর আর্থিক দুরবস্থার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি সংসার সামলাচ্ছেন। তাঁর ছোট বোনের বয়স ১৬ বছর। সে স্থানীয় একটি স্কুলে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ভাইয়ের বয়স ৭ বছর।
ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বলেন, ‘১৭ এপ্রিল ভোররাতে আমার মেয়ে সাহরি খাওয়ার জন্য ঘুম থেকে ওঠে। হাত-মুখ ধোয়ার জন্য ঘরের বাইরে টিউবওয়েলের কাছে গেলে গ্রামের মারুফ মিয়ার ছেলে সুমনসহ কয়েকজন মেয়েকে জাপটে ধরে। একপর্যায়ে তারা ধারালো ছুরি দিয়ে দুই স্তনসহ মেয়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ের চিৎকারে পরিবারের সদস্য ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে চিকিৎসকেরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।’
আক্রমণের শিকার ওই তরুণী বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সুমন আমাকে বিরক্ত করত। প্রথমে সে নাম পরিচয় না দিয়া আমার দরজার সামনে চিঠি রাখত। পরে সে তার নাম্বার দিয়ে চিঠি রাখত। আমি মোবাইল ফোন ব্যবহার করি না। কয়েক দিন পর আমাকে সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি তাকে না করে দেই। তখন সে আমাকে বলেছে আমার জীবন নষ্ট করে দেবে। কিন্তু লজ্জায় আমি কাউকে কিছু বলি না।’
তরুণী আরও বলেন, ‘১৯ তারিখ ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ঘরের পাশেই টিউবওয়েলে হাত মুখ ধুতে যাই। মুখ ধুয়ে আসার সময় টিউবওয়েলের কাছেই আমার ওপর হামলা চালায় সুমন। এ সময় তার সাথে নাইম ছিল। প্রথমে আমার পিটে ও বুকে কোপ দেওয়ার পর আমি চিৎকার দিয়ে দৌড়ে ঘরে ঢুকতে চাই। কিন্তু গিয়ে দেখি তারা আমার ওপর হামলা চালানোর আগে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে রেখেছে। দরজা খোলার চেষ্টা করার সময় সুমন আমাকে আরও কয়েকটি কোপ দেয়। পরে বাবা ঘর থেকে বের হলে সুমন ও নাইম দৌড়ে পালিয়ে যায়।’
তরুণীর মা বলেন, ‘ঘটনার দিন আমার নাইট ডিউটি ছিল। সকালে আমি বাড়িতে এসে দেখি আমার মেয়ে ঘরে নেই। পাশের ঘরের লোকজন আমাকে ঘটনা জানায়। পরে আমি সিলেট ওসমানী হাসপাতালে যাই।’
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকেরা বলছিলেন আরও কয়েক দিন হাসপাতালে থাকার জন্য। কিন্তু টাকা পয়সার অভাবে আমরা তাকে নিয়ে আসছি। হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করালেও বিভিন্নভাবে অনেক খরচ করতে হয়। সেই টাকাটাও আমাদের নেই। প্রতিবেশীর আত্মীয়–স্বজনেরা কিছু সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। এই টাকা দিয়েই ওষুধ কিনে খাওয়াচ্ছি। ডাক্তার বলছিলেন, ঢাকা নিয়ে ভালো চিকিৎসা করাতে। কিন্তু টাকা কই পাইতাম।’
মা আরও বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধইরা মেয়েটা কিছু খাইতেছে না। খালি মিষ্টির পানি খাওয়াইতাছি। আর কিছুই খাইতেছে না। আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিছে। আমার মেয়ের দুটি স্তন কেটে ফেলেছে। এ ছাড়া আমার মেয়ের দুটি হাত ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে চিড়চিড় কইরালাইছে।’
প্রতিবেশী সুফিয়া বেগম বলেন, ‘তখন সাহরির সময়। ঘুম থেকে ওইটা আমি হাত মুখ ধুইতেছি। তখন চিৎকার শুনে তাদের বাড়িতে এসে দেখি মেয়েটার হাতে, পিটে ও বুকে কে যেন কুপিয়েছে। বাম হাত পুরোটা ঝুলে গেছিল। পরে আমরা সবাই মিলে তাকে হাসপাতালে পাঠাই।’
সুফিয়া বলেন, ‘আমরা কোনোদিন এই মেয়ে এবং সুমনকে এক সাথে দেখিনি। এছাড়া সুমনও মেয়েকে কোনো দিন বিরক্ত করেছে বলে দেখিনি।’
তরুণীর আরেক প্রতিবেশী বান্ধবী ইমা আক্তার বলেন, ‘প্রায় দুই বছর আগে সুমন আমাকে বলেছিল সে মেয়েটিকে পছন্দ করে। আমার মাধ্যমে সে প্রেমের প্রস্তাব দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি সেটা পারব না বলে জানিয়ে দিই। কিছুদিন পরে ওই মেয়ের পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের একটু ঝামেলা হয়। এরপর থেকে দুই পরিবারের মধ্যে বন্ধ।’
তিনি বলেন, ‘পরে শুনেছি ৬ মাস আগে থেকে তার কাছে একটা চিঠি আসে। কিন্তু চিঠিতে কারও নাম ছিল না। সে কারণে চিঠিগুলো কে দিত সেটা বলতে পারছি না।’
