রিমন রহমান, রাজশাহী
ভারত থেকে দেশে মাদক চোরাচালানে বেশি ব্যবহৃত সীমান্ত এলাকাগুলোর একটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী। এই এলাকায় রীতিমতো হেরোইন চোরাচালানের ‘অপ্রতিরোধ্য’ চক্র গড়ে উঠেছে। আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাঝেমধ্যে মাদক বহনকারীরা ধরা পড়লেও মাফিয়ারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই মাফিয়াদের কেউ রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরীকে ডাকেন মামা, কেউ চাচা, আবার কেউ ভাই। প্রতি মাসে তাঁরা ফারুককে দিতেন মোটা অঙ্কের টাকা কিংবা গাড়ি বা অন্য উপঢৌকন।
মাদক কারবারিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী হয়ে উঠেছিলেন গডফাদার, মাদকের পৃষ্ঠপোষক। ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গোপন প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে। ওই প্রতিবেদনে রাজশাহীর শীর্ষ হেরোইন কারবারিদের নামও ছিল। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এই প্রতিবেদন রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়েও পাঠানো হয়। অনুলিপি পেয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ সুপারও (এসপি)। কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। এই প্রতিবেদনের পরও পরবর্তী দুটি নির্বাচনে ওমর ফারুক চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মাদক কারবারিদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ওই তালিকায় সাবেক এমপি ফারুকের নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর সম্প্রতি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিবেদন এসেছিল ২০১৮ সালে, আর আমি এখানে যোগ দিয়েছি এক বছর আগে। ২০১৮ সালের পর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, সেটি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
জাতীয় নেতা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের ভাগনে ওমর ফারুক চৌধুরী ২০০১ সালে প্রথমবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান।ওই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এরপর টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হন দলের মনোনয়নে। ২০১৪ সালে এমপি হয়েছিলেন বিনা ভোটে।
যেখানে-সেখানে বেঁফাস কথা বলা এবং মারধর করার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর আচরণের কারণে দলীয় নেতা-কর্মীরাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন।
মাদকের মাসোহারা ৫ লাখ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র বলেছে, প্রতিদিন গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়ে দেশে বিপুল হেরোইন ঢোকে। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এই এলাকায় রয়েছে হাজারখানেক মাদক কারবারি।
অভিযোগ রয়েছে, অন্তত অর্ধশতাধিক শীর্ষস্থানীয় মাদক কারবারির কাছ থেকে প্রতি মাসে ওমর ফারুক চৌধুরী ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা মাসোহারা নিতেন। এভাবে তিনি ১৬ বছরে শুধু গোদাগাড়ীর মাদক কারবারিদের কাছ থেকে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা নিয়েছেন। বিনিময়ে তাঁদের সুরক্ষা দিয়েছেন।
দলীয় একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ফারুক চৌধুরী ও মাদক কারবারিদের মধ্যে মধ্যস্থতা করতেন গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হামিদ রানা, পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও শীর্ষ মাদক কারবারি মনিরুল ইসলাম। মনিরুল নিজেকে ফারুক চৌধুরীর ‘ভাগনে’ বলে পরিচয় দিতেন। মনিরুলের ছোট ভাই আরেক শীর্ষ মাদক কারবারি আব্দুর রহিম টিপুর কাছ থেকে ওমর ফারুক চৌধুরী ৩২ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি উপঢৌকন হিসেবে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাজশাহী নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় ওমর ফারুক চৌধুরীর ‘থিম ওমর প্লাজা’ নামের একটি ১০ তলা ভবন রয়েছে। এখানকার এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে ফারুকের রাজনৈতিক কার্যালয় ছিল। রাত ১১টার পর তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দিতেন। এরপর শুরু হতো মাদক কারবারিদের আনাগোনা।
টাকা ছাড়া নিয়োগ হয়নি
ফারুক চৌধুরীর আমলে দুই উপজেলায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টাকা ছাড়া নিয়োগ হয়নি। ২০০৮ সালে তিনি এমপি হয়ে প্রথমেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজর দেন। শুরু করেন নিয়োগ-বাণিজ্য। মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রত্যেক শিক্ষক নিয়োগে তিনি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিতেন; আর কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে নিতেন ২০ লাখ। অন্যান্য কর্মচারী, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগে নেওয়া হতো ৭ থেকে ১৪ লাখ টাকা। টাকা আদায়ে ফারুক দলীয় নেতাদের ব্যবহার করতেন।
জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলায় মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও মাদ্রাসা মিলিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ১০২টি। তানোরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৩। দুই উপজেলায় মোট শিক্ষক ৪ হাজার ৩৭১ জন। তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ নিয়োগ দিয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী।