ইমা ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেন, ‘আমরা মেয়েদের কারণে অকারণে মারবে! প্রেম করতে রাজি না হলেও মারবে! আমরা আর কত নিরাপত্তাহীনতায় থাকব? আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এ ঘটনার অভিযুক্ত সুমনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগী তরুণীর বাড়ি থেকে আনুমানিক ৫০ মিটার দূরে সুমনের বাড়ি। বাড়িতে ছোট একটি মাটির ঘর। সেখানেই মা–বাবা ও ছোট বোনকে নিয়ে থাকেন তিনি। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সুমনের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘরটিও তালাবন্ধ তার বাড়ির সামনে একটি কম্পিউটার ও ভ্যারাইটিজের দোকান আছে। সেই দোকানটিও বন্ধ। সুমন ও তাঁর পরিবারের লোকজন কোথায় গেছেন সে বিষয়ে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছে না।
অভিযুক্ত সুমনের মামি তাসলিমা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুমন ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। পরে ওলিপুরে চারু সিরামিকসে চাকরি নেন। দুই বছর আগে অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে দেন। এখন বাড়ির সামনে ছোট একটি পাকা ঘর তুলে কম্পিউটার ও ভ্যারাইটিজের দোকান খুলেছেন।
সুমনের মামি তসলিমা বলেন, ‘মামলা হওয়ায় ভয়ে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।’ তবে ঘটনার সঙ্গে সুমন জড়িত না বলে দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া দুই পরিবারের মধ্যে কোনো বিরোধও ছিল না বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ওই মেয়ের বাড়িতে ছুটে যাই। তখন আমরাও টাকা পয়সা দিয়া তাকে সিলেট পাঠাইছি। সিলেট থেকে এসে বলে সুমন নাকি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’
এদিকে, এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে সুমনের বিরুদ্ধে এ ঘটনার বাইরে আর কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সুমনকে ভালো এবং শান্ত ছেলে বলেই জানে সবাই।
এ ঘটনায় দ্বিতীয় অভিযুক্ত নাইমের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মাকে পাওয়া গেলেও নাইমকে পাওয়া যায়নি। নাইমের বাবা ফেরদৌস মিয়া বলেন, ‘ছেলে ঘুম থেকে উঠে কোথায় যেন গেছে। তবে আমার ছেলে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তারা আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।’
তিনি বলেন, ‘মেয়েটিকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। আমিও এর বিচার চাই। যদি আমার ছেলে জড়িত থাকে তাহলে আমার ছেলেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এ বিষয়ে মাধবপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘অভিযোগ দেওয়ার পরই আমরা মামলাটি রেকর্ড করেছি। মামলায় আসামি করা হয়েছে ছয় জনকে। আমাদের প্রাথমিক তদন্ত বলছে, ঘটনার সঙ্গে সুমন ও নাইম জড়িত। আমরা তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি।’
এদিকে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় বখাটের হামলায় আহত তরুণীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে মেয়েটির বাড়িতে যান মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন। এ সময় তিনি বলেন, ‘মেয়েটির চিকিৎসায় সব ব্যয়ভার বহনসহ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক স্যার জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন থেকেও সহযোগিতা করা হবে।’
ইউএনও বলেন, ‘আপাতত স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকেরা যে পরামর্শ দেবেন সেই মোতাবেক তাঁর চিকিৎসা হবে। এর জন্য যা যা করা দরকার, সব করা হবে।’
হবিগঞ্জে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীর ওপর নৃশংসতার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কয়েকজন তরুণ তাঁকে কুপিয়ে হাতের কবজি, স্তনসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম করেছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছেন তরুণীর বাবা। মামলার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয় তরুণীর শরীরে ৬০টি সেলাই লেগেছে। তবে পুলিশ বলছে, ২০০টিরও বেশি সেলাই লেগেছে।
গত ১৯ এপ্রিল ভোররাতে মাধবপুর উপজেলায় এ ঘটনার পর এক সপ্তাহের চিকিৎসা নিয়ে ভুক্তভোগী ওই তরুণীকে সোমবার বিকেলে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মামলায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি করা হয় স্থানীয় যুবক সুমন (২২) ও নাইমসহ (২১) আরও ছয়জনকে।
আজ মঙ্গলবার ভুক্তভোগী তরুণীর বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, তরুণীর শারীরিক অবস্থা এখনো ভালো না। বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি। তাঁর মা পাশে বসে চিনি মিশ্রিত পানি পান করাচ্ছেন।
তরুণীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বাবা হবিগঞ্জ গ্যাসফিল্ড এলাকায় তালুকদার কেমিক্যালে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর মা নোয়াপাড়ার একটি গার্মেন্টসের শ্রমিক। তিন ভাইবোনের মধ্যে ওই তরুণী সবার বড়। ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর আর্থিক দুরবস্থার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি সংসার সামলাচ্ছেন। তাঁর ছোট বোনের বয়স ১৬ বছর। সে স্থানীয় একটি স্কুলে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ভাইয়ের বয়স ৭ বছর।
ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বলেন, ‘১৭ এপ্রিল ভোররাতে আমার মেয়ে সাহরি খাওয়ার জন্য ঘুম থেকে ওঠে। হাত-মুখ ধোয়ার জন্য ঘরের বাইরে টিউবওয়েলের কাছে গেলে গ্রামের মারুফ মিয়ার ছেলে সুমনসহ কয়েকজন মেয়েকে জাপটে ধরে। একপর্যায়ে তারা ধারালো ছুরি দিয়ে দুই স্তনসহ মেয়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ের চিৎকারে পরিবারের সদস্য ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে চিকিৎসকেরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।’
আক্রমণের শিকার ওই তরুণী বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সুমন আমাকে বিরক্ত করত। প্রথমে সে নাম পরিচয় না দিয়া আমার দরজার সামনে চিঠি রাখত। পরে সে তার নাম্বার দিয়ে চিঠি রাখত। আমি মোবাইল ফোন ব্যবহার করি না। কয়েক দিন পর আমাকে সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি তাকে না করে দেই। তখন সে আমাকে বলেছে আমার জীবন নষ্ট করে দেবে। কিন্তু লজ্জায় আমি কাউকে কিছু বলি না।’
তরুণী আরও বলেন, ‘১৯ তারিখ ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ঘরের পাশেই টিউবওয়েলে হাত মুখ ধুতে যাই। মুখ ধুয়ে আসার সময় টিউবওয়েলের কাছেই আমার ওপর হামলা চালায় সুমন। এ সময় তার সাথে নাইম ছিল। প্রথমে আমার পিটে ও বুকে কোপ দেওয়ার পর আমি চিৎকার দিয়ে দৌড়ে ঘরে ঢুকতে চাই। কিন্তু গিয়ে দেখি তারা আমার ওপর হামলা চালানোর আগে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে রেখেছে। দরজা খোলার চেষ্টা করার সময় সুমন আমাকে আরও কয়েকটি কোপ দেয়। পরে বাবা ঘর থেকে বের হলে সুমন ও নাইম দৌড়ে পালিয়ে যায়।’
তরুণীর মা বলেন, ‘ঘটনার দিন আমার নাইট ডিউটি ছিল। সকালে আমি বাড়িতে এসে দেখি আমার মেয়ে ঘরে নেই। পাশের ঘরের লোকজন আমাকে ঘটনা জানায়। পরে আমি সিলেট ওসমানী হাসপাতালে যাই।’
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকেরা বলছিলেন আরও কয়েক দিন হাসপাতালে থাকার জন্য। কিন্তু টাকা পয়সার অভাবে আমরা তাকে নিয়ে আসছি। হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করালেও বিভিন্নভাবে অনেক খরচ করতে হয়। সেই টাকাটাও আমাদের নেই। প্রতিবেশীর আত্মীয়–স্বজনেরা কিছু সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। এই টাকা দিয়েই ওষুধ কিনে খাওয়াচ্ছি। ডাক্তার বলছিলেন, ঢাকা নিয়ে ভালো চিকিৎসা করাতে। কিন্তু টাকা কই পাইতাম।’
মা আরও বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধইরা মেয়েটা কিছু খাইতেছে না। খালি মিষ্টির পানি খাওয়াইতাছি। আর কিছুই খাইতেছে না। আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিছে। আমার মেয়ের দুটি স্তন কেটে ফেলেছে। এ ছাড়া আমার মেয়ের দুটি হাত ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে চিড়চিড় কইরালাইছে।’
প্রতিবেশী সুফিয়া বেগম বলেন, ‘তখন সাহরির সময়। ঘুম থেকে ওইটা আমি হাত মুখ ধুইতেছি। তখন চিৎকার শুনে তাদের বাড়িতে এসে দেখি মেয়েটার হাতে, পিটে ও বুকে কে যেন কুপিয়েছে। বাম হাত পুরোটা ঝুলে গেছিল। পরে আমরা সবাই মিলে তাকে হাসপাতালে পাঠাই।’
সুফিয়া বলেন, ‘আমরা কোনোদিন এই মেয়ে এবং সুমনকে এক সাথে দেখিনি। এছাড়া সুমনও মেয়েকে কোনো দিন বিরক্ত করেছে বলে দেখিনি।’