তানোরে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আবুল বাসার সুজন। তিনি মুঠোফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমপি সাহেব (সাবেক এমপি ফারুক) আমাকে দিয়ে এসব কাজ করিয়েছেন। সব টাকা তিনিই নিতেন, কিন্তু আমারও বদনাম হয়ে গেছে। এখন পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’
প্রকল্পের অর্ধেক ফারুকের
এমপি থাকাকালে ফারুক চৌধুরী টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক টাকা হিসাব করে বুঝে নিতেন। তাঁর অনুকূলে বছরে টিআর ও কাবিখা প্রকল্প আসত তিনবার। এ বাবদ বরাদ্দ ছিল প্রায় ছয় কোটি টাকা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ সামাজিক সংগঠনকে এ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে এ বরাদ্দের শতকরা ৮০ ভাগই নিয়েছেন এমপি ফারুক। দুই উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারাও ফারুকের ভয়ে কিছু বলতে পারেননি।
টিআর-কাবিখা ছাড়াও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় দুই উপজেলায় প্রতিবছর আসা প্রায় ৪ কোটি টাকার সিংহভাগ নিতেন ফারুক চৌধুরী। এ বরাদ্দও ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বাস্তবায়ন দেখানো হতো জনপ্রতিধিদের মাধ্যমে। তারপর উপজেলা চেয়ারম্যানরা টাকা পৌঁছে দিতেন ফারুকের কাছে। সম্প্রতি গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের সড়ক সংস্কারের পাঁচটি প্রকল্পের পুরো ২২ লাখ টাকা কাজ না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
গোদাগাড়ী ও তানোরে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান ও চাল প্রকৃত কৃষকেরা সরবরাহ করতে পারতেন না। ধান ও চাল সরবরাহ করতেন সাবেক এমপি ফারুকের সহযোগীরা। এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। তানোরে খাদ্যগুদাম নিয়ন্ত্রণ করতেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না।
দলেও পদ-বাণিজ্য
দলীয় পদ-বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা লঙ্ঘন করে তিনি উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে তিনটি করে কমিটি দিয়েছেন। সেই প্রভাবশালী ফারুক এখন আত্মগোপনে। ৫ আগস্টের পর কয়েক দিন তিনি থিম ওমর প্লাজায় ছিলেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সেখানে তিনি নিজের ফ্ল্যাটে না থেকে অন্য ব্যক্তির ফ্ল্যাটে ছিলেন। পরে সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালিয়েছেন। ইতিমধ্যে ফারুকের বিরুদ্ধে হাফ ডজন মামলা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ওমর ফারুক চৌধুরীর মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর কোনো সহযোগীরও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভারত থেকে দেশে মাদক চোরাচালানে বেশি ব্যবহৃত সীমান্ত এলাকাগুলোর একটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী। এই এলাকায় রীতিমতো হেরোইন চোরাচালানের ‘অপ্রতিরোধ্য’ চক্র গড়ে উঠেছে। আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাঝেমধ্যে মাদক বহনকারীরা ধরা পড়লেও মাফিয়ারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই মাফিয়াদের কেউ রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরীকে ডাকেন মামা, কেউ চাচা, আবার কেউ ভাই। প্রতি মাসে তাঁরা ফারুককে দিতেন মোটা অঙ্কের টাকা কিংবা গাড়ি বা অন্য উপঢৌকন।
মাদক কারবারিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী হয়ে উঠেছিলেন গডফাদার, মাদকের পৃষ্ঠপোষক। ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গোপন প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে। ওই প্রতিবেদনে রাজশাহীর শীর্ষ হেরোইন কারবারিদের নামও ছিল। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এই প্রতিবেদন রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়েও পাঠানো হয়। অনুলিপি পেয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ সুপারও (এসপি)। কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। এই প্রতিবেদনের পরও পরবর্তী দুটি নির্বাচনে ওমর ফারুক চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মাদক কারবারিদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ওই তালিকায় সাবেক এমপি ফারুকের নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর সম্প্রতি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিবেদন এসেছিল ২০১৮ সালে, আর আমি এখানে যোগ দিয়েছি এক বছর আগে। ২০১৮ সালের পর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, সেটি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
জাতীয় নেতা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের ভাগনে ওমর ফারুক চৌধুরী ২০০১ সালে প্রথমবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান।ওই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এরপর টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হন দলের মনোনয়নে। ২০১৪ সালে এমপি হয়েছিলেন বিনা ভোটে।
যেখানে-সেখানে বেঁফাস কথা বলা এবং মারধর করার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর আচরণের কারণে দলীয় নেতা-কর্মীরাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন।
মাদকের মাসোহারা ৫ লাখ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র বলেছে, প্রতিদিন গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়ে দেশে বিপুল হেরোইন ঢোকে। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এই এলাকায় রয়েছে হাজারখানেক মাদক কারবারি।