তরুণীর আরেক প্রতিবেশী বান্ধবী ইমা আক্তার বলেন, ‘প্রায় দুই বছর আগে সুমন আমাকে বলেছিল সে মেয়েটিকে পছন্দ করে। আমার মাধ্যমে সে প্রেমের প্রস্তাব দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি সেটা পারব না বলে জানিয়ে দিই। কিছুদিন পরে ওই মেয়ের পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের একটু ঝামেলা হয়। এরপর থেকে দুই পরিবারের মধ্যে বন্ধ।’
তিনি বলেন, ‘পরে শুনেছি ৬ মাস আগে থেকে তার কাছে একটা চিঠি আসে। কিন্তু চিঠিতে কারও নাম ছিল না। সে কারণে চিঠিগুলো কে দিত সেটা বলতে পারছি না।’
ইমা ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেন, ‘আমরা মেয়েদের কারণে অকারণে মারবে! প্রেম করতে রাজি না হলেও মারবে! আমরা আর কত নিরাপত্তাহীনতায় থাকব? আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এ ঘটনার অভিযুক্ত সুমনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগী তরুণীর বাড়ি থেকে আনুমানিক ৫০ মিটার দূরে সুমনের বাড়ি। বাড়িতে ছোট একটি মাটির ঘর। সেখানেই মা–বাবা ও ছোট বোনকে নিয়ে থাকেন তিনি। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সুমনের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘরটিও তালাবন্ধ তার বাড়ির সামনে একটি কম্পিউটার ও ভ্যারাইটিজের দোকান আছে। সেই দোকানটিও বন্ধ। সুমন ও তাঁর পরিবারের লোকজন কোথায় গেছেন সে বিষয়ে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছে না।
অভিযুক্ত সুমনের মামি তাসলিমা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুমন ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। পরে ওলিপুরে চারু সিরামিকসে চাকরি নেন। দুই বছর আগে অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে দেন। এখন বাড়ির সামনে ছোট একটি পাকা ঘর তুলে কম্পিউটার ও ভ্যারাইটিজের দোকান খুলেছেন।
সুমনের মামি তসলিমা বলেন, ‘মামলা হওয়ায় ভয়ে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।’ তবে ঘটনার সঙ্গে সুমন জড়িত না বলে দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া দুই পরিবারের মধ্যে কোনো বিরোধও ছিল না বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ওই মেয়ের বাড়িতে ছুটে যাই। তখন আমরাও টাকা পয়সা দিয়া তাকে সিলেট পাঠাইছি। সিলেট থেকে এসে বলে সুমন নাকি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’
এদিকে, এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে সুমনের বিরুদ্ধে এ ঘটনার বাইরে আর কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সুমনকে ভালো এবং শান্ত ছেলে বলেই জানে সবাই।
এ ঘটনায় দ্বিতীয় অভিযুক্ত নাইমের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মাকে পাওয়া গেলেও নাইমকে পাওয়া যায়নি। নাইমের বাবা ফেরদৌস মিয়া বলেন, ‘ছেলে ঘুম থেকে উঠে কোথায় যেন গেছে। তবে আমার ছেলে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তারা আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।’
তিনি বলেন, ‘মেয়েটিকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। আমিও এর বিচার চাই। যদি আমার ছেলে জড়িত থাকে তাহলে আমার ছেলেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এ বিষয়ে মাধবপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘অভিযোগ দেওয়ার পরই আমরা মামলাটি রেকর্ড করেছি। মামলায় আসামি করা হয়েছে ছয় জনকে। আমাদের প্রাথমিক তদন্ত বলছে, ঘটনার সঙ্গে সুমন ও নাইম জড়িত। আমরা তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি।’
এদিকে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় বখাটের হামলায় আহত তরুণীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে মেয়েটির বাড়িতে যান মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন। এ সময় তিনি বলেন, ‘মেয়েটির চিকিৎসায় সব ব্যয়ভার বহনসহ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক স্যার জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন থেকেও সহযোগিতা করা হবে।’
ইউএনও বলেন, ‘আপাতত স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকেরা যে পরামর্শ দেবেন সেই মোতাবেক তাঁর চিকিৎসা হবে। এর জন্য যা যা করা দরকার, সব করা হবে।’
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
৮ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
৮ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
৮ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
১২ দিন আগে