অভিযোগ রয়েছে, অন্তত অর্ধশতাধিক শীর্ষস্থানীয় মাদক কারবারির কাছ থেকে প্রতি মাসে ওমর ফারুক চৌধুরী ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা মাসোহারা নিতেন। এভাবে তিনি ১৬ বছরে শুধু গোদাগাড়ীর মাদক কারবারিদের কাছ থেকে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা নিয়েছেন। বিনিময়ে তাঁদের সুরক্ষা দিয়েছেন।
দলীয় একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ফারুক চৌধুরী ও মাদক কারবারিদের মধ্যে মধ্যস্থতা করতেন গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হামিদ রানা, পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও শীর্ষ মাদক কারবারি মনিরুল ইসলাম। মনিরুল নিজেকে ফারুক চৌধুরীর ‘ভাগনে’ বলে পরিচয় দিতেন। মনিরুলের ছোট ভাই আরেক শীর্ষ মাদক কারবারি আব্দুর রহিম টিপুর কাছ থেকে ওমর ফারুক চৌধুরী ৩২ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি উপঢৌকন হিসেবে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাজশাহী নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় ওমর ফারুক চৌধুরীর ‘থিম ওমর প্লাজা’ নামের একটি ১০ তলা ভবন রয়েছে। এখানকার এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে ফারুকের রাজনৈতিক কার্যালয় ছিল। রাত ১১টার পর তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দিতেন। এরপর শুরু হতো মাদক কারবারিদের আনাগোনা।
টাকা ছাড়া নিয়োগ হয়নি
ফারুক চৌধুরীর আমলে দুই উপজেলায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টাকা ছাড়া নিয়োগ হয়নি। ২০০৮ সালে তিনি এমপি হয়ে প্রথমেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজর দেন। শুরু করেন নিয়োগ-বাণিজ্য। মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রত্যেক শিক্ষক নিয়োগে তিনি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিতেন; আর কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে নিতেন ২০ লাখ। অন্যান্য কর্মচারী, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগে নেওয়া হতো ৭ থেকে ১৪ লাখ টাকা। টাকা আদায়ে ফারুক দলীয় নেতাদের ব্যবহার করতেন।
জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলায় মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও মাদ্রাসা মিলিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ১০২টি। তানোরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৩। দুই উপজেলায় মোট শিক্ষক ৪ হাজার ৩৭১ জন। তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ নিয়োগ দিয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী।
তানোরে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আবুল বাসার সুজন। তিনি মুঠোফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমপি সাহেব (সাবেক এমপি ফারুক) আমাকে দিয়ে এসব কাজ করিয়েছেন। সব টাকা তিনিই নিতেন, কিন্তু আমারও বদনাম হয়ে গেছে। এখন পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’
প্রকল্পের অর্ধেক ফারুকের
এমপি থাকাকালে ফারুক চৌধুরী টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক টাকা হিসাব করে বুঝে নিতেন। তাঁর অনুকূলে বছরে টিআর ও কাবিখা প্রকল্প আসত তিনবার। এ বাবদ বরাদ্দ ছিল প্রায় ছয় কোটি টাকা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ সামাজিক সংগঠনকে এ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে এ বরাদ্দের শতকরা ৮০ ভাগই নিয়েছেন এমপি ফারুক। দুই উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারাও ফারুকের ভয়ে কিছু বলতে পারেননি।
টিআর-কাবিখা ছাড়াও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় দুই উপজেলায় প্রতিবছর আসা প্রায় ৪ কোটি টাকার সিংহভাগ নিতেন ফারুক চৌধুরী। এ বরাদ্দও ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বাস্তবায়ন দেখানো হতো জনপ্রতিধিদের মাধ্যমে। তারপর উপজেলা চেয়ারম্যানরা টাকা পৌঁছে দিতেন ফারুকের কাছে। সম্প্রতি গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের সড়ক সংস্কারের পাঁচটি প্রকল্পের পুরো ২২ লাখ টাকা কাজ না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
গোদাগাড়ী ও তানোরে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান ও চাল প্রকৃত কৃষকেরা সরবরাহ করতে পারতেন না। ধান ও চাল সরবরাহ করতেন সাবেক এমপি ফারুকের সহযোগীরা। এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। তানোরে খাদ্যগুদাম নিয়ন্ত্রণ করতেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না।
দলেও পদ-বাণিজ্য
দলীয় পদ-বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা লঙ্ঘন করে তিনি উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে তিনটি করে কমিটি দিয়েছেন। সেই প্রভাবশালী ফারুক এখন আত্মগোপনে। ৫ আগস্টের পর কয়েক দিন তিনি থিম ওমর প্লাজায় ছিলেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সেখানে তিনি নিজের ফ্ল্যাটে না থেকে অন্য ব্যক্তির ফ্ল্যাটে ছিলেন। পরে সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালিয়েছেন। ইতিমধ্যে ফারুকের বিরুদ্ধে হাফ ডজন মামলা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ওমর ফারুক চৌধুরীর মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর কোনো সহযোগীরও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
৭ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
৭ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
৮ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
১২ দিন আগে